ফরাসি প্যারাট্রুপার প্রশিক্ষককে আলিঙ্গন করার অপরাধে পাকিস্তানের পর্যটন মন্ত্রী নিলুফার বখতিয়ারের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিল মৌলবাদী গোষ্ঠী। নিলুফার আশা করেছিলেন শাসক দল পিএমএল-কিউ তাঁর পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু কেউই পাশে দাঁড়ায়নি। দল এবং সরকারের কাছে যে সমর্থন আশা করেছিলেন তা পাননি নিলুফার।
নিলুফারের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি হবার পরদিনই ভারতের এক টিভি চ্যানেল এ নিয়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আলোচনায় অংশ নেওয়া মানুষগুলো এক এক দেশে, এক এক অঞ্চলে। কিন্তু টেকনোলজি সবাইকে এক জায়গায় এনে জড়ো করেছিল। পাকিস্তানের আসমা জাহাঙ্গীর, মানবাধিকারের জন্য দীর্ঘকাল আন্দোলন করছেন, ফতোয়ার শিকার নিলুফার বখতিয়ার, এবং এদিকে ভারত থেকে আমি। আসমা জাহাঙ্গীর বলেছেন, ‘প্রতিদিনই মেয়েদের বিরুদ্ধে এরকম ফতোয়া দেওয়া চলছে পাকিস্তানে, আজ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে হল বলেই মিডিয়া ফলাও করে প্রচার করছে এবং সে কারণেই চারদিকে হৈ চৈ।’ নিলুফার বলেছিলেন, ‘এ কিছু না, ছোট্ট একটি গোষ্ঠী ফতোয়া দিয়েছে, এদের কেউ চেনে না, এদের কথার কোনও দাম নেই। ফতোয়ার তো নেইই। সাধারণ মানুষ এদের ফুঁ মেরে উড়িয়ে দেবে। আমার সমর্থনে আমার দল আছে, সরকার আছে, জনগণ আছে। আমি যা করেছি তা আবারও করবো।’
সে আলোচনায় আমি কিন্তু বলেছিলাম, ‘ছোট দল ভেবে এদের কিন্তু তুচ্ছ করা উচিত নয়। কারণ, ফতোয়ার পেছনে যে ভয়ংকর শক্তিটি কাজ করে, তা হল ধর্ম। যত ছোটলোকই ফতোয়া জারি করুক না কেন কোনও মেয়ের বিরুদ্ধে, ধর্মের সায় আছে বলেই সেই ফতোয়াকে সব ব্যাটাই সমর্থন করবে, পুরুষতন্ত্রের রাঘব বোয়ালেরা মহানন্দে মাথা নাড়বে। ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করার ব্যবস্থা না করলে, সমানাধিকারের ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন না হলে, মৌলবাদী-উৎপাদনের নিমিত্র মাদ্রাসা-শিক্ষা বন্ধ না হলে, নারীর শিক্ষা এবং স্বনির্ভরতার ব্যবস্থা না হলে, সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়ন না হলে ফতোয়াবাজরা নিশ্চিন্তে নির্ভাবনায় তাদের কার্যকলাপ চালিয়ে যাবে। নারীর অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে, মানবাধিকার এবং মানবতার জয় চাইলে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করতেই হবে। ধর্মকে মাথায় ওঠালে মৌলবাদও মাথায় উঠবে।’
আমি বলি, ফতোয়াবাজদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে। নিলুফার বলেন, ‘এদের গ্রাহ্য করার কোনও মানে হয় না।’ কজ্ঞে তাঁর ছিল প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস। নিলুফার বিশ্বাস করেছিলেন, ক্ষুদ্র মৌলবাদী শক্তি হেরে যাবে, তিনিই এই যুদ্ধে জিতবেন। না জেতার কোনও তো কারণ নেই, কারণ তিনি তো কোনও অন্যায় করেননি। প্যারাসুট জাম্পিংএ সফল হয়ে প্রশিক্ষককে প্রথামতো আলিঙ্গন করেছেন। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। নিলুফার ভাবতেও তো পারেননি যে গ্রাহ্য আসলে মৌলবাদীদেরই করা হবে। গ্রাহ্য নিলুফারকেই করা হবে না। ক্তমাগত হুমকির মুখে পড়ে দলের, সরকারের, জনগণের কারও সমর্থন না পেয়ে নিলুফার বাধ্য হয়েছেন ইস্তফা দিতে। অথবা দলের বা সরকারি চাপেই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। হেরে কে গেল? মৌলবাদীরা নাকি নিলুফার? নিলুফার হেরেছেন। অন্যায় না করেও