মাথায় প্রবলেম না থাকলে সব নারীরই নারীবাদী হওয়ার কথা

আজ থেকে সতেরো বছর আগে লিখেছিলাম বাংলা সংসদ অভিধানের কথা যে অভিধানে পুরুষ শব্দের অর্থ মানুষ কিন্তু নারী

আজ থেকে সতেরো বছর আগে লিখেছিলাম বাংলা সংসদ অভিধানের কথা যে অভিধানে পুরুষ শব্দের অর্থ মানুষ কিন্তু নারী শব্দের অর্থে আর যা কিছুই থাকুক, মানুষ নেই। সতেরো বছর আগে অনেকে চোখ কপালে তুলেছিল। অনেকে অভিধান খুলে হতবাক বসে থেকেছে, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনি। কিন্তু কেউ কি বিশ্বাস করতে পারে যে এখনও অভিধানের ওই শব্দার্থ অপরিবর্তিত আছে?

 

২. পুরুষ শব্দটিকে আমি নেতিবাচক একটি শব্দ বলে মনে করি। পুরুষতন্ত্র যদি নেতিবাচক হয়, তবে পুরুষ হবে না কেন? পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা এই যে হাজার হাজার বছর ধরে টিকে আছে — কই এই ব্যবস্থাকে ভাঙার জন্য চেষ্টা তো পুরুষেরা করেনি। পুরুষেরা চাইলেই এই তন্ত্রটিকে নির্মূল করতে পারতো। সাম্যের জন্য, সমতার জন্য তারা পুরুষতন্ত্রকে গুড়িয়ে উড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করতে পারতো, করেনি। পুরুষ—এই শব্দটিকে আমি ব্যবহার করতে চাই, অবিবেচক, অনুদার, অকৃতজ্ঞ, স্বার্থপর, স্বার্থান্ধ, লোভী, লোলুপ, হীনমন্য, হিংসুক-এর সমার্থক শব্দ হিসেবে। তাদেরকে আমি পুরুষ বলে গালি দিতে চাই। সেই ছেলে এবং সেই মেয়েদেরও গালি দিতে চাই, যারা ওই চরিত্রের অধিকারী। গালি দিতে চাই এই বলে, ‘ছি ছি ছি তুমি এত কুৎসিত, এত কৃপণ, এত পচা, এত পুরুষ কী করে হতে পারলে!’

 

৩. পুরুষেরা এখনও কলকাতার শিক্ষিত, স্বনির্ভর মেয়েদের কর্তা। মেয়েরা পার্টিতে আসছে, মদ্যপান করছে, নাচছে, আর বলছে ‘আমার কর্তা আমাকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছেন। এত স্বাধীনতা খুব বেশি মেয়ে পায় না।’

 

কৃতজ্ঞতায় স্বনির্ভরের মুখ চিকচিক করে। মনে মনে বলি, স্বাধীনতা তোর জন্মগত অধিকার। তোর জিনিস তোর কাছে থাকবে। পুরুষ তা দেবার কে?

 

পুরুষেরা মাথায় উঠেছে নারীর। নারীও বেশ পুরুষদের তেলিয়ে লেলিয়ে মাথায় ওঠায় সাহায্য করেছে। নারীর মাথায় বসে পুরুষেরা মাথা খায় নারীর। কুটকুট করে পোকার মতো খায়। পোকা হয়ে ঢুকে যায় ভেতরে। মস্তিষ্কের সর্বনাশ করে। নারী কেন নিজেদের মাথা থেকে জোর ঝাঁকানি দিয়ে পুরুষদের নামিয়ে দেয় না? বলতে পারে, ‘পাশে থাকো, পিছনে থাকো, কিন্তু মাথায় ওঠো না।’ বলে কি?

 

৪. আমাকে অনেকে, এমনকী নারীরাও বলে, ‘আপনাকে যে লোকেরা নারীবাদী বলে, আপনি প্রতিবাদ করেন না কেন?’

 

অবাক হয়ে বলি, ‘প্রতিবাদ করবো কেন? আমি তো নারীবাদে বিশ্বাস করি।’ শুনে মন খারাপ হয়ে যায় অনেকের। তাদের বলি, ‘আমি মানববাদে বিশ্বাস করি বলেই নারীবাদে বিশ্বাস করি। নারীবাদী না হয়ে মানববাদী হওয়া যায় না। কী করে হব, মানবের ওপর নির্যাতন দেখে চুপ করে বসে থেকে মানববাদী হওয়া তো সম্ভব নয়।’

 

‘নারীরা হয় ফেমিনিস্ট, নয় তারা ম্যাসোকিস্ট, নিজেকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়—যে কোনও একটি’, একজন নারীবাদী বলেছিলেন। আমারও তাই বিশ্বাস।

 

ম্যাসোকিস্ট যদি তুমি


Rx Munna

446 Blog indlæg

Kommentarer