দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি

বডি লাইন বলে একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে টিভিতে। প্রশ্নকর্তা পুরুষ, এবং উত্তর দিচ্ছে দুজন নারী-তারকা।

পুরুষ প্রশ্

বডি লাইন বলে একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে টিভিতে। প্রশ্নকর্তা পুরুষ, এবং উত্তর দিচ্ছে দুজন নারী-তারকা।

 

পুরুষ প্রশ্ন করছে পুরুষ-ক্তিকেটারদের নিয়ে, ‘কাকে সেঙ্গি লাগে, কাকে বিয়ে করতে ইচ্ছে করে, কে অ্যাপিল করে বেশি।’ এগুলোর উত্তর মেয়েদুটো মহানন্দে দিয়ে যাচ্ছিল। ব্যক্তিজীবনে কী রকম পুরুষ তাদের পছন্দ, এই প্রশ্নের উত্তরে দুজনই বললো, তাদের পছন্দ অ্যাগ্রেসিভ পুরুষ। পুরুষরা অ্যাগ্রেসিভ না হলে তাদের আনন্দই হতে চায় না।

 

আমি হাঁ হয়ে রইলাম। না পুরুষেরা নয়, নারীরা চাইছে ‘অ্যাগ্রেসিভ পুরুষ।’ এই পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষের অ্যাগ্রেসিভনেস সর্বত্র। পুরুষ নারীকে ধর্ষণ করছে, গণধর্ষণ করছে, কন্যাভ্রূণ হত্যা করছে, অপহরণ করছে, নারীহত্যা করছে, বধূহত্যার হার বাড়ছে, বিবাহিত নারীর দুই তৃতীয়াংশই শিকার হচ্ছে ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের, পুরুষেরা মেয়েদের মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারছে, মেয়েদের সঙ্গে পে্রতারণা করছে, প্রেমিক সেজে মেয়েদের ঘরের বার করে পতিতালয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে, হু হু করে বাড়ছে নারীপাচার, মেয়েদের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে পুরুষ, গলা কেটে ভাসিয়ে দিচ্ছে নদীর জলে, খুন করে আত্মহত্যা নাম দিয়ে কড়িবরগায় বা সিলিং ফ্যানে বা গাছের ডালে ঝুলিয়ে দিচ্ছে। পুরুষের অ্যাগ্রেসিভনেসের কারণে নারী নির্যাতন চলছেই গ্রামে গজ্ঞে, শহরে নগরে। ঘরে, ঘরের বাইরে। আর টিভির পর্দায় লাস্যময়ীরা বলছেন, তারা আরও অ্যাগ্রেসিভ পুরুষ কামনা করেন। তাঁরা ম্যাচো-ম্যান চান। রাফ টাফ। তারা শক্ত পেশি চান, পেশির জোর চান, যে পেশির জোরে নারীর ওপর অর্থাৎ দুর্বলের ওপর চড়াও হতে পারে পুরুষ। পুরুষের কম্ম হল নারীদের মুঠোয় রাখা, ডমিনেট করা, তেড়িবেড়ি করলে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া। পুরুষের পেশির জোরে পিষ্ট হতে ভালোবাসেন নারীরা, এবং এভাবেই তাঁরা পুরুষতন্ত্রকে চমৎকার টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেন। এবং এই নারীরাই অগুনতি সাধারণ নারীকে উৎসাহিত করেন পুরুষকে কামনা করতে, অ্যাগ্রেসিভ পুরুষকে। পুরুষের অ্যাগ্রেসিভনেসে তাঁরা মুগ্ধ হন। তাই যখন কোমরে লাথি কষায় পুরুষ, মুঠো ধরে চুল ছিঁড়ে ফেলে, কপাল ফাটায়, চোখে মেরে চোখ রক্তাক্ত করে, মেয়েরা আনন্দে আটখানা হন। এই না হলে আবার পুরুষ কিসের!

 

নারীরা ম্যাসোকিস্ট হতে, নির্যাতিত হতে ভালোবাসে। পুরুষের শখ মেটাতে, সাধ মেটাতে, তাদের আরও আরও আরও আনন্দ দিতে আর কত যুগ কত শতাব্দী বোকা বুদ্ধু নারীরা আত্মাহূতি দেবে!

 

২. আমার সংসারের কাজে যে মেয়েটি আমাকে সাহায্য করতো, সে অনেকদিনের জন্য বাড়ি গেছে। আমি একা। একাই ঘরের কাজকর্ম সবই সারছিলাম। এরমধ্যে কিছু মেয়েবন্ধু আমার বাড়িতে এলো, তারা যে থালা বাটি গ্লাস ডিনার খেতে গিয়ে ব্যবহার করেছে, সেগুলো নিজেরাই পরিষ্কার করলো, শুধু তাই নয়, আগ বাড়িয়ে আরও কিছু ঘরবাড়ির কাজ করে দিয়ে গেল, নিজেরা বাড়ি থেকে রান্না করা খাবারও দিয়ে গেল আমাকে। আমার অসুবিধে হচ্ছে অনুমান করে আমাকে ওরা সাধ্যমতো সাহায্য করলো, সত্যিকার বন্ধুরা যা করে। দুদিন পর ওই মেয়ে-বন্ধুরা যেমন ঘনিষ্ঠ, তেমনই ঘনিষ্ঠ আমার কিছু পুরুষ-বন্ধু আমার বাড়িতে এলো। ওরা বাড়ি জুড়ে হাঁটছে, পান করছে, খাচ্ছে, ফেলছে। জিনিসপত্র সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে সর্বনাশ করছে। আমি যখন বললাম সব গুছিয়ে রাখতে, ওরা আঁতকে উঠলো। আমি খুব নরম কজ্ঞে বললাম, ‘বাড়িতে আমাকে সাহায্য করার মেয়েটি নেই, আমার প্রচুর ব্যস্ততা, তোমাদের নোংরা পরিষ্কার করার সময় আমার নেই।’ এতে ওদের মনে কোনও রকম সহানুভূতি জাগলো তো না-ই, বরং হেসে উঠলো, যেন আমি মজা করছি। আমি বোঝালাম যে আমি মজা করছি না, আমি সত্যিই চাইছি ওরা যেন ঘরের যে জিনিসটি যেখানে ছিল, সেখানে রেখে আসে। বন্ধুদের আমি রান্নাঘরে নিয়ে চেষ্টা করলাম ওদের নোংরা বাসনগুলো ওদের দিয়ে ধোয়াতে। পারলাম না। ওরা মনে করলো আমি ওদের অপমান করছি। কমোডের সিট না তুলে হিসি করে টয়লেট ভিজিয়ে ফ্লাশ না করে চলে আসে। অভিযোগ করলে খ্যা খ্যা করে হাসে। এই চরিত্র নিয়ে ওরা সংসার করে কী করে আমি বুঝিনা, ওদের বউদের দুরবস্থা অনুমান করে আমি শিউরে উঠি।

 

এই পুরুষেরা কিন্তু সমাজে ‘ভদ্রলোক’ বলে পরিচিত। ওরা মনে করে, ঘরদোর পরিষ্কারের আর গোছানোর কাজ মেয়েদের। আর ওদের কাজ আনন্দ করার, ফুর্তি করার, বসে থাকার, শুয়ে থাকার আর আদেশ করার, এটা চাই, ওটা চাই। মেয়েরা পুরুষতান্ত্রিক-সুবিধের কারণে অচ্ছুতের জাতে নিক্ষিপ্ত হয়। পুরুষের এঁেটা আবর্জনা পরিষ্কার করার দায়িত্ব পুরুষের দিদিমা, ঠাকুরমা, কাকি, মামী, মা, বোন, বউদি, বউ, প্রেমিকা, বান্ধবী, চাকর আর মেথরের। পুরুষের এই মানসিকতা না বদলালে কোনওদিন সমাজে কোনও পরিবর্তন আসবে না। পুরুষ নারীর সম্পর্ক প্রভু দাসীর সম্পর্ক হিসেবেই রয়ে যাবে। মনুষ্যসমাজে বৈষম্য থাকলে তা নারী পুরুষ উভয়কেই ঘোচাতে হবে, এ কারও একার দায়িত্ব নয়। মনুষ্যসমাজে সমতা এবং সুস্থতা আনতে চাইলে নারী পুরুষ উভয়কেই এ কাজে ব্রতী হতে হবে, তা না হলে পুরুষের মস্তিষ্কের অসুস্থতা,


Rx Munna

446 Blog bài viết

Bình luận

📲 Download our app for a better experience!