রামায়ন-মহাভারত

নির্বাচিত কলাম – রামায়ন-মহাভারত

গত বছরের শেষদিকে কলকাতা গিয়েছিলাম। সকাল দশটার দিকে রাস্তায়

নির্বাচিত কলাম – রামায়ন-মহাভারত

 

গত বছরের শেষদিকে কলকাতা গিয়েছিলাম। সকাল দশটার দিকে রাস্তায় হাঁটছি আর অবাক হচ্ছি কলকাতাকে এত ফাঁকা লাগেনি তো কখনও ! যেন পুরো কলকাতা কোথাও নিমন্ত্রণ খেতে গেছে। বিকেলে তারাপদ রায়ের বাড়ি গিয়ে শুনলাম রোববার সকালে কলকাতা কলকাতাতেই থাকে, তবে ঘরের বাইরে বেরোয় না, কারণ দূরদর্শনে তখন ‘মহাভারত’ দেখায়। সারা শহরে তখন আলোচনা তুঙ্গে কবে হবে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ। যুবকেরা গোপনে অপেক্ষা করে বস্ত্রহরণ দৃশ্যে রূপা গাঙ্গুলীর শরীরখানা দেখে নেবার। বস্ত্রহরণের চিত্রায়ণ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় তখন তুমুল হইচই।

 

অ্যান্টেনা উঁচু করে এদেশে আমিও কিছুদিন রামায়ণ দেখেছি। কিছু দেখলে তার আগাগোড়া না জেনে আমার স্বস্তি হয় না। রামায়ণের বিভিন্ন ঘটনায় সীতা বলে, ‘হে নরব্যাঘ্ৰ, তোমাকে বাদ দিয়ে আমার স্বর্গেও রুচি নেই (২/২৭/২১)। তোমার বিরহে, রাম, আমাকে প্রাণত্যাগ করতে হবে (২/২৮/৫)। তুমি পরিত্যাগ করলে আমার মৃত্যুই ভাল (২/৩০/২০)’। এ কি কেবলই প্রেম ? প্রেমে অন্ধ হয়ে সীতার স্বর্গত্যাগ ? প্রেমের অতল জলে ডুবে যদি কেউ মৃত্যুর কথাও বলে, মন্দ শোনায় না। কিন্তু সীতার উপর পতিব্ৰতাধর্ম আরোপ করে ব্রাহ্মণেরা যখন বলে—স্বামীই পরম দেবতা (২/১৯/১৬), ইহজগতে ও পরলোকে সর্বদা পতিই হল নারীর একমাত্র গতি (২/২৭/৬); সে প্রাসাদের উপরে, বিমানে, আকাশে যেখানেই হোক স্বামীর পদচ্ছায়ার বিশিষ্ট স্থান (২/২৭/৯)—তখন নিশ্চয়ই একে আর যা-ই বলা যাক, প্রেম বলতে বাধে।

 

সীতা কৌশল্যাকে বলে তন্ত্রীহীন বীণা বাজে না। চক্রহীন রথ হয় না। পতিহীনা নারী শতপুত্রের জননী হলেও সুখ পায় না (২/৩৯/২৯)। সীতা রামকেও বলে নারীর একটি গতি স্বামী, দ্বিতীয় পুত্র, তৃতীয় আত্মীয়রা, চতুর্থ কোনও গতি তার নেই (২/৬১/২৪)।

 

নারীর জন্য স্বামী জিনিসটি অর্থাৎ পুরুষ জিনিসটি খুব মূল্যবান। পুরুষ যদি বৃক্ষ হয়, নারী তার গায়ে জড়ানো পরজীবী লতা। বৃক্ষের আশ্রয় ছাড়া পরজীবী লতা যেমন বাচতে পারে না, তেমনি পুরুষের আশ্রয় ছাড়া নারীর বাঁচাও অসম্ভব।

 

দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর রাম সীতাকে প্রথম দেখেই বলে—যুদ্ধ করে যে জয়লাভ করেছি সে তোমার জন্য নয় (৬/১১৫/১৫)। নিজের বিখ্যাত বংশের কলঙ্ক মোচনের জন্য (৬/১১৫/১৬)। রাম আরও বলে—যাও, বৈদেহি, তুমি মুক্ত। যা করণীয় ছিল তা আমি করেছি। আমাক স্বামীরূপে পেয়ে তুমি রক্ষসের গৃহে জরাগ্রস্ত যাতে না হও তাই আমি রাক্ষসকে হত্যা করেছি। আমার মত ধর্মবুদ্ধিসম্পন্ন লোক পরহস্তগতা নারীকে কেমন করে এক মুহুর্তের জন্য ধারণ করবে ? তুমি সচ্চরিত্রই হও বা দুশ্চরিত্রই হও মৈথিলি, তোমাকে আমি আজ ভোগ করতে পারি না, তুমি সেই ঘিয়ের মত যা কুকুরে লেহন করেছে (রামায়ণ ৩/২৭৫/১০-১৩)।

 

রাম খুব সহজেই সীতাকে সকল বন্ধন থেকে মুক্ত করে দেয়। সীতার প্রতি ভালবাসার কারণে সে রাবণকে হত্যা করেনি, করেছে রামের স্ত্রী হয়ে সীতা যদি রাবণের প্রাসাদে জরাপ্রাপ্ত হয়, রামের তবে শৌর্যহানি ঘটে, তাই। রাম নিজের শৌর্যহানি চায়নি বলেই রাবণকে হত্যা করেছে। রাম সূক্ষ্মধর্মবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি পরপুরুষ-ছোঁয়া নারীকে সে কী করে ধারণ করবে? তাই সীতা সৎচরিত্র অথবা দুশ্চরিত্র হোক, রামের পক্ষে তাকে ভোগ করা সম্ভব নয়। কুকুরে চাটা ঘি যেমন যজ্ঞে ব্যবহার করা যায় না, তেমনি পরপুরুষ-ছোঁয়া নারীও তার স্বামীর ‘ভোগে’ লাগে না।

 

আমার মনে হয়, রামই সীতার প্রতি সবচেয়ে অবিচার করেছে, এত অন্যায় পাষণ্ড রাবণও করেনি। রাম কখনও জানতে চায়নি রাবণ সীতাকে ধর্ষণ করেছে কি না, কেবল সন্দেহের বশে রাম সীতাকে অপবাদ দিয়েছে। কেবল নারীর সতীত্ব নিয়ে তুমুল হইচই, অথচ সতী শব্দের কোনও পুংলিঙ্গ প্রতিশব্দ নেই। তাই দীর্ঘ বিচ্ছেদের সময় রাম কি করেছে


Rx Munna

446 블로그 게시물

코멘트