বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। বৈশ্বিক মন্দা, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিজ জমির ক্রমাগত হ্রাস এবং বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা মিলিয়ে দেশে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে।
খাদ্য ঘাটতির কারণসমূহ
১. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষি উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এর ফলে ধান, গম ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
২. জমির ব্যবহার ও নগরায়ন: কৃষিজ জমি দিন দিন কমে আসছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলের আশেপাশে। শিল্পায়ন ও বাসস্থানের জন্য জমি ব্যবহারের ফলে কৃষি উৎপাদন কমছে।
৩. অর্থনৈতিক চাপ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: খাদ্যদ্রব্যের দাম দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার কেনা কঠিন হয়ে পড়ছে।
৪. সরবরাহ চেইনে দুর্বলতা: কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে পণ্য কিনে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থাপনা যথাযথ না থাকায় মাঝখানে মজুদদার ও দালালচক্র লাভবান হচ্ছে, ফলে বাজারে খাদ্য ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধি তৈরি হচ্ছে।
মানবিক প্রভাব
খাদ্য সংকট কেবল একটি অর্থনৈতিক বা কৃষি সমস্যা নয়, এটি একটি মানবিক বিপর্যয়ও বটে। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে শিশু ও নারী, অপুষ্টি ও অনাহারের ঝুঁকিতে পড়ছে। স্কুলগামী শিশুদের মাঝে পুষ্টিহীনতা শিক্ষা ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে।
সমাধানের উপায়
নতুন কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার: আধুনিক ও টেকসই কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা জোরদার: আগাম সতর্কতা ও ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।
সরকারি সহায়তা ও সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার: খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও ভর্তুকি বাড়াতে হবে।
ভূমি সংরক্ষণ ও পরিকল্পিত নগরায়ন: কৃষিজ জমি রক্ষায় কঠোর আইন প্রয়োগ প্রয়োজন।