‘অবিরাম’ — একটি শব্দ, যার মাঝে যেন লুকিয়ে আছে থেমে না যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। বাংলা ভাষায় এই শব্দটি শুধু একটি ব্যাকরণিক রূপ নয়, বরং জীবনের এক গভীর দর্শনও তুলে ধরে। জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়া, ক্লান্তি পেরিয়ে স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলা — সবকিছুতেই 'অবিরাম' এক অনুপ্রেরণা।
---
শব্দের ব্যুৎপত্তি
‘অবিরাম’ শব্দটি এসেছে ‘অ’ (নিষেধ) এবং ‘বিরাম’ (বিরতি) এই দুইটি উপাদান থেকে। এর মানে দাঁড়ায় — যে থামে না, যার মাঝে কোনো বিরতি নেই। অর্থাৎ, অবিরাম হলো এমন কিছু যা ধারাবাহিকভাবে ঘটে চলে।
---
দৈনন্দিন জীবনে অবিরামের প্রভাব
মানুষের জীবন নিজেই এক অবিরাম যাত্রা। শৈশব থেকে যৌবন, তারপর বার্ধক্য — সবকিছু একটানা, নিরবিচার প্রবাহে ঘটে চলে। একজন শিক্ষার্থী যখন কঠোর পরিশ্রমে পড়াশোনা করে, তা এক অবিরাম চেষ্টা। একজন কৃষক যখন গ্রীষ্মের দাবদাহেও মাঠে কাজ করে যায়, সেটাও এক অবিরাম শ্রম।
---
প্রকৃতির মাঝে অবিরাম
প্রকৃতি আমাদের চারপাশে অবিরামভাবে চলতে থাকে। নদীর স্রোত, বাতাসের বয়ে যাওয়া, পাখির গান — সবই নিরবিচারে চলে। বর্ষাকালে অবিরাম বৃষ্টি যেমন আমাদের মন ভেজায়, ঠিক তেমনই শরতের কুয়াশা অবিরামভাবেই জমে উঠতে থাকে।
---
সাহিত্যে অবিরামের ব্যবহার
বাংলা সাহিত্যে 'অবিরাম' শব্দটি বহু লেখক- কবির লেখায় এসেছে। জীবনানন্দ দাশ যেমন লিখেছেন অবিরাম প্রকৃতির কথা, তেমনই কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর বিদ্রোহে দেখিয়েছেন অবিরাম প্রতিবাদের ধারা। কবিতা, গান, গল্প — সব জায়গাতেই এই শব্দটি এক ধরণের গভীরতা নিয়ে আসে।
---
উপসংহার
‘অবিরাম’ শুধু একটি শব্দ নয়, এটি জীবনদর্শনের প্রতীক। থেমে না যাওয়ার সাহস, অবিরত চেষ্টা আর স্থিরতা বজায় রাখার শিক্ষা — সবই মেলে এই একটিমাত্র শব্দে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে যদি আমরা অবিরাম হই, তবে সফলতা আমাদের সঙ্গেই থাকবে