ভূমিকা: ইসলামে যাকাত হলো পঞ্চম রুকন বা স্তম্ভ, যা মুসলমানদের উপর ফরজ। এটি এক ধরনের দান, যা মুসলমানদের সম্পদ থেকে গরিব-দুঃখী, এতিম, এবং সমাজের অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সাহায্যের জন্য দেওয়া হয়। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে আল্লাহর রাস্তায় দান করেন, যা তার ঈমান ও আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভের একটি উপায়। এটি মুসলমানদের একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রদর্শন এবং সমাজের সমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
যাকাতের উদ্দেশ্য:
1. ধন-সম্পদের পুনঃবণ্টন: যাকাত সমাজে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সম্পদে সমতা আনার মাধ্যমে ধন-সম্পদের বৈষম্য কমানোর কাজ করে।
2. আধ্যাত্মিক উন্নতি: যাকাত প্রদান ব্যক্তি বা মুসলমানের অন্তরে ত্যাগ এবং নৈতিকতা গড়ে তোলে। এটি কৃপণতা দূর করে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও পবিত্রতা বৃদ্ধি করে।
3. গরিব-দুঃখী মানুষের সাহায্য: যাকাতের মাধ্যমে গরিব ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করে, যারা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষম।
যাকাতের পরিমাণ ও শর্ত: যাকাত প্রদানের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে, যেমন:
নিসাব: যাকাত প্রদান করার জন্য একজন মুসলমানের কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকা জরুরি, যা "নিসাব" নামে পরিচিত। বর্তমানে নিসাবের পরিমাণ সাধারণত 85 গ্রাম সোনা বা 595 গ্রাম রূপা।
এক বছর পূর্ণ হওয়া: যাকাত দেওয়ার জন্য যে সম্পদ থাকবে, তার উপর এক বছর অতিবাহিত হতে হবে।
যাকাতের হার: যাকাতের হার সাধারণত 2.5% (অথবা 1/40)।
যাকাত প্রদানের সময়: মুসলিম সমাজে সাধারণত রমজান মাসে যাকাত প্রদান করা হয়, কারণ এই মাসে ইবাদত ও দানের সওয়াব বৃদ্ধি পায়। তবে যাকাত যেকোনো সময় দেওয়া যেতে পারে, যতক্ষণ না নিসাব পূর্ণ হয়।
যাকাতের গন্তব্য: যাকাতের অর্থ বিভিন্ন জায়গায় ব্যয় করা যায়, যেমন:
1. ফকির ও মিসকিন: গরিব ও দরিদ্র মানুষদের সাহায্য।
2. এতিম: যাদের বাবা-মা নেই এবং তারা সাহায্যের প্রয়োজন।
3. নিঃস্ব ও দুঃস্থ: যারা মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম নয়।
4. মুক্তিপণ: যেসব মানুষ ক্রীতদাস বা বন্দি হিসেবে রয়েছে তাদের মুক্তি দেওয়া।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি:
উপসংহার: যাকাত শুধুমাত্র একটি দান নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। এটি মুসলমানদের মধ্যে আধ্যাত্মিক শুদ্ধতা, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি, এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা আনতে সহায়তা করে। আল্লাহ বলেন, "যাকাত তোমাদের সম্পদকে শুদ্ধ করে এবং বৃদ্ধি করে" (সূরা আত-তাওবা 9:103)। তাই, যাকাত দেওয়া আমাদের একদিকে যেমন আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে পরিচালিত করে, তেমনি অন্যদিকে সামাজিক অস্থিরতা দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।