অনেক বছর আগে, এক গভীর জঙ্গলে বাস করত এক গম্ভীর বাঘ—নাম তার রুদ্র। সে ছিল প্রবল, সাহসী আর একসময় পুরো বনের স্বীকৃত রাজা।
কিন্তু সময় বদলাতে লাগল। পাখিরা গান বন্ধ করে দিল, হরিণেরা দূরে দূরে থাকত, আর ছোট প্রাণীরা গর্তে লুকিয়ে থাকত। কারণ রুদ্র শুধু শক্তিতে শাসন করত, ভালোবাসায় নয়।
একদিন, বনে এল এক নতুন প্রাণী—এক ছোট্ট শিয়ালছানা। তার নাম ছিল নিমাই। সে বাঘকে দেখেই মুগ্ধ, কিন্তু ভয় পেত না।
সে একদিন সাহস করে রুদ্রকে জিজ্ঞেস করল:
“তুমি কি সত্যি রাজা, না কি সবাই শুধু ভয়ে তোমাকে মানে?”
রুদ্র প্রথমে হেসে ফেলল। “ভয়ে মানা আর শ্রদ্ধায় মানা কি এক জিনিস?”
নিমাই বলল, “রাজা হওয়া মানে শুধু গর্জন নয়, কারও কান্না শোনা।”
সেই রাতে বাঘ চুপচাপ বসে ভাবতে লাগল। তার মনে পড়ল, সে ছোট থাকতে তার মা বলেছিল—“শক্ত বাঘ নয়, জ্ঞানী বাঘই রাজ্য টিকিয়ে রাখে।”
পরদিন, রুদ্র ডেকে পাঠাল সব প্রাণীকে। গর্জন না করে শান্ত গলায় বলল,
“আমি চাই তোমরা বলো—তোমরা আমাকে রাজা হিসেবে চাও কি না।”
প্রাণীরা অবাক! অনেক সময় পর তারা খোলামেলা কথা বলার সাহস পেল। কেউ বলল, “আমরা চাই তুমি থাকো, যদি তুমি শোনো।”
আর কেউ বলল, “আমরা রাজা চাই না, বন্ধু চাই।”
রুদ্র প্রথমবার কারও চোখে ভয় ছাড়া কিছু দেখল—ভরসা।
এরপর থেকে রুদ্র আর আগের মতো ছিল না। সে শক্তিশালীই ছিল, কিন্তু অহংকারী নয়। আর বন পেয়ে গেল সত্যিকার “বাঘের রাজা”—যে শাসন করত সাহসে আর হৃদয়ে।