পেহেলগামে
সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই নিরাপত্তা মহড়া আয়োজন করছে ভারত। ভারতে সর্বশেষ এই ধরনের মহড়া হয়েছিল ১৯৭১ সালে। তার আগে এমন মহড়া হয়েছিল ১৯৬২ সালে। ৫৪ বছর পর বুধবার (৭ মে) নিরাপত্তা মহড়ার আয়োজন করেছে ভারত। আর তাতেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই নিরাপত্তা মহড়া?
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় প্রায়ই সাইরেন বাজতো, ব্ল্যাক আউট হয়ে যেত। বাড়ির জানালার কাচে কাগজ লাগিয়ে রাখা হয়েছিল। গাড়ির হেডলাইটের কাচ অর্ধেক কালো করে ঘুরতেন চালকেরা। সেসময় বলা হয়েছিল, সম্ভাব্য আক্রমণ হলে কী করতে হবে এবং কোন কোন জিনিস করা যাবে না।
ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে বহুবার উত্তেজনা প্রবল হয়েছে। তার কয়েকটি উদাহরণ হলো, উরি, পাঠানকোট, সংসদ ভবন আক্রমণ এবং কার্গিল। কিন্তু তখনো এই নিরাপত্তা মহড়ায় অংশ নিতে হয়নি সাধারণ মানুষকে। যা তাদের করতে হবে বুধবার।
কারা মহড়া করাবেন?
কেন্দ্রীয়
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রাম থেকে মহানগর পর্যন্ত দেশের ২৪৪টি সিভিল ডিফেন্স জেলায় এই মহড়া হবে। জেলাশাসক, বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মীরা, হোমগার্ড, সিভিল ডিফেন্স ওয়ার্ডেন, স্বেচ্ছাসেবকরা ছাড়াও থাকবেন এনসিসি, এনএসএস, এনওয়াইকেএসের স্কুল ও কলেজ পড়ুয়ারা। তাছাড়া হটলাইনে বিমান বাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হবে।
যা বলছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো বিমান হামলা হলে কী করতে হবে তা মহড়ায় থাকবে। বিমান হামলার সাইরেন বাজলে কী প্রস্তুতি নিতে হবে তা মহড়ায় থাকবে। কন্ট্রোল রুম ও শ্যাডো কন্ট্রোল রুম কীরকম কাজ করছে তাও দেখা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
জানিয়েছে, ব্ল্যাক আউট হলে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সেটাও জানানো হবে। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলির জন্য কী ব্যবস্থা নিতে হবে সেটাও বলা হবে। কোনো হামলা হলে কীভাবে উদ্ধার করতে হবে, কীভাবে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নিতে হবে, সেটাও বলা হবে। দমকল এবং উদ্ধারকারীদের প্রস্তুতির বিষয়টিও দেখা হবে।
যে সব জায়গা নিরাপদ নয়, সেখান থেকে দ্রুত মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার মহড়াও হবে।
কেন এই মহড়া?
এরকম মহড়া ৫৪ বছর পর আবার হচ্ছে। এরকম মহড়া হচ্ছে, পহেলগাম-কাণ্ডের পর। এরকম মহড়া হচ্ছে, সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এবং প্রতি রাতে গুলির লড়াই চলতে থাকায়। ভারত অভিযোগ করেছে, পাকিস্তানের সেনা প্রতিদিন কোনোরকম উসকানি ছাড়া বিভিন্ন সেক্টরে গুলি চালাচ্ছে। তখন তাদের জবাব দিচ্ছে বিএসএফ।
দেশটির
অবসরপ্রাপ্ত লেফটোন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, “১৯৬২ সালে এটা আসামে হয়েছে। বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় হয়েছে। সেসময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৩ দিনের যুদ্ধ হয়েছিল। তখন এই ড্রিলের গুরুত্ব বোঝা গিয়েছিল। এটা হচ্ছে রেডি থাকা। খুব তাড়াতাড়ি সাধারণ মানুষ কী করবেন তা তাদের শিখিয়ে দেওয়া হয়। এই মক ড্রিলে সব ধরনের বিষয় থাকে। সেখানে কখন লাইট অফ করতে হবে, জল ভরে রাখতে হবে, আগুন লাগলে কী করতে হবে থেকে শুরু করে কার কী কাজ হবে এ নিয়ে বিস্তারিতভাবে বলা হয়। সেজন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ।''
সাবেক আইপিএস অফিসার এবং মরিশাসের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শান্তনু মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''মানসিক প্রস্তুতির জন্য দরকার হয়। সবাই বুঝতে পারেন, তাদের কতটা সতর্ক থাকতে হবে। এটা একটা প্রস্তুতি ও মানুষকে সচেতন রাখার জন্য করা হয়।''
কিন্তু এতবছর পর কেন মহড়া করতে হচ্ছে ভারতকে? তার মানে কি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ আসন্ন?
এমন প্রশ্নের
জবাবে উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''ভারত একটা প্রত্যাঘাত তো করবে। কিন্তু কবে করবে, কখন করবে, কীভাবে করবে তারা ঠিক করবে। পাকিস্তান বিষয়টি নিয়ে ধন্ধে থাকবে।''
তিনি আরও বলেন, ''এর মধ্যে একটা সারপ্রাইজ এলিমেন্ট আছে। হয়ত দুই বছর আমরা কিছু করলাম না। কিন্তু যখন করলাম তখন তা কার্যকরী হবে এবং পাকিস্তান কিছুদিন এই ধরনের কাজ করা থেকে বিরত থাকবে।''
এদিকে, দেশটির অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল কে পি ত্যাগী বলেন, ''জেনারেল কোছার বলে দিয়েছেন, ভয় পাওয়ার দরকার নেই। এটা যুদ্ধ নয়, এটা শুধুমাত্র যদি যুদ্ধ হয়, তাহলে আমরা কী করব?''
শান্তনু মুখোপাধ্যায়ের ভাষ্য, ''এখন দুই দেশের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা আছে বলে এটা জরুরি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, যুদ্ধ শুরু হবে। এটা নিজেদের প্রস্তুত রাখা। মানুষকে সচেতন রাখা। এখন তো সরকারি ও বেসরকারি অফিসেও আগুন লাগলে কী করতে হবে তার মহড়া হয়। মহড়ার পুরো বিষয়টিই হলো, কিছু হলে তার মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকা। এর বেশি কিছু নয়।