রাত্রি ঠিক বারোটা বাজে। শহরের পুরনো এক বাড়িতে সদ্য ভাড়া এসেছে রুদ্র। বাড়িটা অনেক পুরনো, লোকমুখে শোনা—ওখানে কেউ বেশিদিন থাকতে পারে না।
রুদ্র তেমন কিছু বিশ্বাস করত না। প্রথম কয়েকদিন সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু এক রাতে ছাদের দরজাটা আচমকা খুলে গেল। কৌতূহলে ছাদে উঠল রুদ্র—চাঁদের আলোয় দেখা গেল এক মেয়েকে, সাদা শাড়ি, খোলা চুল, আর চোখ দুটো যেন গভীর জলের মতো।
— "তুমি কে?" রুদ্র জিজ্ঞেস করল।
— "আমি এখানে থাকি… অপেক্ষা করি।" মেয়েটির গলা ছিল শান্ত, কিন্তু ঠান্ডা।
— "কোনো কিছুর অপেক্ষা?"
— "ভালোবাসার। কেউ যদি আমাকে দেখে না ভয় পায়… আমি তার কাছেই যেতে পারি," মেয়েটি হালকা হাসল।
রুদ্র তার চোখে তাকিয়ে বুঝতে পারল, এই মেয়েটি ভৌতিক হলেও, তার চোখে ছিল শোক, অভিমান… আর একটুকরো ভালোবাসা।
এরপর প্রতিদিন রাত বারোটায় মেয়েটি আসত। রুদ্র আর ভয় পেত না, বরং অপেক্ষা করত। মেয়েটি কখনও ছুঁয়ে দিত রুদ্রের হাত, ঠান্ডা একটা বাতাস বয়ে যেত শরীর জুড়ে—কিন্তু ভয়ের বদলে সেখানে ছিল এক রকম নরম অনুভব।
এক রাতে, মেয়েটি বলল,
— "তুমি চাইলে… আমি আর ফিরে আসব না।"
রুদ্র চুপ করেই বলল,
— "তুমি থাকো… যতদিন আমি আছি, ততদিন তুমি একা নও।"
আর সেই রাত থেকে, কেউ আর ছাদের মেয়েটিকে “ভূত” বলেনি। সে ছিল একজন অপেক্ষমান প্রেত, যে ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়ে হারিয়ে যাওয়া জীবনের দিকে আবার ফিরে তাকাতে শিখেছিল।