বান্ধুবীর ডিভোর্স ।

ডিভোর্স শব্দটা আমার কাছে একদমই ভালো লাগে না ।

গত তিনমাসের মধ্যে আমার দুইজন খুব কাছের বান্ধবীর ডিভোর্স হয়েছে। খুব বড়ো কারণ না ডিভোর্সের। আপাতদৃষ্টিতে কোনো কারণই না। প্রথমজনের প্রেমের বিয়ে। দুইবছরের বিবাহিত জীবনে স্বামীর সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছে সর্বসাকুল্যে সাতদিন। বিয়ের শুরুতে লং ডিস্টেন্স ছিলো। ছুটি পেলেই ছেলেকে মাকে দেখতে যেতে হইছে। প্রতি ছুটিতেই। বৌ এর সাথে দেখা করা খুব একটা ইম্পর্ট্যান্ট না। আমার বান্ধবী দু একবার জোর করে ছুটির সময় ওর শ্বশুরবাড়ি গেছে কিন্তু রাত হলেই শ্বাশুড়ির মাথা ব্যথা, জ্বর। এবং জ্বরের ওষুধ হচ্ছে ছেলে পাশে বসে থাকা। 

 

ফাইনালি ছেলে ট্রান্সফার নিয়ে ঢাকায় আসলে আমার বান্ধবী ভাবছিলো এবার অন্তত একসাথে থাকা হবে। ছেলে ঢাকা আসা মাত্রই ওর শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ঢাকা এসে তিন রুমের বাসা নিলো। শ্বাশুড়ি ওকে জানায় দিলো "তুমি আর কিছুদিন যেখানে আছো সেখানেই থাকো। এই বাসায় তো জায়গা নাই। এক রুমে ওর আব্বু আর আমি, অন্য রুমে ওরা দুই ভাই, আর ছোটো রুমটায় তোমার ননদ থাকবে। ছেলে মাঝে মাঝে তোমার সাথে দেখা করে আসবে।"

 

বিয়ের আগে ছেলে যুদ্ধ করে মাকে মানাইলেও বিয়ের পর তার বোধোদয় হইছে যে "মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত।" এই ছোট্ট বিষয়টার সাথে আমার বান্ধবী মানাইতে পারে নাই। এতোটাই স্বার্থপর যে দুই বছরে ৭দিনও স্বামীর সঙ্গে থাকতে না পারার মতো সামান্য বিষয়টির সাথে একটু কম্প্রোমাইজ করতে পারলো না! 

 

২য় বান্ধবীর এরেঞ্জ ম্যারেজ ছিলো। শ্বাশুড়ি যথেষ্ট শিক্ষিতা ও আধুনিক। আমার বান্ধবীকে আদরও করতো। মুখে তুলে খাওয়ায় দিতো। কিন্তু তার বোধহয় ধারণা বৌ এর রান্না খেলে তার ছেলে মারা যাবে। বৌ খাবারে বিষ দেবে। তাই ৪ বছরে একদিনও আমার বান্ধবী সখ করেও তার স্বামীর জন্য কিছু রান্না করতে পারে নাই। করলেও সেটি স্বামী পর্যন্ত পৌছায় নাই। "আমার বাবু আমার হাতের রান্না ছাড়া অন্য কিছু খেতে পারে না"। যদিও তার বাবু অফিসে, সাইট ভিজিটে গিয়ে রোজা রাখতো না। গোগ্রাসেই গিলতো।

 

এর মধ্যে একবার সে কনসিভ করে। কিন্তু শ্বাশুড়ির বাবুর কি বাবা হওয়ার বয়স হইছে নাকি? তাছাড়া তার ভাইবোন এখনো পড়াশুনা করে। এখুনি বাচ্চা নিলে ভাইবোনের দায়িত্ব কীভাবে পালন করবে? তাই আমার বান্ধবীর কনসেন্ট ছাড়া খাবারের মধ্যে ওষুধ দিয়ে এবরশান করাইছে। আর এইটা জানার পর তার স্বামীর রিএকশান ছিলো "দ্যাখো মা কি আমাদের খারাপ চায়? আমাদের সবথেকে ভালো যদি কেউ চায় সেটা হলো আমার মা।" 

 

এবরশানের পর আমার বান্ধবী প্রায় ৮ মাসের মতো বিছানায় পড়ে ছিলো। সুস্থ হওয়ার পর ডিভোর্স দিছে। শ্বাশুড়ির নামে মামলা করছিলো। আপডেট জানিনা। এইটা কি ডিভোর্স দেওয়ার মতো কিছু বলেন? শ্বাশুড়ি তো ভালই চাইছিলো। না হয় বাচ্চাটা নষ্টই করে দিছে। তাই বলে ডিভোর্স??? মামলা?? এই সামান্য বিষয়ই এখিনকার মেয়েরা কন্সিডার করতে পারে না, সংসার কীভাবে করবে?

 

কালকে এ এস পি পলাশ সাহার সুইসাইডের পর থেকে দেখতেছি এখনকার মেয়েরা কী পরিমাণে ইনকনসিডারেট। শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে দেখতে পারে না। একজনকেও বলতে দেখলাম না এইসব ছেলেরা মায়েরা ঠিক কী পরিমাণে টক্সিক। এইসব ছেলের মায়েরা একেকটা মেয়ের লাইফ কীভাবে জাহান্নাম বানায় দিতে পারে!

 

পলাশ সাহার ওয়াইফ কতটা দোষী বা মা কতটা নিষ্পাপ আমার জানা নাই। সেই জাজমেন্টেও যাবো না। বাট নিজের চারপাশে আমি এইরকম অন্তত দশটা এক্সাম্পল দেখাইতে পারবো যে শ্বাশুড়ির পজেসিভনেসের জন্য একেকটা মেয়ের লাইফ শেষ হয়ে গেছে। আমি তো জাস্ট দুইজনের কথা বললাম।

 

আমি জাস্ট এইটুকুই বুঝি না যে এইসব মায়েরাই বা কেন ছেলে বিয়ে দেয় আর এইসব ছেলেরাও বা ঠিক কী কারণে বিয়ে করে!

 

~ Rimana Akter


Блог сообщений

Комментарии