আধো অন্ধকার ঘর। একটা মৃদু যান্ত্রিক শব্দ কানে আসছে। মধুরা চেষ্টা করছে চোখ খুলতে। কিন্তু ওর নিজের কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গই যেন নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। অনেক কষ্টে চোখ খোলে ও। চোখ যায় যান্ত্রিক শব্দটার উৎসের দিকে। মাথার উপর একই ছন্দে ঘুরে চলেছে পাখাটা। জানলাগুলোয় ভারী পর্দা দুলছে। তা ভেদ করেই বাইরের মৃদু আলো একটা অস্বচ্ছ আলো আঁধারি সৃষ্টি করেছে। মধুরা উঠে বসতে চেষ্টা করে। সারা শরীরে তীব্র ব্যাথা। মাথায় যেন কয়েক কেজির পাথর ভরে দিয়েছে কেউ। কনুইতে ভর দিয়ে কোনরকমে শরীরটাকে টেনে হিঁচড়ে তুলে বসায় সে। আর তখনই দারুন চমকে দেখে তার শরীরে একটা সুতো পর্যন্ত নেই। নিজের নগ্নতায় নিজেই লজ্জায় ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে সে। পাশে রাখা সাদা চাদরটা কোন রকমে টেনে নিজের কাছেই নিজেকে আড়াল করে। গলার কাছে দলা পাকিয়ে ওঠে কান্না। একে একে মনে পড়ে তার সব আগের দিনের ঘটনাগুলো। শুধু কি আগের দিন? বলা ভালো আগের বেশ কিছুদিনের কথা। একটা সুন্দর মিষ্টি জীবন যাপনই তো করছিল মধুরা। বাবা-মা, সে আর ছোট বোন মধুজা। চারজনের সুন্দর একটা ছোট্ট পরিবার। দুই বোনই তারা বাবা-মায়ের ভীষণ আদরের। মধুরা রবীন্দ্রভারতী ইউনিভার্সিটি থেকে বাংলায় মাস্টার্স করছে। পাশাপাশি চলছে তার ছবি আঁকা। বিভিন্ন এক্সিবিশনে ছবি যাচ্ছে তার। অন্যদিকে বোন মধুজা কলেজের ফাইনাল ইয়ারে পড়ার পাশাপাশি তার ক্লাসিকাল সংগীতের অনুষ্ঠানে বেশ সার্থকতা পাচ্ছে। বাবা মা ওদের দুই বোনকে নিয়ে গর্বিত ছিলেন। মধুরার জন্য নানা সম্বন্ধও আসছিল। মধুরার এই তেইশ বছরের জীবনে প্রেম সেভাবে আসেনি। স্কুল জীবনে কোচিং এর কয়েকজনকে ভালো লাগলেও সে ভালোলাগা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কলেজে পড়তে একজন প্রফেসরকে বেশ লাগতো। পরে জেনেছিল তিনি বিবাহিত। নিজেই লজ্জা পেয়েছিল। তাছাড়া মধুরা খুব ভালো করেই চেনে তার পরিবারকে৷ তার মা বাবা দুজনেই অত্যন্ত রক্ষণশীল। এই যুগের মাটিতে দাঁড়িয়ে হয়ত এতটা রক্ষণশীলতা সত্যিই যুক্তিহীন। ছোটবেলায় এক এক সময় এই রক্ষণশীলতার জন্য দমবন্ধ অনুভূতিও হত না তা নয়। কিন্তু তারপর একসময় মানতে মানতে সেটাই অভ্যাসে পরিনত হয়েছে৷ তাছাড়া সংরক্ষণশীল মানসিকতা ছাড়া বাবা মা দুজনেই তো দুই মেয়েকে তাদের প্রয়োজনের সবকিছু দিয়েছেন। কিম্বা বলা ভালো প্রয়োজনের বেশী কিছুই হয়ত দিয়েছেন৷ তাই একসময় এই জীবনের অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে তারা দুই বোন৷ সেই জন্য বাবা মা যখন জিজ্ঞেস করেছিল তার জন্য সম্বন্ধ দেখবে কিনা সে বলেছিল-" তোমরা যা ভালো বোঝো।"
Tanvir Tanvir Farhan
86 Blog posts