প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য
—একটি জীবন্ত কবিতা
মোঃ আসিফ ফয়সাল

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য

—একটি জীবন্ত কবিতা

 

প্রকৃতি—একটি বিস্ময়ের নাম। এই প্রকৃতি আমাদের চারপাশে এমনভাবে বিরাজমান, যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস। কখনো মেঘলা আকাশে ভেসে যাওয়া সাদা তুলোর মতো মেঘ, কখনো দিগন্তজোড়া সবুজ মাঠ, আবার কখনো ফোটে ওঠা শুভ্র ডেইজি কিংবা গাঁদা ফুল—সব মিলিয়ে প্রকৃতি যেন এক অপার সৌন্দর্যের আধার। মানুষ তার জন্মলগ্ন থেকে এই প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে উঠেছে, ভালোবেসেছে প্রকৃতিকে, আবার অনেক সময় তার অবহেলাও করেছে। তবুও প্রকৃতি কখনো অভিমান করেনি, বরং প্রতিনিয়ত তার সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিয়েছে সবখানে—নির্বিচারে, নিঃস্বার্থভাবে।

 

প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র্য

 

প্রকৃতির সৌন্দর্য কেবল একটি নির্দিষ্ট রূপে সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিটি ঋতুর রয়েছে নিজস্ব বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য। বসন্তে যখন কোকিলের কুহুতান আর পলাশ-শিমুলের রঙে ভরে ওঠে প্রকৃতি, তখন মনে হয় পৃথিবী যেন এক নতুন প্রাণ পায়। গ্রীষ্মে সূর্যের প্রখর তাপে প্রকৃতি রুক্ষ হলেও বর্ষায় সে ফিরে পায় প্রাণ, উদ্ভিদ জেগে ওঠে। শরতে সাদা কাশফুলের ঢেউয়ে মন হারিয়ে যেতে চায়। হেমন্তে ধানক্ষেতের হলুদ সোনালী রঙ, আর শীতে কুয়াশার চাদরে মোড়া প্রভাত—সব মিলিয়ে প্রকৃতি এক অশেষ রূপের সম্ভার।

 

ফুল: প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ অলঙ্কার

 

ফুল প্রকৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপাদান। ডেইজি ফুলের মতো এক একটি ছোট্ট, সাদাসিধে ফুল যেন প্রকৃতির সরল সৌন্দর্যের প্রতীক। গোলাপ তার রঙে ও সুবাসে রোমান্টিকতা ছড়ায়, সূর্যমুখী উদ্ভাসিত করে দিন। এই ফুলগুলো শুধু দৃষ্টির শান্তিই দেয় না, বরং মানসিক প্রশান্তিও এনে দেয়। ফুল মানুষের হৃদয়কে কোমল করে তোলে, মনকে নির্মল করে।

 

প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক

 

মানুষ প্রকৃতির সন্তান। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ প্রকৃতির সাথে গভীরভাবে যুক্ত ছিল। আদি কৃষিনির্ভর সমাজ থেকে শুরু করে আজকের নগরসভ্যতায়ও প্রকৃতি মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। আমরা গাছ থেকে নিঃশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাই, নদী আমাদের দেয় পানি, পাহাড় থেকে আসে খনিজ সম্পদ। কিন্তু এই প্রয়োজন ছাড়াও প্রকৃতির রয়েছে মানসিক ও সাংস্কৃতিক অবদান। কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বিশ্বসাহিত্যের বহু কবি ও লেখক প্রকৃতিকে কেন্দ্র করেই সৃষ্টি করেছেন অমর সাহিত্য।

 

প্রকৃতির ছোঁয়ায় মানসিক প্রশান্তি

 

বর্তমান সময়ে শহরের ব্যস্ততা, যান্ত্রিক জীবন আর ক্লান্তিকর দিনগুলোতে প্রকৃতি যেন হয়ে ওঠে একমাত্র আশ্রয়। বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাও বলছে, সবুজ প্রকৃতি মানুষের মানসিক চাপ কমায়, মন ভালো রাখে এবং সৃজনশীলতাও বাড়ায়। সকালে পাখির কিচিরমিচির, কিংবা নদীর কলকল ধ্বনি শুনে দিন শুরু হলে সেই দিন হয় সত্যিই অন্যরকম। প্রকৃতির রঙ, গন্ধ ও ছোঁয়া মানুষের হৃদয়ে শান্তি এনে দেয়—এ এক অকৃত্রিম বন্ধন।

 

প্রকৃতি সংরক্ষণ: সময়ের দাবি

 

যদিও প্রকৃতি আমাদের অফুরন্ত সৌন্দর্য ও সম্পদ দিয়ে যাচ্ছে, তবুও আমরা প্রতিনিয়ত সেই প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি। বনভূমি উজাড়, নদীর দখল, বায়ুদূষণ, প্লাস্টিক দূষণ প্রভৃতি কারণে প্রকৃতি আজ হুমকির মুখে। এর ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমাদেরই—অতিরিক্ত গরম, খরার প্রকোপ, প্রাণীর বিলুপ্তি, রোগব্যাধির বিস্তার ইত্যাদি। তাই সময় এসেছে প্রকৃতি রক্ষার। গাছ লাগানো, জলাভূমি সংরক্ষণ, বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ—এসব আমাদের মৌলিক দায়িত্ব হওয়া উচিত।

 

শিশুদের প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় জরুরি

 

বর্তমান প্রজন্ম মোবাইল-ট্যাবের মধ্যেই সময় কাটায়, প্রকৃতির সান্নিধ্য থেকে তারা বঞ্চিত। অথচ একটি শিশু যদি গাছের নিচে খেলতে পারে, ফুলের ঘ্রাণ নিতে পারে, পাখির ডাক শুনে বড় হতে পারে—তাহলে তার মনুষ্যত্ব ও মানবিক গুণাবলি আরও বেশি বিকশিত হবে। তাই শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের প্রকৃতির সঙ্গে

যুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।


Md Ashif Foyshal

21 博客 帖子

注释