#মন_পাঁজরে_তুই
#আরেব্বা_চৌধুরী
#পর্বঃ ০৫
আ আসলে বলে মাথা চুলকাতে লাগলো আবইয়াজ, স্লা কি ফাঁসাটা-ই না ফেঁসে গেলাম।
এর মধ্যে নীলিমা হক বলে উঠলেন থাক আর কিছু বলা লাগবে না, আদিকে বলো বাসায় আসতে।
-কি বলেন ও বাসর করবে না। (আবইয়াজ)
-কিহ?
-এরে মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে এখন কি করি। বলে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরলো আবইয়াজ।
-কাল বাড়ি আসবে আন্টি প্লিজ না করবেন না, রাত অনেক আম্মু তাকে বাইরে বের হতে দিবে না এখন।
-ঠিক আছে কাল সকালেই যেনো চলে আসে।
-ওকে ওকে আন্টি।
কল কেটে দিলো আবইয়াজ।
একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বলে উঠলো, আবইয়াজ যাবে যেখানে বাঁশ খাবে সেখানে, আবইয়াজ মানেই বাঁশ বাগানের মালিক।
জীবনে যতগুলো কাজ করেছি সব গুলায় খুব নিখুঁত ভাবে মা*রা খেয়েছি।
-যাইহোক আমার তোতাপাখি যা তুই আর রিফাত মিলে কাজি সাহেবকে উঠিয়ে নিয়ে আয়।
রিফাত মুখ ভেঙিয়ে বললো এটা আবার কোনো কাজ নাকি, এই যাবো আর আসবো। বলেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো সাদিন ও রিফাত।
রাকিব বলে উঠলো আমিও একটু আসছি।
-কই যাবি তুই।
-বন্ধুর জন্য গিফট আনতে, নতুন নতুন বিয়ে করেছে।(রাকিব)
-ওর থেকে অনেক কিছু শেখার আছে ভাই, দেখ আমার জন্য কত ভাবে তোরা তো কিছুই দিলি না। (আদি)
-আমি যে আস্তো আমি'টাকেই তোর বোনকে গিফট করে বসে আছি এটা চোখে পড়ে না?(আবইয়াজ)
-তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিস আবইয়াজ নাহলে হঠাৎ একদিন শুনবি আবিরার বিয়ে হয়ে গেছে।(রাকিব)
-এতো সহজ নাকি? আবইয়াজ খাঁন থাকতে আবিরার কোথাও বিয়ে হতে দিবে না।
-এ্যা মগের মুল্লুক পাইছে।(আদি)
-সেটা সময় বলে দিবে।
ঘন্টা খানেকের মধ্যে কাজী নিয়ে হাজির রিফাত সাদিন।
-ভাইরে ভাইয়া কাল কাজীও পাওয়া যায় না। কি কষ্টে যে এনাকে ম্যানেজ করছি।এ আদি তোর জন্য অনেক কষ্ট করতেছি আমরা বিয়ের পর বড়সড় একটা ট্রিট দিস তো।
-ট্রিট সেতো তোরা প্রত্যেকে মিলে আমাকে দেওয়ার কথা, গ্রামবাসীর ভোজন হতে রক্ষা করেছি তোদের আমি।
-আদি বিয়েটা আগে শেষ কর নাহলে পরে দেখবি বিয়ে করেছিস ঠিকই কিন্তু বাসর করতে পারিস নি।
আবইয়াজের কথায় লাজুক হাসলো আদি।
-কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিন।
-কাজী সাহেব ছেলে মেয়ের জন্ম সনদ চাইলেন।
-আংকেল এসব কিছুই এখন সাথে নাই, ওরা মুখে মুখে বলুক আপনি আপাতত এভাবেই বিয়ে পড়িয়ে দিন পরে একদিন নাহয় সময় করে সব কাগজপত্র জমা দিয়ে আসবে।
-আচ্ছা, কাবিন কত লিখবো বাবা?
-ও তো ফকিন্নি ওর কিছুই নাই শুধু একটা বোন ছাড়া সেটাও আবার আমি নিয়ে নিবো।
-লিখেন পাঁচ লক্ষ।(আদি)
-তোরে বেচে দিলেও তো পাঁচ লক্ষ বের হবে না।(আবইয়াজ)
-বিয়েটা করবো নাকি উঠে চলে যাবো কোন'টা?(আদি)
-আরেহ নাহ কর ভাই। কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।
অতঃপর কাজী বিয়ে পড়াতে লাগলেন।
-শামসুল হকের একমাত্র পুত্র তালহা আদি হক পাঁচ লক্ষ এক টাকা মোহরানা ধার্য্য করিয়া সেলিম তালুকদারের বড় কন্যা মোমো তালুকদারকে বিবাহ করতে রাজি? বলুন কবুল।
আদি এক নিঃশ্বাসে তিনবার কবুল বলে ফেললো।
অতঃপর কনের কাছে গেলেন কাজী সাহেব।
-সেলিম তালুকদারের বড় কন্যা মোমো তালুকদার পাঁচ লক্ষ এক টাকা মোহরানায় শামসুল হকের একমাত্র পুত্র তালহা আদি হক'কে বিবাহ করতে রাজি?
কবুল বলুন।
মোমো লাজুক দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকালো মোমো'র সাথে চোখাচোখি হতেই সাথে সাথে আদি চোখ নামিয়ে নিলো।
মোমো চোখ বন্ধ করে পরপর তিনবার কবুল বললো।
উপস্থিত সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো।
কনে ও বরের পর সাক্ষীদের ও সাক্ষর নেওয়া হলো।
আবইয়াজ আগেই বলে ফেললো সে মেয়ে পক্ষের সাক্ষী।
যেই কথা সেই কাজ।
সাদিন কাজী সাহেব কে এগিয়ে দিয়ে এলো।
রাকিব এক প্যাকেট ক*ন*ড*ম আদির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো এই নে তোর স্পেশাল গিফট এটা আনতেই বাইরে গেছিলাম আজকের দিনে খুব কাজে দিবে তোর।
আদি ধমকিয়ে বলে উঠলো লুইচ্চা একটা।
রাকিবের সাথে তাল মিলিয়ে আবইয়াজ বললো, এ আদি তুই যদি না পারিস তাহলে আমাদের ডাকিস।
-আবইয়াজের বাচ্চা।(আদি)
-নো নো মে হু আহনাফ খাঁনের বাচ্চা।
-ভাই আয় এই ঘরে আর আমাদের থাকা উচিত না বেচারাকে অন্তত বাসর টা করতে দে।(রিফাত)
-হ্যাঁ'রে ভাই আমাদের আর বন্ধু সভায় ঠাই হবে না, ভালো থাকিস বন্ধু জানি আজকের পর থেকে তোকে চিরতরে হারালাম, মানতে কষ্ট হচ্ছে ৫ বন্ধুর মধ্য থেকে একজন আর আমাদের মধ্যে নাই।(চোখ মুছে নাক টেনে কথাগুলো বললো আবইয়াজ)
-স্লা আমি কি মরে যাচ্ছি।(আদি)
-না মধু খাইতে যাচ্ছো যে মধুর বিষক্রিয়া আমাদের উপর এসে পড়বে, মা মোমো গুরুমা মাগো মা মহিমা সোনামা তুমি আমাদের বন্ধুকে আমাদের থেকে কেড়ে নিলে মা, তুমি মহিমা তোমার নেই কোনো তুলনা, এই নাবালক বাচ্চাদের রেখে তুই একা একা কেমনে বাসর করবি ভাই। বুকের বাম পাশে চিনচিন ব্যাথা করছে মনে হয় গ্যাস্টিক টাও বেড়ে গেছে,, তুই আজ আমাদের সাথে থেকে গেলে হয় না আদি?(আবইয়াজ)
-বুঝেছি ভালোয় ভালোয় যাবি না তোরা। এক এক করে টেনেহিঁচড়ে প্রত্যেক কে রুমের বাইরে বের করে দিয়ে দরজা আটকিয়ে দিলো আদি।
বাইরে থেকে রাকিব হাক দিয়ে বলতে লাগলো, "এ আদি প্রোটেকশন নিতে ভুলিস না।"
-তো অনাথ বাচ্চারা তোমরা এতো রাতে কোথায় যাবে?(আবইয়াজ)
-অনাথ আশ্রমে চল, না মানে নিচে চল দেখি আশেপাশে কোনো টং দোকান খোলা পাওয়া যায় কি না, সেখাই বসে নাহয় চা খেয়ে রাত পার করে দিবো।(রিফাত)
-কি দুর্ভাগ্য আমার বুঝতে পারছিস আবইয়াজ? আজ আমার বিয়ে হবার কথা ছিলো কিন্তু মাঝখান থেকে আদি সিট বুকিং করে ফেললো।(রাকিব)
-আজ কুত্তার মা রাজি থাকলে আমাদের ও একটা টোনাটুনির সংসার হতো।(আবইয়াজ)
-ভাই ওর নাম আবিরা, সুন্দর করে ডাক কি একটা নাম দিছস কুত্তার মা।(রিফাত)
-তোর গায়ে ফোস্কা পড়ে কেন? তুই বিয়া করবি ওরে?(রাকিব)
-তোরা দুইটাই হইছস একই জাতের, দোষ তোদের না দোষ তোদের ১৪ গোষ্ঠীর, জন্মের পর মুখে মধু দেয় না।(রিফাত)
-এই মোকলেস তুই কি আসলেই আমাদের বন্ধু? (রাকিব)
-আর একটা কথা বলছিস তো রিফাত তোর ১৪ গোষ্ঠীর হিস্ট্রি আমি মাইক দিয়ে পুরা এলাকা বাসীকে জানিয়ে দিবো।(আবইয়াজ)
-হুহ ঠিক হইছে, এটাই করা লাগবে, হেতি পরী হইতে চায় পরী হিহিহি ডানা ছাড়া উড়তেছে আমগো রিফাত।(রাকিব)
-তোতোমলা জঝগলা থামাওও ত্তো, নিনিচে আচো।(সাদিন)
হুহ বলে মুখ ভেঙিয়ে সবার আগে রাকিব নিচে নেমে গেলো।
রিফাত আনমনে হাটছে, এই কালসাপের জন্যই কিনা আজ আরেক বেডার মেয়ে ভাগাই আনছিলাম। সালায় এখন চিনেই না আমারে।
টং দোকানে বসে চার বন্ধু চা খেতে খেতে লুডু খেলায় মেতে উঠলো।
সব সুদ এখন তুলবো রাকিব তোর গুটি কেটে কেটে আজ যদি পাছায় আগুন না ধরিয়েছি তাহলে আমি রিফাত না।
-কি রিফাত কি গুণগুণ করিস?(আবইয়াজ)
-মামা আমি আর রাকিইব্বা এক দান খেলি।
-আচ্ছা খেল।
রিফাত সব গুটি রাকিবের পিছনে লাগিয়ে দিলো।
বেশ ক্ষিপ্ত হলো রাকিব।
-রিফাত আমার কি মনে হয় জানিস? তোর গুটি কম পরে গেছে আরো কয়টা আমার পেছনে লাগানো উচিত ছিলো।
রিফাত রাকিব খেলায় ব্যস্ত তার পাশেই বসে আছে সাদিন।
আবইয়াজ এখান থেকে উঠে চলে গেলো।
নির্জন রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে আছে সে, এই শহরে কেউ শূন্যতায় হাসে কেউ পূর্ণতায় কাঁদে আমি তোমাকে পাবো তো মায়াবিনী?
তোমাকে দেখার পর আমার আর কাউকে ভালো লাগে না, আর কাউকে নিয়ে কল্পনা করতে পারি না, না চাইতেও সারাক্ষণ তোমায় নিয়ে ভাবি ওই অসুখ'টা সারবে কবে বলতে পারো? তোমাকে প্রথম দেখায় বুকের মধ্যে যে দাগ কেটেছে সেটা তুমি ব্যতীত কেউ সারিয়ে তুলতে পারবে না।
হয়তো তোমাকে পেয়ে গেলে আমি-ই হবো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটালো রিফাতের ডাকে।
-এ আবইয়াজ।
-কি'রে ভাই।
-এদিকে আয়।
আবইয়াজ প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে সটানভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।
-কি হলো আয়?
-আমাকে কি তোর চাকর মনে হয় যে তুই ডাকবি আর আমি আসবো।
-তুই আসলেই একটা ঘাড়ত্যাড়া, আদি তো আর এমনি এমনি তোর নাম ঘাড়ত্যাড়া দেয় নি। বলে বাধ্য হয়ে রিফাত আবইয়াজের কাছে আসলো।
-এবার বল ডাকলি কেনো?(আবইয়াজ)
-তোর ফোন বন্ধ কেনো?
-কই কি বলিস?
পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো ফোন সত্যিই অফ।
-আয় হায় খেয়াল করি নি তো, না জানি আমার মা জননী কত ফোন দিছে আল্লাহ।
-মা জননী না তোমার গার্লফ্রেন্ড কান্না কাটি করছে ফোন অফ দেখে আজ নাকি সারাদিনে একবারও কথা হয় নি।
-দেখ ভাই গার্লফ্রেন্ড বলবি না তাকে আমি কখনো ওই নজরে দেখি না, সে আগে যেমন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো এখনো ঠিক তেমনই আছে।
-যাইহোক মেঘা মিষ্টিকে কল করে কান্নাকাটি করছে তোর ফোন অফ সে নাকি অনেক কল করছে আজ সারাদিন কথাও হয় নি তোর সাথে। তোর কোনো বিপদ হলো কি না, মাত্রই মিষ্টি আমাকে কল করে বললো।
-ওর এই অতিরিক্ত কেয়ার না আমার বিরক্ত লাগে, সারাদিন এতো এতো ফোন এতো কেয়ার এতো শাসন দেখে মনে হয় আমি ওর জামাই লাগি।
-ও তো তোকে সেটাই ভাবে।
-তাতে আমার কি করার আছে বল? আমি তো তাকে কতবার বুঝানোর ট্রাই করেছি আমরা জাস্ট বেস্ট আর কিছু না, তাও বা*লডা বুঝে না।
-আমি বলি কি তুই ওকে একটা সুযোগ দে, মেঘা কিন্তু খুব ভালো লক্ষী একটা মেয়ে, তোকে খুব ভালোবাসে আর খুব ভালো রাখবেও।
-তাহলে তুই বিয়ে করে নে।
আবইয়াজের কথায় হেসে দিলো রিফাত।
-তাহলে আমার মিষ্টির কি হবে?
-ভাই বুঝার চেষ্টা কর! ওর প্রতি আমার কোনো ফিলই আসে না, কুত্তার মা'কে দেখার পর আমার ভেতরে যে অনুভূতির জন্ম হয়েছে তা আগে কখনো কারো প্রতি আসে নি।
-হইছে বাদ দে এখন এসব।
মিষ্টি মেঘাকে কল করে জানিয়ে দিলো ওরা ঠিক আছে।
মেয়েটা কেঁদে একাকার, আবইয়াজের জন্য পাগলপ্রায় সে, এতোটাও নিঃস্বার্থ ভাবে কাউকে কি ভালোবাসা যায় তা মিষ্টির জানা নেই।
মেয়েটা যেমন মিষ্টি দেখতে তেমনই তার কথাবার্তাও খুব গোছালো।
-তোর সাথে কি ওর কথা হয়েছে মিষ্টি? (মেঘা)
-না'রে রিফাতের সাথে কথা বলে খোঁজ নিলাম।(মিষ্টি)
-আচ্ছা করে বকে দিলি না কেন? সে কি বুঝে না তার জন্য আমার টেনশন হয়, আমি ঠিক মতো খেতে পারি না ঘুমাতে পারি না, সব জেনেও কেনো আমাকে বার বার কষ্ট দেয় বলতে পারিস?(মেঘা)
-ভুলে যা তাকে।
-তুই নিজেও জানিস মিষ্টি এটা আমার দ্বারা কখনোই পসিবল না।
-তাহলে এভাবে একা একা কষ্ট পা আমার কি, ফোন রাখলাম আমি বলেই মেঘার মুখের উপর কল কেটে দিলো মিষ্টি।
সকাল হতেই ব্যাগ কাদে ঝুলিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো আবিরা, পেছন থেকে নীলিমা হক ডেকে উঠলেন।
-আবিরা।
-জ্বি আম্মু। কিছু বলবে?
-আদি আসেনি আজ আর স্কুলে যাওয়ার দরকার নেই।
স্মিত হাসলো আবিরা, ফের প্রশ্ন ছুড়ে দিলো মায়ের দিকে, "কেনো?
-দেশের কি অবস্থা জানোই তো! চারিদিকে শুধু ধর্ষণ আর ধর্ষণ এরকম পরিস্থিতিতে আমি তোমাকে একা ছেড়ে দেই কি করে?
স্থীর কন্ঠে আবিরা বলে উঠলো, অস্ত্র আমার কাছেও আছে বলেই নিজের ব্যাগ থেকে ছুড়ি বের করলো আবিরা, যে আমার সাথে লাগতে আসবে আমি তার সুন্নতে খৎনা করিয়ে-ই ছাড়বো।
চলবে......