পর্ব___<<<____>>>___৪

মন পাজরে তুই____<<<<<_____>>>>>_____

#মন_পাঁজরে_তুই

#আরেব্বা_চৌধুরী 

#পর্বঃ ০৪

 

অপরপ্রান্ত থেকে চেল্লাচেল্লির আওয়াজ স্পষ্ট ভেসে আসছে, রাকিব বিচলিত কন্ঠে মেহেক কে ডাকতে লাগলো। মেহু বেবি কথা বলো প্লিজ। 

প্রতিউত্তরে কেউ ফিসফিস করে বলে উঠলো, এখন ঝামেলার মধ্যে আছি পরে কথা বলি?

-তুমি আমাকে রেখে কিভাবে বিয়ে করতে পারলে? আমি এখন কিভাবে থাকবো তুমিহীনা, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মেহু আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে। (রাকিব)

-বন্ধ করবা তোমার নাটক! কে বলছে আমি বিয়ে করে ফেলছি?(মেহেক)

-মামানে? তুমি -ই তো বললে আজকে তোমার বিয়ে?(রাকিব)

-আজ আমার কাজিনের বিয়ে ছিলো, তোমার রিয়্যাকশন দেখার জন্য আমি আমার বিয়ের কথা বলেছিলাম, জানো একটা অঘটন ঘটে গেছে বাড়িতে।

মেহেকের কথায় রাকিবের ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠলো, কি অঘটনের কথা বলছে মেহেক তা আর বুঝতে বাকি নেই, মেহেকের বিয়ে হয়নি শুনে যতটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বের হচ্ছে মেহেকের জায়গায় মেহেকের কাজিনকে উঠিয়ে আনায় হার্টবিট তার চেয়েও দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

বুকে হাত দিয়ে খাটের উপর বসে পড়লো রাকিব।

 

ফোনের অপর পাশ থেকে মেহেক বার বার ডেকে যাচ্ছে কিন্তু রাকিবের কোনো সাড়াশব্দ নেই।

-হ্যালো, হ্যালো! এই হ্যালো, ধুর বাবা কথা বলছো না কেনো।

বিরক্ত হয়ে কল কেটে দিলো মেহেক।

-রাকিব আমার এখন ইচ্ছে করতেছে তোকে কেটে পিস পিস করে আবিরার কুত্তাকে খাওয়াই, পিরিতি করবি তোরা নাটক করবি তোরা মজাও নিবি তোরা মাঝখান থেকে আমাদের ফাঁসানোর কি খুব দরকার ছিলো।(আবইয়াজ) 

-এ এ লাকিব তুতুই একন এই মেমেয়ে নিয়া চংচাল কল।(সাদিন)

-কি ক্যাচালের মধ্যে ফেলছিস রে ভাই দেখ একবার।(রিফাত)

-ফোন দে আবার তোর লাং কে, জিজ্ঞেস কর তারা কি ফেরত নিবে তাদের মেয়েকে।

আবইয়াজের কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো রাকিব।

ফের কল করলো মেহেকের ফোন। 

একবার রিং হতেই কল রিসিভ করে মেহেক।

 বেশ ঝাঁজালো কন্ঠে মেহেক বলে উঠলো, এই কি সমস্যা টা কি তোমার। 

 

-শোনো না সোনা।

-কি?

-একটা আকাম করে ফেলছি।

-বিয়ে টিয়ে করে নিছো?

-এরকম কিছু না, কি একটা অঘটনের কথা বলছিলা না তখন?

-হ্যাঁ মোমো আপু ভেগে গেছে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে মেইবি।

-ও ভেগে যায় নাই বাবু, ওরে না তুমি ভেবে আমরাই ভাগাই নিয়া আসছি।

-কিহ?

-হ্যাঁ। 

-এ ভাই এটা কি করছো?

-হ্যাঁ জান এখন কি করবো আমরা, জোর বিপদে পড়ে গেছি, তাকে কি কোনোভাবে ফেরত দিয়ে আসা যায় না?

-তুমি জানো তোমাদের এই কাজের জন্য আজ আমাদের গোটা ফ্যামিলির মান সম্মান সব শেষ, বরপক্ষ যা নয় তাই বলে অপমান করে গেছে।

-আমরা তোমার মোমো আপুকে নিয়ে আসি তুমি ওদিকটা ম্যানেজ করে নিও?

-হ্যাঁ তাকে নিয়ে আসো, মোমো আপুর তো খবর করবেই তার আগে তোমাদের কেটে পিস পিস করে আলু দিয়ে রেঁধে পুরা গ্রামবাসীকে খাওয়াই দিবে।

আবারো কল কেটে দিলো রাকিব।

বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে আবইয়াজ মনে হচ্ছে ছোটখাটো একটা স্ট্রোক করে ফেলছি।

-টেনশন নিস না, আদি তো আছেই ওকে বিয়ে করার জন্য।

আবইয়াজের কথায় আদি বলে উঠলো। 

-বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে ছিলো না'রে, শুধু তোদের মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়ে'টা করতে হচ্ছে।

-হ্যাঁ বিয়ে করে আমাদের উদ্ধার করেন।

 

মেয়েটা এখনো ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে, এখানে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে, শুধু এটা খুব ভালো করে বুঝতে পারলো রাকিব মেহেকের বয়ফ্রেন্ড। 

পরিস্থিতি বেসামাল বিয়ে বুঝি এই ছেলেকেই করতে হবে। 

আদির দিকে বার কয়েক চোখ তুলে তাকালো মোমো।

শ্যামলা রঙের হালকাপাতলা ছেলে মুখে চাপদাড়ি, মাথার চুলে চোখ অব্দি ঢাকা। 

খারাপ না ভালোই তো লাগছে।

ছেলেরাও কি এতো মায়াবী হয়?

কি নামে ডাকবো আপনায়? চক্ষুশীতল কারী! যাকে এক দেখায় ভেতরে অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম।

নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা দেখা দিলো মোমো'র যা আদির চোখ এড়ালো না। 

 

"ফ্যামিলি থেকে বিয়ে করালে নির্ঘাত বুইড়া বয়সে করাতো এর চেয়ে এখন করে নেওয়াই উত্তম হয়তো একটু ঝামেলা পোহাতে হবে তাতে আমার কি সেই সব সলভ করবে আবইয়াজ।

 

আহনাফ খাঁন বাড়িতে ফিরেছেন সাথে একটি যুবতী মেয়ে। 

মেয়েটির দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন রাজিয়া খাঁন।

ঝাঁজালো স্বরে বলে উঠলেন, " মেয়েটি কে?""

অধিকাংশ পুরুষ বাইরে সিংহের ন্যায় বুক ফুলিয়ে হাটলেও ঘরের মধ্যে পোষা বেড়াল হয়ে থাকে, আহনাফ খাঁন তার ব্যতিক্রম নয়। 

মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে আহনাফ খাঁন বলে উঠলেন, মেয়েটার তিন কুলে কেউ নেই এক মা ছিলেন তিনিও আজ মারা গেছেন। মেয়েটা বড্ড অসহায়, এইটুকুনি একটা মেয়ে কি করবে কোথায় যাবে তাই আমার সাথে করে নিয়ে এসেছি।

-এটা কোনো অনাথ আশ্রম নয় আহনাফ। 

-হুম, মেয়েটা এখানে থাকলো ঘরের টুকিটাকি কিছু কাজ করলো, আমাদের একটা মেয়ে থাকলে তার বয়সী-ই হতো।

-হ্যাঁ আমি তো ভাতের হোটেল খুলে বসেছি, কোথায় কে মরলো তার মেয়েকে খুঁজে খুঁজে এখানে এনে আশ্রয় দেওয়ার জন্য।

রাজিয়া খাঁনের কথায় মুখ'টা মলিন হয়ে এলো মেয়েটার। 

 

হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো ফাইয়াজ।

 

"মা রেখে দাও না।"

"যেমন বাপ তার তেমনই ছেলে হইছে, যাকে তাকে ধরে বাড়ি নিয়ে আসে। আচ্ছা থাকুক, এই মেয়ে যাও গোসল করে এইসব ময়লা জামাকাপড় ছেড়ে আসো, এমন নোংরা জামা পড়া এ বাড়িতে চলবে না ঠিক আছে?

মেয়েটা মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো। 

 

" ঠিক আছে মা আমি নাহয় ওর জন্য দুই সেট জামা নিয়ে আসবো।"

"আমি তোকে বলেছি ওর জন্য জামা নিয়ে আসতে?"

-তুমিই তো বললে এসব পড়া যাবে না তাহলে কি সে খালি গায়ে থাকবে?

-তাহলে আনিস।

-হুম।

-এই মেয়ে শুনো। মেয়েটিকে পেছন থেকে ডেকে উঠলো রাজিয়া খাঁন।

ঘুরে দাঁড়ালো মেয়েটি। 

-কি নাম তোর?

-সুভাষিণী। 

-আচ্ছা ঠিক আছে যা।

সুভাষিণীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ফাইয়াজ। 

আহনাফ খাঁনের উপর রাগারাগি করে নিজের রুমে চলে গেলেন রাজিয়া খাঁন। 

 

সোফায় শুয়ে আছে আবিরা, বুকের উপর পিকু বসা।

ফিউচার নিয়ে ভাবতে ব্যস্ত সে। 

কি হবে আমার ভবিষ্যৎ নিজের দ্বারা তো কিছুই হবে না, একটা বড়লোক জামাই প্রয়োজন। 

-আচ্ছা জামাই কেমন হওয়া উচিত? নিজের প্রশ্নে নিজেই স্মিথ হাসলো আবিরা। 

অতঃপর নিজেই নিজেকে উত্তর দিলো, "জামাই তো এমন হওয়া উচিত একজন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বড়লোক পুরুষ, বুক তো অবশ্যই চওড়া হতে হবে যেনো তার বুকের ভেতর আস্তো আমিটাকে লুকিয়ে রাখতে পারে, বাবরি চুল ফিট বডি, আর বাড়ি সেতো আমার স্বপ্নের মতো হতে হবে, বৈদ্যুতিক আলোয় নয় মণিমুক্তার ঝলকানিতে আলোকিত থাকবে গোটা বাড়ি।

খাট, সোফা, সিড়ি ডাইনিং রুম যেদিকে তাকাবো সব হিরা মণি-মুক্তায় আবৃত থাকতে হবে।

 

আচ্ছা বাস্তবে কি আদৌ এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া সম্ভব? 

আমার তো ভাই আম্বানির ছেলেকে বিয়ে করা উচিত, যাইহোক স্বপ্ন দেখতে তো আর টাকা লাগে না, পূরণ হলে হলো না হলে নাই তাও অন্তড়ালে স্বপ্ন বুনে যাই।

দাঁত বের করে হেসে নিজেই নিজের মাথায় চাটি মারলো।

এমন অদ্ভুত চিন্তাভাবনাও কি মানুষের হয়।

 

আদির ফোনে লাগাতার কল এসেই চলেছে ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো নীলিমা হক কল করছেন।

জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আবইয়াজের দিকে তাকালো আদি।

আবইয়াজ ইশারায় ফোন ধরতে বললো।

কল রিসিভ করে কানে তুললো আদি।

-হ্যালো আম্মু।

-সেই কখন থেকে কল করছি আদি কল রিসিভ করছো না কেনো? কোথায় তুমি আর কোথায় থাকে তোমার ফোন।

নীলিমা হকের ঝাঁজালো স্বরে বলা কথায় আমতা আমতা করতে লাগলো আদি।

আদির থেকে ফোন নিয়ে নিজেই কথা বলা শুরু করলো আবইয়াজ।

-আসলে আন্টি আজ আদি একটু ব্যস্ত ছিলো তাই কল ধরতে পারে নি।

-কিসের এতো ব্যস্ততা যে মায়ের ফোন'টা উঠানোর ও সময় নেই তার।

-আসলে আজ আমার জন্মদিন এখানে ছোটখাটো আয়োজন করা হয়েছে আজ আদি বাড়ি ফিরতে পারবে না।(আবইয়াজ)

-বছরে কতবার তোমার জন্ম হয়? এই নিয়ে চলিত বছরে তুমি পাঁচদিন বলে ফেলছো তোমার জন্মদিন ছিলো।

নীলিমা হকের কথায় ফিক করে হেসে উঠলো আদি।

দাঁত কটমট করে আদির পাছায় লাত্তি মারলো আবইয়াজ।

 

চলবে.......


Md Elias

51 Blog Postagens

Comentários