পর্ব___<<<____>>>___১২

মন পাজরে তুই____<<<<<_____>>>>>_____

#মন_পাঁজরে_তুই

#আরেব্বা_চৌধুরী 

#পর্বঃ ১২

 

অবিরা ছাদ থেকে উচ্চস্বরে বলে উঠলো, আর ইউ জোকার?

-Yes, I am a joker just for you.

আবইয়াজের কথায় কপাল কুঁচকে তাকালো আবিরা।

 

"চেয়ে থেকে লাভ নেই কুত্তার মা, ভালোবাসি বলো আমি ওড়না'টা দিয়ে দিবো নাহলে এই ওড়না দিয়ে ফাঁস তৈরি করে আকাশের সাথে ঝুলে পড়বো।

 

"এতোদিন ভাবতাম এই ছেলে একটা জোকার এখন দেখি আস্তো একটা বদ।"

 

"ওভাবে তাকিয়ে কি ভাবছো মহারানী? চোখের ভাষা বুঝি না মুখে বলো ভালোবাসি।"

 

"বেঁচে থেকে শুধু শুধু অক্সিজেন নষ্ট না করে আপনি বরং আকাশের সাথেই ঝুলে পড়ুন।"

 

"তুমি কি বিয়ের আগেই বিধবা হতে চাও?"

-আপাতত বিয়ে করতে চাচ্ছি না তবে আপনাকে নিয়ে মানসিক হাসপাতালে যেতে চাচ্ছি?"

 

ওখানে গিয়ে কি হবে কুত্তার মা? ওষুধ তো ওখানে নেই! আমার চিকিৎসা তো সব তোমার কাছে।

আবিরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো, 

-আমি কিন্তু ভাইয়াকে সব বলে দিবো।

-তোমার ভাইয়া সব জানে, সে-ই তো তোমাকে আমার কাছে বন্ধক রেখে টাকা নিয়েছে, আজ থেকে তুমি আমার বাধ্যবন্দিনী।

-যে টাকা নিয়েছে তাকে গিয়ে বলো তার বউকে বন্ধক রাখতে।

-এঁটো খাবার আবইয়াজ খায় না, আমি তার বউ নিবো না আমি তার বোনকে নিবো।

-আমার ওড়না লাগবে না, তাও দয়া করে আর কথা বলবেন না আপনি যান।

-আহ কি শান্তি, জান শব্দ শুনেই ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে গেলো।

আবিরা বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে উঠলো, 

-আমি জান বলি নি যেতে বলছি।

-হ্যা আজ যান বলছো আগামীতে জান বলার জন্য প্রস্তুত থাকো।

 

জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে থাকুন বলে উল্টো দিকে হাটা দিলো আবিরা। 

 

পেছন থেকে আবারও ডাক দিলো আবইয়াজ, "শুনো সুন্দরী, কোনো একদিন সাক্ষরের মাধ্যমে তোমাকে নিজের বলে দলিল করে নিবো। আপাতত তোমার এই ওড়নাটা আমি নিজের কাছে রেখে দিলাম মাঝেমধ্যে সর্দি হলে নাক মুছবো।"

 

ওপাশ থেকে আর কোনো উত্তর এলো না।

 

ওড়না'টা গলায় প্যাঁচিয়ে ভেতরে গেলো আবইয়াজ।

আদিকে দেখেই কান টেনে ধরে ফিসফিস করে বলতে লাগলো, স্লা মাদ্রিদ তুই সেই সেয়ানা আমি কি বুঝি না, নিজের স্বার্থ ঠিকই হাসিল করে নিলি কিন্তু আমার কাজের কাজ কিচ্ছু করিস নি।

এবার যা করার এই আবইয়াজ করবে। 

 

-খবরদার আবইয়াজ আম্মুকে উল্টাপাল্টা কিছু বলবি না।

 

উল্টাপাল্টা কিছু বলবো না যা বলার সব সত্য বলবো।

 

-কি বলবি তুই?

-যেটা সত্য ওইটা।

-কোন'টা? 

-শুন ভাই ক্ষুধা লাগলে মানুষের হাসি দেখলেও মেজাজ বিগড়ে যায়, তাড়াতাড়ি খাবার দে নয়তো তোর মাথা খাবো।

-কতদিন ধরে উপস করে আছিস?

-তুই যেদিন সাঙ্গা করছিস ওইদিন থেকে, মাদ্রিদ খাবার দে।

 

"আয় টেবিলের উপর ঢেকে রাখা আছে আমি বেড়ে দিচ্ছি।"

-রিনা খাঁন কই?

-ভাই ওইটা আমার মা হয়।

-তো আমি কি একবারও বলছি এটা তোর চাচি?

-ফাইজলামি বাদ দিয়ে খেতে আয়।

 

খেতে বসলো আবইয়াজ, টেবিলের উপর ভাত আর মুরগির গোস্তো দেখে মেজাজ চটে গেলো।

-তোরা কি জামাই আদরও করতে জানিস না? এক তরকারি দিয়ে কেউ জামাই আপ্যায়ন করে?

 

জামাই এখনো হস নি আবইয়াজ। 

-হতে কতক্ষণ। 

-যখন হবি তখন দেখা যাবে।

-পেটের জ্বালায় খেয়ে নিচ্ছি, নাহলে জামাই আদর কাকে বলে দেখিয়ে দিতাম, যাইহোক আজ থেকে তোর বোনকে পটানোর দায়িত্ব নিলাম, তুই তো আর সেটিং করিয়ে দিবি না। নিমক হারামের গোষ্ঠী তোরা, তোদের বংশে সমস্যা আছে নির্দ্বিধায় বলতে পারি তোরা অজাতের বংশ। 

 

রাগ উঠাইস না আবইয়াজ। 

-বিশ্বাস কর তোর রাগ উঠানোর জন্য আমি বসে নেই। আমার গলার দিকে তাকিয়ে দেখ তো কিছু কি দেখতে পাস?

-হ্যাঁ, ওড়না পরে আছিস কেনো?

-মাত্র-ই অর্ধেক বিয়ে সেরে আসলাম, তোর বোন মালা না পেয়ে নিজের ওড়না পড়াই দিছে আমার গলায়।

 

আবইয়াজের কথা একটুও বিশ্বাস করলো না আদি।

আবইয়াজ যে কথায় কথায় মিথ্যা বলে এটা নতুন নয়।

 

খেয়ে আদির পিঠে হাত বুলানোর ছলে নিজের হাত পরিষ্কার করে নিলো আবইয়াজ। 

 

-বুঝলি আদি আজকাল মানুষ শুধু সন্দেহের চোখে দেখে, এই যেমন ধর আমি তোর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি কিন্তু তুই ভাববি আমি নিজের হাত মুছতেছি।

আবইয়াজের কথায় কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে তাকালো আদি।

তার মানে আবইয়াজ আমার শরীরে নিজের হাত মুছছে। 

এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো আদি।

 

-দেখলি আদি! এই আবইয়াজ কেমন ভবিষ্যৎ বাণী বলে দেয়, একটু আগেই যেটা বললাম এখন তুই সেটাই ভাবছিস, তবে তোর ভাবনা ভুল এটা আমি বলবো না কারণ সত্যিই আমি তোর পিঠে নিজের হাত পরিষ্কার করে নিলাম।

 

চিৎকার করে উঠলো আদি।

"আবইয়াজের বাচ্চা ওখানে টিস্যু রাখা ছিলো।

-হ্যাঁ দেখেছি তো, কিন্তু মানুষের কাপড়ে মুছার মতো শান্তি ওই টিস্যুতে পাওয়া যায় না।

-নিজেকে একটু পরিবর্তন কর আবইয়াজ। 

-বিশ্বাস কর তোর বোন'কে বিয়ে করলেই পরিবর্তন হয়ে যাবো, তখন তোর শার্টে না তোর বোনের ওড়নায় হাত মুছবো।

 

পর্দার আড়াল হতে খিলখিল করে হেসে উঠলো মোমো।

বিয়ের পর থেকে এই ছেলের কথাবার্তায় বেশ বুঝা যাচ্ছে ছেলেটা খুব মজার। 

হাসির শব্দ পেয়ে চুপ হয়ে গেলো আবইয়াজ। 

মিনমিন গলায় আদিকে বললো, " আমি আবার আসবো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।"

-আসিস, অপেক্ষায় থাকবো।

-তুই সেটের পোলার সাহায্য লাগবে না আমার।

-ভাই তুই তো জানিস আম্মুকে ভয় পাই আমি।

-ভয়কে জয় করা শিখতে হবে।

কথাগুলো বলে বেরিয়ে গেলো আবইয়াজ।

 

বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে ছাদের দিকে চোখ বুলিয়ে নিলো আবইয়াজ , যদি কুত্তার মা'র একটু সাক্ষাৎ পাওয়া যায়।

কুত্তার মা তো দূর এখানে কুত্তার-ই দেখা নেই।

 

বাসায় বিয়ের কথা চলছে, মেয়ে বড় হয়ে গেছে ভালো ঘর থেকে সম্বন্ধ আসলে দিয়ে দিতে হবে, মেয়ে মানুষ সারাজীবন ঘরে রেখে দেওয়ার জিনিস নয়।

কথাগুলো কানে আসতেই রিফাতের ফোনে পরপর কল করতে লাগলো মিষ্টি। 

কল রিসিভ করলো রিফাত। 

ওপাশ থেকে মধুর স্বরে রিফাত বললো, -কেমন আছো মিষ্টিবউ?

-শফিকের চেংড়া বিয়ে করবি কবে?(মিষ্টি) 

মিষ্টির কথায় শোয়া থেকে উঠে বসলো রিফাত।

মৃদুস্বরে বললো,

-আম্মুকে গিয়ে বল।(রিফাত)

-বিয়ে করবে কে তুই না তোর মা? আমি কি এখন তোর মা'কে গিয়ে বলবো আম্মা আমাকে বিয়ে করবেন। 

-আম্মুকে গিয়ে বলবি কেনো? তুইও না একটা পাগল।

-তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী পাগল।

-ভালোবেসে পাগল বলছি মিষ্টি। 

-তোর এই পিরিতের কথা শোনার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নাই।

-ভাই তোর এতো মাথা গরম কেন?

-বাসায় আমার বিয়ের কথা বলতেছে রিফাত।

-সমস্যা কি বলুক।

-গোলামের পুত তুই মানুষ হবি কবে? তোর থেকে ভালো ফ্যামিলি থেকে সম্বন্ধ আসলে তোর কি মনে হয় তোর সাথে আমার ফ্যামিলি আমাকে বিয়ে দিবে?

 

"এটা তো ভালোভাবেও বলা যেতো মিষ্টি বউ। 

-মেজাজ খারাপ আছে রিফাত, তুই কালই তোর মা'কে নিয়ে আসবি।

-তুমি বললে তাই না বললে নাই। তুমি যখন বলছো তখন কালই আসবো।

-ওকে তাহলে রাখলাম।

- ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করবি না?

-ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করার থেকে ভালোমন্দ দেখা'টা বেশি জরুরী, তুই বিয়ে করে নে তোকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমি নিবো।

-ইশ কি আমার প্রেমপিয়াসী বউ।

-প্রেমপিয়াসী হবো না? তিন তিন'টা বছর আমি তোর পিছে নষ্ট করছি।

-নষ্ট করছিস?

-তা নয়তো কি? একটা বাদর মানুষ করতে কতটা টাইম লাগে তা আমি গত তিন বছরে হারে হারে টের পাচ্ছি।

মিষ্টির কথায় খিল খিল করে হেসে উঠলো রিফাত।

আমি যদি বাদর হই তাহলে তুই বাদরনী।

-যথাআজ্ঞা মহারাজা।

 

শর্মিলা বেগম এক প্লেট ভাত নিয়ে আসলেন।

ভাতের প্লেট টেবিলে রেখে মেঘার পাশে বসলেন।

মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন এমন'টা করার কারণ কি।

কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না মেঘা।

কথাগুলো গলাতে দলা পাকিয়ে গেছে।

শুধু চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো।

 

" তোমাকে কিভাবে বলি মা আজকাল পরিচিত মুখগুলোও দিন দিন অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে, ভালোবাসি জানলে মানুষ অবহেলা দ্বিগুণ আঁকারে বাড়িয়ে দেয়। তোমারই বা দোষ কি, যেখানে পছন্দ হইছে শুনলে দোকানী জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয় সেখানে তুমি তো মানুষ ছিলে তোমাকে-ই বা কি করে বিনামূল্যে পেয়ে যাই বলো? তবে একটা কথা বলবে? ভুল'টা কোথায় ছিলো আমার ভালোবাসায় নাকি ভালোবাসা প্রকাশ করায়? ভালোবাসি বলায় বন্ধুত্বের সম্পর্কটাও আর আগের মতো নেই, সেটাও এখন অবহেলা অসম্মান আর ব্লক লিস্টে পরিনত। 

আচ্ছা ছ্যাঁচড়ার মতো একটা মানুষের পেছনে এভাবে কত পড়ে থাকা যায়?

নিজের আত্মসম্মানটাও বিসর্জন দিয়ে দিলাম তোমাকে পাওয়ার আশায় অথচ দিনশেষে আমি তোমাকেই হারিয়ে ফেললাম।

এরজন্য-ই বোধহয় বলে ভালোবাসা গোপনেই সুন্দর। 

চোখ বেয়ে টপ করে একফোঁটা পানি শর্মিলা বেগমের হাতে এসে পড়লো।

মুখ ফোটে মেয়ের না বলা কথাগুলো কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারলেন শর্মিলা বেগম।

মোলায়েম কন্ঠে বললেন, তুমি কি কাউকে পছন্দ করো? এমন'টা হলে আমাদের বল মা।

 

মেঘা মুখ ফোটে কিছু বলতে পারলো না। 

দীর্ঘশ্বাস গুলোও ভারী হয়ে আসছে যেনো বুকের মধ্যে কেউ পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। 

ভালোবাসা গুলো এমন হয় কেনো, না পাওয়ার তীব্র যন্ত্রণা বুকের ভেতরটা ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়।

যত চাই ভুলে যেতে ততই মনে পড়ে, আদৌও কি তাকে ভুলে থাকা সম্ভব? 

নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো মেঘা কিন্তু কোনো উত্তর খোঁজে পেলো না। 

নিজের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে এসেছে।

 

শর্মিলা বেগম মেয়ের থমথমে চেহারা দেখে আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলেন না। 

ভাতের লোকমা মেঘার মুখের সামনে ধরলেন।

ভেজা চোখে অস্ফুটস্বরে মেঘা বলে উঠলো গলা দিয়ে খাবার নামবে না মা।

-এভাবে না খেয়ে থাকলে তুমি আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে মেঘা।

-তুমি শুধু আমার বাইরের অসুখ'টাই দেখলে মা, ভেতর থেকে সেই কবেই আমি মারা গেছি তা কেউ জানতেও পারলো না।

মেঘার এমন কথায় চোখ'টা ভিজে এলো শর্মিলা বেগমের। 

মেঘা বরাবরই ছটফটে স্বভাবের তবে তার মনের কথাগুলো কখনো সবার সাথে শেয়ার করে না আজও তাই।

কিসের এতো কষ্ট তা মা হয়েও আমি জানতে পারি নি।

সব সময় উড়ে বেড়ানো ছটফটে স্বভাবের মেয়েটাও আজ কোনো এক অজানা কারণে নিশ্চুপ হয়ে ঘরের এক কোণে পড়ে থাকে।

ছটফটে মানুষগুলো হঠাৎ চুপ হয়ে গেলে তা কি মেনে নেওয়া যায়?

 

অতিকষ্টে সে যেমন চুপ হয়ে যায় তার এই চুপ হয়ে যাওয়া তার প্রিয়জনকে আরো বেশি পোড়ায়।

খাবারের জন্য বেশি জোর করলেন না শর্মিলা বেগম। 

মেয়ে একটু স্বাভাবিক হোক তখন না-হয় চেপে ধরবো কিসের এতো কষ্ট তার।

খাবারের প্লেট নিয়ে চলে গেলেন শর্মিলা বেগম, খাটের এক কোণে পড়ে রইলো মেঘা।

 

বাবার অফিসে গেলো আবইয়াজ, পকেট খালি এবার আহনাফ খাঁনের থেকে কিছু খসাতে হবে।

ভেতর থেকে একজন স্টাফ এসে জানালো স্যার জরুরী মিটিংয়ে আছেন।

-ওনাকে গিয়ে বলো আমারও মিটিং আছে। একটা মেয়ে পটাতেও অনেক রিসার্চ করা লাগে। 

আবইয়াজের কথায় স্টাফ মুখ টিপে হাসলো কিন্তু তা বাইরে প্রকাশ পেলো না।

-কি হলো দাঁড়িয়ে আছো যে?

-স্যার বলেছেন যতোই জরুরী কাজ হোক এখন ডিস্টার্ব করা চলবে না।

-ওকে ফাইন, উনাকে বলে দাও মোটা অংকের একটা চেক লিখে দিতে আমি চলে যাবো।

 

স্টাফ আবারো ভেতরে গেলো, বিরক্ত হলেন আহনাফ খাঁন।

ঝাঁজালো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন আবার কি?

-স্যার , ছোট স্যার বলছিলেন মোটা অংকের একটা চেক লিখে দিলেই উনি চলে যাবেন।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আহনাফ খাঁন।

একটা চেক লিখে স্টাফের হাতে দিয়ে বললেন, আবইয়াজ কে বলো তার ইচ্ছে অনুযায়ী টাকা বসিয়ে নিতে।

 

চেক হাতে পেয়ে বাবার জন্য গর্বে বুকটা ফুলে উঠলো আবইয়াজের।

এই না হলে আমার আব্বু।

আম্মু তো তার ফাইয়াজ নিয়েই পড়ে থাকে, আব্বু না থাকলে আমার যে কি দশা হতো।

তিন কুলে আপন বলতে এই একজন মানুষ-ই আমার।

বুঝছেন ভাই? এইগুলো আবার আব্বুকে বলো যে আবইয়াজ স্যার আপনাকে খুব ভালোবাসে আপনার অনেক প্রশংসাও করেছে।

-ঠিক আছে স্যার।

 

নীলিমা হক আদি ও মোমোর বিয়ের কথা তুললেন।

শামসুল হক তাতে দ্বিমত পোষণ করলেন না। 

দুজনে বসে সিদ্ধান্ত নিলেন আগামী শুক্রবারেই বিয়ে। 

বিয়ে তো হয়েই গেছে এখন শুধু লোক দেখানো অনুষ্ঠান করবে। 

তবে এ অনুষ্ঠান যেমন তেমন নয়, শামসুল হকের একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা, আত্মীয়স্বজন তো বেশি থাকবেই। 

 

-নীলিমা হাতে তেমন সময় নেই মাত্র ৫দিন আছে, এই ৫দিনে সব কিছু করতে হবে আমাদের, কাল বরং তুমি আত্মীয়দের লিস্ট তৈরি করে ফেলো, কাদের কাদের ফোনে দাওয়াত দিতে হবে তা তুমি সামলে নিও, আর যাদের বাড়িতে না গেলে নয় আমি নাহয় তাদের বাসায় গিয়ে দাওয়াত করে আসবো।

 

"বিয়ের প্রধান কাজ হচ্ছে কেনাকাটা করা সেটা কে করবে শুনি?

"সেসবের জন্য আদি তো আছেই, আদি আবিরা আর মোমো মা মিলে যাবে, তারা নাহয় নিজের পছন্দে কেনা কাটা করলো, তাছাড়া বিয়ে তো আদি আর মোমোর তাই আমি চাচ্ছি তাদের বিয়েতে সব কিছু তাদের পছন্দেই হোক, কাল আমি ডেকোরেশনের লোক'দের ও ডেকে পাঠাবো আদিকে বলে দিও সে যেনো স্টেজ পছন্দ করে নেয়।

নীলিমা হক মাথা নাড়িয়ে সায় জানালেন।

 

আহনাফ খাঁন রাজিয়া খাঁন ফাইয়াজ মিলে রাতের খাবার খেতে বসেছেন।

এখনো আবইয়াজের কোনো দেখা নেই।

কঠোর গলায় রাজিয়া খাঁন বললেন, এবার ছেলে আসলে তার একটা হেস্তনেস্ত করতে হবে। 

দিনকে দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে।

আজ বেলকনি দিয়ে পালিয়ে গেছে, সময় মতো বাসায় ফিরে না খাবার খায় না সারাদিন কোথায় থাকে সেই কৈফিয়ত চাইলে চিল্লিয়ে উঠে।

-আজ আমার অফিসে গিয়েছিলো।

-কেনো? 

-টাকা নিতে।

-দিয়ে দিছো টাকা তাই তো? এই তুমিই সব নষ্টের মূল। তোমার জন্যই ও এতো বাড় বেড়েছে।

-আমি কি দাওয়াত করে আমার অফিসে তোমার ছেলেকে নিয়ে গেছিলাম? টাকা না দিলে আমাকে মিটিং করতে দিচ্ছিলো না৷ আবার স্টাফের কাছে আমার এত্তোগুলো সুনাম করে গেছে।

আহনাফ খাঁনের কথার মধ্যে ফাইয়াজ বলে উঠলো, "কি সুভা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো? তুমিও বসে পড়ো না আমাদের সাথে।"

-এসব তুমি কি বলছো ফাইয়াজ। 

-আমরা ফ্যামিলি মেম্বার'রা খাচ্ছি এখানে ও বসবে কেনো?

-ও বসলে ক্ষতি কি আম্মু, বসুক না আমাদের সাথে।

-কাজের মেয়ে কিনা আমাদের সাথে বসে খাবে?

-আম্মু তুমি ওর সাথে এভাবে কথা বলতে পারো না! সুভা নাতো এ বাড়ির কাজের মেয়ে আর নাতো এবাড়ির আশ্রিতা। 

ফাইয়াজের কথায় রেগে গেলেন রাজিয়া খাঁন। 

-তো এখন তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে আমার কার সাথে ঠিক কিভাবে কথা বলতে হবে, আচ্ছা ঠিক আছে এবার বলো কে হয় ও এবাড়ির?

রাজিয়া খাঁনের কথায় থতমত খেয়ে গেলো ফাইয়াজ এবার কি উত্তর দিবে সে?

[গল্পে কোথাও ভুল থাকলে বা খাপছাড়া লাগলে কমেন্ট করে জানান, আপনারা ভুল ধরিয়ে না দিলে সংশোধন করবো কিভাবে আপনারা-ই আমার শক্তি। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন ধন্যবাদ ]

 

চলবে,,,,,,


Md Elias

51 博客 帖子

注释