পর্ব___<<<____>>>___১১

মন পাজরে তুই____<<<<<_____>>>>>_____

#মন_পাঁজরে_তুই

#আরেব্বা_চৌধুরী 

#পর্বঃ ১১

 

-তাহলে এখন থেকে কাজে লেগে পড়া যাক।(আবইয়াজ) 

-হ্যা তবে সাবধানে, জুতা দিয়া মাইর দিলে আমায় কিছু বলতে আসবি না। 

-উহু আবইয়াজ খাঁন এতো বোকা না, নিজের কথা না বলে দেখ কেমনে ফাইয়াজকে ফাঁসাই। 

আবইয়াজ ওই বেচারাকে মাঝখান থেকে টানাহেঁচড়া না করলে হয় না?

-না হয় না, সে আমায় পদে পদে অপমান করে। 

-নিজের কথা নিজে বলবি মাঝখান থেকে আরেকজনকে ফাঁসানোর কি দরকার?

-জ্ঞান দিবি না, ফোন রাখ মাদ্রিদ।

 

পেট ছু ছু করছে, কিছু খাওয়া প্রয়োজন। 

ড্রয়িং রুমে গেলো আবইয়াজ। 

টেবিলের উপর রাখা সকালের পরোটা। 

শুকনো পরোটা চিবুতে চিবুতে আশফাকের আম্মাকে ডাক দিলো আবইয়াজ। 

-আশফাকের আম্মা।

-হ্যাঁ বাবা বলো।

-এখানে বসেন।

তার ঠিক সামনের চেয়ার টেনে বসতে বললো আবইয়াজ।

-কিছু বলবা বাবা?

-হ্যাঁ আপনি বসেন। জানেন আশফাকের আম্মা আমার একটা বন্ধুর মাথায় সমস্যা হইছিলো, সারাদিন রুমে বইসা থাকে, একা একা হাসে একা একা কান্দে, রাতে আবার কারোর সাথে ফিসফিস করে কথা বলে, কখনো ছাদে গিয়ে বসে থাকে বুঝছেন।

আশফাকের আম্মা মাথা নাড়িয়ে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, তারপর?

-তারপর কি হইছে জানেন ধীরে ধীরে সে মানসিক রোগী'তে পরিনত হলো, আহারে বাড়ির বড় ছেলে'টা।

শেষের কথাটুকু নাক টেনে বললো আবইয়াজ।

সে আমার খুব ভালো বন্ধু তার কথা মনে পড়লেই আমার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ে।

কি'রে পানি পড়ে না কেন? কি জীবন দিলা মাওলা সিরিয়াস মুহুর্তেও একটু কান্না আসে না। 

-বুঝছেন আশফাকের আম্মা, তার জন্য কান্না করতে করতে আমার চোখের সব পানি ফুরিয়ে গেছে, এখন আর নাই, এখন চাইলেও আর কান্না করতে পারি না এতো পরিমাণ কষ্ট আমার বুকে আইসা লাগছে। তারপর কি হইছে জানেন বাসার সবাই মিল্লা ওরে বিয়ে করিয়ে দিলো, বউয়ের আদর যত্ন ভালোবাসা পেয়ে এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। 

যাইহোক এখন কাজের কথায় আসি, এই কথা কেনো বললাম জানেন? আম্মুরে বলে দিও ওরকম কিছু লক্ষ্মণ আমি ফাইয়াজের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি, ও খুব তাড়াতাড়ি পাগল হয়ে যাবে।

আরেকটা কথা। আম্মুকে এটাও বলে দিও উনার দুই ছেলের জন্য বিয়ে ফরজ হয়ে গেছে মসজিদের ইমাম বলছে।

আশফাকের আম্মা কৌতুহল নিয়ে আবারো শুধালেন, তারপর ওই ছেলেটার কি হইলো?

আবইয়াজ মোলায়েম কন্ঠে বললো, ওই যে বললাম বউয়ের আদর যত্ন ভালোবাসা পেয়ে সে এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছে। 

আশফাকের আম্মা আবারও জিজ্ঞেস করলেন তারপর? 

-কাহিনী এখানেই শেষ আশফাকের আম্মা ও বিয়ে করে ফেলছে সুস্থ হয়ে গেছে। 

-ওও

-তুমি আম্মুরে একটু বুঝিয়ে বইলো ঠিক আছে? সে যাই করুক আমার সাথে সব শেষে ফাইয়াজ আমার-ই তো এক মিনিট বিশ সেকেন্ডের বড় ভাই, ও পাগল হলে লোকে আমাকে বলবে ওই দেখ পাগলের ভাই যাইতেছে। 

আশফাকের আম্মা চিন্তিত স্বরে বললেন তাও ঠিক।

 

গোসল সেরে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো সুভা, চুল এখনো ভেজা, চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।

তা আবইয়াজের দৃষ্টি এড়ালো না। 

জহুরির চোখে সুভাকে একবার পরখ করে নিলো আবইয়াজ। 

পেছন থেকে ওমাসি বলে ডেকে উঠলো সে। 

পিছন ফিরে তাকালো সুভা।

-আশফাকের আম্মা এই কালা মাসি কে?

-তোমার বাবা কাইলকা আনছে, ওর নাম সুভা বাবা মা নাই।

-বাবা সাথে করে এনেছে আর আম্মু রেখে দিলো, এও কি সম্ভব? 

-রাখতে চায় নাই, ফাইয়াজ বাবা রাখছে।

-দেখছেন আশফাকের আম্মা, বলছিলাম না ফাইয়াজের মধ্যে ওইসব লক্ষ্মণ দেখা দিতেছে, প্রমাণ পাইছেন তো? অবিবাহিত জোয়ান একটা মেয়েকে বাসায় রাখার জন্য আরেকটা অবিবাহিত ছেলে সুপারিশ করবে কেনো বলো তো?

আশফাকের আম্মা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন তাই তো।

-হুম এটাই তো, ভাবেন ভালো করে ভাবেন, আপনি আম্মুর মায়ার মানুষ, আপনি বুঝিয়ে বললে আম্মু শুনবে, বইলেন উনার দুই ছেলেকে যেনো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয়, কাল মসজিদের ইমাম আমায় ডেকে পাঠালেন, সেখানে যেতেই প্রশ্ন করলেন বিয়ে করি না কেনো? আমাদের তো টাকা পয়সার অভাব নাই তাহলে আমাদের বিয়ে দিচ্ছেন না কেনো? সময় মতো বিয়ে করা ফরজ। 

 

কথা বলতে বলতে বিয়ে সম্পর্কিত কিছু ওয়াজ আশফাকের আম্মাকে শুনালো আবইয়াজ, এই ডোজ আদোও কতটুকু কাজ করবে তা জানা নেই আবইয়াজের। 

কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ড্যাবড্যাব করে আবইয়াজের কথাগুলো গিলছে সুভা।

-ওই তুমি তাকিয়ে আছো কেনো,জীবনে কখনো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখো নি? দেখবা কেমনে আমার মতো সুদর্শন যুবক চৌদ্দ দেশ ঘুরেও খুঁজে পাইবা না। এখন যাও তো এখান থেকে পরে নাহয় তোমার ফোনে আমার একটা পিক তুলে দিবো রাতে শুয়ে শুয়ে ওইটা ঝুম করে দেইখো।

কথাগুলো সুভাকে উদ্দেশ্য করে বললো আবইয়াজ। 

আবইয়াজের কথায় দ্রুত রান্নাঘরে চলে গেলো সুভা, কি ছেলে রে বাবা কাল দেখালো এক রূপ আজ আবার আরেক রূপ। 

 

আবইয়াজ আবারও বলতে শুরু করলো।

-আপনি আমাদের সাথে আছেন বহুবছর ধরে, আমি জানি আপনি সর্বদা আমাদের পরিবারের ভালো চেয়ে আসছেন আর আমি এটাও জানি আপনি ফাইয়াজের কথা'টা আম্মুকে বলবেন। 

বলেই চেয়ার ছেড়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো আবইয়াজ। 

টুপ তো ভালো মতোই দিলাম এবার ভালোয় ভালোয় গিললেই হলো।

 

আবইয়াজের প্রতিটি ছবি খতিয়ে দেখছে মেঘা, কিছু তো একটা আছে এই মানুষটির মধ্যে যা আমাকে ক্ষণে ক্ষণে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। 

সে কি কখনো আমায় বুঝবে না? দীর্ঘশ্বাস গুলোও আজ ভেতরে আটকা পড়ে আছে। 

কি এমন ক্ষতি হতো যদি আবইয়াজ আমায় ভালোবাসতো।

মানুষটার কথা ভাবলেই চোখ'টা ঝাপসা হয়ে আসে। 

 দীর্ঘ চার বছরে একসাথে পথচলা আমাদের। এই এতোদিনেও কি আমার প্রতি তার একটুও মায়া কাজ করে নি।

কথাগুলো আওড়াতে আওড়াতে হাতে ফোন তুলে নিলো মেঘা।

কল লিস্টে সবার উপরে থাকা নাম্বারে কল করলো।

 Buddy নাম'টা স্কিনের উপর জ্বলজ্বল করছে। 

 

ওপাশ থেকে হ্যালো শব্দ শুনতেই ভেতর'টা শান্ত হয়ে গেলো। 

শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল হাওয়া বয়ে যেতে লাগলো।

ইশ কি মায়ায় জড়ানো কন্ঠ।

-হ্যালো মেঘা।

মেঘা ছোট করে উত্তর দিলো, হু।

-কল করলি যে ঘুমাস নি?

-না।।

-কেনো? রেস্ট নিতে বলছিলাম তো।

আবইয়াজের কথার উত্তর না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করে বসলো মেঘা।

-তুই কি সত্যিই কখনো এক মুহুর্তের জন্যও আমায় ভালোবাসিস নি?

আবইয়াজ কাটকাট গলায় না বলে দিলো।

ভেতর'টা মোচড় দিয়ে উঠলো মেঘার, সেতো জানতো এমন কিছুই উত্তর আসবে ওপাশ থেকে তাও কেনো জিজ্ঞেস করেছিলো?

ওপাশ থেকে যে বার বার না উত্তর আসবে সেটা জানার সত্ত্বেও এই প্রশ্ন কয়েক'শো বার করেছিলো মেঘা।

যদি কখনো ভুলক্রমে আবইয়াজ হ্যাঁ বলে দেয় এই আশায়-ই তো এতো অবহেলার পরে পেছনে পড়ে আছে সে।

 

-কি মেঘা চুপ করে রইলি যে?

আবইয়াজের গলার স্বর পেয়ে ধ্যান ভাঙলো মেঘার।

-মিথ্যা হলেও একবার ভালোবাসি বলবি আবইয়াজ, তোর মুখ থেকে খুব শুনতে ইচ্ছে করে।

-মিথ্যা কথা মুখ থেকে কেনো শুনতে যাবি মেঘা, ওটা তো আর আমার মনের কথা না। 

-তাও একটিবার বল না আবইয়াজ।

-দোস্ত আমি খুব টায়ার্ড, প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি, আই উইল স্লিপ নাউ।

মেঘা হু বলে কল কেটে দিলো। 

 

ফোন'টা বিছানায় ছুড়ে মারলো আবইয়াজ। 

শালা না মরা অব্দি আমার আর শান্তিতে ঘুম হবে না। 

এখনো রাজিয়া খাঁন টের পান নি আমি এসেছি, টের পেলেই প্রধান বক্তা বয়ান পেশ করার জন্য উঠে পড়ে লাগবেন।

মা রাজিয়া তুমি ঘুমাও মা ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও।

ভেতর থেকে দরজা লক করে দিলো আবইয়াজ, বলা তো আর যায় না কখন রাজিয়া খাঁন এসে পিঠে দুই ঘা বসিয়ে দেন। 

এবার শান্তির ঘুম হবে ঘুম।

ফোন অফ করে বিছানায় চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়লো আবইয়াজ। 

এবার কেডা জ্বালাতন করবি কর। 

এখন দুনিয়ায় উল্টায়া গেলেও আবইয়াজ খাঁন তা টের পাবে না।

 

গত কিছুদিন যাবত মেসেঞ্জারে কেউ একজন বার বার নক দিচ্ছে। 

বরাবরের মতো তা এড়িয়ে গেলো রাকিব।

আমার তো নির্দিষ্ট একটা মহারানী আছেই আর কাউকে প্রয়োজন নেই।

 ঘরে বিরিয়ানি রেখে এসব ডালভাতের দিকে নজর রাকিব দেয় না।

পরপর মেসেজ আসতে লাগলো। 

রাকিব বার বার সিন করে রেখে দিচ্ছে। তাও ব্লক করছে না।

ভালোই তো লাগছে তার। অদ্ভুত কেমন যেনো এক শান্তি অনুভব করছে। 

কেউ একজন তার সাথে কথা বলার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে, না দেখেই ভালোবেসে যাচ্ছে এসব তো খারাপ লাগার বিষয় না। 

আসলেই নিজেকে খুব স্পেশাল মনে হচ্ছে। 

যেখানে বিল্লুরানী কে পটিয়ে বাঘে আনতে সময় লেগেছে এক বছর সেখানে এসব ছিচকে মেয়েকে এতো সহজে পাত্তা দিয়ে দিবো? উহু! আমি যেমন আরেকজনের পেছনে ঘুরেছি তুই ও তেমন আমার পেছনে ঘুর, সুদবোধ সমান সমান।

এই ভালো লাগা থেকে বিল্লুরানীকে একটা কল করা-ই যায়। 

মেহেকের ফোনে কল করলো রাকিব, একবার রিং হতেই কল রিসিভ করে কানে তুললো মেহেক। 

-ভাই মোমো আপুর সাথে দেখা করালে না?

-বিল্লুরানী কল করলাম আমি আর জিজ্ঞেস করছো আরেক বেডার বউয়ের কথা।

-আরেক বেডার বউ আমার কাজিন হয়, ওয়েট ওয়েট কি বললে বউ? কার বউ।

-ওই যে আদি আছে না ও বিয়া কইরা নিছে। 

-আরে এই তোমরা আমার বোনকে উঠিয়ে নিয়ে নিলামে তুলছো নাকি?

-এছাড়া আর কি করার ছিলো? তোমাদের বাসায় গেলে তো বলছিলা কেটে পিস পিস করে আলু দিয়ে রেঁধে পুরো গ্রামবাসীকে খাইয়ে দিবে, এখন আমি যদি গ্রামবাসীর খাবার হয়ে যাই তাহলে আমাদের টোনাটুনির সংসার হবে না আপকামিং বাচ্চাটাও আর আসতে পারবে না, ও তোমার পেটের মধ্যেই আটকা পড়ে থাকবে। 

-কি ভাষা।

-সত্য বললেই তুমি এমন করো বেবি।

-মাথা পুরাটাই গেছে তোমার, কাল একবার দেখা করবো মোমো আপুকে নিয়ে এসো।(মেহেক)

-ওর শাশুড়ী বাড়ি থেকে বের হতে দিবে কি না তার ঠিক নেই আবার উনি দেখা করবে হুহ।

-একে তো আমার জায়গায় আমার বোনকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে তার উপর আমরা কেউ-ই কিছু জানি না তোমারা ফ্রেন্ড'রা মিলে ওরে বিয়ে দিয়ে সংসার ও করাচ্ছো, বাহ কি পরোপকারী মানুষ তোমরা।

মেহেকের কথায় রাকিব খুশিতে গদগদ করে বলে উঠলো, আসলে আমরা ওরকমই।

-ভাই তুমি যেই একটা পরিস্থিতি তৈরি করছো তাতে মোমো আপুর মতো তোমার সাথে পালিয়ে বিয়ে করা লাগবে আমার, নাহলে আমাকে বিয়ে করার কথা সারাজীবনের জন্য বাদ দিয়ে দাও।

-ওসব ভয় দেখিও না বিল্লুরানী, আমরা নায়ক হতে না পারি ভিলেন ঠিকই হতে পারি, তোমার বোনকে যেমন তুড়ি মেরে চার বন্ধু মিলে উঠিয়ে এনেছি তোমাকেও তেমন ফু দিয়ে তুলে নিয়ে আসবো।

রাকিবের কথায় হেসে উঠলো মেহেক, বাহ তোমার ফু এর এতো শক্তি? কই দেখি তো একটা ফু দাও আমায়, দেখি তোমার কাছে উড়ে এসে পড়ি কি না।

-ওহো বিল্লুরানী তুমি কি সারাজীবন এমন বোকা-ই থেকে যাবে? হুটহাট করে ফু দিলে হবে নাকি? সময় ক্ষণ দেখে মন্ত্রতন্ত্র পড়ে ফু দিতে হয়।

-তাই নাকি দেখবো তোমার ফু এর প্রভাব আমার উপর এসে পড়ে কি না। 

-দেখে নিও মিলিয়ে নিও, বললাম তো নায়ক হতে না পারি আমরা কিন্তু নাম করা ভিলেন, আমি আগুন ধরিয়ে দেবো পৃথিবীর বুকে তুমি যদি আমার-ই না হও।

মেহেক আহ্লাদী স্বরে বলে উঠলো, উহু আমার নায়কের প্রয়োজন নেই যে সমাজ কি বলবে ফ্যামিলি মানবে কি না কি খাওয়াবে এসব ভেবে আমাকে ছেড়ে দিবে, আমারতো তোমার মতো একটা ভিলেন লাগবে যে আমাকে পাওয়ার জন্য সব তোলপাড় করে ফেলবে।

-ওহ হো মেরি জান, বুকে এসে লাগলো তোমার কথাগুলো, আমি তো কখনো ওই পরিস্থিতি আসতেই দিবো না তার আগেই তোমাকে নিজের করে নিবো।

-তাই যেনো হয়। আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে প্রতিনিয়ত কাঁদি।

-যা কাঁদার কেঁদে নাও, বিয়ের পর আর তা হবে না বুঝছো।

-জানি তো আমি। মন মিলেছে মনের সাথে প্রণয় হোক একই সাথে।

 

কতক্ষণ ঘুমিয়েছে তা ইয়াত্তা নেই আবইয়াজের।

দরজায় খটখট শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো তার।

কানের কাছে বালিশ চেপে ধরলো। 

শব্দ এতোই জোরে হচ্ছে যে কান ফোড়ে মস্তিষ্কে গিয়ে বার বার বারি খাচ্ছে। বালিশ তুলা কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।

রাগে গর্জে উঠলো আবইয়াজ। 

-দরজা ভেঙে ফেল হারামির বংশ।

-তোমার মতো অকর্মার ঢেঁকির জন্য আমি আমার এতো টাকা দামের দরজা ভাঙবো না আবইয়াজ, তুমি দরজা খুলো আমি তোমার আপ্যায়ন করবো।

মায়ের কথা শুনে জিভে কাঁমড় দিলো আবইয়াজ। 

পরপর রাজিয়া খাঁন ডাকতে লাগলেন, ভেতর থেকে আর কোনো সাড়াশব্দ আসলো না।

 

কিছু মুহুর্ত পর বাড়ির নিচ থেকে আবইয়াজ চিল্লিয়ে বলতে লাগলো, আপনি যার দরজায় কড়া নাড়ছেন সে অলরেডি বেলকনি দিয়ে পালিয়ে গেছে মিসেস খাঁন। 

দ্রুত নিচে নেমে এলেন রাজিয়া খাঁন। 

নিচে আবইয়াজ নেই, তবে সে যে চলে গেছে এটা নিশ্চিত। 

এই একটা ছেলে গোটা পরিবারকে জ্বালিয়ে মারছে।

 

বাসা থেকে বেরিয়ে ফোন অন করলো আবইয়াজ, আদি অসংখ্য মিসড কল দিয়েছে।

কল বেক করা কি উচিত হবে?

সাতপাঁচ না ভেবে কল বেক করলো আবইয়াজ। 

-কি বারো বেডির জামাই?(আবইয়াজ)

-একটা-ই সামাল দিতে পারছি না আর বাকি রইলো এগারোটা, ওই এগারোটা তুই নিয়ে নে।

-ছিঃ ভাই হয়ে বোনের জন্য সতিন আনতে চাস? তাও একটা না দুইটা না এগারোটা, তোর তো মরে যাওয়া উচিত আদি, টাকা না থাকলে দোকান থেকে বাকিতে এক বোতল বিষ খেয়ে নিস পরে নাহয় আমি টাকা দিবো।

-ওয়াম উম উম। (আদি)

-কি'রে বিষ খেতে বসে পড়লি নাকি?

-আরে না।

-তাহলে সপাত সপাত করে কি খাচ্ছিস মাদ্রিত?

-মুরগির ট্যাং, বউ রেঁধেছে সেই স্বাদ।

- শালা তোর তো অনেক কারেন্ট'রে, তেল একেবারে গলে গলে পড়তেছে। মেয়ে ভাগিয়ে আনলাম আমি বিয়ে দিয়ে দিলাম আমি, তোর ফ্যামিলিকে রাজি করালাম আমি, বকাও খেলাম আমি আর তার রান্না খাচ্ছিস তুই? নিমুক হারাম।

-আরে রাগ দেখাস কেন? তোরে দাওয়াত করার জন্য কল দিছি।

তুই ও আয় খেয়ে যাবি।

-সত্যি তো?

-হ্যাঁ সত্যি?

-তুই বাসার সামনে এসে দাঁড়া আমি পাঁচ মিনিটে আসতেছি, এমনিতেই বাসা থেকে আমাকে বের করে দিছে, কিচ্ছু খাইনি প্রচুর ক্ষুধা লাগছে।

-ওকে আমি বাসার নিচে আছি তুই আয়।

 

বাইকে নাই তেল পকেটে নাই টাকা,

কুত্তার মা'কে বিয়ে করে হক ভিলা করবো ফাঁকা।

ও কুত্তার মা তুমি আমার-ই, আবইয়াজ খাঁনের পার্সোনাল প্রোপার্টি। 

ওগো শাশুড়ী লিখে দিবা নি,শামসুল হকের অর্ধেক সম্পত্তি। 

 

শব্দবিহীন গান গেয়ে বাইক স্টার্ট করলো আবইয়াজ। 

 গিয়ে থামলো একেবারে আবিরাদের বাসার সামনে।

হাওয়ায় ভেসে উপর থেকে কিছু একটা এসে আবইয়াজের মুখের উপর পড়লো।

ভালো করে তাকিয়ে দেখলো লাল রঙের মেয়ে মানুষের ওড়না।

কোথা থেকে ওড়নাটা এসে পড়লো তা দেখার জন্য উপরে চোখ তোলে তাকালো।

-ওরে বাপ'রে এ তো দেখি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। পুরা-ই সিনেমার সিন। লাল টুকটুকে ফ্রক পড়া মেয়েটা আর কেউ নয় আবিরা, দেখে যতটুকু মনে হচ্ছে তাতে এই ওড়নাটা আবিরার-ই।

জীবনে এই প্রথম বার নিজের মধ্যে নায়ক নায়ক ভাইব আসছে।

দু-হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করে নিলো আবিরা।

ইশারায় ওড়না'টা উপরে ছুড়ে মারতে বললো সে।

-আগে বলো ভালোবাসি।

আবিরা আবইয়াজের কথায় পাত্তা না দিয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালো। 

পেছন থেকে আবইয়াজ চিল্লিয়ে বলে উঠলো, 

শুনো মেয়ে পাত্তা না দাও অন্তত ভালোবাসি বলে যাও, মনে রেখো আবইয়াজ খাঁনকে হারালে কাঁদতে হবে আড়ালে।

তোমার পিছে ঘুরতেছি মানে এই না যে আমি সস্তা, আসলে তোমার কাছে আমি নিজেকে অফারে দিয়ে দিচ্ছি, সুবর্ণ সুযোগ এক্ষুনি লুফে নাও , নাহলে পরে পস্তাতে হবে।

মাথায় রেখো একটি ভুল সারাজীবনের কান্না হতে পারে।

[গল্প পড়ে কেটে না পড়ে একলাইনে একটি গঠনমূলক মন্তব্য করে যান।]

 

চলবে,,,,,


Md Elias

51 블로그 게시물

코멘트