#মন_পাঁজরে_তুই
#আরেব্বা_চৌধুরী
#পর্বঃ ১০
ফাইয়াজের কথাগুলো স্বাভাবিকভাবে নিতে পারলো না সুভা।
একটা অজানা অচেনা মেয়ের জন্য কেনোই বা এতো কিছু করবেন উনি।
তিনি তো আমার রক্তের কেউ নন বা পরিচিতও কেউ নন। তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমার জন্য এতো কিছু করবেন।
তাকে আর কোনো প্রশ্ন করা কি ঠিক হবে আমার? নিজেই নিজেকে শুধালো সুভা।
-কি দাঁড়িয়ে আছো যে বাসার ভেতরে যাবে না?
সুভা সংকোচিত মনে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ উত্তর দিলো, এ ছাড়া আর কোনো উপায়-ই বা নেই তার৷
এতো রাতে কোথায়-ই বা যাবে সে, শহরের পথঘাট সম্পর্কে কিছুই জানে না যদি কোনো বিপদ হয় তবে কি কেউ এগিয়ে আসবে তাকে বাঁচাতে।
অনেক ভাবনা চিন্তার অবসান ঘটিয়ে ফাইয়াজের সাথে ভেতরে গেলো সুভা।
পুরোনো অর্ধভাঙা খাটের উপর গিয়ে বসলো সে, বসতেই মরমর শব্দ করে উঠলো সেই অর্ধভাঙা খাট।
এই খাট ভেঙে নিচে পড়লো বলে।
এর থেকে তো মাচা অনেক ভালো ছিলো।
হাতে করে একটি ব্যাগ নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো ফাইয়াজ।
ব্যাগের সবকিছু খাটের উপর রাখতেই সুভার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো, এই এতো এতো জিনিস কোথায় ব্যবহার করতে হয় তা সুভার অজানা।
এতো কিছুর মধ্যে শুধু লিপস্টিক আর সুনু পাউডার চিনতে সক্ষম হলো।
-এগুলো কি করবো?
-কি করবে মানে? ব্যবহার করবে, শরীরের যত্ন নিবে।
-এই এতোগুলা জিনিস সব মুখে লাগাবো?
-হ্যাঁ।
-আমি তো এগুলো ব্যবহার করতে জানি না।
সুভার কথায় ফিকে হাসি দিলো ফাইয়াজ।
-শিখিয়ে দেওয়ার জন্য আমি আছি তো। সব হাতে কলমে শিখিয়ে দেবো।
ইউটিউবের ভিন্ন ভিডিও সুভাকে দেখাতে লাগলো ফাইয়াজ।
ফাইয়াজের এই কাছে আশা বুকের মধ্যে এক অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম হলো সুভার।
এতো কাছাকাছি কোনো পুরুষ, উষ্ণ হাওয়ায় মন উতালপাতাল করে দিচ্ছে।
ঘনঘন নিঃশ্বাস নিতে লাগলো সুভা।
-তোমার চুলগুলো অনেক সুন্দর, বেশি বেশি করে চুলের যত্ন নিও, আমার মনে হয় নারীর সৌন্দর্য চুলে।
ফাইয়াজের কথায় লাজুক হাসলো সুভা।
মানুষটাকে প্রথমে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম আসলে ততটা খারাপ নয় কথা ভাবতেই অনুশোচনা প্রকাশ করলো সুভা।
ফাইয়াজ সুভাকে দাঁড় করিয়ে একটা ছবি তুলে নিলো।
-কি হলো ছবি তুললেন কেনো?
-ক'দিন পর যে নিজেকে চিনতে পারবে না, সেইজন্য প্রমাণ রাখলাম যাতে এই ছবির মাধ্যমে নিজেকে চিনতে পারো।
ফাইয়াজের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলো না সুভা।
তাও আর প্রশ্ন করার সাহস পেলো না সে।
চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আবইয়াজ।
নির্লিপ্ত চাহনিতে ক্যাবিনের বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকলো মেঘা।
মেয়েরা হয়তো ভালোবাসার মানুষকে লুকিয়ে দেখতেই বেশি পছন্দ করে।
অনুভূতিরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শিরায়-উপশিরায় ধোঁয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছে সব, মেঘের আড়ালে পুনরায় সূর্য উদিত হবে কি না তা মেঘার জানা নেই।
মরুভূমিতে পানির আশা করা যেমন বোকামি তেমনই আবইয়াজের কাছে ভালোবাসা পাওয়ার আশা রাখাও নিছক বোকামি।
নিজেকে বার বার বুঝানোর চেষ্টা করছে মেঘা।
-মেঘা মেনে নাও তুমি, আবইয়াজ তোমার নয়।
কিন্তু কি আর করার, অবাধ্য মন কি আর তা শুনতে চায়।
এতো বারণ করার সত্ত্বেও বেইমান মন শুধু তার কথা-ই ভাবে, অবাধ্য চোখ তাকে দেখার আকুলতা নিয়ে রাত জাগে, ইশ নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গও যেনো আজ আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
চোখের কার্নিশ বেয়ে দু-ফোটা জল নিচে গড়িয়ে পড়লো।
আবইয়াজকে ভুলে যাওয়ার কথা চিন্তা করলে বুক'টা ভারী হয়ে আসে কেনো?
আবইয়াজ কি আমায় কখনো অনুভব করতে পারে না?
আসলে মানুষ চাইলেও নিজের অনুভূতি পুরোপুরি ভাবে প্রকাশ করতে পারে না।
আমিও পারি নি হয়তো।
কাকভোরে উঠেই রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো মোমো।
এবাড়িতে কে কি খায় সেটা নিয়ে কোনো ধারণা-ই নেই তার তারপরেও যতটুকু পেরেছে নিজের মন মতো করেছে।
হরেক রকমের নাশতা তৈরি করে টেবিল সাজিয়ে রাখলো মোমো।
শামসুল হক সকাল ৮টার দিকে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন যার কারণে ৭টা নাগাদ নীলিমা হক উঠে শামসুল হকের নাশতা সহ যাবতীয় সব কিছু গুছিয়ে রাখেন, এসব কাজ তার রোজকার রুটিনের মধ্যে পড়ে।
আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।
সকাল সাতটা নাগাদ চুল হাত খোপা করতে করতে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন তিনি।
ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই দেখলেন হরেক রকমের নাশতা দিয়ে টেবিল সাজানো।
নিজের চোখ ঢলে আবারো টেবিলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন তিনি।
-না, তিনি ভুল দেখছেন না। সত্যিই টেবিল সাজানো। কিন্তু কে করলো এসব এতো ভোরে।
গোটা টেবিলে ভালো করে চোখ বুলাতে লাগলেন নীলিমা হক।
তিনি এখনো ভেবে পাচ্ছেন না এতো কাজ কে করে রাখতে পারে।
রান্নাঘরের দিকে চোখ যেতেই দেখতে পেলেন, মোমো এখনো কিছু একটা রান্না করছে।
কালো সুতির শাড়ি কোমরে বেঁধে নিশ্চুপ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে মেয়েটা।
ফর্সা শরীরে কালো শাড়িটি খুব মানিয়েছে তাকে।
ধীর পায়ে মোমো'র দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এই সব কিছু কি তুমি একা করেছো?
প্রতিউত্তরে মৃদু হাসলো মোমো।
-কখন উঠেছো তুমি?
-ভোর পাঁচটায়।
-এগুলো করতে কে বলেছে?
-কেউ বলবে কেনো? এটা তো আমারই সংসার, আমার সংসারে আমি আমার মা বাবার জন্য এটুকুও করতে পারবো না?
মেয়েটাকে যত দেখছেন ততই মুগ্ধ হচ্ছেন নীলিমা হক, এই মেয়েকে বিয়ে করে যে ছেলে কোনো ভুল করে নি এ ব্যাপারে নিশ্চিত তিনি। দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটা বেশ সংসারী।
রুমে গিয়ে শামসুল হক কে ওঠালেন নীলিমা হক।
অফিসের সময় হয়ে গেছে।
কথাটা কানে পৌছানো মাত্রই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলেন শামসুল হক।
মুখ টিপে হাসতে লাগলেন নীলিমা হক।
তাড়াতাড়ি নিচে আসো তোমার জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।
-সারপ্রাইজ তাও আবার আমার জন্য? এবাড়িতে তো এমন কেউ নেই নীলিমা, কার এতো সুবুদ্ধি উদয় হলো যে আমাকে এখন সারপ্রাইজ দিবে।
-সেটা না-হয় নিচে গেলেই দেখবে।
শামসুল হকের হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে আসলেন নীলিমা হক।
মোমো কোমল হাতে পা ছুঁয়ে সালাম করলো।
শামসুল হক ইশারায় নীলিমা হক কে জিজ্ঞেস করলেন মেয়েটা কে?
নীলিমা হক বললেন, তোমার একমাত্র ছেলের বউ, আমাদের ঘরের লক্ষী।
শামসুল হক মোমোর মাথা ছুয়ে আশীর্বাদ করলেন।
-নাও এবার খাবার টেস্ট করে জানাও, আমাদের মোমোর রান্না কেমন।
-ভালো তো অবশ্যই হবে আমার ছেলের বউ বলে কথা।
-ইশ উনি ছেলের বউ গাছ থেকে পেড়ে এনেছেন।
-আমি পেড়ে আনিনি নীলিমা, আকাশ থেকে একটা তারা আমার ঘরে খসে পড়েছে।
শশুর শাশুড়ির কথোপকথনে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে মোমো।
এক এক করে প্রতিটি খাবার ছেকে দেখলেন শামসুল হক।
অতুলনীয় অতুলনীয় বলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনি।
শামসুল হকের মুখ থেকে এমন প্রশংসা শুনে লোভ সামলাতে পারলেন না নীলিমা হক।
সাথে সাথেই খেতে বসে পড়লেন তিনি।
-একি নীলিমা তুমি না ছেলে মেয়েকে রেখে খাও না।
-আজ আর সম্ভব না, ইতিমধ্যে আমার জিভে জল চলে এসেছে।
নীলিমা হকের এহেন কথায় হেসে উঠলেন শামসুল হক।
পার্কের মধ্যে একা একা বসে আছে রাকিব।
বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে সে।
-এবার ফোন করলো মেহেকের ফোনে।
-কি বিল্লুরানী সেই কখন থেকে তোমের অপেক্ষা করছি কোথায় তুমি?
-আর মাত্র পাঁচ মিনিট।
-তাড়াতাড়ি আসো।
কল কেটে দিয়ে বাদামওয়ালাকে ডাক দিলো রাকিব।
-চাচা ২০ টাকার বাদাম দেন তো।
বাদাম নিয়ে একা একা খেয়ে সময় পার করছে রাকিব।
কিছু সময়ের মধ্যেই মেহেক চলে এলো।
সাথে বহুছিদ্র বিশিষ্ট লাগেজ।
লাগেজের এই হাল দেখে তাচ্ছিল্যের স্বরে হাসতে লাগলো রাকিব।
-বড়লোক বাড়িতেও কি এমন ছিঁড়াফাটা লাগেজ থাকে? ওরে গরিবস।
-ওটা ছিঁড়াফাটা লাগেজ নয় রাকিব, এটা আমার বিল্লুর ব্যাগ।
-মানে ওটাকে আজও সাথে নিয়ে এসেছো?
-জানোই তো তাকে ছাড়া এক মুহুর্ত ও থাকতে পারি না আমি।
-আমার খুব হিংসা হয় বিল্লুরানী, আমার ভালোবাসা সব ও নিয়ে নিচ্ছে।
-উফফফ তোমার বাচ্চামি স্বভাবগুলো আর গেলো না।
-তা আজ একে এই ব্যাগে করে নিয়ে আসলে যে?
-তার শরীর তেমন ভালো না, ঠান্ডা লেগে যাবে তাই ব্যাগে করে নিয়ে এসেছি।
-যতবার আসবা, এই বা*লডা সাথে নিয়ে আসা লাগবে?
রাকিব কিছুটা রাগ দেখিয়ে ব্যাগ থেকে বিড়াল'টি বের করে মাটিতে রাখতেই বিড়ালটি লাফ দিয়ে মেহেকের কোলে চড়ে বসলো।
-দেখলে কেনো একে এতো হিংসা করি? ও তোমার কোল ছাড়া আর কোথাও বসতেই পারে না।
-ও যেমন তেমন বিড়াল নয়, ও চৌধুরী বিড়াল ভাব তো একটু থাকবেই।
উচ্চ বংশের বিড়াল বলে কথা।
-উঁচু বংশের হোক বা নিচু বংশের হোক, আমার ভালোবাসায় কারোর ভাগ আমি মেনে নিবো না বিল্লু রানী, এটা ভালো করে তোমার উচ্চ বংশের বিড়ালকে বুঝিয়ে দাও।
-ইশ কি মানুষ, বিড়ালের সাথেও হিংসা করে।
-তা করবো না? ও যে সব ভালোবাসা নিয়ে নিচ্ছে। সব সময় আমার ভালোবাসায় ভাগ বসাতে আসে।
-তোমার জায়গা তো তোমারই আছে আর তার জায়গা আলাদা।
-ইশ, হবে না, বিয়ের পর তোমার আশেপাশেও ঘেঁষতে দিবো না ওরে আমি।
-একে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছো না কেনো বিল্লুরানী? বউয়ের কোলে চড়ে বসার বয়সে তোমার কোল জুড়ে বসে থাকে, পুরো তুমি'টাকে যদি ও দখল করে নেয় তাহলে আমি কোথায় যাবো।
এই বিল্লু তুই আমার জিনিসের ভাগ বসাস কেনো রে? আর বিল্লু শুন! আমার রানীর থেকে দূরে দূরে থাকবি, এখন থেকে অভ্যাস করে নে। আমার বউ কিন্তু পুরোটাই আমার, তার আদর যত্ন ভালোবাসাও সব আমি একা নিবো।
-উফ রাকিব। বাদ দাও এসব, যে জন্য ডেকেছি সেটা শুনো।
-হ্যা বলো।
-মাস তো প্রায় শেষের দিকে গতকাল টিউশনির টাকা পেলাম।
কথাগুলো বলতে বলতে ব্যাগ থেকে সাত হাজার টাকা বের করে রাকিবের হাতে দিলো মেহেক।
-প্রতি মাসেই কি আমার হাত খরচের টাকা দেওয়া লাগবে তোমার?
-তুমি তো আমারই, তাই আমার যা তাতো তোমারই।
-তাই বলে বাসার সবার থেকে লুকিয়ে টিউশনি করে আমার হাত খরচ চালাবে?
-এ ছাড়া আমি আর টাকা কোথায় পাবো?
-পাওয়ার কথা বলছি না, এতো কষ্ট করে আমাকে টাকা না দিলেও হতো।
-আমি জানি তো তোমার পরিবারের অবস্থা। কোনোরকমে সংসার চলে।
-তোমার থেকে টাকা নিতে আমার আত্মসম্মানে লাগে।
-ইশ কি আমার আসছে, আমার কাছ থেকে টাকা নিতে নাকি উনার আত্মসম্মানে লাগে। আমি কিন্তু এমনি এমনি টাকাগুলো দিচ্ছি না, পড়ালেখা শেষ করে যখন ভালো একটা জব পাবে তখন গুণে গুনে সব টাকা সুদেআসলে ফেরত নিবো। মাথায় রেখো।
মেহেকের কথা শুনে মুচকি হাসলো রাকিব।
হসপিটাল থেকে রিলিজ পেয়ে মেঘাকে বাসায় রেখে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো আবইয়াজ। যদিও শর্মিলা বেগম না খেয়ে আসতে দিতে চাচ্ছিলেন না তাও জোরপূর্বক বাসায় চলে আসলো সে।
সাদা শার্ট পরহিত আবইয়াজ কে দেখে মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো সুভার।
মাত্রই কালো শার্ট পরে লোকটা উপরে গেলো, এখন আবার সাদা শার্ট পরে বাড়ির বাইরে থেকে ভেতরে আসছে।
বাড়ি থেকে বাইরে বের হওয়ার কোনো গুপ্ত দরজা আছে নাকি? থাকলেও তো এতো তাড়াতাড়ি বাসার ভেতর থেকে বাইরে আর বাইরে থেকে ভেতরে আসা সম্ভব না।
জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে আবইয়াজের দিকে তাকিয়ে রইলো সুভা, যেনো অনেক কিছু জানতে চায় সে।
আবইয়াজ কোনো দিকে না তাকিয়েই নিজের রুমে চলে গেলো।
কিছু সময় বসে একটুখানি জিরিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
গোসল সেরে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে ফাইয়াজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো।
খালি গায়ে চিত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে ফাইয়াজ।
আবইয়াজ গিয়ে বিছানা থেকে টেনে উঠিয়ে বসালো ফাইয়াজকে।
তারপর প্রশ্ন করতে লাগলো।
-ফাইয়াজ তোর কি মনে হয়না তোর একটা ভাবি দরকার।
আবইয়াজের কথায় বিরক্তি হয়ে ফাইয়াজ বলে উঠলো, আমি তোর বড় হই আবইয়াজ।
-বিয়ের ক্ষেত্রে বড় ছোট ম্যাটার করে না, যার যখন যাকে ভালো লাগবে তখন তাকে বিয়ে করা উচিত।
-তুই কি কাউকে পেয়েছিস নাকি?
-একটা কুত্তার মা রোজ স্বপ্নে এসে জ্বালায়।
-ছিঃ আবইয়াজ শেষে কিনা কুত্তার মা।
-সে মানুষের বাচ্চার, তার বাচ্চা কুত্তা।
আবইয়াজের কথাগুলো তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে ফাইয়াজের।
-সে বিয়ে করে ফেলছে নাকি?(ফাইয়াজ)
-আরে না।(আবইয়াজ)
-তাহলে বাচ্চা কুত্তা বললি যে।(ফাইয়াজ)
-তুই বুঝবি না, পারলে আম্মুকে বল আমাকে যেনো বিয়ে করিয়ে দেয়।(আবইয়াজ)
-আমি পারবো না ভাই, মাফ চাই।(ফাইয়াজ)
-তুই আম্মুর কাছে ভালো ছেলে, বিশ্বাস কর তুই বললে আম্মু শুনবে।(আবইয়াজ)
-রুম থেকে যাবি নাকি আম্মুকে ডেকে সব বলে দিবো।(ফাইয়াজ)
-তোকে আমার ভাই ভাবতেও লজ্জা করছে ছিঃ।
-ভাবিস না, ভাবতে কে বলছে।
-ভাবিও না, বিশ্বাস কর তোকে নিয়ে একটুও ভাবি না শুধু মাঝেমধ্যে তোর কাপড় পড়ার জন্য কথাটুকু বলি নাহলে ওইটুকুও বলতাম না।
-খবরদার আবইয়াজ আমার কাপড়ে হাত দিবি না।
-তুই ওখানে বসে খবর পড় আমি গেলাম।
বলেই ঝাপট মেরে স্কাই কালার একটা টি-শার্ট নিয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলো আবইয়াজ।
পেছন থেকে ফাইয়াজ চিৎকার করে উঠলো, ছ্যাঁচড়া একটা, আর আসিস।
কে কি বললো সেসবে আবইয়াজ তোয়াক্কা করে না, সে নিজের মতো চলতে পছন্দ করে।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে গ্রুপ কল করলো আবইয়াজ।
সবার আগে সাদিন জয়েন করলো।
-ককি আবিয়াচ।
-তোঁতাপাখি সবার কাছ থেকে একটা হেল্প লাগবে আমার।
-কিই হহেল্প?
এবার রাকিবও জয়েন হলো।
-অসময়ে গ্রুপে কি?(রাকিব)
-তোর মাসি সুইসাইড করলো মরতে মরতে বেঁচে গেলো সাথে আমাকেও জাহান্নাম দেখিয়ে আনলো খবর নিয়েছিস একবার?(আবইয়াজ)
-বিল্লুরানীর সাথে দেখা করতে গেছিলাম।
-তুই তো সারাদিন বিলাইর মা নিয়েই পড়ে থাকিস।
-আর তুই নিজে কি? সারাদিন কুত্তার মা কুত্তার মা বলে কান ঝালাপালা করে দেস।
-আচ্ছা বাদ দে, এবার কাজের কথায় আসি। ভাই ফ্যামিলির কেউ আমার বিয়ে নিয়ে সিরিয়াস হচ্ছে না, এখন সবাই মিলে একটা বুদ্ধি দে, কিভাবে তাদের বুঝাবো তাদের ছেলে বড় হয়ে গেছে, তার জন্য বিয়ে করা ফরজ হয়ে গেছে।
-সরাসরি বলে দে।(রাকিব)
-এভাবে হবে না ভাই, অন্য পদ্ধতি বল যেমন আঁকার ইঙ্গিত করে কিভাবে বুঝানো যায়?
-শোন তবে, ভোর রাতে গোসল করে লুঙ্গী সবার চোখের সামনে শুকাতে দিবি, সময় মতো খাবি না সময় মতো ঘুমাবি না, একা একা থাকবি হাসা তো একেবারেই বন্ধ করে দিবি, প্রচুর রাত করে বাসায় ফিরবি কখনো বা ফিরবি না, মধ্যরাতে ছাদে গিয়ে বসে থাকবি, কখনো কখনো কোনো মেয়ের নাম ধরে চিল্লায়া কানবি।
তখন সবাই জানতে চাইবো তোর এই অধঃপতনের কারণ কি?
ব্যাস কাজ হয়ে গেছে, বলে দিবি কাউকে ভালো লাগতো তার বিয়ে হয়ে গেছে এখন তুই নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দিবি।
তখন তোকে দুই চারটা কিল থাপ্পড় ও খাওয়া লাগতে পারে, আবার তোকে স্বাভাবিক করার জন্য সবাই উঠে পড়ে লাগবে, বিয়ে করিয়ে দিবে রাতারাতি। জানিসই তো বিয়ে সকল রোগের ওষুধ, বিশেষ করে মানসিক শান্তির।
-আইডিয়া তো ভালো দিলি,দুই চারটা কিল থাপ্পড় খেয়েও যদি বউকে সারাজীবন কাছে পাই তবে মন্দ না। কিন্তু কথা হচ্ছে এখন যদি আমি বলি ছ্যাঁকা খাইছি তাহলে যার তার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে তখন আমার কুত্তার মা'র কি হবে?
-আরে না, যখন ফ্যামিলি থেকে তোর বিয়ের সিদ্ধান্ত নিবে তখন আবিরার কথা উঠাবি।
চলবে,,,,