#মন_পাঁজরে_তুই
#আরেব্বা_চৌধুরী
#পর্বঃ ০৯
নীলিমা হক আদি'কে বললেন আপাতত মোমো যেনো আবিরাr সাথেই থাকে।
পরে ঘটা করে তিনি বিয়ে দেবেন, তখন স্বামীর রুমে সে স্থান পাবে তার আগে নয়।
কিন্তু আমি তো বাসর সেরে ফেলছি মা কথাটা ভেবেই বো করে হেসে উঠলো আদি।
-কি আদি হাসছো যে?
-কিছু না।
-যাও রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।
নীলিমা হকের কথামতো নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো আদি।পর্দার আড়াল থেকে ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিলো মোমো'র দিকে। লজ্জা লাল হয়ে গেলো মেয়েটা।
-আবিরা তুই মোমোকে নিয়ে তোর রুমে যা, আমিও যাই মাথা ব্যাথা করছে খুব।
নীলিমা হক নিজের রুমে চলে গেলেন, মোমো আবিরার সাথে না গিয়ে নীলিমা হকের পিছু পিছু গেলো।
হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছন ফিরে তাকালেন নীলিমা হক।
মোমো'কে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালেন তিনি, মোমো'কে শুধালেন,কি?
-আপনার না মাথা ব্যাথা করছে? আপনি শুয়ে পড়ুন আমি মাথা টিপে দেই।
মোমো'র কথায় খানিক হাসলেন নীলিমা হক, আহ্লাদী স্বরে বললেন সারাদিন অনেক দখল গেছে রুমে গিয়ে রেস্ট করো একটু পরেই তোমার শশুর মশাই চলে আসবেন, তোমাদের ব্যাপারে উনার সাথে কথা বলতে হবে। এখন তুমি রুমে যাও আমি ঠিক আছি।
নীলিমা হকের কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো মোমো।
রুমে যেতেই আরেক বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলো মোমো।
আবিরা চেপে ধরেছে তাদের লাভ স্টোরি শুনবে।
-ভাইয়ার সাথে তোমার কিভাবে পরিচয় কোথায় দেখা, কতদিনের রিলেশন কিভাবে কি সব বলো আমি খুব এক্সাইটেড এগুলো শুনার জন্য।
মোমো শান্ত গলায় বললো, অন্যদিন বলি? আজ খুব টায়ার্ড লাগছে।
-ঠিক আছে, তবে বলবে কিন্তু মনে থাকে যেনো হুম।
-তুমি আমার একটি মাত্র বোন তোমার থেকে কি কিছু লুকাতে পারি।
-হ্যাঁ তাই তো। তুমি কি এখন চা খাবে নাকি হালকা-পাতলা ঘুম দিবে কোনটা?
-ছোটখাটো একটা ঘুম হয়ে যাক। চোখ মেরে বললো মোমো।
-হুমমম বুঝতে পেরেছি এভাবে চোখ মেরেই বুঝি আমার ভাইয়াকে বশ করেছো।
-আরে না ধুর।(মোমো)
শব্দ করে হেসে উঠলো আবিরা।
মোমো মেয়েটা যে মিশুক তা বুঝতে বাকি নেই তার, কয়েক ঘন্টার পরিচয়ে কতটা খাপ খাইয়ে নিয়েছে নিজেকে।
মেঘার সাথে দেখা করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো রিফাত ও মিষ্টি।
মিষ্টিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়ির দিকে পা চালালো রিফাত।
একটু সামনে আগাতেই দেখলো রাকিব নাচতে নাচতে হেটে যাচ্ছে।
পেছন থেকে ডাক দিলো রিফাত।
-এ রাকিইব্বা, এম্নে হাটস কেন তুই?
-কি বেটা, তুই আমারে সব সময় ফলো করস? একটু ভাবসাব নিয়া হাটতেও পারি না।
-কই গেছিলি তুই?(রিফাত)
-দুর বেটা আর কইস না, মার্কেটে গেছিলাম।
-তা কি কিনলি দেখি তো।
রাকিব আফসোসের স্বরে বলতে লাগলো, আর বলিস না, কি একটা বয়স চলছেরে ভাই মার্কেটে গেলে জামা পছন্দ না হয়ে মেয়ে পছন্দ হয়ে যায়।
-উহু তোর চরিত্র তো আমার মোটেও সুবিধার লাগছে না, মেহেককে বলবো নাকি?
-মেরে একদম নাক ফাটাই দিবো মাদারি, তোর চরিত্র আমার ভালো করেই জানা আছে, মিষ্টি তোরে থাপড়াইয়া সম্পর্ক এই অব্দি ঠিকিয়ে রাখছে আমরা কি আর জানি না?
-গা*ঞ্জা খাইয়া কথা কস তুই বুঝতে পারছি।
-ভাই তোর লগে তো আমার কোনো কালেই পড়ে না তুই আমার ফ্রেন্ড হইলি কেমনে বুঝা আমারে।
-আবইয়াজ কই?
-মেঘা সুইসাইড করছে, ওর কাছে।
-এ কস কি ভাই? আমারে কেউ কিছু কইলো না।
-তুমি তোমার বিল্লুরানী নিয়া সারাদিন শুয়ে থাকো এগুলা জানবা কেমনে। ফ্রেন্ড সার্কেলের খবর রাখলে তো জানতে পারবা।
-এ ভাই তুই যা আমার চোখের সামনে থেকে, নাহলে তোর সাথে আমার একাত্তরের যুদ্ধ হয়ে যাবে।
-হ্যাঁ গেলাম, চলিত মাসেই বিয়ে করবো দাওয়াত দিবো না।
-দাওয়াত না দিলে ক*ন*ড*ম পাবি না।
-ভদ্র ভাষা মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে রাকিব।
-হেহেহে হুহুহু হাহাহাহা।(রাকিব)
-পাগলের ঘরের পাগল।
-তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী পাগল।(রাকিব)
রিফাত আর রাকিবের সাথে কথা বাড়ালো না, এই ঝগড়া নতুন না বরাবরই রিফাত রাকিব একে অপরের কথা হজম করতে পারে না।
আবইয়াজ চা পরোটা নিয়ে শর্মিলা বেগমের কাছে গেলো।
মৃদু হেসে বললো, আন্টি এখানে তেমন কিছু পাওয়া যায় না, আপাতত এগুলো খেয়ে নিন রাতের খাবার না-হয় আমি অন্য কোথাও থেকে যোগাড় করবো।
-তুমি এতো কষ্ট করছো কেনো বাবা?
মেঘা একদৃষ্টিতে আবইয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে।
আবইয়াজ বিষয়টি আঁচ করতে পারলো, তার নিজের ও খুব অস্বস্তি লাগছে কিন্তু কি আর করার আন্টির সামনে এখন ওসব কিছু বলা যাবে না।
এর মধ্যে মেঘা বলে উঠলো আম্মু তুমি একটু বাইরে যাও আমার আবইয়াজের সাথে একান্তে কিছু কথা আছে।
শর্মিলা বেগম উঠে চলে গেলেন।
নরম দুই হাত দিয়ে আবইয়াজের হাত দুটো নিজের হাতে পুরে নিলো মেঘা।
-সব জেনেও তুই কেনো আমাকে এতো কষ্ট দিস? আমি সবার অবহেলা সহ্য করতে পারলেও তোর অবহেলা মেনে নিতে পারি না, জানিস আমার খুব কষ্ট হয়, দম বন্ধ হয়ে আসে, তোর সাথে কথা না বললে আমার ঘুম আসে না, নিজে না চাইতেও আমি সারাদিন তোকে নিয়ে ভাবি। আমি মানসিক ভাবে পুরোপুরি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। নিজেকে পাগল পাগল লাগে আজকাল।
-এসব নিয়ে পরে কথা বলি? এখন তুই ঘুমা।
-তাহলে তুই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেঘার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো আবইয়াজ।
মেয়েটা চোখ বন্ধ করে আবইয়াজের প্রত্যেকটা স্পর্শ অনুভব করছে।
শব্দ করে আবইয়াজের ফোন'টা বেজে উঠলো, রাজিয়া খাঁন ফোন করেছেন।
ফোন কানে তুলতেই শুনতে পেলো ওপাশ থেকে কর্কশ গলায় বকাবকি করছেন রাজিয়া খাঁন।
আবইয়াজ আহত গলায় বলে উঠলো, আম্মু আমি অপ্রস্তুত, আমি এসব সহ্য করার মতো অবস্থাতে নেই ক্ষমা করো আমায়।
আবইয়াজের কথায় উত্তেজিত হয়ে পড়লেন রাজিয়া খাঁন, কোথায় তুমি? দিনের বেলা না-ই ফিরলে রাতে তো বাসায় আসা যায় নাকি? নষ্টের শেষ সীমায় পৌছে গেছো তুমি।তোমার আরেকটা ভাই আছে কই সে তো বাসার বাইরে একটা রাত ও কাটায় না।
স্মিত হাসলো আবইয়াজ।
-বিয়ে করিয়ে দাও বাসা থেকে এক চুল ও নড়বো না, দিন রাত বউ নিয়ে শুয়ে থাকবো।
-ছিঃ আবইয়াজ, দিনকে দিন অসভ্য বরবর হয়ে যাচ্ছো তুমি। তুমি কি ভুলে গেছো তুমি কার সাথে কথা বলছো?
-আর কত সুখে শান্তিতে থাকবা আম্মু? এবার চাইলেই তো একটা জঞ্জাল ঘরে নিয়ে আসতে পারো, ঝামেলাহীন জীবন আর ভালো লাগে না আম্মু, এবার একটা বউ এনে সুখ শান্তি নষ্ট করার ব্যবস্থা করো। এই যে আমাদের সাথে ঝগড়া করতে গেলে তুমি হাপিয়ে উঠো একটা বউ থাকলে সে অন্তত তোমাকে সাপোর্টটুকু তো করতো নাকি?
রাজিয়া খাঁন বিরক্ত হয়ে কল কেটে দিলেন।
বাঁকা হাসলো আবইয়াজ।
ভালো ভাবে কথা বললে উনি কমসেকম ৪০-৫০ টা কথা শুনিয়ে দিতো, ত্যাড়ামি করলাম ব্যস ঝামেলা ছাড়াই কল কেটে দিলো।
মেঘার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
ক্যাবিনের বাইরেই চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন শর্মিলা বেগম।
--আন্টি আসেন এখান থেকে দুই কি.মি. দূরে একটা রেস্টুরেন্ট আছে কিছু খেয়ে নিবেন।
-না বাবা আমি কিছু খাবো না।
-বললেই হলো? মেয়ে অসুস্থ এখন যদি আপনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে মেঘার দেখভাল কে করবে?
মুচকি হাসলেন শর্মিলা বেগম।
রিক্সা করে সেই রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো শর্মিলা বেগম কে।
দুজনে মিলে রাতের খাবার খেয়ে ফের হসপিটালে চলে আসলো।
শর্মিলা বেগমকে ক্যামিনের ভেতরে রেখে বাইরেই বসে রইলো আবইয়াজ।
ফোনের গ্যালারিতে গিয়ে আবিরার অস্পষ্ট ছবিখানা বার বার ঝুম করে দেখতে লাগলো।
এই ছবি সেদিনকের যেদিন আবিরাকে প্রথম দেখেছিলো সে।
চলন্ত বাইকে কি আর অতো ভালো ছবি আসে, তাও যা এসেছে তাতেই আবিরাকে নিয়ে কল্পনার জগৎ সাজানো সম্ভব।
মেয়েটা দেখতে একদম বলিউড নায়িকাদের মতো।
আমি হুরপরী দেখি নি তবে আমি আবিরাকে দেখেছি।
আচ্ছা হুরপরীরা কি এর চেয়েও সুন্দর হয়?
রাত বারোটা, রিফাত কল করেছে।
-কি মামা তুই এখনো হসপিটালে নাকি?
-মাদ্রিদে আবার জিগায়, তোর খালাম্মা যে অসুস্থ তাও আমাকে দায়ী করে সুইসাইডের চেষ্টা করছে এখন আমি হসপিটালে থাকবো নাতো কি জাহান্নামে থাকবো।
-মেঘা খালাম্মা হয়?
-তো আর কি বলবো ভাই? গত দুই তিন ধরে চোখের পাতা এক করি নাই, কখনো রাকিব কখনো আদি এখন আবার মেঘা। ভাই আমারে কবরে রেখে আয় ওখানে অন্তত আরামসে ঘুমাই।
-রাকিইব্বারে পাইলাম রাস্তায়। তৃতীয় লিঙ্গের মতো তালি দিয়া নাচে। আবার বলে শপিংয়ে গেছিলো জামা কিনতে, তার নাকি জামা পছন্দ হয় না মেয়ে পছন্দ হয়।
কি আর বলবো বিয়ের বয়স চলছে, আমারও একই অবস্থা মার্কেটে একটা শার্ট কিনতে গেলেও কুত্তার মার জন্য ড্রেস পছন্দ হয়ে যায়।
-আলগা পিরিতি, তোরা একাই প্রেম করস। এইসব আদিখ্যেতা সহ্য হয় না আমার।
-এর জন্যই দুই দিন পর পর মিষ্টি তোরে দৌড়ানি দেয় মারার জন্য, বিশ্বাস কর ভাই তোরা দুইটা বিয়া করলে অল্প বয়সেই টাক হবি, যেই হারে একে অপরের চুল টানাটানি করস।
-ভাই ছাড়ার কথা বললে আরেক সমস্যা, আজ আমার লিঙ্গ কাটার হুমকি দিছে। গার্লফ্রেন্ড তো অনেক দূরের ও না আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড, ফ্রেন্ড হয়ে আরেকটা ফ্রেন্ডকে এটা কেমনে কয় ক?
-সবে মাত্র হুমকি দিছে, কোনো এক ভোরে ঘুম ঘুম চোখে ককিয়ে উঠবে, লুঙ্গির উপর হাত দিয়ে দেখবে তোমার টুনটুনি নাই। নেতার মেয়ে বলে কথা মাম্মাহ।
কথাগুলো বলেই হেসে উঠলো আবইয়াজ।
-মজা নেস?
-আরেহ নাহ, মিষ্টি মেয়েটা ভালো একটুআধটু বদমেজাজী প্রতিটি মেয়েই হয়, ব্যাপার না বিয়ের পর তোর ভালোবাসায় সব ঠিক হয়ে যাবে, জানিস-ই তো সব রোগের ওষুধ বিয়ে।
-ভাই বিয়ের পরেও পরিবর্তন না হলে আমার কপালে শনির দশা লেগেই থাকবে।
-সে যাই বল মিষ্টি কিন্তু তোকে অনেক ভালোবাসে।
-বাসবে না! আমি কি কম বাসি নাকি। শুন না আবইয়াজ।
-হুম বল।
-মেঘাও তোকে অনেক ভালোবাসে, ওর মতো আমি কোনো মেয়েকে দেখিনি একটা ছেলের জন্য এতোটা পাগলামি করতে।
-এই টপিক বাদ।
-মেঘার কথা উঠালে তুই এড়িয়ে যাস কেনো?
-তুই একটু বুঝার চেষ্টা কর প্লিজ, আমি মেঘাকে কখনো ওই নজরে দেখিনি।
-দেখিস নি এখন দেখবি।
-তুই জানিস আমি অলরেডি একজনকে পছন্দ করে বসে আছি।
-পছন্দ আর ভালোবাসা এক না আবইয়াজ, আবিরার প্রতি তোর যেটা সেটা কেবলই মোহ যা সময়ের সাথে সাথে কেটে যাবে কিন্তু মেঘা তোকে সত্যিই ভালোবাসে বুঝার চেষ্টা কর।
-ওকে ফাইন, তাহলে তুই মিষ্টি কে রেখে মেঘাকে বিয়ে করে নে।
-এটা কেমন কথা?
-তুই যেমন মিষ্টি কে ছাড়তে পারবি না, আমিও তেমন আবিরাকে ছাড়তে পারবো না।
-কি আছে এই আবিরার মধ্যে যা মেঘার মধ্যে নেই।
-এটা থাকা না থাকার বিষয় না রিফাত, ফিলিংস জিনিসটা সবার প্রতি কাজ করে না।
-তোকে কোনোভাবেই বুঝানো সম্ভব না।
-এটা যখন জানিস তখন বুঝাতে আসিস কেনো?
-ওকে ভালো থাক, আমি ঘুমাবো।
-ওকে বাই।
কল কেটে দিয়ে ছাদে চলে গেলো আবইয়াজ।
মেঘাকে কিভাবে বুঝাবো, আমি তাকে নয় আবিরাকে পছন্দ করি৷ আচ্ছা এটা জানার পর মেঘা কি করবে? আবারও যদি সুইসাইড করতে চায় তখন?
বুকের ভেতর মুচড় দিয়ে উঠলো।
মেয়েটা কেনো আমার মতো একটা অসভ্য বদ ছেলেকে ভালোবাসতে গেলো।
নিজের মধ্যে তো আমি এমন কোনো গুণ-ই দেখি না যেটা দেখে কেউ এতোটা ভালোবাসতে পারে।
পরিবারের অবাধ্য সন্তান, নিজের মর্জিমতো চলাকে কি আদোও ভালো ছেলে বলে?
নিজের জামা দিয়ে পুটলি বেঁধে পা টিপে টিপে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে সুভা।
যে করেই হোক ওই বদ লোকের থেকে নিজের ইজ্জত রক্ষা করতে হবে।
এতো বড় বাড়ি, গুটগুটে অন্ধকার, লাইট জ্বালানোরও দম নেই তার।
এই অবস্থায় কেউ ধরে ফেললে নির্ঘাত চোর ভেবে গণপিটুনি দিবে।
সদর দরজা খুলতেই খেঁচখেঁচ শব্দ করে উঠলো, ভয়ে আৎকে উঠে সুভা, বুকে তিনবার থু থু দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চললো সে।
মনে অজানা ভয় বাসা বেঁধেছে, এই বুঝি ধরা পড়লো।
ধরা পড়লে আজ আর রক্ষে নেই, চোর অপবাদে নাক চুল সব কাটা যাবে।
এবার পেছনের দিকে তাকিয়ে উল্টো হাটা দিলো।
আকস্মিক কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো সে।
চাঁদের আবছা আলোয় উল্টো ঘুরে দেখলো ফাইয়াজ।
নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এলো সুভা'র, তবে কি আর শেষ রক্ষা হলো না।
এই বুঝি পরাণ যায় যায় অবস্থা, নিজের অজান্তেই বুকে হাত দিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিতে লাগলো সুভাষিণী।
ফাইয়াজ অস্পষ্ট স্বরে কালো পদ্ম বলে ডেকে উঠলো।
ডাক'টা শুনে কিঞ্চিৎ অবাক হলো সুভা, এই লোকের কি মাথায় সমস্যা? কখনো সুভা কখনো কালো পদ্ম বলে ডাকে।
তবে কালো পদ্ম ডাকটা খুব পরিচিত মনে হলো যেনো বহু আগে এই নামে তাকে কেউ ডাকতো।
-পালিয়ে যাচ্ছো কেনো তুমি?
সুভা কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলো, একটু আগে কি বলে ডাকলেন?
ফাইয়াজ স্মিত হেসে উত্তর দিলো, কালো পদ্ম।
সুভা ফের জিজ্ঞেস করলো, কেনো?
-কারণ তুমি স্পেশাল।
আবারও সুভা বলে উঠলো কেনো?
-সাদা, লাল, নীল এই হাজার হাজার পদ্মের মধ্যে তুমি একটি মাত্র কালো পদ্ম তাই তুমি তো স্পেশাল হবে-ই তাই না? পারলে আবারো প্রশ্ন করো কেনো কালো পদ্ম-ই ডাকতে গেলাম।
ফাইয়াজের ধারণা সত্য প্রমাণ করে দিয়ে সুভা আবারও শুধায় কালো পদ্ম-ই কেনো ডাকতে গেলেন?
-তুমি তো আর লাল নীল সাদা নও যে ওই নামে ডাকবো, তুমি তো হলে কালো তাই তোমার নাম কালো পদ্ম দিলাম।
-পদ্ম কালো ও হয়?
-হয় তো এই যে তুমি। আচ্ছা এখন এটা বলো তো এতো রাতে পুটলি নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?
ফাইয়াজের প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো সুভা।
উপস্থিত কোনো কথা-ই মাথায় আসছে না তার।
-তুমি জানো শহরে এই নির্জন রাতে কুকুরের উৎপাত বেশি? আমি কিন্তু জন্তু কুকুরের কথা বলছি না মানুষ রূপী অমানুষদের কথা বলছি। এতো রাতে একা একটা মেয়েকে বাইরে পেলে ছিঁড়ে খাবে দেহের প্রতিটি অংশ।
-ভ ভয় দেখাচ্ছেন?
-এই শহরে তুমি নতুন, পথঘাট সম্পর্কে কোনো ধারণা-ই নেই তোমার, ক'দিন থাকো এমনিতেই সব বুঝতে পারবে।
-আ আমি বাড়ি যাবো।
-কেনো?
সুভা নিঃসংকোচে বলে ফেললো।
-আমার ভয় করছে।
-কেনো ভয় করবে তোমার? বিশ্বাস করো এবাড়ির প্রতিটি মানুষ অনেক ভালো, কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। এই দেখো আমি তো আছি।
-আমার আপনাকেই ভয় লাগে।
-কেনো?
-আপনি এতো রাতে আমার রুমে আসবেন কেনো?
সুভার কথা শুনে শব্দ করে হেসে উঠলো ফাইয়াজ।
-বোকা একটা আমি তোমার সতীত্ব হরণ করতে তোমার রুমে আসবো নাকি?
তোমার প্রয়োজনীয় কিছু কসমেটিকস এনেছি যেগুলো আম্মুর সামনে দেওয়া যেতো না তাই রুমে নিয়ে আসবো বলেছি।
যদিও মেয়েদের জিনিস সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই আমার, ইউটিউবে সার্চ করে করে যতটুকু ধারণা অর্জন করতে পেরেছি ততটুকুই আপাতত নিয়ে এসেছি।
[আপনাদের কমেন্ট আমার অনুপ্রেরণা, গঠনমূলক মন্তব্য করুন গল্পের ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিন যাতে আগামীতে আরো ভালো করে লিখতে পারি আর গল্পটা ভালো লাগলে অবশ্যই অন্যান্য গ্রুপে রিভিউ দিবেন এইটুকু তো আশা রাখতেই পারি প্রিয় পাঠক-পাঠিকা। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন হ্যাপি রিডিং ]
চলবে,,,,,,