#মন_পাঁজরে_তুই
#আরেব্বা_চৌধুরী
#পর্বঃ ১৯
রাতের খাবার খেতে বসেছেন রাজিয়া খাঁন ও আহনাফ খাঁন, ফাইয়াজ সুভাকে ডেকে বললো তার খাবার যেনো উপরে দিয়ে আসে।
-কি হলো তোমার ছেলে হঠাৎ উপরে খাবে কেনো?(আহনাফ খাঁ)
-সকালে ছেলেটার সাথে যা ব্যবহার করেছো তাতেই হয়তো তার ইগো তে লেগেছে।(রাজিয়া)
-তো আমি বাবা হয়ে কি এখন তার কাছে মাফ চাইতে হবে?(আহনাফ)
-মাফ চাইতে কে বললো?
-ছেলেকে বলো নিচে এসে খেতে।
-থাক না কাল না-হয় বলবো।(রাজিয়া)
-এই তুমিই ওকে ঘরকুনো বানিয়েছো, সব সময় ঘরের মধ্যে কি করে সে?(আহনাফ)
-ফোন চাপে।
-এভাবে কি জীবন চলবে? (আহনাফ)
-শুধু ওর পেছনেই পড়ে থাকো, তোমার ছোট ছেলের কি কোনো খোঁজ আছে? কোথায় থাকে কি করে কি খায় কিচ্ছু বলে? রাত দশটা বেজে পনেরো মিনিট এখনো সাহেব বাড়ি ফেরেন নি, আজও কি বাড়ি ফিরবে না নাকি?(রাজিয়া)
-না, ফোন করে বললো তার নাকি কি জরুরী কাজ পড়ে গেছে আজ রাতে ফিরবে না।
-কি এমন কাজ তার?
-সেটা না-হয় তোমার ছেলেকে ফিরলে তাকেই জিজ্ঞেস করো।
-চারিদিকে শুধু নিখোঁজ আর নিখোঁজ। (রাজিয়া)
-এখন আবার এই কথা কেনো?
-দিন দুনিয়ার খবর তো কিছু রাখো না শুধু ব্যাবসা আর ব্যাবসা, আজ একে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তো কাল ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এদিকে তোমার ছেলে বাড়ি ফিরে না। আমার কি ভয় হয় না?
আহনাফ খান মুখে ভাতের লোকমা তুলতে তুলতে বললেন, ওহ রাজিয়া খামোখা টেনশন নিও না তো, আবইয়াজ আর ছোট নেই, ও বড় হয়ে গেছে। সে হারাবে না।
-তুমি তো বলবেই, আজকালকার দিনে ছোট ছোট বাচ্চারা হারাচ্ছে না। বড় বড় মানুষজনই হারাচ্ছে। (রাজিয়া)
-ওহ হাসিও না তো, শান্তিতে খেতে দাও, সারাদিন উল্টাপাল্টা চিন্তা করো আর রাত হলে সেসব বাস্তবে রুপান্তর করতে উঠে পড়ে লেগে পড়ো।
-এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা নয় আহনাফ, তুমি নিউজ দেখো নি?
-তুমিই দেখো, এখন আমাকে খেতে দাও প্লিজ।(আহনাফ)
-বলছিলাম কি আবইয়াজের ফোন অফ কেনো?
-এটা কি আর নতুন কিছু? দিনে ক'বার কল করে তাকে তুমি পাও?
-তাও ঠিক, আমার না ভেতরটা কেমন খচখচ করছে।
-উল্টাপাল্টা নিউজ দেখলে আর সেগুলো নিয়ে সারাদিন ভাবলে খচখচ তো করবেই। (আহনাফ)
-এখন সব দোষ আমার?(রাজিয়া)
-সেটা আবার কখন বললাম।(আহনাফ)
-ইনিয়ে-বিনিয়ে ওই কথাটাই বলেছো।(রাজিয়া)
-যাহ বাবা রেগে যাও কেনো। (আহনাফ)
-আমি কিছু বললেই দোষ হয়ে যায়।(রাজিয়া)
-থাক আমি আর কিছু বলবো না, কাল তোমার ছেলে বাড়ি ফিরলে আচ্ছা করে বকে দিও।(আহনাফ)
বাসর ঘরে বসে আছে মিষ্টি।
বাসর ঘর একান্ত ভালোবাসা ও নতুন জীবনের সূচনার প্রতীক, এই রাতকে ঘিরে কতশত অনুভূতি, ফুল ও আলোয় দিয়ে সেজে থাকার কথা পুরো ঘর, অথচ এই ঘরের আলাদা কোনো সাজ-সজ্জা নেই। নেই কোনো আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শন।
আর পাঁচটা রাতের মতোই মনে হচ্ছে আজকের রাত।
সারাদিন গুন্ডার মতো ঘুরে বেড়ানো মেয়েটা মিইয়ে বসে রইলো।
সবেমাত্র রুমে এসেছে রিফাত।
পা ছুঁয়ে সালাম করলো মিষ্টি।
হালকা কেশে রিফাত বললো, আজ চাঁদ কোন দিকে উঠেছে? মিষ্টি বউ আমার পা ছুঁয়ে সালাম করলো যে?
মিষ্টি মৃদু হেসে উত্তর দিলো, তুমি আমার স্বামী তোমাকে মান্য করে চলা আমার দায়িত্ব কর্তব্য।
"যাক তাহলে মিষ্টি বউ মেনে নিলো আজ থেকে সে আমার বাধ্যবন্দিনী।"
রিফাতের কথায় মুচকি হাসলো মিষ্টি।
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে মিষ্টিকে দেখল। এই মেয়েটার সঙ্গে সে বহু কথা বলেছে, বহু হাসাহাসি করেছে আর ঝগড়া তো অনবরত কিন্তু আজকের মিষ্টি যেন অন্য কেউ, চুপচাপ আলো-ছায়ার মধ্যে এক রহস্য।
রিফাত ধীরে ধীরে এগিয়ে এল।
তোমার শাড়ির রঙটা আজ আমার নিঃশ্বাস আটকে দিচ্ছে।
শুনো হে রমনী দাও যদি অনুমতি তবে তোমার এই নিঃশ্বাস বন্ধ করা শাড়ি খুলে ফেলি এক্ষুনি। তার কণ্ঠে এক ধরনের কাব্যিক ঘোর।
মিষ্টি হেসে তাকালো, তুমি তো কবি হয়ে যাচ্ছো আজ।
রিফাত ফিসফিস করে বলল, “তুমি না থাকলে হতেই পারতাম না।"
কথা থেমে গেল, কিন্তু নিঃশব্দে চোখের ভাষায় হাজার কথা চলতে থাকলো। রিফাত মিষ্টির পাশে বসে তার হাতটা ধরল— ঠান্ডা, নরম, কাঁপছিল একটু।
-ভয় পাচ্ছো?
-না... একটু অচেনা লাগছে তবে ভালোও লাগছে।
রিফাত তার কপালে একটা আলতো চুমু দিল।
আজকে কোনো নিয়ম নেই, নেই কোনো তাড়া। শুধু আমরা একটা রাত, যা কখনও পুরোনো হবে না।
মিষ্টি চোখ বন্ধ করল, আর ধীরে ধীরে মাথা রাখলো রিফাতের কাঁধে। ঘরজুড়ে শুধু নিঃশ্বাস আর হৃদয়দ্রুতির সুর বাজতে লাগলো সেই সুরে শরীরের বাঁক আর আত্মার নীরবতা একসাথে নাচতে থাকলো।
এই রাতের আলো-ছায়া একদিন আমাদের স্মৃতির সবচেয়ে নরম জায়গায় গেথে থাকবে।
সুভা খাবার নিয়ে এলো ফাইয়াজের রুমে।
ফাইয়াজ সুভার হাত টেনে ধরলো।
সুভা ভয়ার্ত গলায় বললো,
-কি হলো ছাড়ুন কেউ দেখে ফেলবে।
-দেখুক।
-ছাড়ুন, ঝামেলা হয়ে যাবে।
-কিচ্ছু হবে না তুমি এখানে বসো।
সুভা কাঁপা কাঁপা গলায় পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
-কেনো?
-আজ তুমি আমি একসাথে।
এতোটুকু বলে দুষ্টুমাখা হাসি দিয়ে থেমে গেলো ফাইয়াজ।
ভয়ে সুভার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো।
কি বলতে চাইছেন উনি।
ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপনি আমি একসাথে মানে?
-আরে এতো ভয় পাচ্ছো কেনো? আজ তুমি আমি একসাথে এক প্লেটে খাবার খাবো এটাই বলতে চেয়েছি।
-না আমি খাবো না।
-কেনো?
-পরপুরুষের সাথে এক প্লেটে খাবো কেনো? কে হন আপনি আমার?
-খুব কাছের কেউ।
-আমি আসি।
-এক পা ও নড়বে না তুমি, চুপচাপ আমার পাশে এসে বসো।
সুভা পা টিপে টিপে ফাইয়াজের পাশে এসে বসলো।
ফাইয়াজ ভাতের প্লেট সুভার হাতে দিয়ে বললো খাইয়ে দাও।
সুভার হাত কাঁপছে।
বাঁকা হাসলো ফাইয়াজ, বেশ তোমাকে খাইয়ে দিতে হবে না বরং আমিই খাইয়ে দিচ্ছি তোমায়, পরে তোমার ইচ্ছে হলে আমাকে খাইয়ে দিও।
সুভার মনে এক অজানা ভয়, কেউ দেখলে এবাড়িতে আর ঠাই হবে না, তার উপর ফাইয়াজ যা শুরু করেছে উফ। চেনা নেই জানা নেই লোকটা আমার জন্য এমন করে কেনো।
আমার জন্য এতো অস্থির কেনো?
এক লোকমা ভাত মুখে নিয়েই উঠে দাঁড়ালো সুভা।
-এবার আমি যাই?
-বাকিটুকু খাবে কে?
-আপনি?
-কারোর এঁটো খাবার আমি খাই না আর যদি খেতেই হয় তবে তুমি খাইয়ে দাও।
রাগে দুঃখে নিজের গালে নিজেই মারতে ইচ্ছে করছে সুভার।
কেনো যে খাবার নিয়ে আসতে গেলো।
না নিয়ে এসেও তো উপায় ছিলো না, কি ফাঁসাটাই না ফেঁসে গেলাম।
সুভা প্লেট হাতে নিতেই হাত থরথর করে কাঁপছে, এই বুঝি হাত ফসকে প্লেট নিচে পড়ে গেলো।
মুচকি হেসে সুভার হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে নিলো ফাইয়াজ।
এতো অল্পতে এতো ভয় পেলে হবে কালোপদ্ম? এখনো যে অনেক ঝড়ঝাপটা বাকি।
ফাইয়াজের কথায় শুকনো ঢোক গিললো সুভা।
কোন ঝড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছেন উনি।
শুয়ে শুয়ে নানান তালবাহানা খুঁজতে লাগলেন নীলিমা হক।
কিভাবে আবইয়াজের সাথে আবিরার বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করা যায়।
ছেলেটা খুব একরোখা সোজাভাবে কথা বললে শুনবে না।
পরক্ষণেই বাঁকা হাসলেন নীলিমা হক, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকাতে হয়।
রাত এক'টা ছুই ছুই, রাকিব অনলাইনে কিন্তু নো কল নো মেসেজ।
বাধ্য হয়ে মেহেক এবার নিজে থেকে মেসেজ দিলো।
-কেমন আছো।(মেহেক)
-ভালো, তুমি?(রাকিব)
-ভালো, এতো রাতে অনলাইনে কি করো?
-অনলাইনে ক্লাস করছি বিল্লুরানী।
-ওহ, রোজ আমি মেসেজ না দিলে একটা মেসেজ দাও না আমি কল না দিলে খোঁজ খবরও নাও না, আজকাল কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছো তুমি?
-উফ বিল্লুরানী আমার মেহু সোনা, শুধু শুধু ভুল বুঝছো তুমি, তোমাকে তো বলেছি আমার পড়ালেখার অনেক চাপ এখন, বুঝতেই তো পারছো আমিই পরিবারের একমাত্র ভরসা, আমাকে কিছু একটা করতে হবে তবেই না আমি পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারবো, তোমাকে নিজের করে নিতে পারবো।
-আচ্ছা তাহলে তুমি ক্লাস করো।
-বেইবি কিছু টাকা হবে? দুটো বই এখনো কিনি নি।
রাকিবের কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মেহেক।
-আচ্ছা কাল নিয়ে যেও।
-ধন্যবাদ বিল্লুরানী।
মেহেক ছোট করে উত্তর দিলো,হু।
ভোর বেলা মিষ্টির চুলে হাত বুলাতে বুলাতে রিফাত বললো, মিষ্টিবউ দুনিয়ায় তুমি আর মা ছাড়া আমার কেউ নেই, আম্মুকে তুমি নিজের মায়ের মতো দেখো।
মিষ্টি এক বাক্যে না বলে দিলো।
-কেনো?
-আমি আমার মায়ের মতো তোর মা'কে দেখতে পারবো না।
-কেনো পারবে না?
-পরে তুই নিজেই বকবি।
-না বকবো না।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
মায়ের রুম থেকে বিলাপ করে কান্নার শব্দ পেয়ে উঠে চলে গেলো রিফাত।
রুমের দিকে উঁকি দিতেই দেখতে পেলো, মাহফুজা বেগম তার ভাইয়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছেন সাথে বিলাপ করে কেঁদে বউয়ের নামে নালিশ জানাচ্ছেন।
"ছেলে গুন্ডা মেয়ে বিয়ে করে এনেছে, এনেছে বলছি কেনো মেয়ে উঠে এসে জোর করে বিয়ে বসেছে। আমার সংসার তুড়ি মেরে নাচাচ্ছে, কিছু বললে মুখে মুখে তর্ক করে, মেয়ের গোষ্ঠীতে মনে হয় আদব কায়দা নাই।
অপাশ থেকে মাহফুজা বেগমের ভাই বলে উঠলেন, বুবু তোর ও দোষ আছে এতো খুঁত না ধরে তুই নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসা দে না। দেখবি মেয়েটাও তার মায়ের স্থান তোকে দিয়ে রেখেছে, তোর তো মেয়ে নেই একটাই ছেলে, আজ থেকে ধরে নে ছেলে বিয়ে করিয়ে আরেকটা মেয়ে পেয়েছিস,এখন থেকে তোর একটা ছেলে একটা মেয়ে।শোন ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা অর্জন করতে হয়, তুই যদি ২৪ ঘন্টা মেয়েটার খুঁত ধরতে থাকিস তাহলে মেয়েটার তোর কথা শুনবে কি করে?সংসারে অশান্তি লেগেই থাকবে।
মাহফুজা বেগম বলে উঠলেন, কি করবো আমি?
-তুই কারণে অকারণে তাকে কাছে ডাকবি, পাশে বসিয়ে গল্প গুজব করবি, কখনো তুই তার চুলে তেল দিয়ে মাথা আঁচড়িয়ে দিবি আর কখনো তাকে বলবি তোর চুলে তেল দিয়ে দিতে। শুধু শুধু বলবি দুই কাপ চা করে আনো তো মা দুজনে মিলে খাই।
তোর একটা মেয়ে থাকলে যা যা করতি ঠিক তাই তাই করবি।
-আচ্ছা ঠিক আছে, তাও যদি সংসারে শান্তি ফিরে আসে, আমি আর ক'দিনই বা আছি তারা ভালো থাকলেই হলো।
দরজার আড়াল থেকে কথাগুলো শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো রিফাত।
যাক এবার দুজনের ঝগড়া মিটবে বোধহয়।
এই ভোরেও মেয়েটার শান্তি নেই, সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে সে, না জানি কখন আবইয়াজ ফোন দেয়।
ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়।
আচ্ছা ভালোবাসার মানুষগুলো অপরপ্রান্তের মানুষকে একটু বুঝে না কেনো, সে কি আমার কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে না? সে কি জানতো না তাকে ছাড়া কতটা নিঃস্ব আমি।
নাকি সব জেনে বুঝেই আমার সাথে এমন করছে।
একটুখানি ভালোবাসা দিলে কি হয়।
অতঃপর আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো মেঘা।
আগের সেই সৌন্দর্য টা আর নেই। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে মুখে অগুনিত ব্রণ। চাপা ভেঙে গেছে শরীর স্বাস্থ্য অনেকটাই শুকিয়ে গেছে সেগুলো কেবলই কি আবইয়াজের জন্য।
আচ্ছা সে কি কখনোই আমাকে ভালোবাসে নি?
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো মেঘা।
এই প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই।
পুনরায় আবইয়াজের ফোনে কল করলো।
ফলাফল শূন্য, ফোন আগের মতোই বন্ধ রয়েছে।
একদৃষ্টিতে আবইয়াজের নাম্বারের দিকে তাকিয়ে রইলো সে।
একটা সময় ছিলো যখন এই নাম্বার থেকে অসংখ্য ফোন আসতো দিনে আর এখন সপ্তাহেও একটি আসে না এটাই হয়তো মানুষের পরিবর্তন।
বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড় চলছে।
হাতে আর মাত্র দু'দিন সময়। জামাকাপড় থেকে শুরু করে ডেকোরেশন পুরোটাই মোমো ও আদির পছন্দে করা হয়েছে।
এখন শুধু মেহমান আসা বাকি।
শামসুল হক ও নীলিমা হক খুবই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা কোনো কিছুর যেনো কমতি না থাকে।
ডেকোরেশনের প্রতিটি কাজ খতিয়ে খতিয়ে দেখছেন শামসুল হক।
সকাল দশ'টা নাগাদ আহনাফ খাঁনের অফিসে গেলো আবইয়াজ।
-দাদার বেটা বাপ এখনো অফিস আসে নি। নবাবে জন্ম দিছে উনাকে, উনি নবাবের ছেলে হয়ে জন্মালে ভালো হতো।
বলতে না বলতে আহনাফ খাঁন হাজির।
"গুড মর্নিং, মাই সান। হোয়াট আর ইউ ডুইং অ্যাট দ্য অফিস সো আর্লি?"
-হাঙ্গা করবো।
-হোয়াট।
-ইয়াহ, পাত্রী দেখা শেষ এবার তুমি শুধু বিয়ের কথা ফাইনাল করবে।
-কে সে কি তার পরিচয়?
-সেটা গেলেই দেখবে?
-এটা কি করে হয় আবইয়াজ এখনো ফাইয়াজ বিয়ে করে নি।
-তার যখন বিয়ের বয়স হবে তখন করবে।
-সে তোমার বড়।
-আমার বড় তো কি তোমার মাথা কিনে নিয়েছে? বড় বড় ছেলে মেয়েকে রেখে ছোট ছেলেদের কখনো বিয়ে করতে দেখো নি?
-আচ্ছা যাবো, এখন বলো তোমার যে কাজের কথা বলেছিলে সেটা কেমন হলো।
আবইয়াজ এক বাক্যে উত্তর দিলো ভালো।
-কিসে করে যাবে?
-কেনো জানো না? প্রথম প্রথম শশুর বাড়ি যাবো যেমন তেমন করে গেলে হবে? তোমার BMW X5 এ করে যাবো।
-আর?
-কি আর?
-তুমি এভাবে যাবে?(আহনাফ)
-কেনো দেখতে খারাপ লাগছে নাকি আমায়।(আবইয়াজ)
-না। (আহনাফ)
-তাহলে চলো।(আবইয়াজ)
-এখন যাবে?(আহনাফ)
-হ্যাঁ চলো।(আবইয়াজ)
বাবা ছেলে বেরিয়ে পড়লো আবিরাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
পুরো বাড়ি লাইটিং দিয়ে চমকানো দেখে থমকে গেলেন আহনাফ খাঁন।
-আবইয়াজ গোটা বাড়ি এমন সাজানো কেনো?
-কনের ভাইয়ের বিয়ে।
-তাহলে এখন প্রস্তাব টা নিয়ে যাওয়া কি ঠিক হবে?
-কেনো নয়?আমরা কি বিয়ে ভাঙতে এসেছি, বিয়ে বাড়িতে কি আরেকটা বিয়ের সমন্ধ নিয়ে যাওয়া যায় না?
-ঠিক আছে চলো।
আহনাফ খাঁনকে দেখে বেশ সম্মানের সহিত বসতে দিলেন নীলিমা হক।
আবইয়াজ চুপচাপ পাশে বসে রইলো।
আহনাফ খাঁন প্রথমে সালাম দিলেন তারপর ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলেন।
নীলিমা হক যথারীতি উত্তর দিলেন।
-আজ আপনাদের বাসায় একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।(আহনাফ)
-সেটা আমি জানি।
নীলিমা হকের কথায় খানিক অবাক হলেন আহনাফ খাঁন, পুনরায় বললেন।
আপনার মেয়েকে আমার বাড়ির পুত্রবধূ করতে চাই।
নীলিমা হক ক্ষীণ কন্ঠে বললেন, ছেলের যোগ্যতা?
এহেন প্রশ্নে আমতা আমতা করে আহনাফ খাঁন বললেন, ছেলে এখনো পড়ালেখা করছে। আল্লাহর রহমতে আমার কোনো কিছুর অভাব নেই আমার যা আছে তা তো আমার দুই ছেলের।
-দুঃখীত ভাই সাহেব, আমি ছেলের যোগ্যতা জানতে চেয়েছি ছেলের বাপের নয়! বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলের যোগ্যতা দেখা আবশ্যক ছেলের বাপের কি কি আছে সেটা দেখার প্রয়োজন বোধ করছি না।
-আপনার মেয়ের কোনো কিছুর অভাব হবে না আমি কথা দিতে পারি।
-ওহ আচ্ছা,তাহলে বলেন আপনার ছেলে কি কাজ করে, কত টাকা বেতন মাসে কত খরচ করতে পারবে আমার মেয়ের পেছনে।
চুপ হয়ে গেলেন আহনাফ খাঁন।
আবইয়াজ মিনমিন গলায় বললো, আহনাফ খাঁনের সাথে পার্টনারশিপে কাজ করি।
-কি বললে শুনতে পাই নি।(নীলিমা হক)
আহনাফ খাঁন রাগী চোখে তাকালেন আবইয়াজের দিকে।
আবইয়াজ চুপ হয়ে গেলো।
আহনাফ খাঁন আবইয়াজের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন, তুমি চাইলে,,,,
মুহুর্তেই আহনাফ খাঁন কে থামিয়ে দিলো আবইয়াজ।
ফিসফিসিয়ে বললো,
সম্পর্ক ভয় দেখিয়ে নয়, ভালোবেসে গড়তে হয়।
-ঠিক আছে বেয়াইন সাহেবা আমরা এখন উঠি,আবার আসবো ছেলের যোগ্যতার সার্টিফিকেট নিয়ে।(আহনাফ খাঁন)
নীলিমা হক যথারীতি স্ব-সম্মানে বিদায় জানালেন।
যাওয়ার পথে আবইয়াজ গোটা বাড়ির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো যদি একটু কুত্তার মা'র দেখা পাওয়া যায়।
রিফাতের রুমে আসলেন মাহফুজা বেগম।
অমায়িক কন্ঠে মিষ্টিকে বললেন, মিষ্টি আসো আমার মাথায় একটু তেল দিয়ে দাও তো।
মিষ্টি শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।
ফোনের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো, পারবো না তোমার কাজ তুমি করো গিয়ে যাও।
মাহফুজা বেগম চিল্লিয়ে রুম থেকে বেরুলেন।
-অসভ্য মেয়ে বাপ মা ভদ্রতা শিখায় নি, বেয়াদব মেয়ে জন্ম দিছে, তোরে ছেলেদের সাথে মারপিট করাতেই মানায় সংসার করায় নয়।
রিফাত রাগান্বিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো, মায়ের সাথে এমন করলি কেনো?
-রাগিস কেনো রিফাত তুই-ই তো বলেছিলি উনাকে মায়ের চোখে দেখতে, তখন তো না করেছিলাম শুনলি না বললি আমাকে বকবি না।
-তুই তোর মায়ের সাথে এভাবে কথা বলিস?
-বিশ্বাস কর রিফাত আমি আমার মায়ের সাথে এভাবে কথা বলি, সারাদিন ফোন চাপি উনার কোনো কথা শুনি না।
এ নিয়ে অনেক বকাও খাই এই তোর মা যেমন বকলো।
চলবে,,,,