পর্ব___<<<____>>>___

মন পাজরে তুই____<<<<<_____>>>>>_____

#মন_পাঁজরে_তুই

#আরেব্বা_চৌধুরী

#পর্বঃ ৩৩

 

এক মাস হয়ে গেছে 

ছেলের মুখ থেকে একটিবার "মা" ডাকও শোনেননি রাজিয়া খাঁন।

অভিমানে জ্বলে-পুড়ে ভস্ম হয়ে যাওয়া বুকজুড়ে

শুধুই হাহাকার।

এক সময় অভিমান নামক দেয়ালটা নিজের ভেতরেই হেলে পড়ে,

তখন মানুষ কিছুতেই আর অনড় থাকতে পারে না।

 

শেষমেশ হার মানলেন তিনি,

নিজেই একা একা বসে ভাবলেন,

যদি ছেলেটার মুখটা আবার একটু দেখতে পারতাম।

 

কিন্তু না ছেলে তার সিদ্ধান্তে অনড়, তার কথা না রাখলে সে কথাই বলবে না।

 

পরদিন বিকেলবেলা

আবইয়াজ ফোন করলো আহনাফ খাঁনকে।

- আজ দুই সপ্তাহের স্যালারি পেয়েছি, আব্বু।

-আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তোর রিজিকে আরও বরকত দিক।

আহনাফ খাঁনের কণ্ঠে সন্তুষ্টির ঝরনা।

 

সবাইকে সালাম দিয়ে, খোঁজখবর নিয়ে

শেষে ফোন দিলো রাজিয়া খাঁনকে।

 

ফোন রিসিভ করতেই প্রথম প্রশ্নটা ছুড়ল সরাসরি,

- বিয়েতে রাজি?

 

রাজিয়া খাঁনের কণ্ঠে নরম এক ধ্বনি,

-হ্যাঁ, আমি রাজি।

 

আবইয়াজ যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো,

কণ্ঠে প্রশান্তির রেশ নিয়ে বললো,

-আজকে স্যালারি পেয়েছি, আজই টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

আগামী পরশু আকদ, তোমরা কালই শপিং করে ফেলো।

 

রাজিয়া খাঁন বললেন,

- বিয়ের তো মুখের কথা নয় আবইয়াজ,

মেয়ের বাড়ির লোকজন আছে, কথাবার্তার একটা ব্যাপার আছে।

 

-সেসব আমি সামলে নেবো আম্মু,

তুমি শুধু এদিকটা গুছিয়ে ফেলো।

এই বলে মা'কে ছেয়ে থাকা অন্ধকার থেকে একটু আলো এনে দিলো সে।

 

মায়ের সঙ্গে কথোপকথনের পর

আদিকে ফোন করে বললো,

- আগামী পরশু আমার আর কুত্তার মার আকদ।

তুই আম্মু মাকে বলে দিস।

 

আদি থতমত খেয়ে বললো,

-একদিনের মধ্যে কীভাবে কি হবে, আবইয়াজ?

 

- কিসের কীভাবে কি হবে?

-আয়োজনের কথা বলছি!

 

-কোনো আয়োজনের দরকার নেই।

যেদিন তাকে উঠিয়ে নিয়ে আসবো, সেদিন রাজ্যের মতো আয়োজন হবে।

এখন শুধু আমার বউপাখিকে নিজের বলে দলিল করতে চাই।

 

আবইয়াজের গলায় ছিল অদ্ভুত এক জেদ আর প্রেমের মিশেল,

যেনো এক রাজা তার রানীকে সুরক্ষিত রাখার দলিল খুঁজে নিচ্ছে এই শহরের কোলাহলে।

 

আদি যখন নীলিমা হককে বুঝানোর চেষ্টা করছিল, তখনও তার কণ্ঠে ছিলো যুক্তি, অনুরোধ আর আবিরার জন্য একরাশ উদ্বেগ।

কিন্তু নীলিমা হক নিজ সিদ্ধান্তে অটল,

- না, এভাবে হুট করে মেয়ের আক্দ হবে না।

ঘরোয়া বলেই হোক, মেয়ে তো আর খেলনার পুতুল নয়!

 

বারবার বোঝানোর পর অবশেষে শামসুল হক হালকা গলায় বললেন।

- এখন তো আর মেয়েকে কেউ উঠিয়ে নিচ্ছে না।

যেদিন নিয়ে যাবে, সেদিন আয়োজনও হবে, মেহমানদারিও হবে।

এখন শুধু কাগজে কলমে সম্পর্ক বাঁধা হোক।

অবশেষে নীলিমা হক রাজি হলেন।

 

পরদিন সকালে আবইয়াজ ফোন করলো বাড়িতে।

কণ্ঠে নির্দেশনার স্পষ্টতা, হৃদয়ে ছিলো নিখাদ ভালোবাসা।

-কোনো কিছু যেনো কম না হয়, আবিরাকে দেখে যেনো মনে হয় সত্যি সত্যি রানী এসেছে।

আহনাফ খাঁনকে বললো,

-আব্বু, আমার পাঠানো টাকায় যদি কিছু কম পড়ে, তোমারর কাছ থেকে ধার নিয়ে সবটা ঠিকঠাক করে নিও।

পরে আমি শোধ দিয়ে দিবো।

 

আহনাফ খাঁন ফোনের ও প্রান্তে মুচকি হাসলেন।

ছেলে এখন শুধু নিজে চলা শিখেছে না,

অন্যকেও আগলে রাখার মতো মানুষ হয়ে উঠেছে।

 

এদিকে বাড়িতে সাজ সাজ রব।

আবিরার মামার বাড়ির কিছু আত্মীয়ও এসে গেছেন।

তবে কেনো এসেছেন, তা স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলছে না।

আবিরা একবার জিজ্ঞেস করতেই উত্তর আসে।

-আমরা কি আর বেড়াতে আসতে পারি না?

 

আবিরার মন যেনো কিছু আন্দাজ করছে,

কিন্তু ঠিকঠাক ধরতে পারছে না।

 

অবশেষে সেই দিন এসে গেলো।

নিচে এক ভদ্রমহিলা আর ভদ্রলোক এসে বসেছেন।

আবিরা উপর থেকে তাকিয়ে দেখলো,

ভদ্রলোককে কোথায় যেনো দেখেছে বলে মনে হচ্ছে,

কিন্তু মনে করতে পারলো না ঠিক কার সাথে মিলছে।

 

তবে পরমুহূর্তে তার চোখ স্থির হয়ে গেলো দরজার মুখে দাঁড়ানো এক ছায়ামূর্তিতে।

আবইয়াজ!

চোখে মুখে সেই পুরনো আত্মবিশ্বাসী হাসি,

যা একদিন তার হৃদয়ের দখল নিয়েছিল।

 

তাকে দেখেই বুকের ভেতর কেমন যেনো হাহাকার ভর করলো আবিরার।

-উনি তো বলেছিলেন কানাডা যাচ্ছেন।

তাহলে এখন এখানে কেন?

দেশে থেকেও আমার সাথে একবার কথা বলার প্রয়োজন মনে করলেন না?

এতটা নিষ্ঠুরতা, এতটা নির্লিপ্ততা?

 

চোখ টলমল করে উঠলো, আবিরা ছুটে নিজের রুমে চলে গেলো।

নীরবতায় ঢেকে গেলো তার বুকের অন্দরের কান্না।

 

কিছুক্ষণ পর ভাবি দুইটা বড় লাগেজ টেনে রুমে ঢুকলেন।

আবিরা তাকালো না,

লাগেজ খুলে বেরিয়ে এলো একখানি লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা,

সাথে কনের যাবতীয় সাজসজ্জা।

 

আবিরা ধীরে জিজ্ঞেস করলো।

- আবইয়াজ ভাই তো নিচে, তিনি তো বলেছিলেন কানাডা যাচ্ছেন।

তাহলে তিনি এতদিন আমার সাথে যোগাযোগ না করে, দেখা না করে,

এভাবে ঠকাতে পারলেন আমায়?

 

ভাবি মুচকি হেসে বললেন,

-সে আবইয়াজ নয় রে, সে তোর ভাসুর, ফাইয়াজ খাঁন।

-উহু, ভাবি মজা করছো?

 

-একবার তোর ভাইকে জিজ্ঞেস কর।

আবইয়াজের জমজ ভাই ফাইয়াজ।

তুই তো শুধু প্রেমে পড়েছিলি,

আসল কাহিনি এখনো জানিস না।

ভাবির কথায় লাজে রাঙা হয়ে উঠলো আবিরার গাল।

কথাটা শুনেই নিচু গলায় বললো,

- উনারা এসেছেন কেনো?

ভাবি চোখ টিপে হেসে বললেন,

-তোর প্রেমিক পুরুষ কি আর সাধারণ কেউ রে?

এক মাস পেরোতেই বাড়ির প্রতিটা দেয়ালে যেনো তাঁর অধৈর্য্যের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছিল।

তোকেই চাই, আর কাউকে নয় এই এক জেদ নিয়ে সে রীতিমতো আন্দোলন শুরু করে দিয়েছিলো।

 

আবিরার ঠোঁটে অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটা প্রশস্ত হাসি ফুটে উঠলো।

ভাবি আবার বললেন,

- আজ তোদের আক্দ, বুঝলি?

এমন প্রেমিক ভাগ্যে জোটে ক’জনের!

ভগ্যবতী হোস রে, তুই সত্যিই ভাগ্যবতী!

 

আবিরার চোখজোড়া যেনো হঠাৎ আলোর মতো জ্বল জ্বল করে উঠলো।

তবুও অন্তরে একটা ব্যাকুলতা,

একটিবারের জন্য দেখতে মন চাইলো আবইয়াজকে।

কীভাবে পারেন তিনি এতটা সময় নির্লিপ্ত থাকতে?

এতটুকু যোগাযোগ না করে, কোনো কৈফিয়ত না দিয়ে।

একি ভালোবাসা, না কি কোনো নিঃশব্দ অভিমান?

 

ভাবনার ভেতর ডুবে থাকা আবিরাকে টেনে তুললো ভাবির ডাক,

-এই শুন, উঠে আয়, পার্লারের আপারা চলে আসবে এখনই।

তোর সাজ গোজের কাজ সেরে ফেলতে হবে, তারপর যাবো রেস্টুরেন্টে।

আবিরা বিস্মিত গলায় বললো,

-কিসের রেস্টুরেন্ট?

 

ভাবির চোখে তখন তৃপ্তির ঝিলিক,

-আমরা তো ভেবেছিলাম বাড়িতেই আক্দটা হয়ে যাবে চুপচাপ।

কিন্তু তোর প্রেমিক পুরুষ সে কথা একেবারেই মানে নি।

বলেছে, রানীকে রানীর আসনে বসাতেই হবে।

তাই সে নিজেই বুকিং দিয়েছে এক ঝাঁ চকচকে রেস্টুরেন্টে।

 

আবিরার বুক কাঁপলো এক অজানা আবেগে।

যে মানুষটা দিনের পর দিন নিশ্চুপ থেকেছে,

সে-ই আবার তার জন্য এমন জেদ, এমন আয়োজন করেছে!

এই অনুভূতির ভারে চোখে জমে উঠলো একফোঁটা আনন্দাশ্রু।

 

ভাবি হেসে বললো,

- তোকে যে আজ রাণীর মতো দেখতে হবে।

চল আয়, তোর রাজ্য প্রস্তুত হয়ে গেছে!

 

সাজিয়ে-গুছিয়ে, অলংকারে আবিরাকে রূপকথার রাজকন্যার মতো করে নিয়ে যাওয়া হলো রেস্টুরেন্টে।

দ্বারে পা রাখতেই চারপাশ আলোয় ঝলমল করে উঠলো যেনো এই মেয়েটিই আজকের সন্ধ্যার আলো।

 

রাজিয়া খাঁনের চোখ ভিজে উঠলো, কপালে চুমু এঁকে বললেন,

-আজ তোমাকে প্রথম দেখছি মা, ছবিতে যা দেখেছিলাম, তোমার সৌন্দর্য তারও অনেকগুণ বেশি।তোমাকে পাওয়ার জন্য আমার ছেলে আমার সাথে এক মাস ভালো করে কথা বলে নি। 

আমি বুঝতে পারি, সে তোমাকে কতখানি ভালোবাসে।

তাকে কখনো একা করো না, কখনো আঘাত দিয়ো না।

তোমার হাতে আমার ছেলের হৃদয় তুলে দিলাম তুমি ওকে ভালো রেখো, আগলে রেখো।

তোমরা একসাথে থাকো আলো ছায়ার মতো জীবনভর।

 

আবিরার চোখ টলমল করে উঠলো, গলায় কোনো শব্দ খুঁজে পেল না।

শুধু মাথা নিচু করে রাজিয়া খাঁনের হাত দুটো নিজের কপালে ছুঁইয়ে নিলো,

এ যেনো এক নিঃশব্দ প্রতিজ্ঞা, ভালোবাসা আর দায়িত্বের অদৃশ্য বন্ধন।

 

আবিরার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের গলার স্বর্ণের হার খুলে নিঃশব্দে তার গলায় পরিয়ে দিলেন।

এ যেনো এক নীরব মেনে নেওয়া, এক নীরব আশীর্বাদ।

 

আবিরাকে বসানো হলো এক অপূর্ব ফুলে সাজানো, সিংহাসন-সদৃশ চেয়ারে।

চারপাশে চোখে পড়লো ক্যামেরা, আলো, হাসি আর ফিসফাস।

রানী তিনি বটে কেবল রাজ্যহীন রাজার রাণী নয়, আজ তিনি নিজের ভালোবাসার জয়িনী।

তবু, চোখজোড়া বারবার ঘুরে তাকাচ্ছে ফোনের দিকে।

আবিরার মনে হাজারো প্রশ্ন,

আজকের এই বিশেষ দিনেও, তিনি কি আমায় একটিবারের জন্যও দেখবেন না?

 

অন্যদিকে, রেস্টুরেন্টের এক কোণে বসে ফাইয়াজ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ভিডিও কলে কথা বলছে সুভার সাথে।

তার ঠোঁটের কোণে যে হাসি, চোখে যে কোমল দৃষ্টি,

তা রাজিয়া খাঁনের অভিজ্ঞ চোখ এড়িয়ে গেলো না।

ভেতরে ভেতরে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন তিনি।

মন বলছে,

এই মুহূর্তে যদি পারতাম, মেয়েটাকে মাথার চুল ধরে টেনে বাড়ির দরজা দেখিয়ে দিতাম!

এমন সময়ে এমন বেয়াক্কেল কাণ্ড!

 

এইদিকে দুই বেয়াই, আহনাফ খাঁন ও শামসুল হক, যেনো বহুদিনের পরিচিত দুই সহচর হয়ে উঠেছেন।

একসাথে হাসি-ঠাট্টা, পুরোনো দিনের গল্পে গা ভাসানো,

দেখে মনে হচ্ছিলো যেনো সময় তাদের মাঝে কোনো ব্যবধান রাখেনি।

দুজনের বন্ধুত্ব দেখে রেস্টুরেন্টের পরিবেশে যেনো আরেকটু উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়লো।

 

আর আবিরা?

সে এখনো অপেক্ষায়,

এক টুকরো চাহনি, একটিবার দেখা, একটুকু ভালোবাসার প্রকাশের জন্য।

আজ, তার স্বপ্নের মানুষটি তাকে না দেখলে রাণীর সাজেও কিছু অপূর্ণ থেকে যাবে।

 

কাজি সাহেব কালো পাগড়ি আর মোটা ফ্রেমের চশমা ঠিক করে প্রশ্ন করলেন, 

- দেনমোহর কত লিখব?

ভিডিও কলে থাকা আবইয়াজ নির্দ্বিধায় বললো, 

-বাপের অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দিন।

এই কথায় সবাই হাসিতে ফেটে পড়লেও, আহনাফ খাঁন চোখ কুঁচকে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, 

-অত বাড়াবাড়ি করিস না, চুপ কর।

তারপর কাজির দিকে তাকিয়ে ধীর স্বরে বললেন, 

- লিখুন, পঞ্চাশ লাখ টাকা।

 

চারদিকে হালকা গুঞ্জন, মাথায় ঘুরছে ফুলের মালা, বাতাসে মৃদু আতর আর রজনীগন্ধার গন্ধ।

সবকিছু ঠিকঠাক, কেবল দু'জনের চোখে চোখ পড়েনি এখনো।

আবিরার অন্তর কাঁপছে, অথচ বাহিরে সে নিঃশব্দ, স্থির।

 

ঠিক সেই মুহূর্তে, মোমো একটা ভিডিও কল এগিয়ে দিলো আবিরার সামনে।

তাকাতে না তাকাতে পর্দায় সেই চেনা মুখ।

আবইয়াজ চুল একটু এলোমেলো, চোখে ভালোবাসা ছলছল করছে।

 

সে হঠাৎই হাত বুকে রেখে জোরে বলে উঠলো, 

-আমার পিচ্চি বউ।

আর ঠিক তখনই নাটকের মতো চেয়ার থেকে নিচে পড়ে গেলো,

আবিরার ঠোঁটের কোণে চাপা এক হাসি, চোখের কোণে বৃষ্টির ছোঁয়া।

 

পাশ থেকে কেউ চেঁচিয়ে উঠলো, 

- ভাবি জিতসেন! ভাবি জিতসেন!

আবইয়াজ নিচ থেকে উঠে হাসিমুখে উত্তর দিলো। 

-তোর ভাবি জিতসে না রে, আমি জিতছি।

সময় মতো, ঠিক সুযোগে, তাকে নিজের নামে দলিল করে নিয়েছি।

জীবনের সবচেয়ে দামি চুক্তিটা আজ কবুল হয়ে যাচ্ছে।

 

আবিরা এবার চোখ নামিয়ে বললো, 

-কবুল... কবুল... কবুল।

অপর পাশ থেকে আবইয়াজ বলে উঠলো, আলহামদুলিল্লাহ। 

 

চারপাশে হাততালি, হাসি আর অশ্রুসজল চোখের উষ্ণতায় ভেসে গেলো মুহূর্তটা।

এ যেনো ভালোবাসার ইশতেহারে সত্যিকারের সই।

 

এই অনুষ্ঠানের ভিড়েও একটানা ডেকে যাচ্ছিল আবইয়াজ,

-এই কুত্তার মা, শুনছো কুত্তার মা?

 

আবিরা ব্রু কুঁচকে তাকালো। আজকের দিনের মতো একটা বিশেষ মুহূর্তেও কি আরেকটু রোমান্টিক হওয়া যায় না? ‘কুত্তার মা’ ডাকটা আজ বড় বেশি বেমানান লাগছে তার কানে।

 

-আমাদের ছেলেকে আনোনি?

 

আবইয়াজের কথায় আবিরা ফিকে হেসে মাথা নোয়াল।

 

আবইয়াজ হাত বাড়িয়ে আবিরার মুখ ছুঁইয়ে বললো,

- কথা দিয়েছিলাম না, রানীর আসনে বসাবো? দেখো, তুমি ঠিক এখন যেমন আছো, সেভাবেই সারাজীবন থাকবে।

তুমি আমার রানী।

ভালোবাসায়, যত্নে, সম্মানে সবখানে।

 

তার কণ্ঠে গর্ব মেশানো উচ্ছ্বাস,

- নিজের দিকে একবার তাকাও তো লাল লেহেঙ্গার মাঝে তুমি ঠিক যেনো এক রাজার রানী। তোমার প্রতিটা সাজসজ্জা, প্রতিটা অভিব্যক্তি আজ আমার গর্বের প্রতীক।

তোমায় পাওয়াটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় জয়।

 

আবিরা খানিক অভিমান মেশানো কণ্ঠে বললো,

-আপনি এতদিন আমার সাথে কথা বলেননি কেন?

 

আবইয়াজ হালকা হাসলো, সেই চিরচেনা দুষ্টু ভঙ্গিতে,

-ভেবেছিলাম, একেবারে আকস্মিকভাবে আকদ করে চমকে দেবো তোমায়। এখন তো তুমি আমার, এখন আর আমাদের মাঝে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। এখন চাইলে সারাদিন, সারারাত কথায় ভাসিয়ে রাখি তোমায়।

 

আবিরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আবইয়াজের দিকে।

কতবার দেখেছে তাকে, তবুও মনে হয় নতুন করে দেখা শুরু হলো আজ।

এই ছেলেটির প্রতি এক অদ্ভুত মুগ্ধতা জমে আছে তার চোখে মুখে।

 

ধীরে, এক নিঃশ্বাসে সে বললো,

-আপনি এতটা সুন্দর কেন? আপনার চলাফেরা, বলার ভঙ্গি, সেই চোখের চাহনি সবকিছু যেন একেকটা তীর। একটা মেয়েকে ঘায়েল করার জন্য এতোটুকু যথেষ্ট। 

আপনার মাঝে কি কিছু একটাও কমতি থাকতে পারতো না?

খোদা যেন আপনাকে গড়েছেন নিখুঁত করে।

কখন, কোথা থেকে কে জানি ছিনিয়ে নেয় আপনাকে ভয় হয়।

 

আবইয়াজ হেসে বললো,

- ভয় পেও না, আমি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য না, তোমার জন্যই তৈরি।

তোমার চোখে যদি এক ফোঁটা ভয় জমে, আমি সারাজীবন সেটা মুছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছি।

 

মোমো এসে হেসে বললো, 

-কি গো, আজ পিরিতিরও তো যেনো শেষ নেই! আবিরা খাবে না নাকি?

 

আবইয়াজ চোখ টিপে বললো, 

-খাবার খেয়ে কী হবে ভাবি, আপনার ননদ তো এখন আমাকেই খাচ্ছে। 

 

আবিরা সঙ্গে সঙ্গে চোখ রাঙিয়ে তাকালো তার দিকে, 

-আপনি এসব কী বলছেন? ছি!!

 

আবইয়াজ হাসতে হাসতে বললো, 

-দেখেন ভাবি, আপনার ননদ এমন চোখে তাকাচ্ছে, যেনো একটু কাছে পেলেই কোলে তুলে একেবারে আছাড় দিয়ে ফেলে দেবে!

 

-চুপ করুন! আপনি এত কথা বলেন কেনো? বলেই মুখ ফিরিয়ে নিলো আবিরা।

 

আবইয়াজ একটু গম্ভীর ভঙ্গিতে বললো, 

- ভুলে গিয়েছিলাম, এখন থেকে তো আমাকে শাসন করার জন্য একজন এসে গেছে।

 

হাস্যরসের মধ্যে দিয়ে আকদের রাত শেষ হলো।

খাওয়া-দাওয়া, ছবি তোলা, আড্ডা সব মিলিয়ে সন্ধ্যাটা যেনো রঙিন হয়ে উঠেছিল।

 

অবশেষে বিদায় নিলেন রাজিয়া খাঁন, আহনাফ খাঁন এবং ফাইয়াজ।

তবে মনের মধ্যে একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে চুপচাপ রইলেন রাজিয়া খাঁন।

 

সবকিছু ঠিকঠাক হলেও, রাজিয়ার চোখে যেনো ঘুম নেই।

যে ভয়টা তার বহুদিনের যুবতী মেয়ে বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে রাখা যাবে না তা যেনো বাস্তব হয়ে ধরা দিতে যাচ্ছে।

 

নিজ মনেই ফুঁসতে লাগলেন তিনি,

এই মেয়েটাকে বাড়িতে এনে কী লাভ হলো? আহনাফ খাঁনের অতি-সততা আর একরোখা সিদ্ধান্তই এই সমস্যা ডেকে এনেছে।

এখন যদি সত্যিই সুভা আর ফাইয়াজের মধ্যে কিছু ঘটে যায়, তাহলে সমাজে মুখ দেখাবো কী করে!

শেষে কিনা একটা কাজের মেয়ে! ছি! ছি!

এই মেয়েটাকে যেভাবেই হোক বিদায় করতে হবে নাহলে এই উঠকো ঝামেলা একদিন এমন জায়গায় গড়াবে, যেখানে কেউ কিছু সামাল দিতে পারবে না।

হিতে বিপরীত হয়ে যাবে সব।

 

*খুব শীঘ্রই শেষ হতে চলেছে এই গল্পটা, আরেকটু আগানোর ইচ্ছে ছিলো কিন্তু আপনাদের যা রেসপন্স তাতে লিখার ইচ্ছেটাই মরে গেছে।

 

চলবে,,,,,,


Md Elias

51 ब्लॉग पदों

टिप्पणियाँ