বিনিময়ে শিক্ষার প্রচলন ঘটে গিয়েছিল। আর মধ্যযুগের বাংলার পাঠশালা শিক্ষাও মূলতঃ পড়ুয়াদের বেতন বা সিধার উপরে নির্ভর করেই টিকে ছিল। তবে তখনকার বাংলার টোল-চতুষ্পাঠীগুলি কিন্তু প্রধানতঃ জমিদার বা ধনীদের দানের উপরেই নির্ভরশীল ছিল।
প্রসঙ্গতঃ একথাও স্মরণীয় যে, খৃষ্টীয় সতেরো-আঠারো শতকেই বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য মুসলমান কবিদের বাংলা কাব্যগুলি রচিত হয়েছিল। তাই সেযুগের বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে বাংলা লেখাপড়ার প্রচলন না থাকলে এমন কিছু ঘটে যে সম্ভব হত না, একথা সহজেই অনুমান করা যেতে পারে। বস্তুতঃ দৌলত উজির ছাড়াও মধ্যযুগের বাংলার অন্যান্য মুসলমান কবিদের লেখা বাংলা কাব্যেও পাঠশালার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন—খৃষ্টীয় সতেরো শতকে সুকুর মামুদ তাঁর কাব্যে গোপীচন্দ্রের শিক্ষা সম্পর্কে লিখেছিলেন—
“প্রাতঃকালে স্নান করি হস্তে লইলাম খড়ি।
পড়িবার কারণে যাই দ্বিজ গুরুর বাড়ী॥
এই রূপে শাস্ত্র পড়ি গুরু পাঠশালে।
উদয় হইল গুরু আমার কপালে॥”
তাই সতেরো-আঠারো শতকে বাংলা পাঠশালা শিক্ষা যে পুরোপুরিভাব বিকাশলাভ এবং বেশ ভালো মতোই বিস্তারলাভ করতে পেরেছিল—এবিষয়ে গবেষকদের কোন সন্দেহ নেই। এমনকি এরপরে খৃষ্টীয় আঠারো-ঊনিশ শতকে লেখা ও তখনকার পাঠশালায় পড়ানো হত—এমন অনেক বিষয়ের পুঁথির সন্ধানও ঐতিহাসিকেরা পেয়েছেন।