পর্ব___<<<____>>>___

মন পাজরে তুই____<<<<<_____>>>>>_____

#মন_পাঁজরে_তুই

#আরেব্বা_চৌধুরী

#পর্বঃ ৩৮

 

এবার হঠাৎ করেই ক্লাসের মধ্যেই গম্ভীর গলায় ধমক দিয়ে উঠলো আবইয়াজ।

 

-এই মেয়ে, এখানে ঝিমাচ্ছো কেনো? রাতে ঘুমাও নি? এটা কি ঘুমানোর জায়গা?

 

আবিরা যেন হঠাৎ ঘোর থেকে জেগে উঠলো। চোখ মেলে কাঁপা গলায় বললো,

 

-কি?

-কি নয় স্যার বলো স্যার।

-কি? স্যার!

- হ্যাঁ স্যার!

-পারবো না!

- আমি তোমার লেকচারার, আমাকে তুমি স্যার ডাকতে বাধ্য।

- স্যা,,,স্যার।

 

এবার আবইয়াজ ধীর পায়ে হেঁটে গেলো আবিরার বেঞ্চের পাশে। ক্লাসের অন্যরা নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলো। আবিরার মুখ লাল হয়ে উঠেছে, ঘাড় নিচু করে বসে আছে সে।

 

আবইয়াজ এবার সামান্য ঝুঁকে গিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

- বলেছিলাম না আবিরা হক, তোমার মুখ থেকে 'স্যার' ডাক শুনেই ছাড়বো। এবার আবইয়াজ খাঁনের মুরদ সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা হয়েছে আশা করি।

 

তারপর সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আবারও গলা উঁচিয়ে বললো,

 

-কি হলো, চুপ করে আছো যে? কিছু বলছো না কেনো?

 

আবিরা চমকে উঠে গড়গড় করে বলে উঠলো,

-মা মানে,,, আসলে,,,,

 

আবইয়াজ এবার একটু চোখ কুঁচকে তীক্ষ্ণ গলায় বললো,

- কি মানে মানে আসলে করছো? স্যার বলো, স্যার!

 

কোনো উপায় না দেখে কণ্ঠ ভার করে আবিরা বললো,

- আ,,,আসলে স্যার, আমার প্র্যাক্টিক্যাল খাতা নিয়ে একটু প্রব্লেম হয়েছে, ওইটা দেখতে এসেছি, আজ আমার কোনো ক্লাস নেই।

 

আবইয়াজ এবার চোখে দুষ্টুমির ঝিলিক নিয়ে মৃদু হেসে বললো,

- আহা! বোকা মেয়ে একটা! এটাও বুঝতে পারো না?

তোমার প্র‍্যাকটিক্যাল খাতা ঠিকই আছে,

এটা কেবলই একটা বাহানা ছিলো, তোমাকে কলেজে, এই ক্লাসে, আমার সামনে এনে বসানোর।

 

তারপর আবার সকলের সামনে ঠান্ডা গলায় বলে উঠলো,

-ওটার সমাধান আমি করে দিয়েছি।

 

আবিরা মাথা নিচু করে বসে রইলো। 

 

আবইয়াজ একটুখানি গলা খাঁকারি দিয়ে পুনরায় বললো,

 

-কবে যে তোমার বুদ্ধিসুদ্ধি হবে কুত্তার মা! চারপাশে একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখো, সবাই কেমন করে তোমার হাসবেন্ডের দিকে তাকিয়ে আছে! এরপরেও কি আর কোনো সন্দেহ থাকে যে তোমার এই ‘স্বামী’ই পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন যুবক?

 

সে কথার মাঝে সামান্য দম্ভ, সামান্য আদর, আর চোরাগোপ্তা এক প্রেম মিশিয়ে আবারও বললো, 

 

- আমাকে ধরে রাখতে শিখো। আমাকে হারানোর ভয় করো!

সবাই যেভাবে তাকিয়ে আছে, তাতে আমিই লজ্জায় মরে যাচ্ছি।

তবে, দোষ তাদের নয়, দোষ আমার সৌন্দর্যের।

আমার চৌদ্দ পুরুষের মধ্যেও এমন রূপবান কোনো পুরুষ জন্মায়নি, আমিই একমাত্র ব্যতিক্রম!

 

আবিরা হেসে ফেললো, চোখে-মুখে মিশে গেলো অদ্ভুত এক উচ্ছ্বলতা।

 

- আর ফাইয়াজ ভাইয়া?

 

আবইয়াজ গম্ভীর গলায় বললো,

 

-ও ভাগ্যগুণে আমার মতো দেখতে হয়েছে বটে, কিন্তু স্বভাব চরিত্র একদমই আমার মতো না।

চেহারা বাদে সব কিছুতেই সে ফেল।

 

আবিরা কাঁপা ঠোঁটে হেসে বললো,

 

- আপনি না বড্ড বেশি কথা বলেন!

 

আবইয়াজ তৎক্ষণাৎ রসিক ভঙ্গিতে বললো,

 

- এটা কলেজ কুত্তার মা, আর এখানে আমি তোমার স্যার।

 

-কি ভং বাজি! গল্প শুনিয়ে স্যার-এর স্থান দখল করেছেন শুনি?

 

আবইয়াজ এবার চোখ টিপে বললো,

 

- এই যে আমার টাকার গরমের মধ্যে, এই গরম তো কেবল উষ্ণতার প্রাথমিক স্তর, কুত্তার মা।

আওব,,,এটা টাকার খেল, বেইবি, টাকার খেল!

 

আবিরা এবার আর সামলাতে পারলো না, হেসে পেছন ফিরে জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো,

আর আবইয়াজ ওর পাশে দাঁড়িয়ে যেন আরও একবার বুঝিয়ে দিলো,

এই প্রেমে যেমন হাসির খুনসুটি আছে,

তেমনি আছে একরোখা দাবি, অধিকার, আর অপার মমতার ছায়া।

 

ক্লাসের একদম শেষ পর্যায়ে, এক চুপচাপ মেয়ে হঠাৎ একটু এগিয়ে এসে বললো,

 

- স্যার, আপনার নাম্বারটা কি পাওয়া যাবে? মানে, যেসব টপিক বুঝতে কষ্ট হয়, সেগুলো একটু আপনাকে জিজ্ঞেস করে নিতে পারতাম।

 

আবইয়াজ একচুল বাঁকা হাসলো। চোখের কোণে একটুখানি বিদ্রুপ, আর সেই হাসির ছায়া সোজা গিয়ে পড়লো আবিরার চোখে।

আবইয়াজ কিছু বলার আগেই, হঠাৎই আবিরা বলে উঠলো,

- উনি আমাদের স্যার না। আজকের জন্য এসেছেন শুধু একটা বিশেষ কাজে। আর উনার নাম্বার নিয়ে পড়া-লেখা হবে না তোমার, কারণ উনি নিজেই বই ছুঁয়ে দেখে না!

 

আবিরার কণ্ঠে একধরনের তীক্ষ্ণ স্পর্ধা ছিল, আর চোখে ছিল শঙ্কার ঘোর মিশিয়ে অধিকার।

 

আবিরার এমন মন্তব্যে বিষম খেলো আবইয়াজ। ঠোঁটের কোণে হাসি লুকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,

 

- ঠিক এভাবেই তো প্রিয়জনকে আগলে রাখতে হয়।

যেন কারও নজর না লাগে।

 

সবাই যখন বেরিয়ে গেল, শ্রেণিকক্ষ নিস্তব্ধ হয়ে এলো।

আবইয়াজ হালকা নিঃশ্বাস ফেলে বাইকের কাছে গিয়ে হেলমেট তুলে পরলো, আর সবে ইঞ্জিন চালু করেছে এমন সময়,

পেছন থেকে কেউ বাইক টেনে ধরলো।

 

আবইয়াজ ঘুরে তাকিয়ে চমকে বললো,

- কি?

 

আবিরা তখন চোখে ধরা মায়ার রেশ মেখে বললো,

- আমি বসবো আপনার বাইকের পেছনে।

 

আবইয়াজ ঠোঁট বাঁকিয়ে তাকালো, একটু অবাক ভঙ্গিতে বললো,

-বাব্বাহ, আজ হঠাৎ কী এমন হলো যে নিজেই নেমে এসেছো আমার বাইকে বসতে? অন্য দিন তো ঘ্যান ঘ্যান করতে করতে জোর করে তুলতে হয়!

 

আবিরা এবার একটু ঝাঁজ দেখিয়ে বললো,

- সবাই দেখুক, এই স্যার আমার ব্যক্তিগত মালিকানায় রয়েছে। এই স্যারের দিকে আর কারও নজর পড়া চলবে না!

 

আবইয়াজ ভান করা হতবাক মুখে বললো,

-ছিঃ, পাগল নাকি তুমি? এখন যদি তোমাকে পেছনে বসাই, তাহলে আর কোনো মেয়ে পটবে? 

সবাই তো ভাববে, এই পৃথিবী-সুন্দর যুবকের পেছনে এই ‘মালেকা বানু’ কী করে?

 

আবিরা এবার মুখ গম্ভীর করে চিৎকার করে উঠলো,

- আপনি আমাকে নিবেন নাকি আমি হেঁটেই চলে যাবো!

 

আবইয়াজ সঙ্গে সঙ্গে নরম স্বরে বললো,

- আরে আরে রেগে যাচ্ছো কেনো? এসো, বসো।

কিন্তু যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, তখন বলবে আমরা ভাই-বোন।

 

আবিরা দাঁত চেপে বললো,

-বলবো আমরা বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী। আমাদের একটা বাচ্চাও আছে। সব সময় ফাইজলামি ভাল্লাগে না!

 

আবইয়াজ চোখ বড় করে অবাক হবার ভান করে বললো,

- আমরা স্বামী-স্ত্রী মানলাম ঠিক আছে, কিন্তু বাচ্চাটা কি ওই কুত্তা?

না না কুত্তার মা, এটা আমি মানতে পারবো না।

ওমন পশমওয়ালা বাচ্চা আমার চাই না, বুঝছো?

 

আবিরা এবার চোখ কুঁচকে বললো,

- আপনি কি এখনই চুপ করবেন, নাকি আমি এখান থেকে নেমে একা হেঁটে চলে যাবো?

 

আবইয়াজ এবার আর কিছু না বলে বাইক সোজা করলো, আস্তে করে বললো,

 

-আমার কুত্তার মা, তুমিই তো এই জীবনের সবচেয়ে বড় শান্তি৷ একেবারে VIP সিটে বসো, এবার তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে চললাম প্রেমের পথে।।

 

- একটা মানুষ কী করে এত বকবক করতে পারে?

 

- বকবক করি ঠিকই, তাও তো তোমার কুত্তার মতো ঘেউ ঘেউ করি না।

 

-পিকুর সঙ্গে আপনার এত কিসের শত্রুতা?

 

-ও আমার ভালোবাসায় ভাগ বসায়, আমার পার্সোনাল প্রোপার্টিতে হাত দেয়। আবইয়াজ খাঁনের সম্পত্তি, বুঝলে? ও যদি তোমার ছেলে না হতো, কবেই আঁছাড় মেরে ফেলে দিতাম!

 

- আর আমিও আপনাকে আঁছাড় মেরে মাটিতে শুইয়ে দিতাম!

 

-বিয়ের আগেই বিধবা হতে চায় এমন রমণী জীবনে প্রথম দেখলাম। যাক, দেখছি মাথা খুব গরম হয়ে আছে তোমার। বলো তো, কি খেতে চাও?

 

- আপনার মাথা।

 

-ওটা তো কবেই খেয়ে নিয়েছো। এবার নতুন কিছু বলো। রেস্টুরেন্টে যাবে?

 

- না।

 

- থাক, যাওয়ার দরকার নাই। ওখানে আবার কোনো মেয়ে যদি লাভ লেটার দেয়, তখন তো আবার ওর সাথে চুলোচুলি লেগে যাবে তোমার। তার চেয়ে বরং আমি নিজেই গিয়ে কিছু নিয়ে আসি, তোমার মেজাজও ঠান্ডা থাকবে।

 

আবিরা মনের ভেতর হেসে উঠলো, কিন্তু বাইরে তা প্রকাশ করলো না। ঠোঁটের কোণে এক বিন্দু অভিমান, আর চোখে এক চিলতে প্রশ্রয়।

 

কিছুক্ষণ পরই আবইয়াজ ফিরে এলো। দুটো ব্যাগ ভর্তি করে কিসব যেন এনেছে, কি আছে তাতে, আবিরার সে খবরও জানা নেই।

 

বাকি পথ দু’জনেই চুপ।

কথারা যেন তাদের হৃদয়ে নীরব সুর হয়ে বাজছিল, অথচ শব্দ হয়ে বেরোচ্ছিল না।

 

বাড়ির সামনে এসে বাইক থামিয়ে, আবিরার হাতে ব্যাগ দুটো তুলে দিলো আবইয়াজ।

তারপর একটু দূরে গিয়েই ঘুরে দাঁড়িয়ে ঠোঁটের ফাঁকে হাসি মেখে ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিলো,

- নেক্সট টাইম, এভাবে দূর থেকে নয়, একেবারে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেবো তোমার।

 

আবইয়াজের কথায় লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠলো আবিরার।

তবুও হেসে ফেললো মনে মনে।

ঠিক সেই হাসিটা, যা কেউ দেখে না, শুধু অনুভব করে।

 

সে চেয়ে রইলো সেই পথের দিকে, যেদিকে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে তার প্রিয়জন।

যতক্ষণ আবইয়াজ চোখের আড়াল হয়নি, ততক্ষণ আবিরার পা যেন মাটিতে গেঁথে রইলো।

 

সেই দাঁড়িয়ে থাকার মাঝে ছিল এক অদ্ভুত আশ্বাস।

যেন সে দাঁড়িয়ে আছে প্রেমের দ্বারপ্রান্তে,

যেখানে প্রতীক্ষারও এক অনন্য মাধুর্য আছে।

 

 আবইয়াজ খানিক চুপ হয়ে মনে মনে বললো,

 

- আহারে জীবন! হাঙ্গা করবো নাকি ফাইয়াজের গোসা ভাঙাবো, বিয়েটা করেও শান্তি নেই, উল্টে বাকি দুনিয়ার দায় এসে আমার কাঁধে। আমার জন্য সত্যিই মায়া লাগে মাঝে মাঝে!

 

এমন কথা ভেবে নিজেই নিজের কপালে চাটি দিয়ে উঠে পড়লো। বাইকের চাবিটা ঘুরিয়ে নিতে নিতেই ফোন করলো আদিকে।

 

- হ্যালো আদি।

 

- হুম, বল।

 

- তোর বোনকে একটু বলে দিস, সুমাইয়াকে,,, না না থাক, আমিই বলে দিবো, তুই আবার বলতে গেলে প্যাঁচ লাগাই দিবি। তোর বোন এমনিতেই দিনে তিন বেলা আমার সাজগোজ দেখে অজ্ঞান হয়ে থাকে, তোর ‘হেল্প’ ছাড়াই কাবু করে ফেলি।

 

-তাহলে কল দিলি কেন?

 

- শুধু স্মরণ করিয়ে দিতে, যে তুই একটা বেজাইল্লা!

 

আবইয়াজের কথা শেষ না হতেই, বিরক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে কল কেটে দিলো আদি।

আবইয়াজ ফোনটা নামিয়ে রেখে হাসলো,

- হাহ্! এই পরিবারের সবাই যেন নাটকের চরিত্র।

 

কিছুক্ষণ পরই সে পৌঁছালো ফাইয়াজের বাসায়। দরজায় কড়া নাড়তেই ফাইয়াজ এল উদাস মুখে।

 

- এই শুন, ব্যাগ ট্যাগ গুছা, বাড়ি যাবি।

 

-হঠাৎ কেন?

 

-আসবি বলছি আয়।

 

- আম্মু বলেছে?

 

- না, আম্মু বললে তো তুই কান্না করে রওনা দিতি। এখন বলছি আমি তোর জলজ্যান্ত ভাই আবইয়াজ খাঁন বলছি চোখে দেখিস না নাকি?

 

- তাহলে থাক, যাচ্ছি না। আম্মু রেগে যাবে।

 

-রেগে গেলে ভাঙাবো। তোর জন্য আমি তো আছি। ব্যাগ না-হয় পরে পাঠানো যাবে, আগে তুই চলো।

 

-কিন্তু,,,

 

-কোনো ‘কিন্তু’ না। আমার ওপর ভরসা রাখ। তুই আমার ভাই, ভাই মানে রক্তের সম্পর্ক নয় শুধু, আত্মার জায়গাটা।

 

ফাইয়াজ খানিক নরম হয়ে গেলো। মুখে কিছু না বলেই মাথা নুইয়ে সম্মতি জানালো।

 

আবইয়াজ তার দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠলো,

 

-আমি ফাইয়াজ না ভাই,আমি আবইয়াজ খাঁন। ভালোবাসা আর দায়িত্ব, দুটোই আমার শিরায় শিরায় মিশে আছে। চল এবার, আবিরাও তো আমার অপেক্ষা করছে আর কে জানে, আমি না থাকলে আবার কুত্তার মায়ের মুড খারাপ হয়ে যায় কিনা!

 

-যাই হোক, কালা মাসি যাবে না নাকি? আমার সামনে আসে না যে, ভাব সাব দেখে তো মনে হয় আমি তার প্রাক্তন প্রেমিক!

এক দমে আবার চেঁচিয়ে উঠলো আবইয়াজ, 

-কিগো কালা মাসি, কোনো কালে ভালা টালা বাসতা নি আমারে?

 

সুভা মুখটা লুকিয়ে হাসি চেপে রাখলো।

ফাইয়াজ গম্ভীর গলায় বললো, 

- সব সময় কি ফাইজলামি মানায়?

 

- ঠিক আছে চল, বাড়ি যাই। আর আমার কালা মাসি তো এখন দেখি রূপবতী মাসি! কি’রে ভাই, কি মাখাইছিসরে মেয়েটারে? এমন ঝলমল করে যে চোখ ধাঁধিয়ে যায়।

কথাটা বলে আবইয়াজ সুভার দিকে তাকালো।

- আমাকেও একটু নাম বল, ওই কিরিম টিরিম মেখে আমিও আরও সুন্দর হই, বুঝতেই তো পারছিস বিয়ের সিজন চলছে। 

 

ফাইয়াজ হালকা হেসে বললো, 

-আগে বাড়ি চল, পরে তোর ট্রিটমেন্ট করাচ্ছি।

 

আবইয়াজ মৃদু হাসলো। তিনজন একসাথে এসে দাঁড়ালো খাঁন বাড়ির চৌকাঠে।

 

ফাইয়াজকে দেখে রাজিয়া খাঁনের মুখে যেন একটা উষ্ণতা ফিরলো, কিন্তু সুভার মুখটা চোখে পড়তেই আবার মুখটা কালো মেঘে ঢেকে গেল।

সোজা তাকিয়ে বললেন, 

- বলেছিলাম না? যেদিন এই মেয়েটাকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারবি, সেদিনই এই বাড়িতে পা রাখিস।

 

আবইয়াজ এবার মায়ের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললো, 

- মা, যদি সে ওকে নিয়ে সুখে থাকতে পারে, তাহলে তাকে তার মতো করে ভালো থাকতে দাও না। তুমি তো তার মঙ্গল চাও, তাই না? তাহলে তাকে বাঁধা দিচ্ছো কেন?

 

রাজিয়া খাঁনের গলা কঠিন হয়ে উঠলো, 

- সেটা অসম্ভব আবইয়াজ। একটা জাত কুলহারা কাজের মেয়েকে আমি কীভাবে নিজের পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নেবো? আমার সমাজে তো মুখ দেখাবার উপায় থাকবে না।

 

তখনই ফাইয়াজ জোরে চেঁচিয়ে উঠলো, 

- মা! ও জাত কুলহারা নয়, ও তোমারই রক্তের! তোমারই বংশের মেয়ে!

 

আহনাফ খাঁন চুপ করাতে চাইলেও ফাইয়াজ চুপ করে রইলো না।

- না আব্বু, এবার আর চুপ করে থাকা যাবে না। মায়ের জানা উচিত ও কে!

 

আবইয়াজ ভ্রু কুঁচকে তাকালো ফাইয়াজের দিকে, কপালে ভাঁজ পড়ে গেল।

-কি বলছিস ফাইয়াজ? কালা মাসি আম্মুর বংশের? মানে টা কি?

 

ছয় মাসের ফুটফুটে মেয়েকে কোলে নিয়ে পনেরো দিনের জন্য বাপের বাড়ি গেছে মিষ্টি।

এই সুযোগে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে রিফাত। বিছানায় গা এলিয়ে বিড়বিড় করে বললো,

এ বউ না যেনো জ্বলন্ত আগুনের ঢেলা, একটু নিঃশ্বাস নিতে গেলেই ঝলসে দেয়।

 

ওপাশে রান্না শেষ করে নিজের ঘরে বিশ্রামে চলে গেছেন মাহফুজা বেগম।

হঠাৎ কলিং বেলের টুংটাং শব্দে দরজার দিকে এগোলো রিফাত। দরজা খুলতেই চোখ কপালে।

 

-এই মিষ্টি! তুই না পনেরো দিনের জন্য বাপের বাড়ি গেছিস? তাহলে আজ চার দিনের মাথায় ফিরে এলি যে?

 

মিষ্টির চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। কণ্ঠে মিশে আছে ব্যঙ্গ।

 

-কেনো? হঠাৎ ফিরে আসাতে কি খুব অস্বস্তি লাগছে?

বলেই মেয়েকে রিফাতের কোলে তুলে দিয়ে ওকে সরিয়ে ঘরে ঢুকে পড়লো।

 

তারপর একে একে ওয়াশরুম, খাটের নিচ, পর্দার আড়াল, রান্নাঘর সব তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখতে লাগলো।

 

-কি খুঁজছিস?

 

-মেয়ে।

 

-হোয়াট?

 

-হ্যাঁ, আমি না থাকলে তোর আনন্দের সীমা থাকে না, অফিস ছুটি নিয়ে নিশ্চয়ই মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করিস। 

 

রিফাত রাগ চেপে রাখতে পারলো না।

 

-মিষ্টি, মুখ সামলে কথা বল। তোর মনের এতো বিষ কোথা থেকে জমে আছে বুঝতে পারি না।

 

তাদের তর্কাতর্কির আওয়াজে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন মাহফুজা বেগম। কপালে চিন্তার ভাঁজ।

 

-কি হয়েছে রিফাত? আর মিষ্টি মা, হঠাৎ ফিরে এলি যে? কোনো সমস্যা হয়েছে কি?

 

রিফাত ক্ষোভ চাপতে না পেরে বলে উঠলো,

 

-মা, তুমি ওকে একটু বুঝাও। আমার একটা ছোট মেয়ে আছে, সংসার আছে, আমি কি অন্য মেয়েদের নিয়ে ঘোরাফেরা করবো? বিয়ের শুরু থেকেই এই অবিশ্বাস আমাকে গ্রাস করছে। আমি ক্লান্ত মা, আর পারছি না।

তুমি এক কাজ করো, ওকে বুঝিয়ে দাও যদি আমার প্রতি সামান্যতম বিশ্বাস না থাকে, তাহলে এই সম্পর্ক আর টানার কোনো মানে হয় না। ও আলাদা একটা রাস্তা খুঁজে নিক।

 

রিফাতের কণ্ঠে জ্বালা, চোখে অভিমান। আর মিষ্টির চোখে জলের ধারা। সে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদতে লাগলো।

 

মাহফুজা বেগম ধমক দিয়ে রিফাতকে থামালেন।

-চুপ কর রিফাত, একটুও তো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে শিখলি না।

 

তারপর মিষ্টিকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে বোঝাতে লাগলেন,

 

-শোন মা, তোদের বিয়ের প্রায় তিন বছর ছুঁই ছুঁই, এখনো যদি অবিশ্বাস থেকেই যায়, তাহলে সম্পর্কটা কোথায় দাঁড়াবে বল?

রিফাতকে তো তুই ভালোবেসে বিয়ে করেছিস ভালোবাসার মূলভিত্তি তো বিশ্বাস, ভরসা আর সম্মান।

 

সম্পর্কে সন্দেহ ঢুকলে, ভালোবাসার জমিনে ফাটল ধরে।

যে সম্পর্কের ভিত বিশ্বাসে গড়া, সেখানে প্রতিদিন যদি প্রশ্ন উঠতে থাকে, তবে সেই সম্পর্ক একদিন নিজেই ধসে পড়ে।

 

মা'রে রিফাত ওরকম ছেলে হলে বহু আগেই তো অন্য মেয়েকে ঘরে আনতো। এতদিনে তো কিছু একটা চোখে পড়ার কথা ছিল, তুই কি সেরকম কিছু দেখেছিস বল?

 

মিষ্টি ধীরে ধীরে মাথা নাড়িয়ে "না" বললো।

 

-তাহলে শুধুমাত্র মনের ভয় দিয়ে তুই কেনো তোর স্বামীকে তিলে তিলে পোড়াচ্ছিস বল তো?

ও তো এখন একজন বাবা, ওর মধ্যে দায়িত্ববোধ আছে। তুই তো জানিস, এমন ছেলে একপা ভুল দিলেও নিজেই ফিরে আসে।

 

মিষ্টি চোখের জল মুছলো। সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে।

 

চলবে,,,,,,


Md Elias

51 ブログ 投稿

コメント