টেলিফোনটা চুপ আছে আজও
আজিজুর রহমান
জানিনে, কিয় হইল না আজ রিং—
সকাল হইতে সন্ধ্যা, আর সন্ধ্যা হইতে নিশি,
আমি শ্রবণ করিলাম নিঃশব্দের বর্ণমালা,
কেবল টেলিফোনের পাশে বসিয়া, করিলাম প্রতীক্ষা।
সেই ধাতব কণ্ঠস্বরটি—"ট্রিঙ ট্রিঙ"—
যাহা কাঁপাইত হৃদয়ের অন্তঃস্থ অলিন্দ,
আজ তাহা নাই; আজ তাহা নিস্তব্ধ।
আকাশ যেমন গম্ভীর হয় শ্রাবণের রজনী,
তেমনি স্তব্ধ ছিল সাদা-কালো যন্ত্রখানি—
যাহা একদিন প্রেমের দূত ছিল,
আজ যেন মৃতপ্রায় স্মৃতির পাষাণ।
আমি বলি, হে মাধবীলতা রঙের কণ্ঠস্বর!
তুমি কি জান না, কিরূপে প্রতিদিন
আমি বাঁধি কল্পনার রিং,
যেখানে তোমার কণ্ঠ শুনিবার আশায়
চোখ রাখি ডায়ালের প্রতিটি বৃত্তে?
হে নব্বইয়ের সন্ধ্যা,
তোমার সেই প্রেম-পত্র হারাইয়াছে ডাকপিয়নের থলিতে,
তোমার সেই অপেক্ষা আজ ফসিল হইয়াছে
স্মৃতির মোহনায়।
আমি বসি, টেবিলের কোণে,
টেলিফোনটা যেখানে রাখি—সাদা রঙে, কালো তারে বেঁধা—
তাহার দিকে চাহিয়া থাকি, যেন সে বলিবে,
“আবার ফোন করিয়াছেন তিনি।”
কিন্তু না,
কোনো সিগন্যাল আসে না, কোনো শব্দ নহে।
ভালোবাসা কি তবে এতই সহজে চুপ হইয়া যায়?
রবির ভাষায় বলি—
"চলিতে চলিতে যদি পথে কভু দেখি তাহারে,
তবে কি তাহার চোখে থাকিবে
আমার ফোন না ধরিবার মিথ্যে ক্লান্তি?"
আমার প্রতীক্ষা, হে প্রেম,
তুমি তো কাঁটা হইয়া জড়াইলে জীবনের ডায়ালটিকে।
তুমি আসিলে না, তুমি ডাক দিলে না,
টেলিফোনটা আজও চুপ—
যেমন চুপ থাকে পরাজয়ের দৃষ্টিপাত,
যেমন চুপ থাকে একজন হেরে-যাওয়া ভালোবাসার পুরুষ,
যে প্রেমে ফোন করে,
কিন্তু কখনো উত্তর পায় না।
১৭ই জুন ২০২৫
রাত ১ টা ৪৬ মিনিট