স্মৃতির প্রহর

লেখনি :আজিজুর রহমান

স্মৃতির প্রহর

 আজিজুর রহমান 

 

সাদা মেঘ গুলো শরৎ এর নীল আকাশের সৌন্দয্য আর দ্বীগুন বাড়িয়েছে বটে। শুক্লা তিথির এই সন্ধ্যাকে মহনী করে তুলেছে সারি সারি মেহেগুনি গাছ আর বাঁশের ঝারের অন্ধার। 

আধা ফালি চাঁদ জেগে আছে সন্ধ্যা তারার সাথে।

জোনাকীর আলো তেমন চোখে পরে না

আফছা আলোর মাঝে। 

কালবার্ডের দুই ধারে ঝাকি জাল দিয়ে মাছ ধরছে।

গ্রাম্য বৈচিত্র ফুটে উঠেছে চারিদিক। ঝিরিঝিরি দখিনা বাতাস বইছে জীবনের

পথ বেয়ে। 

নবনীতা ও অমিত চলছে সামনের দিকে।

মুখে তেমন কথা না থাকলেও মনের মধ্যে

ধূমরে মূছড়ে যাচ্ছে। 

অমিত পিসি আমরা কোথায় যাচ্ছি ? 

তোমার মনাই কাকার বাড়িতে।

কালবার্ড পেরিয়ে বেশ খানিক পর ছোট একটি মদিখানা দোকান, সেখানে বেশ কিছু,লোকজন বসা।

চা চিকারেট খাচ্ছে বসে আর বি,টিবির

সংবাদ দেখছে। 

বৌদি মৃন্ময় দেবী বেশ পিছনে পড়িয়া গেছে, তাহার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। 

 

অগত্য মুদিখানা হইতে কিছু খাবার ক্রয়

করিতে হইবে বলে মুদিখানার নিকটে দাড়াইলো নবনীতা।                                       

মনাই নবনীতা আপনি কেমন আছেন। এই সন্ধ্যায় কোথায় ফিরছেন।

নবনীতা আমরা তো আপনাদের বাড়িই যাচ্ছি। আপনি কি করছেন এখানে।

মনাই আজ কাজে বের হই নাই, তাই দোকানে বসে আছি।

নমস্কার বৌদি মনি, কেমন আছেন। হঠাৎ

গরীবের বাড়ির দিকে হাতির পাড়া। 

মৃন্ময় দেবী হঠাৎ মানুষ থেকে হাতি হলাম বুজি মনাই বাবু।

মনাই কিছু নয় বৌদি আপনি একজন

বড় লোক ভাল মানুষ আমার কাছে, আর সেই ভাল মানুষটি যখন আমার উঠানে, তাই বলে ফেলেছি ?  

কিছু মনে করবেন না।

আমরা সাধারন মানুষ আমাদের ভুল হতেই পারে। আর ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখাই পরম ধর্ম। 

মৃন্ময় দেবী তুমি কি কথাই বলবে মনাই, বাড়ি আবদি নিবে না।

সে কেমন কথা বৌদি !

অদৃষ্টের কোন ভাগ্যের বিরম্ভনায় অতিথী

হয়ে এসেছেন, সে আমার জানা নেই। 

 

তবে আমি ভাগ্যবান ঐর্শ্বয্যের মত মহামান্য নাইবা রইলো আমার বাস। 

আজ হৃদয় বৃত্তবানদের নিয়ে আমার বাড়িতে স্বর্গের মত হোক অনুষ্ঠান। 

তৃর্থোষ্হান বলিতে কোন বিশেষ জায়গার নাম বুজায় না।

তৃর্থো হল পবিত্রতা বুজায়।

        দোকান থেকে মনাই চানাচুর আর

মুড়ি কিনিয়া লইলো। ইহাতেও বৌদির ঘোর আপত্তি আমরা ঘুরতে বের হইছি।

অগত্য মনাইয়ের আপত্তির কাছে হার মেনে ই মনাই দের উঠানে উপষ্হিত হইলো নবনীতা।

বিশেষ বেদনা ভরা মন ক্লান্তির তরথি কেটে সময়ের সঙ্গতি রেখে জীবন কি আর চলে তাই অপেক্ষা ভরা মন খুঁজে ফিরে তোমায় সারাক্ষণ। মন নীরবতায় 

থাকলেও আখি যুগোল স্মৃতির ভাবনায় ব্যস্ত। 

 

মনাই এর মা উঠানে নিজ হাতে বানানো

মাধর পেতে দিলো। চাঁদের আলো আকাশের কোল বেয়ে নেমে এসেছে। পূর্নমার দ্বিতীয় দিন, আলো যেন হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

মুড়ি আর চানাচুর সরিষার তেল দিয়ে মেখে সুন্দর সুস্বাদু ঝাল মুড়ি বানিয়ে পরিবেশন করিলো মনাই এর মা।

          জীবন এক উপদ্যের পদবালী নিয়তীর নিয়ম বড়ই নির্মম। 

সাঁকে বাধানো স্বপ্ন সবার ভাগ্যে হয় না। 

মৃন্ময় দেবী --ও মনাই ঠাকুর পো এলুম ঘুরতে।

এই চাঁদনী রাতে জলের কল কল শব্দ আর দক্ষিনা হাওয়ায় ভেসে আসা কিছু মিষ্টি গন্ধ মনকে উদাস করে তুলে। 

 

এমন একটা রাত হাসান বাবুকে কাছে পেলে মন ভরে গান শূনে নিতাম।

নবনিতা আমাকে খুশি করার জন্য বলনি তো বৌদি।

সে কেমন কথা ঠাকুর ঝি, ফুলকে সবাই

ভাল বাসে, তবে তার ভিন্নতা থাকতে পারে কেউ ফুলকে দিয়ে মালা কেউ-বা খোপায়, আবার কেউ ফুলধানিতে রাখতে পছন্দ করে। 

কিন্তু ফুলের গন্ধকে বেঁধে রাখতে পারে না তার নিজস্ব সীমানায়।

হাসান বাবু হল তেমনি একজন মনের মত মানুষ !

প্রায় সব মানুষই হাসানকে ভাল বাসে। 

    কিন্তু একটি সূত্রে তুমি জয়ীই নবনীতা,

কারন হাসান বাবু তোমাকে ভাল বাসে। 

কিন্তু প্রীতিলতার প্রেম অধিষ্ট লিখনির 

মাধ্যমে হয় বৌদি। কত মানুষ কত ভাবেই ভালোবাসে !

প্রতিটি মানুষ ভালোবেসে যায় তার নিজের মত করে।

বিরহে প্রেম বিলাপ করিলেও ভালো বাসার নীতি একই থাকে। 

কিন্তু প্রেমের নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা তৈরি হয়নি আজও।

হাজার মন ভাঙ্গার পরেও বলে প্রেম স্বর্গীয় মানবতার ফেরিওয়ালারা তা পোষণ করে বুকের মাঝে। 

 

কতক্ষন থাকবে বৌদি মনি এই খোলা আকাশের নীচে, রাত তো অনেক হতে চললো।

এই কথার ফাঁকে অমিত ব্যেনের উপর ঘুমিয়ে পড়লো নবনীতার কোলে।

 মৃন্ময় দেবী ঠিক আছে মনাই আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে চলো গন্তব্যে।

আগামী কাল আসবে মনাই, 

তোমাকে একবার চর ভদ্রাসন যেতে হবে।

জি অজ্ঞে আসবো বৌদি মনি। 

 

রাতের নিরবতায় মন ভাঙ্গা সুরে ডাহুক 

করুন কন্ঠে ডেকে উঠে মাঝে মধ্যে। 

এমন রাত কারও যেন না আসে। 

 

চোখের জলের বিশেষ ক্ষমতা আছে, মনকে হাল্কা করার। 

প্রদীপ নিবে গেছে বলে ভয় লাগেনি, কারন জীবনে অনেকটা সময় একাই চলতে হবে মনে হয়।

শন শন বাতাস বইছে মাঝে মধ্যে ধমকা

হাওয়া । 

নিশির এই প্লাবনে আকাশে কতটুকু মেঘ জমেছে ঝরে পড়বে বলে ? 

সে আমি জানিনা।

আশার চুড়া বালিতে স্বপ্নের খেয়া বেয়ে যাচ্ছি আপন গতিতে।

 শিউলি ফুল ফুটে আছে গাছে, দু চোখে

ঘুম নেই নবনীতার, কষ্টো গুলো দানা বাধছে বুকের বাম পাশে।

চাঁদের আলো মেঘের আড়ালে লুকায়, ভাবনার অতলে এক সময় ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো নবনীতা। 

পাখির কলরবে আকাশ কোনে সূর্য উঠে শেষ পর্যন্ত সকল অবসান কাটিয়ে।

 

     দূরে ফজরের আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভাঙ্গলো নবনিতার।কিন্তু বিছানা ছেড়ে

উঠতে বেশ সময় লাগিলো।

 

হেমন্তের সকালে ঘাসের ডগাই শিশিরের

ছুঁয়াই রোদের আলোতে জলমল করে।

নবান্নের উৎসব যেন প্রতি ঘরে ঘরে। 

খালি পায়ে মাটি পাড়ানো স্বাষ্হের জন্য

ভাল আর সকালের হাওয়া গায়ে মাখলে

মনটাই ভাল হয়ে যায়।

আজ সমবার চর ভদ্রাসনে হাট। বৌদি মনাইকে চর ভদ্রাসনে পাঠাতে চেয়েছে।

মনাই দাদা আসবে কি, না মনে নেই। 

এমন সাত পাঁচ ভাবনা গুলো খুড়ে খাচ্ছে

নবনীতাকে। 

    বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা মনাইদার কোন খোজ নেই।

ভাগ্যের নীল আকাশে কখন মেঘ বা বৃষ্টি কিছুই বুজার উপায় নেই।

 

পথ চেয়ে নবনীতার দিন কেটে গেলো।

বৌদি মৃন্ময় দেবিও খবর নিতে পারে নাই। 

আইক ভাঙ্গানোর মৌসুম, অনেক কাজের লোক তাহাদের ভাত রান্নার কাজ

মৃন্ময় দেবীর । বাড়ির সকলের আহার যোগার করাই তার দায়িত্ব। 

    নবনীতার মুখ শূকিয়ে চোখের নিচে 

কালচে দাগ টেনে যাচ্ছে।

সারাদিন পেটে কোন দানা পরে নাই।

কাজ শেষে মৃন্ময় দেবী ঘরে ফিরলো সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলে। 

নবনীতাকে দেখে বুজে ফেললো কোন অন্য তাহার পেটে পড়ে নাই।

বাহিরে আযানের ধ্বনি হচ্চে মাগরীপের

সময় বয়ে যায়। ওলু আর কাসার শব্দের

সাথে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলে দিনের সমাপ্ত

রচিলো।  

এমন সময় মনাই বাহির দরজায়,

বৌদি মনি বৌদি মনি বলে ডাকিয়া উঠিলো।

মৃন্ময় দেবী এই যে মনাই সাহেব আপনার এমন ব্যবহার আমার ভাল লাগিলো না।

 

তোমার সকালে আমার সাথে দেখা করার

কথা। 

সারাদিন কোন খবর নেই এখন সন্ধ্যা বেলা কি বলবে বলো।

বৌদি আমার প্রতি রেগে আছো, না এখনো মন খারাপ হয়নি, তবে হতে পারে।

আমাদের বাড়ির পাশে গোকুল দার ভিষন পেট খারাপ। 

শেষ রাতে গোকুল দাদাকে চর ভদ্রাসন হাসপাতালে ভর্তি করেছি বৌদি।

তাই কথা দিও কথা রাখতে পারেনি

আমাকে ক্ষমা করিও। 

নবনীতা না মনাইদা আমার একটু ও খারাপ লাগেনি তোমার প্রতি। 

তবে তোমার অপেক্ষায় ছিলাম বলে বড় একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ভিতর বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।

 

মনাই আমরা দরিদ্র মানুষ আমাদের প্রতি

মনোখুন্ন চলে না। 

আমাদের সাধ আছে ঠিকই কিন্তু সাধ্য নেই। দারিদ্রতার চিকন চুতায় বাধা আমাদের হাত পা।

 

এক বেলা ভাল খেতে হলে টাকা জমাতে হয়, বুজলে নবদিদি।

অশ্রু ভরা কন্ঠে নবনীতা এমন করে বলো কেন মনাই দা।

ভিতরে ভিতরে আমরা সবাই দারিদ্র। 

যার যত আছে তার আর ও বেশি লাগে। 

 

মনাই আগামীকাল দূপুরে আমাদের বাড়ি

তোমাদের নিমন্ত্রন দিদি।

বিশেষ একজন দাওয়াত করেছি ? বলেছে আসবে। 

 

নবনীতা যেন প্রান ফিরে পেলো। 

মুহুর্তের মাঝে শরীরে শক্তি ফিরে এলো।

 

মনাই কোনদিনই কান্না ভরা চোখে হাসি দেখেনি,আজ দেখার সৌভাগ্য হইলো।  

মনাই দা তুমি একটু দাড়াও আমি আসছি

বলে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করিলো। 

--------------------------------------------------

       চলবে


Azizur Rahman

38 בלוג פוסטים

הערות