অতৃপ্ত প্রেম
আজিজুর রহমান
বাড়ি ফিরতে আরও দেরি হল আরাফীর।
শীত কাল দিন ছোট! সময় যে পালিয়ে বেড়ায় সময়ের পথে। দূপুরে ঝাল মুড়ি আর চানাচুর ছাড়া কিছুই পড়ে নাই পেটে।
মোবারক বাড়ি ফিরতে হবে আরাফী, আমার ক্ষুদা লেগেছে বেশ। ঠিক আছে যাব চল বলে হাটা
শুরু করে দিলাম।
স্কুলের টিউবল থেকে হাত চেপে এক কল
পানি খেলাম দুজনে মিলে।
বাড়ি ফিরতে দিনের বিদায় সূচনা হয়ে গেল।
কিছুক্ষন পরই মাগরীবের আযান হবে মসজিদে।
মনের মধ্যে সুখের উস্নতা নিয়ে বাড়ি ফিরলো আরাফী। দুপুরে তেমন কিছু না খেয়েও
অনেকটা হাসি মুখ নিয়ে মাকে
বললো, আমার ক্ষুদা নেই মা।
মা দুপুরে না খেয়ে বলছিস ক্ষুদা নেই
বললেই হল। আগে হাত মুখ ধূয়ে আয়
আমি খাবার বাড়ছি।
আরাফী আর কথা না বারিয়ে মায়ের কথা
মত, টিউবল চেপে হাত মুখ ধূয়ে আসলো।
ইলিশ মাছ আর মিস্টি কুমড়ার জল দিয়ে
অনেক গুলো ভাত খেয়ে ফেললো।
মা এতো ক্ষুদা নিয়ে রাফী তুই বলিস আমার ক্ষুদা নেই। আমি মরে গেলে তুইও বাছবি না।
নিজের কথাটা বা চাওয়া এভাবে চেপে গেলে চলবে।
আরাফী মায়ের কথার কোন প্রতি উত্তর না করে বললো, মা তুমি মরে গেলে মনে হয় আমিও আর বাচবো না।
মা আরাফীর কথায় কেদে ফেললো। আচলে চোখের পানি মুছে বলে, বাবা পিতা মাতা চির দিন কারও
বেচে থাকে না ।
সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। আবার তুমি একদিন পিতা হবে। সে দিন তুমিও আমাদের মত চলে যাবে, এটাই দুনিয়ার নিয়ম।
আরাফী মায়ের কথায় কেদে ফেললো,মা
তুমি ছাড়া আমার যে কেউ নেই। তুমি চলে গেলে আমি কার কাছে যাবো, এই পৃথিবীতে আমার যে আর কেউ নেই মা !
মা আর কথা বলতে পারলো না। আরাফী তুই একদিন বুজবি, বলেই থেমে গেল।
আরাফী সেদিন মাঠে খেলতে গেল না।
বাড়ির সামনে বসার বেন্চ আছে,
সেখানেই বসে রইলো।
সন্ধ্যা হয়ে আসলো মসজিদে মাগরিবের আযান হয়ে গেল। ঘরে ঘরে সন্ধ্যা প্রদ্বীপ
জ্বেলে রাতের সূচনা হল। কর্ম ব্যস্ত মানুষ
গুলো ঘর মুখি হয়ে গেল।
সেদিকে আর খেয়াল নেই আরাফীর। জীবন বড় বৈচিত্রময় সকালের ভাবনার সাথে রাতের চিন্তার সাথে কোন মিল নেই।
মানব জীবন বড় পৈত্ত্বলিক সকালে যাকে
নিয়ে ভয় আর লজ্জা, সামনে যাওয়া সাহস হত না। আবার সন্ধ্যা নামার আগেই সেই তাকে ভাল বাসায় মন ভরিয়ে দেয়। এ কেমন বিশ্ব প্রলয়, নিজ সত্বাকে বিলিয়ে দেয় আপন ভুবনে। ভাল বাসার শক্তি দিয়ে কি সংসার গড়েছে বিশ্বাসের মুল ভিত্তি দিয়ে। মেরি আমার রক্তের কেউ নয়
তবুও এত আপন মনে হয়। মনে হয় আমার সকল চাওয়া, রাগ অভিমান আদর ভাল বাসা সব কিছু যেন একটি মুখের কাছে এসে থেমে গেছে। সত্যি কথা
পথের মাঝে পথ হারালে। পথ খুজে পাওয়া যায় না। জীবনের সুখ দুখ ভাল বাসার মানুষের কাছেই লুকায়।
পাখিরা সারাদিন উড়ে আর ঘুরে। কাদা জল মিশে খাদ্যের অন্নেসন করে। খোলা
আকাশ তার জন্য উম্মুক্ত থাকে। অসংখ্য
বৃক্ষ রাশির ডালে ডালে আনন্দের গান গেয়ে বেড়ায় আপন খেয়ালে।
শেষ বিকালে গোধূলী লগ্নে ফিরে যায়
আপন কূলার মাঝে। ফিরে যায় বিসস্ত সঙ্গীনির কাছে। নির্ভরতা আর আস্হা
মিলেই পরিপুর্ন জীবন চলতে পারে।
রাতের নিসত্বতা যেন নিবীড় আঙ্গিগনের
গ্রাস করে নিচ্ছিল আরাফীকে ।
মায়ের ডাকে নিরবতা ভঙ্গ হল আরাফীর।
মা এভাবে বসে থাকলে চলবে। পড়তে বস
হেরিকেন দরিয়ে দিয়েছি।
আরাফী আর কথা না বাড়িয়ে নিজের পরার রুমে পরতে বসলো। ততক্ষনে এশার আযান হয়ে গেছে। মা এশারের নামাজ শেষ করে, ভাত খেতে ডাকলো।
আরাফী আমার ক্ষুূদা নেই মা।
ক্ষুদা নেই বললেই হবে, আগে খেয়ে নাও
তার পর আবার পড়তে বস।
আরাফী কথা না বাড়িয়ে মায়ের কথা মত
খেতে বসলো।
মা রাতে না খেলে অসুখ বাধবে, অল্প কিছু
হলেও খেতে হয় বাবা।
ধীরে ধীরে রাত গভীর হতে লাগলো। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে কিছু মানুষের
কথার আওয়াজ পাওয়া যায়। কথা বলতে বলতে বাড়ি ফিরছে হয়তো।
মেরির দেওয়া চিঠি এখনো পড়া হয় নি।
রাত আরও গভীর হতে লাগলো, ডাইরীর
ফাকে লুকিয়ে রাখা ছিল। মনের মধ্যে কৌতুহুল পড়ে ফেললেই তো আনন্দ শেষ
এমন ভাবনাটাই ছিল মনে।
গভীর রাত কোন শব্দ নেই কোথাও। মাঝে
মধ্যে গাছের পাতা পড়ে তার শব্দও শুনতে পাই।
ঝিঝি পোকাড়া সুর তুলে আপন খেয়ালে ।
দূরে কোথাও শোনা যায় ক্ষুদার্থ কুকুরের করুন চিৎকার। এমন মহিনীয় নিরব রাত সাথে জেগে আছি আমি আর মেরির দেওয়া চিঠি খান নিয়ে ।
বিবেকের দাহু আমাকে সর্বক্ষন গ্রাস করে চলছে।
তখন আমাকে অনেকটা অসহায় মনে হয়ে ছিল ।
বাবার কথা বেশ মনে পড়েছিল। মা ছাড়া আমার আপন কেউ নেই, বড় ভাই আছে সংসার চালাই, এর নিজেকে বড় বুজা মনে হয়। তার পর। মেরির ব্যাপার জানা জানি হয়ে গেলে,
দাড়াবার জায়গা কোথায় ?
সাত পাচ অনেক ভাবনাই তখন মাথার
মাজে গুরপাক খাচ্ছিলো।
সময় কি বয়ে থাকে, চলছে আপন গতি নিয়ে। রাত তখন গভীর, সবাই ঘুমে শুধু আমি একা জেগে আছি বাড়িতে।
সব ভাবনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত,
মেরির দেওয়া চিঠি হাতে লইলাম।
পড়তে আরম্ভ করলাম।
প্রিয় ---
ভাল বাসা,, কেমন আছো জানিনা।
তবে ভাল বাসি বলে তোমাকে আমার এ
লেখা। অনেক ভেবেছি তোমাকে নিয়ে।
আবার ভুলতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারেনি
সে আমার ব্যর্থতা। এখানে তুমিই জিতে গেলে আর আমি নিজেই হেরে গেলাম।
তোমার ভালো বাসার কাছে। জানি ভালো
বাসার মাঝে বাধা আছে, সে আমি মানিয়ে
নিতে পারবো যদি তুমি থাক শক্ত করে আমার পাশে। জানি প্রতিটি ভাল বাসার মাঝে বিশ্বাস নামক শব্দটি না থাকলে, প্রেম মূল্যহীন হয়ে যায় দুজনার মাঝে।
পথের শেষ কোথায়,,,? জানি কেউ,,,
না জানি না। তবুও হাটছি বিশ্বাস নিয়ে।
একদিন শেষ হবে হয়তো।
আমি সেই বিশ্বাস বুকে নিয়েই পথ চলি।
এমন ভাবনা ঘুরপাক খায় মনের মাঝে।
উপলদ্ধি এমন এক বিষয় যা নাকি, হৃদয়
মাঝে আপন আলয় শুধু দ্বীপ শিখার মত।
প্রানের স্পন্ধন সৃষ্টি করে তোমাকে আরও
আপন করে কাছে পেতে স্বাদ জাগায়।
সব মিলিয়ে ভাবনার কি শেষ আছে ।
হেরে গেলাম বা জিতে গেলাম এ ভাবনা এখন
মনে ঠাই পায় না। শুধু মন চায় সারাক্ষন
তোমাকে দেখতে পারতাম।
ভাল বাসা আসলে কি। সে এক অদ্ভূধ
অনুভুতি। একটু সময় পেলেই তোমাকে নিয়ে ভাবি। ভাল লাগে তোমাকে নিয়ে ভাবতে। শিহরণ জাগে মনে অদৃশ্য সুখ গুলো আমাকে মাতিয়ে রাখে সারাক্ষন।
আমি কোন দিন বুজিনি ভাল বাসার মাঝে এত সুখ লুকিয়ে আছে।
তোমার ঐ নেশা ধরা চোখ তো আমায় পাগল করে দিবে। কি মহনী সুখ যে লুকিয়ে আছে, তোমার দুটি চোখের গভীরে আমি জানি না।
শুধু বলতে পারি আমি তোমাকে ভাল বাসি মন থেকে। কথা নাইবা হল পথে দেখা যেন হয় প্রতিদিন। আমি একদিন তোমাকে না দেখতে পারলে, আমার মনে হয় আমি মরে যাব।
তুমি ভাল থেক, আমার ভাল বাসা নিয়ে।
অনেক রাত হয়ে গেছে।
আজ রাখি,,, শুভ রাত্রি,,,
মেরি
সে দিন আমি সারা রাত ঘুমায়নি। ঘুম আমার কাছ থেকে ফাকি দিয়ে ছিল জামান। পিতা মৃত্যু তার পর পড়ালেখা করছি বড় ভাই এর খরচে। মেঝ ভাই সবে মাত্র সৌদি আরব গেছে। বড় ভাই ব্যবসা
আর মেঝ ভায়ের বিদেশী টাকা দিয়ে সংসার ভালই চলছিল। অভাব তেমন না থাকলেও আমার ভয় ছিল প্রচুর।
ভাল বাসার সুখ আর দারিদ্রতার ভয় এক সাথে বয়ে বেড়ায়ছি অনেক দিন।
মেরি ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আমার কোন দিনই ছিল না। ভাগ্য এখন দূরে নিয়ে গেছে জামান এখানে মুলত কাউকে
দোষ দেওয়া যায় না।
জামান সত্যি কথা বলতে কি আরাফী।
সময়ের সাথে সঙ্গ মিলিয়ে ভাল বাসা হয় না। যখন ভাল বাসা আসে তখন কাছের মানুষ গুলো সব চেয়ে বেশি বিদ্রোহ করে। মেনে নিতে পারে না সহজ সরল অবুজ দুটি মনের মিলন। যে মানুষ সারা জীবন ঘর করবে, তাদের পছন্দের কোন দাম নেই।
অচেনা কাউকে ধরিয়ে দিবে জীবনের সাথে। বহিরাগত সামাজিক দৃষ্টি মিলনের
সৃষ্টি করে দিলেও মনের মিল হল কিনা।
সে দিকে ভ্রক্ষেপ নেই।এ সমাজ পারে শুধু
দুটি দেহের এক ঘরে থাকার সামাজিক স্বৃতি দিতে।
হেরে যাওয়া জীবনের বিজয় এনে দিতে পারে না?
পারে শুধু জীবন্ত মানুষকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিতে !এখানে সম্পর্ক হয় মনের নয়
দুটি দেহের। তাই প্রতিটি মেয়ে বিয়ের সময় চোখের জলে বির্জন দেয় তার ভাল বাসাকে বন্ধু। আবার কখন দেখা হয়ে ছিল আরাফী।
তখন শীত কাল পরিক্ষা শেষ। পড়া লেখা নিয়ে তেমন ব্যস্ত ছিলাম না।
---------------------------------------------------------
চলবে