স্মৃতির প্রহর
আজিজুর রহমান
২৫তম পর্ব গাজীপুর
রাত আট্টা বেজে পনেরো মিনিট হবে ঝর্না বাস সোনালী ব্যাংকের সামনে ষ্টেশনে গাড়ী ব্রেক হল।
সময়ের গন্ডি পেরিয়ে সময় হল ঘরে ফিরে যাবার পালা
তাই মন না চাইলেও ফিরে আসিতেই হবে !
একটা আকাশ, একটাই পৃথিবীতে সব মানুষের বসবাস। নিয়তী না চাইলে বেশিক্ষন পাশাশপাশি
থাকা যায় না।
সেই অনাদীকাল থেকে মানব জাত প্রেম আসক্ত
হৃদয় নিয়ে পৃথিবীতে জন্ম গ্রহন করে থাকে।
সমাজ রীতি বৈশম্ভের পথ বেয়ে চলতে চলতে
অতিসাধারন ঘরেই প্রেমের বীজ বুনে।
অতি আদরের বলে হাসানকে নিয়ে বাড়ির
সবার একই প্রশ্ন সারাদিন কোথায় ছিলি বা দূপুরে
কি খেয়েছো।
হাসান মা দপুরে দাওয়াত খেয়েছি হাজি গন্জ
মনাই দার বাড়িতে।
ঐ যে একদিন এসেছিল হাটের দিন দূপুরে খাবার খেয়েছিল !
ওর বাবা নেই দুই ভাই এক বোন আর মা নিয়ে সংসার । ওরা সবাই কেমন আছে, আর একদিন নিয়ে আসিশ।
রাতে না খেয়ে ঘুমায়ও না বুজলি হাসান
জি মা বলে নিজের রুমে প্রবেশ করিলো।
নবনীতার হতে বিদায় লইয়া মন কিছুতেই শান্ত হইতে ছিল না। পৃথিবীর এ কেমন নিয়ম নীতি
ভালবাসা বা প্রেম এক সূতায় বাঁধা কিন্তু দুইটি বিষয়ই আলাদা অনুভূতি।
সেই যায় হোক রাতে না খেয়ে ঘুমানোর কোন পথ
নেই জেনে ও না খাওয়ার জন্য তোশামোদ করলো
হাসান।
অবশেষে মায়ের হাতে মাখানো ভাত খেয়েই নিস্তার
পেল।
প্রতিটি মানুষের ভাল বাসার মুল মন্ত্র / উৎস হল মা বাবা। তবে এখানে এই কথাটা না বললে অসম্পূর্ন থেকে যায়, কেউ আপন হয় রক্তের আবার
কেউ হয় ভাল বাসা দিয়ে সম্পর্ক করে থাকে।
ভালবাসা বা প্রেম এটা নাটকীয় কোন বিষয় না।
ইহা মূলত উপর হইতে নির্ধারন হইয়া থাকে।
জীবন প্রষার নদীর মতই ভাটির জলেই খেলা করে।
কখনো কূল কখনো গভীর জলের অজানায় ভাসে। পরিনীত বয়সে কখনেই ভাল বাসা ছুঁয়ে দেখে না, তবু না বুজে অন্তরীক্ষ ভাল বাসা মানুষের বুকের ঠিক মাঝ খানে ঘর বাঁধে। পৌষের শীত বা বসন্তের ঝড় কোনটাই ছুঁতে পারে না , যতই আঘাত কর না তুমি আর মজবুত হয় ভাল বাসা ।
সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে জীবন থেকে।
শুক্লা তিথীর বসন্ত পেরিয়ে বর্ষা ঘরের দার প্রান্তে দাড়িয়ে আছে। কদমের পাঁপড়ী ছুঁয়ে জল খসে পরে
টিনের ঘরের চালায়। দক্ষিনা বাতাস বইছে সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি।
মেঘ থেকে খসে পড়া বিন্দু জল ই বৃষ্টি নামে ঝরে পরে।
জীবন অলৌকিকতায় পূর্ন বলেই দেখা হল নবনীতা।
কতবার গিয়েছি গদাধর ডাংগী তার হিসেব নেই নবনীতা। নদী ভাঙ্গনের শব্দ শূনা যায়, কিন্তু এই মন ভাঙ্গার শব্দ কেউ শূনে না। তোমাদের বাড়ীর উঠানে
মন্দীর ঘরের সাথে যে আম গাছটি ছিল তাহার তলে
বসে পদ্মা নদীর স্রোত দেখিছি, শূনিছে বিরহের কান্না।
মনাইদের বাড়ী ভেঙ্গেছে ওরা কোথায় গিয়েছে খুজে পায় নি আমি।
গেলোবার হাজীগন্জ হাটে মনাই এর মার সাথে দেখা হল। সুন্দর মানুষ শরীরে কোন মাংস নেই
আমায় দেখে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো। বললো
বাবা কেমন আছো ? চোখের জলে বুক ভাসালো, এ জীবনে যে তোমার সাথে আবার দেখা হবে কখনই ভাবিনি বাবা। প্রবল হাওয়া তার সাথে বৃষ্টি
ঝড়ছে, বাড়ীর চারপাশ পানি আর পানি। এর মধ্যে
ঘরে প্রদীপ জ্বেলে নবনীতারা বাড়ী ছেড়ে কোথায়
যেন চলে গেছে। রাস্তার ধারে দুই একটা বাড়ী ছিল
না বলে চলে গেছে। বাবা হাসান জীবন এমন অসহায় হয়ে উঠবে তা কখনই ভাবিনি।
যৌবনের পটভূমি পার হতে না হতেই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়লো। তিন সন্তান নিয়ে আমার
ছোট সংসার।
বড় সন্তান মনাই তখন অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র, শরীর থেকে যৌবনের ছায়া তখনো কাটেনী। সমাজ নানা রকম দোষারোপ করতে থাকে আমাকে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য, রাস্তা মেরামত কাজে যে কটা টাকা
পাই এতে কষ্ট করে সংসার চললেও মনার পড়া লেখার খরচ চালাতে অক্ষম হয়ে পরি।
আমাদের অনেক আদরের সন্তান এই মনা। যৌবনের শিড়দ্বারে ভালবাসার মন্চে যে কটা সুখের রজনী কাটিয়েছি আমি তাহারই উপহার সরুপ আল্লাহুর দেওয়া শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হল মনাকে আমাদের
ঘরে পাঠিয়েছে।
ভালবাসা বেশিদিনের জন্য নয় হাসান, আমি সেদিন
বুজেছি। মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মত আল্লাহুর দেওয়া
নেওয়ামত সরুপ আর দুটি সন্তান দান করিলো।
ভিতরে ভিতরে রোগ পুষছিল মনার বাবা। ছোট ছেলেটা যখন তিন বছর হবে, মনার বাবা না বলে চলে গেলো সংসারের সকল দায়িত্ব আমাকে দিয়ে।
ভালবাসার মুল্য দিতে গিয়ে আজও জ্বলছি জীবন সংগ্রামে।
গরিবে সুখ বেশি দিন সয় না, চোখের জল আচঁলে মুছে, পুরাতন কষ্ট গুলো নতুন করে জাগিয়ে কি লাভ হাসান।
স্মৃতি কখনই মুছে যায় না কাকিমা। যদি আর কোন দেখা না হয় পথের বাঁকে, পথ যদি শেষ হয় জীবনের সাথে। তবে স্মৃতি গুলো থাকবে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্ভন হয়ে।
আর হাঁ এখন মনাই কি করছে কাকিমা ?
মনাই জয়পাড়া রিকশা চালায় , মেয়েটা বিয়ে দিয়েছি। ছোট ছেলেটাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছি। এখন একার সংসার শক্রুবার ছোট ছেলেটা আসবে তাই বাজার করতে এসেছি ইলিশ মাছ খাবে তাই।
এখনো কিনতে পারিনি ইলিশ মাছের অনেক দাম।
জি কাকিমা আপনি একটু দাাঁড়ান এই বটতলায়।
দ্রুত পা চালিয়ে হাসান মাছ বাজারে, দুটি মাজারী সাইজের ইলিশ ক্রয় করিলো এবং কিছু মোটা ডাটা
কিনে বটতলার দিকে হাটতে শুরু করিলো।
দারিদ্রতার চেয়ে সুখ কোথায় আছে কি ।
হাসান তোমার কাছে ঋনি হয়ে গেলাম।
ঋনি বলে আমাকে লজ্জায় ফেলবেন না।
কত দিন পর দেখা, নদীর ভাঙ্গুনে কত চেনা মুখ
হারিয়ে গেছে। আজ ও খুজি তাহাদের, যারা এই বুকে ঘর বেঁধে বসত সেই আদিকাল থেকে।
নদী ভাঙ্গনের রুপ আমি দেখেছি বাবা, নদী খালি
ঘর বাড়ি ভাঙ্গেনী, ভেঙ্গেছে অনেক স্মৃতির মঞ্চ।
-----------------------------------
চলবে