জীবনের গল্প

আজিজুর রহমান
আমাদের হাই স্কুল

"পুরানো সেই দিনগুলো"

জন্মের সময়টা ছিল ১৯৬৩-৬৪সাল। সেই থেকে ১৯৭২ সাল ৮ বছর পেরিয়ে , হ্যাঁ, জ্ঞান হবার পর আজ থেকে ৫৪ বছর আগের কথা বলছি।

 

তখন পুকুর ভরা মাছ,গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান ছিল। ১ টাকায় থলে ভর্তি বাজার পাওয়া যেত। ১ টাকায় সোয়া সের চাল পাওয়া যেত, ১ টাকায় ৭-৮ সের লবন পাওয়া যেত। মাত্র ৫০০ কিংবা হাজার টাকায় বিঘা বিঘা জমি কেনা যেত। 

 

রাস্তাঘাট, শহর এত উন্নত ছিল না। টিভি, ইন্টারনেট, টাচ মোবাইল বা কম্পিউটার ছিল না। খবরাখবর ও মনের ভাব চিঠির মাধ্যমে আদান প্রদান হত। আজ যদি চিঠি পোষ্ট হলে, সেই চিঠি পৌঁছাতে সময় লাগত ১৫ থেকে ২০ দিন। কারো সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করতে হতো অনেক দিন।

 

মা-বাবা,দাদা-দাদি,চাচা-চাচি, ভাই-বোন সহ সকলে মিলে একান্নবর্তী পরিবার। পাড়া-প্রতিবেশী'দের সঙ্গে ছিল গভীর সম্পর্ক। নানা-মামা, ফুফুর বাড়িতে ছিল যাওয়া আসা। একজনের সুখে-দুখে সবাই পাশে থাকতো। কতই'না মধুর ছিল দিনগুলো।

 

কে কেমন আছে, কার বাড়িতে কী ঘটছে—সব খবরই থাকত জানা। মানুষ ছিল কম, আন্তরিকতা ও ভালোবাসা ছিল বেশি।

 

সেই থেকে ৬১ বছর পেরিয়ে ২০২৫ এ। আমাদের হাতে এখন মোবাইল আছে, কম্পিউটার আছে, ল্যাপটপ আছে, টিভি আছে। ইন্টারনেটের যুগে আমরা বাস করছি—তথ্যের সীমাহীন জগতে। কিন্তু কি নেই আমাদের? 

 

আজ শহর নগর কত উন্নত। পাড়ার মানুষটার নাম জানি না, পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা রয়ে যায় অপরিচিত। বাড়ির পাশেই কে অসুস্থ, কার মৃত্যু হলো তাও খবর নেই। সম্পর্কের গভীরতা কমেছে, আত্মীয়তা হয়ে পড়েছে শুধুই আনুষ্ঠানিকতা নির্ভর। বন্ধুত্ব হয়ে পড়েছে নেহায়েত হাই হেলো'তে সীমাবদ্ধ । পৃথিবী যত আধুনিক হচ্ছে, সম্পর্কগুলো ততই দূরে সরে যাচ্ছে।

 

আজ, বাজার ভরা জিনিসপত্র, কিন্তু ভেজালে ভরপুর। বিশ্বাস এমন ভেঙে গেছে যে, নিজের রক্তের সম্পর্কেও এখন ঘুন ধরেছে। সবাই যেন একা থাকতে ভালোবাসে। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, কেউ কারো খবর নেওয়ার যেন সময় নেই। 

 

একটু ভাবুন, আমি আর আপনি আসলে কোথায় আছি? আমরা কি শুধুই প্রযুক্তির সাথে এগিয়েছি, নাকি মানবিকতাকে ফেলে এসেছি বহু পেছনে?

 

সময় বদলেছে, কিন্তু হৃদয়ের উষ্ণতা কি ততটাই বদলেছে? জানি না লেখাটা কিভাবে শেষ করবো। 

 

তবুও সবাই যেন ভাল থাকে, সুখে-শান্তিতে থাকে এই কামনা করি।


Azizur Rahman

48 ब्लॉग पदों

टिप्पणियाँ