যে জলে আগুন জ্বলে"
আজিজুর রহমান
সন্ধ্যার অন্ধকারে একা বসে আছি আমি
হাতে কবিতার বই — “তোমার গন্ধ পাই বাতাসে,”
আকাশে নক্ষত্রগুলো হেলাল হাফিজের ভাষা হয়ে ওঠে,
ঝর্ণার ধ্বনিতে আমি শুনি প্রেম ও বিদ্রোহের একাত্মতা।
পৃথিবীটা হঠাৎ কেমন থমকে দাঁড়ায় —
একটি চিরকুট পড়ে থাকে কদম ফুলের পাতায়,
লেখা থাকে —
"যে জলে আগুন জ্বলে, সেখানে আমি স্নান করেছি
আর সেই আগুন দিয়েই প্রেমের ছায়া এঁকেছি।"
আমি হেঁটে যাই কুয়াশার ধূসর দুপুরে,
বৃষ্টিভেজা বৃক্ষের ডালে আমি দেখি
হেলালের একাকীতা দাঁড়িয়ে আছে চোখে সিগারেট-ধোঁয়া;
এক হাতে প্রেম, আরেক হাতে বিষণ্নতা,
এই দুইয়ের মাঝে কবিতা গড়ে তোলে নিজের নিঃশ্বাস।
জীবনের প্রতিটি অলিন্দে আমি খুঁজি তাঁকে —
চায়ের দোকানের কোণে, নিঃসঙ্গ ক্যানভাসে,
সাঁঝের রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই অপেক্ষার মুখে,
যেখানে কবি লিখে গিয়েছেন —
"আমি এখনো তোমার প্রেমে পুড়ি,
যদিও জানি, তুমি ফিরবে না।"
কখনও তিনি একটি বিপ্লব হয়ে আসেন —
রক্তে লেখা একটি কবিতা হয়ে
বুলেট আর বৃষ্টি ভেদ করে পৌঁছান ছাত্রাবাসে।
তিনি বলেন —
"এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার সময় তার,"
আর আমি সেই লাইনকে বুকে আগুন বানিয়ে নিই,
একটি নতুন সকালকে বাঁচবার আশ্বাস দিই।
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আমি বসি,
শাড়ির ছাঁট বাতাসে ভেসে আসে প্রেমিকার গন্ধে —
হাতের পাতায় ধরা হেলাল হাফিজের বই,
আর বুকের ভেতর,
তাঁর শব্দেরা হয়ে ওঠে আমার হৃদয়ের স্পন্দন।
আমি জানি, কবি হেলাল শুধু নাম নয় —
একটি যন্ত্রণার রক্তাক্ত গদ্য,
একটি অসমাপ্ত চিঠির অপেক্ষা,
একটি হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকার ঠোঁটের তাপ।
তিনি প্রেম করেন, অথচ নিঃসঙ্গ —
তাঁর কবিতায় প্রেম আছে, কিন্তু পাওয়া নেই।
আজও সন্ধ্যার ছায়ায় আমি বসে আছি,
দূরে বাজছে এক ভাঙা হারমোনিয়াম —
চাঁদের আলোয় আমি দেখি কবি আসছেন
ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরে, চোখে মুগ্ধ বিষণ্নতা।
তিনি চুপচাপ বসে পড়েন আমার পাশে,
বলেন না কিছু — শুধু বাড়িয়ে দেন তাঁর বই,
আর আমি জানি, এই নীরবতা-ই এক মহাকাব্য।