একদিন শেষ হবে সব অপেক্ষা
আজিজুর রহমান
------------------------------
ফেলে আসা অতীতের দিকে তাকালে সেখানে দেখি শুধু অপেক্ষা, ধূসর ম্লান অপেক্ষা।
আজ জীবনের এতকাল পেরিয়ে গেছে, তবুও অপেক্ষারা আজও আমাকে নিবিড়ভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে।
অপেক্ষারা আজও আমার পিছু ছাড়ে না।
আজ মনে পড়ে সেই সোনালি শৈশবের কথা।
শৈশবের কথা মনে হতেই চোখে ভেসে আসে এক স্বপ্নীল, আশ্চর্য, বিমুগ্ধকর পৃথিবীর ছবি।
অজানাকে জানার আনন্দে আমি তখন হতাম বিস্ময়বিহ্বল, পুরো পৃথিবীটাই তখন ছিল অপার বিস্ময়ে ভরা।
সেই বিস্ময়ভরা পৃথিবীর তুলনায় আমি ছিলাম খুবই ছোট, তার জন্য দরকার তাড়াতাড়ি বড় হওয়া।
যে করেই হোক পুরো পৃথিবীটাকে হাতের মুঠোয় পুরতে আমাকে তখন তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার ঘোর নেশায় পেয়ে বসল, আর শুরু হলো বড় হওয়ার জন্য অপেক্ষার পালা।
আজ আমি অনেক বড় হয়েছি, কিন্তু শৈশবের সেই বিস্ময়ভরা পৃথিবীটা আজ আর নেই, হারিয়ে গেছে কবেই সেই স্বপ্নীল ভুবনটা।
শৈশবের সেই পৃথিবীতে আর ফেরা যায় না।
যৌবনে পদার্পণ করার পর সবার মতো আমারও 'মানুষ হওয়া'র নেশায় পেয়ে বসল, সে এক ঘোর নেশা।
সমাজের চারপাশ আর বাবা-মা আমার মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিল সেই 'মানুষ হওয়া'র নেশা।
বাবা বলতেন তোকে যে করেই হোক ডাক্তার হতে হবে, মা বলতেন তোকে হতে হবে সরকারি আমলা।
একবার মানুষ হতে পারলে টাকা-কড়ি আসবে, সেইসাথে চারপাশের মানুষের প্রশংসাও কুড়ানো যাবে।
শুরু হলো আমার নতুন অপেক্ষা, সমাজের গৎবাঁধা 'মানুষ হওয়া'র জন্য অপেক্ষা।
'মানুষ হওয়া'র অপেক্ষায় বুঁদ হয়ে থাকতে থাকতে আমি বিসর্জন দিয়েছি আমার যৌবনের আগুন-ছোঁয়া স্বর্ণালি সময়; শেষে কিছুই হতে পারিনি, হতে পারিনি ডাক্তার, হতে পারিনি কোনো আমলা।
নিষ্ফল কেটে গেছে জীবনের কতটা সময়।
তবে অপেক্ষার ঘোর আমাকে আজও ছাড়ে না।
জীবনভর আমি অপেক্ষা করেছি কোনো নারীর হৃদয় থেকে উৎসারিত বিশুদ্ধ ভালোবাসার, কিন্তু পাইনি, তবুও আমার বিশ্বাস একদিন পাব।
অপেক্ষার প্রহর তাই আমার ফুরায় না, আজও অপেক্ষাকে হাতের মুঠোয় পুরে আমি পথ চলছি।
জীবনের এই গোধূলিলগ্নে এসে শেষে বুঝেছি, জীবন আসলে অপেক্ষা।
একটির অপেক্ষার পালা শেষ হতেই শুরু হয় অন্য এক অপেক্ষা।
মানুষের জীবনে অপেক্ষা কখনো ফুরোয় না।
জীবন শেষ হয়ে একদিন মৃত্যু এলে শেষ হবে সব অপেক্ষা।