جهاد জিহাদ‎

যারা আমার উদ্দেশ্যে জিহাদ করে আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। সুরা আনকাবুত-এর ৬৯

হাসান ইবনু সাববাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোন কাজ সর্বোত্তম? তিনি বললেন, ‘সময় মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। আমি বললাম, ‘তারপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ। ’ তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে আমি চুপ রইলাম। আমি যদি (কথা) বাড়াতাম তবে তিনি আরো অধিক বলতেন।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৫৯২

 

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘(মক্কা) বিজয়ের পর আর হিজরত নেই। বরং রয়েছে কেবল জিহাদ ও নিয়্যাত। যদি তোমাদের জিহাদের ডাক দেওয়া হয়, তা হলে বেড়িয়ে পড়। ’

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৫৯৩

 

মূসা’দ্দাদ (রহঃ)আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি, তবে কি আমরা জিহাদ করব না?’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হচ্ছে মকবুল হাজ্জ (হজ্জ)। ’

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৫৯৪

 

ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, আমাকে এমন কাজের কথা বলে দিন, যা জিহাদের সমতুল্য হয়। তিনি বলেন, আমি তা পাচ্ছি না। (এরপর বললেন,)তুমি কি এতে সক্ষম হবে যে, মুজাহিদ যখন বেরিয়ে যায়, তখন থেকে তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে এবং দাঁড়িয়ে ইবাদত করবে এবং (এতটুকু) আলস্য করবে না, আর সিয়াম পালন করতে থাকবে এবং সিয়াম ভাঙ্গবে না। লোকটি বলল, তা কার সাধ্য? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘মুজাহিদের ঘোড়া রশিতে বাঁধা থাকা অবস্থায় ঘোরাফেরা করে, এতেও তার জন্য নেকি লেখা হয়। ’

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৫৯৫

 

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা করা হল, ‘ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মানুষের মধ্যে কে উত্তম? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সেই মুমিন যে নিজ জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। ’ সাহাবীগণ বললেন, তারপর কে? তিনি বললেন, ‘সেই মুমিন যে, পাহাড়ের কোন গুহায় অবস্থান করে আল্লাহকে ভয় করে এবং নিজ অনিষ্ট থেকে লোকদেরকে নিরাপদে রাখে। ’

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৫৯৬

 

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর পথের মুজাহিদ, অবশ্যই আল্লাহই অধিক জ্ঞাত কে তাঁর পথে জিহাদ করছে, সর্বদা সিয়াম পালনকারী ও সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কারীর ন্যায়। আল্লাহ তাআলা তাঁর পথের মুজাহিদের জন্য এই দায়িত্ব নিয়েছেন, যদি তাকে মৃত্যু দেন তবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা পুরস্কার বা গানীমতসহ নিরাপদে ফিরিয়ে আনবেন।

হাদিস নাম্বার - ২৫৯৭

 

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হারাম বিনত মিলহান (রাঃ)-এর কাছে যাতায়াত করতেন এবং তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে খেতে দিতেন। উম্মে হারাম (রাঃ) ছিলেন, উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ)-এর স্ত্রী। একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে তাশরীফ নিয়ে গেলে তিনি তাঁকোহার করান এবং তাঁর মাথার উকুন বাছতে থাকেন। এক সময় রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি হাসতে হাসতে ঘুম থেকে জাগলেন। উম্মে হারাম (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাস করলাম, ‘ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! হাসির কারণ কি?’ তিনি বললেন, ‘আমার উম্মাতের কিছু লোককে আল্লাহর পথে জিহাদরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হয়। তারা এ সমুদ্রের মাঝে এমনভাবে আরোহী যেমন বাদশাহ সিংহাসনের উপর অথবা বলেছেন, বাদশাহর মত সিংহাসনে উপবিষ্ট। ’ এ শব্দ বর্ণনায় ইসহাক (রহঃ) সন্দেহ করেছেন। উম্মে হারাম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন যেন আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। ’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দু‘আ করলেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার মাথা রাখেন (ঘুমিয়ে পড়েন)। তারপর হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার হাসার কারণ কি?’ তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে থেকে আল্লাহর পথে জিহাদরত কিছু লোককে আমার সামনে পেশ করা হয়। ’ পরবর্তী অংশ প্রথম উক্তির মত। উম্মে হারাম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন, যেন আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি তো প্রথম দলের মধ্যেই আছ। তারপর মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ)-এর সময় উম্মে হারাম (রাঃ) জিহাদের উদ্দেশ্যে সামুদ্রিক সফরে যান এবং সমুদ্র থেকে যখন অবতরণ করেন তখন তিনি তাঁর সওয়ারী থেকে ছিটকে পড়েন। আর এতে তিনি শাহাদত বরণ করেন।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৫৯৮

 

ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর প্রতি যে ঈমান আনল, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল ও রমযানের সিয়াম পালন করল সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয় জন্মভূমিতে বসে থাকুক, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূল আল্লাহ আমরা কি লোকদের এ সুসংবাদ পৌঁছে দিব না? তিনি বলেন, আল্লাহর পথে মুজাহিদদের জন্য আল্লাহ তা'আলা জান্নাতে একশটি মর্যাদার স্তর প্রস্ত্তত রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের দুরত্বের ন্যায়। তোমরা আল্লাহর কাছে চাইলে ফেরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হল সবচাইতে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। আমার মনে হয়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ-ও বলেছেন, এর উপরে রয়েছে আরশে রহমান। আর সেখান থেকে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে। মুহাম্মদ ইবনু ফুলাইহ্ (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে (নিঃসন্দেহে) বলেন, এর উপরে রয়েছে আরশে রহমান।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৫৯৯

 

মূসা (রহঃ) সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি আজ রাতে (স্বপ্নে) দেখতে পেলাম যে, দু’ব্যাক্তি আমার নিকট এল এবং আমাকে নিয়ে একটি গাছে উঠলো। তারপর আমাকে এমন সুন্দর উৎকৃষ্ট একটি ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিল; এর আগে আমি কখনো এর চাইতে সুন্দর ঘর দেখিনি। সে দু’ব্যাক্তি আমাকে বলল, এই ঘরটি হচ্ছে শহীদদের ঘর।

হাদিস নাম্বার - ২৬০০

 

মুআল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হইতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তাতে যা কিছু রয়েছে, তা থেকে উত্তম।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬০১

 

ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান, তা(পৃথিবী) থেকে উত্তম জার উপর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা সূর্যের উদয়াস্তের স্থান(পৃথিবী)-এর ছাইতে উত্তম।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬০২

 

কাবীসা (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার সকল কিছু থেকে উত্তম।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬০৩

 

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কোন বান্দা এমতাবস্থায় মারা যায় যে, আল্লাহর কাছে তার সাওয়াব রয়েছে তাকে দুনিয়াতে এর সব কিছু দিলেও দুনিয়াতে ফিরে আস্তে আগ্রহী হবে না। একমাত্র শহীদ ব্যাতীত। সে শাহাদাতের ফযিলত দেখার কারণে আবার দুনিয়াতে ফিরে এসে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার প্রতি আগ্রহী হবে। রাবী হুমাইদ (রহঃ) বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে এ কথাও বর্ণনা করতে শুনেছি যে, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল অথবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও এর সব কিছু থেকে উত্তম। তমাদের কার ধনুক কিংবা চাবুক রাখার মত জান্নাতের জায়গাটুকু দুনিয়া ও এর সব কিছু থেকে উত্তম।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬০৪

 

আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি বলতে শুনেছি যে, সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, যদি মুমিনদের এমন একটি দল না থাকত, যারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করে না এবং যাদের সকল সওয়ারী দিতে পারবনা বলে আশংকা করতাম, তা হলে যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছে, আমি সেই ক্ষুদ্র দলটির সঙ্গী হওয়া থেকে বিরত থাকতাম না। সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, আমি পছন্দ করি আমাকে যেন আল্লাহর রাস্তায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, এরপর শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়। তারপর জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়।

হাদিস নাম্বার - ২৬০৫

 

ইউসুফ ইবনু ইয়াকুব আস সাফফার (রহঃ)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মুতার যুদ্ধে সৈন্য প্রেরণের পর) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবা দিতে গিয়ে বলেন, যায়দ (রাঃ) পতাকা ধারন করল এবং শহীদ হল, তারপর জাফর (রাঃ) পতাকা ধারন করল, সেও শহীদ হল। তারপর আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) পতাকা ধারন করল এবং সেও শহীদ হল। এরপর খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) বিনা নির্দেশেই পতাকা ধারণ করল এবং সে বিজয় লাভ করল। তিনি আরও বলেন, তারা আমাদের মাঝে জীবিত থাকুক তা আমাদের নিকট আনন্দদায়ক নয়। আইয়ুব (রহঃ) বলেন, অথবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তারা আমাদের মাঝে জীবিত থাকুক তা তাদের নিকট আদৌ আনন্দদায়ক না, এ সময়ে রাসুলুল্লাহ এর চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬০৬

 

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উম্মেম হারাম বিনত মিলহান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকটবর্তী একস্থানে শুয়েছিলেন, এরপর জেগে উঠে মুচকি হাসতে লাগলেন। আমি বললাম আপনি হাসলেন কেন? তিনি বললেন, আমার উম্মতের এমন কিছু লোককে আমার সামনে উপস্থিত করা হোল যারা এই নীল সমুদ্রে আরোহণ করেছে, যেমন বাদশাহ সিংহাসনে আরোহণ করে। উম্মে হারাম (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি তার জন্য দুআ করলেন। এরপর তিনি দ্বিতীয়বার নিদ্রা গেলেন এবং আগের মতই আচরণ করলেন। উম্মে হারাম আগের মতই বললেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগের মতই জবাব দিলেন। উম্মে হারাম (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কাছে দুআ করুন তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মুআবিয়া (রাঃ)-এর সাথে মুসলমানরা যখন প্রথম সমুদ্রপথে অভিযানে বের হয়, তখন তিনি তাঁর স্বামী উবাদা ইবনু সামিতের সঙ্গে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তাদের কাফেলা সিরিয়ায় থামে। আরোহনের জন্য উম্মে হারামকে একটি সওয়ারী দেয়া হল, তিনি সওয়ারীর উপর থেকে পড়ে মারা গেলেন।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬০৭

 

হাফস ইবনু উমর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু সুলায়মের সত্তর জন লোকের একটি দলকে কুরআন শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বানু আমিরের কাছে পাথান। দলটি সেখানে পৌছলে আমার মামা(হারাম ইবনু মিলহান) তাদেরকে বললেন, আমি সবার আগে বানু আমিরের কাছে যাব। যদি তারা আমাকে নিরাপত্তা দেয় আর আমি তাদের কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী পৌছাতে পারী, (তবে তো ভাল) অন্যথায় তোমরা আমার কাছেই থাকবে। তারপর তিনি এগিয়ে গেলেন। কাফিররা তাঁকে নিরাপত্তা দিল, কিন্তু তিনি যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণী শোনাতে লাগলেন, সেই সময় আমির গত্রীয়রা এক ব্যাক্তিকে ইঙ্গিত করল। আর সেই ব্যাক্তি তাঁর প্রতি তীর মারল এবং তীর শরীর ভেদ করে বের হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন আল্লাহু আকবর, কাবার রবের কছম! আমি সফলকাম হয়েছি। তারপরে কাফিররা তাঁর অন্যান্য সঙ্গীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং সকলকে শহীদ করল, কিন্তু একজন খোঁড়া ব্যাক্তি বেঁচে গেলেন, তিনি পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন। হাম্মাম (রহঃ) অতিরিক্ত উল্লেখ করেন, আমার মনে হয় তাঁর সাথে অন্য একজন ছিলেন। তারপর জিবরাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খবর দিলেন, প্রেরিত দলটি তাদের রবের সাথে মিলিত হয়েছে। তিনি(রব) তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদের সন্তুষ্ট করেছেন। (রাবী বলেন) আমরা এই আয়াতটি পাঠ করতাম, আমাদের কওমকে জানিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের রবের সাথে মিলিত হয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরও সন্তুষ্ট করেছেন। পরে এ আয়াতটি মানসুখ হয়ে যায়। তারপর আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি অবাধ্যতার দরুন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রমাগত চল্লিশ দিন রি’ল, যাকওয়ান, বানু লিহয়ান ও বানু উসায়্যার বিরুদ্ধে দুয়া করেন।

হাদিস নাম্বার - ২৬০৮

 

মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) জুনদুব ইবনু সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কন এক যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একটি আঙ্গুল রক্তাক্ত হলে তিনি (এই কবিতাটি) পড়েছিলেনঃ তুমি তো একটি আঙ্গুল মাত্র; তুমি তো রক্তাক্ত হয়েছ আল্লাহরই পথে।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬০৯

 

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়ারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, কোন ব্যাক্তি আল্লাহর পথে আহত হলে সে কিয়ামতের দিন সে তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়ে আসবে এবং তা থেকে মিশকের সুগন্ধি ছাড়াবে এবং আল্লাহই ভাল জানেন কে তাঁর পথে আহত হবে।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬১০

 

ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আবূ সুফিয়ান ইবনু হারব (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেন যে, হিরাকল(রোম সমরাট হিরাক্লিয়াস) তাঁকে বলেছিলেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁর(রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধের ফলাফল কিরূপ ছিল? তুমি বলেছ যে, যুদ্ধ বড় পানির পাত্র এবং ধন সম্পদের মত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ এভাবেই পরীক্ষিত হয়ে থাকেন। তারপর পরিনতি তাদেরই হয়(তাঁরাই পুরস্কারপ্রাপ্ত হন)।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬১১

 

মুহাম্মদ ইবনু সাঈদ খুজায়ী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার চাচা আনাস ইবনু নাযার (রাঃ) বদরের যুদ্ধের সময়ে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! মুশরিকদের সঙ্গে আপনি প্রথম যে যুদ্ধ করেছেন, আমি সে সময়ে অনুপস্থিত ছিলাম। আল্লাহ যদি আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধে শরীক হওয়ার সুযোগ দেন, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ দেখতে পাবেন যে, আমি কি করি। ’ তারপর উহুদের যুদ্ধে মুসলিমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে আনাস ইবনু নাযার (রাঃ) বলেছিলেন, ইয়া আল্লাহ!এরা অর্থাৎ তাঁর সাহাবীরা যা করেছেন, তাঁর সম্বন্ধে আপনার কাছে ওজর পেশ করছি এবং এরা অর্থাৎ মুশরিকরা যা করেছে তা থেকে নিজেকে সম্পর্কহীন বলে ঘোষণা করছি। তারপর তিনি এগিয়ে গেলেন, এবং সা’দ ইবনু মুয়াযের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হল। তিনি বললেন, হে সা’দ ইবনু মুয়ায, (আমার কাম্য)। নাযারের রবের কসম, উহুদের দিক থেকে আমি জান্নাতের সুগন্ধ পাচ্ছি। সা’দ (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, তিনি যা করেছেন, আমি তা করতে পারিনি, আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা তাকে এমতাবস্থায় পেয়েছি যে, তাঁর দেহে আশিটিরও অধিক তলোয়ার, বর্শা ও তীরের জখম রয়েছে। আমরা তাকে নিহত অবস্থায় পেলাম। মুশরিকরা তাঁর দেহ বিকৃত করে ফেলেছিল। তাঁর বোন ছাড়া কেউ তাকে চিনতে পারেনি এবং তার বোন তার আঙ্গুলের ডগা দেখে চিনেছিল। আনাস (রাঃ) আর বলেন, রুবায়্যি নামক তাঁর এক বোন কোন এক মহিলার সামনের দাঁত ভেঙ্গে দিলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কিসাসের নির্দেশ দেন। আনাস (রাঃ) বললেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে হকসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর দাঁত ভাঙ্গা হবে না। ’ পরবর্তীতে তাঁর বাদীপক্ষ কিসাসের পরিবর্তে ক্ষতিপূরন নিতে রাজি হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছেন, যারা কছম করলে আল্লাহ তা পূরণ করে দেন। ’

হাদিস নাম্বার - ২৬১৬

 

ইসহাক (রহঃ) আবদুর রাহমান ইবনু জাবর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে যে বান্দার দু’পা ধূলিধূসরিত হয়, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে এরূপ হয় না। ’

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬১৭

 

ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ইা (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে ও আলী ইবনু আবদুল্লাহকে বলেছিলেন যে, তোমরা আবূ সায়ীদ (রাঃ)-এর কাছে যাও এবং তাঁর কিছু বর্ণনা শোন। তারপর আমরা তাঁর কাছে গেলাম। সে সময় তিনি ও তাঁর ভাই বাগানে পানি সেঁচের কাজে ছিলেন। আমাদের দেখে তিনি আসলেন এবং দু’হাটু বুকের সাথে লাগিয়ে বসে বললেন, মসজিদে নববীর জন্য আমরা এক একটি করে ইট বহন করছিলাম। আর আম্মার (রাঃ) দু’দুটি করে বহন করছিলেন। সে সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পাশ দিয়ে গেলেন এবং তাঁর মাথা থেকে ধুলাবালি মুছে ফেললেন এবং বললেন, আম্মারের জন্য বড় দুঃখ হয়, বিদ্রোহী দল তাকে হত্যা করবে। সে(আম্মার) (রাঃ) তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান করবে এবং তারা আম্মারকে জাহান্নামের পথে ডাকবে।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬১৮

 

মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, খন্দকের যুদ্ধ থেকে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসে অস্ত্র রাখলেন এবং গোসল করলেন, তখন জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কাছে এলেন, আর তাঁর মাথায় পট্টির ন্যায় ধুলি জমেছিল। তিনি বললেন, আপনি অস্ত্র রেখে দিলেন অথচ আল্লাহর কসম, আমি এখনো অস্ত্র রাখিনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোথায় জেতে হবে? তিনি বনু কুরায়যার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, এদিকে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দিকে বেরিয়ে গেলেন।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬২০

 

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধের দিন কিছু সংখ্যক সাহাবী সকাল বেলায় শরাব পান করেন, এরপর যুদ্ধে তারা শাহাদাত বরণ করেন। সুফিয়ান (রহঃ)-কে প্রশ্ন করা হলঃ সেই দিনের শেষ বেলায়? তিনি বললেন, এ কথাটি তাতে নেই।

হাদিস নাম্বার - ২৬২১

 

সাদাকা ইবনু ফাযল (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধের শেষে আমার পিতাকে(তাঁর লাশ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে অঙ্গ-প্রতঙ্গ কাটা অবস্থায় আনা হল এবং তাঁর সামনে রাখা হল। আমি তাঁর চেহারা খুলতে চাইলাম; আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে নিষেধ করল। এমন সময় তিনি কোন বিলাপকারিনীর বিলাপ শুনতে পেলেন। বলা হল, সে আমরের কন্যা বা ভগ্নি। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কাঁদছে কেন? অথবা বললেন, সে যেন না কাঁদে। ফিরিশতারা তাকে ডানা দ্বারা ছায়াদান করছেন। আমি (ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন) সাদাকা (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম এও কি বর্ণিত আছে যে, তাকে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত? তিনি বললেন, (জাবির (রাঃ)) কখনো তাও বলেছেন।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬২২

 

মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশের পর একমাত্র শহীদ ছাড়া আর কেউ দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্খা পোষণ করবে না, যদিও দুনিয়ার সকল জিনিস তাঁর কাছে বিদ্যমান থাকবে। সে দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্খা করবে যেন দশবার শহীদ হয়। কেননা সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখেছে।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬২৩

 

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) উমর ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব সালিম আবূন নাযর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) তাঁকে লিখেছিলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা জেনে রাখ, তরবারীর ছায়ার নীচেই জান্নাত। উয়াইসী (রহঃ) ইবনু আবূযযিনাদ (রহঃ)- এর মাধ্যমে মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) থেকে হাদিস বর্ণনায় মূয়াবিয়া ইবনু আমর (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ)-এর মাধ্যমে মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুকরণ করেছেন।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬২৪

 

আহমাদ ইবনু আব্দুল মালেক (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাপেক্ষা সুশ্রী, সাহসী ও দানশীল ছিলেন। মদিনাবাসীগণ একবার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ায় চড়ে সবার আগে আগে অগ্রসর হয়ে বললেন, আমরা (ঘোড়াটিকে) একটি সমুদ্রের ন্যায় দ্রুত গতিসম্পন্ন পেয়েছি।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬২৫

 

আবূল ইয়ামান (রহঃ) জুবাইর ইবনু মুত’ইম(রাঃ) থেকে বর্ণিত, হুনাইন থেকে ফেরার সময় তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর সাথে চলছিলেন। তাঁর সঙ্গে আরো অনেক সাহাবী ছিলেন। এমন সময় কিছু গ্রাম্য লোক এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরল এবং তাদের কিছু দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করল। এমনকি তারা তাঁকে একটি গাছের কাছে নিয়ে গেল এবং তাঁর চাঁদর(গাছের কাঁটায়) আটকে গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, আমার চাঁদরটি ফিরিয়ে দাও। আমার কাছে যদি এই সব কাঁটাযুক্ত গাছের সমপরিমাণ বকরী থাকত, তাহলে এর সবই তোমাদের ভাগ করে দিতাম। আর তোমরা আমাকে কৃপণ, মিথ্যাবাদী ও কাপুরুষ দেখতে পেতে না।

হাদিস নাম্বার - ২৬২৬

 

মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) আমর ইবনু মায়মুন আউদী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, শিক্ষক যেমন ছাত্রদের লেখা শিক্ষা দেন, সা’দ (রাঃ) তেমনি তাঁর সন্তানদের এ বাক্যগুলো শিক্ষা দিতেন এবং বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর এগুলো থেকে পানাহ চাইতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি ভীরুতা, অতি বার্ধক্য, দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আজাব থেকে আপনার নিকট পানাহ চাই। ’ রাবী বলেন, আমি মুসআব (রাঃ)-এর নকত হাদিসটি বর্ণনা করলে তিনি এর সত্যতা স্বীকার করেন।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬২৭

 

মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু’আ করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আক্ষমতা, ভীরুতা ও বার্ধক্য থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং কবরের আজাব থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি। ’

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬২৮

 

কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তালহা ইদন উবায়দুল্লাহ সা’দ, মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ এবং আব্দুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ)- এর সঙ্গ লাভ করেছি। আমি তাদের কাউকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনিনি। তবে তালহা (রাঃ)-কে উহুদ যুদ্ধের ঘটনাবলী বর্ণনা করতে শুনেছি।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬২৯

 

আমর ইবনু আলী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বলেছিলেন, ‘এই বিজয়ের পর আর হিজরতের প্রয়োজন নেই। এখন কেবল জিহাদ আর নিয়্যাত। যখনই তোমাদের বের হওয়ার আহ্বান জানোান হবে, তখনই তোমরা বেরিয়ে পড়বে। ’

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬৩০

 

আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু’ব্যাক্তির প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকবেন। তারা একে অপরকে হত্যা করে উভয়েই জান্নাতবাসী হবে। একজন তো এ কারনে জান্নাতবাসী হবে যে, সে আল্লাহর পথে জিহাদ করে শহীদ হয়েছে। তারপর আল্লাহ তাআলা হত্যাকারীর তাওবা কবুল করেছেন। ফলে সেও আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছে।

হাদিস নাম্বার - ২৬৩১

 

হুমায়দী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার বিজয়ের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সেখানে অবস্থানকালেই আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, ‘ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকেও (গনীমতের) অংশ দিন। ’ তখন সাঈদ ইবনু আসের কোন এক পুত্র বলে উঠল, ‘ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অংশ দিবেন না। ’ আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, সে ত ইবনু কাউকালের হত্তাকারী। তা শুনে সাঈদ ইবনু আসের পুত্র বললেন, দান পাহাড়ের পাদদেশ থেকে আমাদের কাছে আগত বিড়াল মাশি জন্তুটি, (সেই ব্যাক্তির) কথায় আশ্চর্যবোধ করছি, সে আমাকে এমন একজন মুসলিমকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছে যাকে আল্লাহ তায়ালা আমার হাতে সম্মানিত করেছেন এবং যার দ্বারা আমাকে লাঞ্ছিত করেননি। আব্বাস (রাঃ) বলেন, পরে তাঁকে অংশ দিয়েছেন কি দেননি তা আমাদের জানানেই। সুফইয়ান (রহঃ) বলেন, আমাকে সাঈদী (রহঃ) তাঁর দাদার মাধ্যমে আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আবূ আবদুল্লাহ(ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন সাঈদী হলেন, আমর ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ ইবনু আমর ইবনু সাঈদ ইবনু আস।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬৩২

 

আদম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবনকালে আবূ তালহা (রাঃ) জিহাদের কারণে সিয়াম পালন করতেন না। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইন্তেকালের পর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা ব্যতীত তাঁকে আর কখনো সিয়াম ছেড়ে দিতে দেখিনি।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬৩৩

 

আবদুল্লাহ ইবনু ইয়ুসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ প্রকার মৃত ব্যাক্তি শহীদঃ মহামারীতে মৃত ব্যাক্তি, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যাক্তি, পানিতে ডুবে মৃত ব্যাক্তি, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত ব্যাক্তি এবং যে আল্লাহর পথে শহীদ হল , সে ব্যাক্তি।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬৩৪

 

বিশর ইবনু মুহাম্মদ (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রত্যেক মুসলিমের জন্য শাহাদাত।

হাদিস নাম্বার - ২৬৩৫

 

আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়াতটি নাযিল হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দ (রাঃ)-কে ডেকোনলেন। তিনি কোন জন্তুর একটি চওড়া হাড় নিয়ে আসেন এবং ততে উক্ত আয়াতটি লিখে রাখেন। ইবনু উম্মে মাকতুম জিহাদে অংশ ব্যাপারে তাঁর অক্ষমতা প্রকাশ করলে আয়াতটি নাযিল হয়।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬৩৬

 

আব্দুল আজীজ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমি মারওয়ান ইবনু হাকামকে মসজিদে বসা অবস্থায় দেখলাম। তারপর আমি তাঁর দিকে এগিয়ে গেলাম এবং তাঁর পাশে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বর্ণনা করেন যে, যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উপর অবতীর্ণ আয়াত, (মুসলমানদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা পরস্পর সমান নয়) যখন ন্তাকে দিয়ে লিখিয়েছিলেন, ঠিক সে সময় অন্ধ ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ) সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আমি যদি জিহাদে জেতে সক্ষম হতাম, তবে অবশ্যই অংশ গ্রহন করতাম। ’ সে সময় আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূল) -এর উপর ওহী নাযিল করেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উরু আমার উরুর উপর রাখা ছিল এবং তা আমার কাছে এতই ভারী মনে হচ্ছিল যে, আমি আমার উরু ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলাম। এরপর ওহী অবতীর্ণ হওয়ার অবস্থা কেতে গেল, সে সময় আয়াতটি নাযিল করেন।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬৩৭

 

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) সালিম আবূ নাযর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) লিখে পাঠালেন, আর আমি এতে পড়লাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা তাদের(শত্রুদের) মুখোমুখি হবে তখন ধৈয্যধারন করবে।

 

 

 

হাদিস নাম্বার - ২৬৩৮

 

আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের দিকে বের হলেন, হীম শীতল সকালে আনসার ও মুহাজিররা পরীখা খনন করছেন, আর তাদের এ কাজ করার জন্য তাদের কোন গোলাম ছিল না। যখন তিনি তাদের দেখতে পেলেন যে , তারা কষ্ট ও ক্ষুধায় আক্রান্ত


Bonolota

106 ブログ 投稿

コメント