জেলে জীবন

আমাদের জেলে ভাইরা তাদের জীবন বাজি রেখে সাগরের ঢেউকে জয় করার চেষ্টা করে, কিন্তু সবার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় কি?

সব পাখি ঘরে ফিরতে পারে, কিন্তু সব জেলে বাড়ি ফিরতে পারে না। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ঢেউ-ডাকাতের আক্রমণ ছাড়াও একটি ঘাতক আছে, যা জেলেদের অকালে হত্যা করে। তার নাম নিউমোনিয়া। এই রোগ থেকে সুস্থ হয়ে সাগর থেকে ফিরে, তারপর তাবিজ, বর্ম, পানি, সব শেষে বাজারের ডাক্তারের কাছে যাওয়াই জীবনের শেষ। যে কারণে জেলেদের পাড়ায় বাল্যবিধবার সংখ্যা বেশি।

ঘাটে বাঁধা নৌকা, মাটিতে বিছিয়ে জাল, উঠোনের কোণে গাবের মটকি, ঘরের ঠেলাগাড়ি, টাকো, টাকলি-সুতোর কাটা, জাল বুনবার হাতিয়ার। এ সবই জেলের সংসার।

জেলেরা কেন ফিরছে না?  জলদস্যুরা সমুদ্রে আক্রমণ করে। জাল ছিনতাই, মাছের ট্রলার ছিনতাই। জেলেদের জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। টাকা না পেলে জেলেদের সাগরে ফেলে দেন। অনিবার্য মৃত্যু থেকে কেউ ফিরে আসে না। সাগরে মাছ ধরার সময় জেলেরা গভীর সাগরে চলে যায়। তারপর ঝড় হলে সিগন্যাল শুনেও কোনো ট্রলার ফিরে আসে না, কোনো ট্রলার ফিরতে পারে না। যারা ফিরতে পারবেন না তাদের খবর দিতে পারেন এমন ট্রলারকে বিশ্বাস করতে চান না স্বজনরা।

তবু মনে হয় জীবনযুদ্ধের স্বরলিপি। কৌতুকের ভেতরের অপবাদ, যৌনজীবনের গন্ধ আবার অসহায় মানুষের স্বপ্নের প্রতিফলন ঘটায়। ফলে এই কৌতুক আর ঠাট্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। তাদের কৌতুক শুনতে অশ্লীল শোনাতে পারে।  কিন্তু এটাও শ্রম-ঘামের বিনোদন, কষ্ট ভুলে নৌকায় যায়।

তবে তারা এটাও জানে যে একটু এলোমেলো হলে ট্রলারটি উল্টে যাবে এবং অদৃশ্য হয়ে যাবে। তাদের প্লাস্টিকের টায়ার ও বাঁশের ভেলা কোনো নিরাপত্তা দেবে না। তবু সাগরের ভয়ের চেয়ে পেটে ক্ষুধার তীব্রতা এতটাই বেশি যে ক্ষুধা ভয়কে জয় করতে বাধ্য হয়।


Abu Hasan Bappi

414 blog messaggi

Commenti

📲 Download our app for a better experience!