###বিকেলের হাওয়া যখন চুলে খেলে যায়, মনে হয় কোনো প্রিয় কেউ পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। কিছুই বলে না, তবুও বোঝায়—তুমি একা নও। এটাই বিকেলের জাদু।
###বিকেলের হাওয়া যখন চুলে খেলে যায়, মনে হয় কোনো প্রিয় কেউ পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। কিছুই বলে না, তবুও বোঝায়—তুমি একা নও। এটাই বিকেলের জাদু।
###যখন সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ে, বিকেলের নরম আলোয় মনে হয় সব কিছু সুন্দর। পুরনো স্মৃতি গুলো যেন বেশি জীবন্ত হয়ে ওঠে। যেন হৃদয়ের গোপন দরজা খুলে যায় এই নরম সময়টায়।
মিস অন্বেষা ,আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
জ্বী? আমাকে!হ্যা, এই যে আপনার কাগজপত্র।কে করেছে?ছোট স্যার।রেহান স্যার!হ্যা।অন্বেষার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কি বলছে এই লোকটা! রেহান স্যার ওকে দেখতে পারে না ঠিকই,তাই বলে চাকরি থেকে একেবারে বরখাস্তই করে দিবে! বরখাস্ত করা কি এতই সোজা?অন্বেষার মনে পড়ছে, প্রথম যেদিন সে এই চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল, তখন একটা বয়স্ক লোক এই কোম্পানির বস ছিলেন, নাম শরীফ আহমেদ। তিনিই তাকে চাকরি দিয়েছিলেন। এই এক বছর অন্বেষা তাঁর অধীনেই কাজ করেছে। খুব প্রশংসা করতেন তিনি অন্বেষার কাজের। সবসময় নিজের মেয়ের মত দেখতেন কাজে উৎসাহ দিতেন। কিন্তু হঠাৎ তিনি অসুস্থ হওয়ায় কোম্পানির বস হিসেবে আসেন তারই ছেলে রেহান আহমেদ। আর তাতেই অন্বেষার ভাগ্যের এই দুর্গতি ঘটে। রেহান স্যার বয়সে তরুণ, অন্বেষার বয়সী। হয়ত এই কারণে তার রাগও বেশি। প্রথম থেকেই তিনি অন্বেষাকে দেখতে পারতেন না। আর যখন কোম্পানির সবার মুখে তার কাজের, আচার ব্যবহারের প্রশংসা শুনলেন, তখন তো একেবারে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। অন্বেষা একেবারে তার দুই চোখের বিষ হয়ে গেল। তাই বলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিবেন! আর ভাবতে পারে না সে। তার মত মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে এখন হঠাৎ চাকরি কোথা থেকে পাবে? অন্বেষার ভাবনায় ছেদ পড়ল রেহানকে একটা সুন্দরী ওয়েস্টার্ন ড্রেস আপ করা মেয়ের সাথে হাসতে হাসতে চলে যেতে দেখে। লোকটার প্রতি তার মন ঘৃণায় বিষিয়ে গেল।
তিন বছর পর।আর কত জ্বালাবি আমাদেরকে বল তো! একটা ভাল মেয়ে দেখে বিয়ে দিতে চাচ্ছি, তাও তো করতে চাচ্ছিস না।আমি তো তোমাদেরকে বলেইছি যে আমি সামিয়াকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারব না।দেখ রেহান, তোর বাবা আর আমি দুজনেই সামিয়াকে পছন্দ করি না। সামিয়া তোর যোগ্য না। আর ও সংসারের কি বুঝবে? সারাদিন ছেলেদের সাথে ঘুরেফিরে অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে। এর চেয়ে তুই বরং একটা সংসারী মেয়ে বিয়ে কর। দেখবি তোরা খুব সুখী হবি। আমরা তো সবসময় তোর ভালই চাই।তোমাদের যা ইচ্ছে কর।কালকে তোর বাবা তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাবে ঠিক করেছে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে থাকবি। তোকে নিয়েই আমরা রওনা হব।বলেই মা রেহানের রুম থেকে চলে গেলেন। রেহান আর কিছুই বলতে পারল না। বাবা যা ঠিক করেছে, এখন সেটাই তাকে করতে হবে, বাবার অবাধ্য হওয়া রেহানের পক্ষে সম্ভব না।দেখি মা, ঘোমটাটা একটু তোলো তো।মায়ের কথায় বাস্তবে ফিরে এল রেহান, এতক্ষণ সে সামিয়ার কথা ভাবছিল। কিভাবে তার সামনে বসে থাকা মেয়ে, যাকে এখনো সে দেখেনি, তাকে সামিয়ার কথা বলে বিয়েটা ভাঙবে তাই ভাবছিল।কিন্তু ঘোমটা খুলতেই চমকে উঠল রেহান। এ কাকে দেখছে সে? তিন বছর আগে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা সেই অন্বেষা না? ওকে দেখাতেই বাবা রেহানকে এখানে নিয়ে এসেছে? মেয়েটাও তো রেহানকে দেখে একইভাবে চমকে গেছে! বাবা অন্বেষাকে দেখিয়ে বললেন,রেহান, পরিচয় করিয়ে দেই। এ হচ্ছে অন্বেষা, যাকে তুমি তিন বছর আগে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিয়েছিলে। অবশ্য ওর জন্য ভালই করেছিলে। ও এখন অনেক উঁচু পদে চাকরি করে, নিজের যোগ্যতায়। খুব তাড়াতাড়িই সে তার অবস্থার পরিবর্তন করেছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করবে। আমি এই মহামূল্যবান হিরাকে হারাতে চাইছি না। তাই তোমার সাথে আমি অন্বেষাকে বিয়ে দিতে চাই। রেহান কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। সে বলল,আমি একটু অন্বেষার সাথে একা কথা বলতে চাই।আচ্ছা যাও।আপনি ইচ্ছে করেই এই কাজ করেছেন!রেহানের কথা শুনে অন্বেষার রাগ করার কথা। কিন্তু সে শান্ত কণ্ঠে বলল,আপনি যেমন আমাকে দেখে অবাক হয়েছেন, আমিও তেমনি হয়েছি। আপনি যেমন কিছুই জানতেন না, আমিও এর কিছুই জানতাম না।আচ্ছা যাই হোক, আপনি তো জানেন আমার আর সামিয়ার কথা, আপনি তারপরেও আমাকে বিয়ে করবেন?
সেটা আমি সবার সামনেই বলব। আপনার আর কিছু বলার আছে?না।অন্বেষা উভয়সংকটে পড়ল। শরীফ আহমেদ অন্বেষার আদর্শ ছিলেন। উনার অনুপ্রেরণায় সে এতটা পথ অতিক্রম করতে পেরেছে। তাঁর কথা অন্বেষা ফেলবে কিভাবে? আবার এও জানে যে রেহানকে বিয়ে করলে সে কখনোই সুখী হতে পারবে না। ভাবতে ভাবতেই রেহানের দিকে তাকাল সে। ছেলেটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আর তার ঠোঁটের কোণে দেখা যাচ্ছে বিজয়ের হাসি। আর সহ্য করতে পারল না অন্বেষা। সিদ্ধান্ত নিল, বিয়ে সে রেহানকেই করবে। কোনোভাবেই আর তার কাছে পরাজয় স্বীকার করবে না সে।বিয়ের রাত।অন্বেষা জানে, শুধু এই রাত কেন, ওর বৈবাহিক জীবনের আর কোন রাত বা দিনই হয়তবা সুন্দর কাটবে না। সবকিছু জেনেশুনেই তো সে বিয়ে করেছিল।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল অন্বেষা। সে এখন গভীর ঘুমে নিমগ্ন রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ঘুমন্ত রেহানকে কত শান্ত, নিষ্পাপ লাগছে। তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ বুঝতে পারল অন্বেষা, এই ছেলেটাকে নিজের করে নিতে শুধু তাকে ভালবেসেই যেতে হবে, ঘৃণা এক্ষেত্রে কোন কাজ করবে না।
রাত ১২ টা।এখনো ফেরেনি রেহান। হয়ত আরো দেরি করবে ফিরতে। প্রায় প্রতিদিনই এরকম দেরি করে সে। আর প্রতিদিনই রেহানের জন্য খাবার নিয়ে বসে থাকে অন্বেষা। যদিও জানে, রেহান বাইরে থেকে খেয়ে আসবে। তারপরেও প্রতিদিনই মনে হয়, হয়ত আজকে এসে বলবে ,চল একসাথে ডিনার করি। কিন্তু অন্বেষার এই আশাটা কখনোই বাস্তবে পরিণত হয় না। হয়ত রেহানকে ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করার জন্য প্রতিশোধ নিচ্ছে তার উপর। ভাবতে ভাবতেই ডাইনিং টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল অন্বেষা। ঘুম ভাঙল কারো হাতের স্পর্শে। উঠে দেখল,রেহানের মা দাঁড়িয়ে আছে।মা, আপনি এখনো ঘুমাননি?ঘুমিয়েছিলাম। কিন্তু জেগে উঠে দেখি তুমি এখনো রেহানের জন্য অপেক্ষা করছ। আসলে বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম, রেহান ১২ টায় ফোন করে বলেছিল ও বাসায় আসতে পারবে না।ওহ।আর কতদিন এভাবে তুমি ওর জন্য অপেক্ষা করবে, মা। আমার ছেলেটা তো তোমার মত লক্ষী একটা মেয়েকে চিনতেই পারল না। ওর কপালে যে কি দুঃখ আছে কে জানে! যাও মা, রুমে গিয়ে ঘুমাও। অন্যদিন তো তাও রাতে অন্তত দেখা হয়। আজকে তাও হল না। মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে নিজের রুমে চলে গেল অন্বেষা। জানে সে, আজও হয়ত সামিয়া আর তার বন্ধুদ # #