কৃপণ ধনুকওয়ালা
একবার এক রাজ্যে ধনুক চালনার প্রতিযোগিতা হচ্ছিল। দূরদূরান্ত থেকে তীরন্দাজরা এসেছিল তাদের দক্ষতা দেখাতে। তাদের ভেতর সবচেয়ে অদ্ভুত চরিত্র ছিল—মহাজন কৃপণ। সারা রাজ্যে তার কৃপণতার কাহিনি ছড়ানো। কেউ বলে, সে নিজের ধনুকের জন্য অতিরিক্ত তীর বানায় না, কেউ বলে, সে নিজের ছায়াকেও তালি দেয় যেন বাতাস কম খরচ হয়!
সে এল নিজের পুরোনো ধনুক হাতে, শুধু তিনটি তীর নিয়ে। সবাই হাসাহাসি করল, “তিনটা তীর দিয়ে তুমি কী করবে?”
কৃপণ বলল, “আমার তীর তিনটে নয়, সফলতা তিন রকম।”
প্রথম রাউন্ডে সে তাক করল। তীর সোজা গিয়ে কেন্দ্রবিন্দুতে লাগল! সবাই হাঁ হয়ে তাকিয়ে রইল।
দ্বিতীয়বার সে ছুঁড়ে বলল, “এটা আমার অভ্যাস!” তীর এবারো সঠিক লক্ষ্যে গিয়ে আঘাত করল।
তৃতীয়বার সে বলল, “এটা ভাগ্য।” তীর এবারও ঠিক জায়গায়! সবাই চেঁচিয়ে উঠল, “অসাধারণ!”
কিন্তু বিচারক বলল, “তুমি তো বললে একবার অভ্যাস, একবার ভাগ্য। তাহলে এই কৃতিত্ব কার?” কৃপণ হেসে বলল, “আমি কৃপণ, প্রশংসাও একটু বাঁচিয়ে নিই! কৃতিত্ব আমার নয়—তীরের, ধনুকের, আর হাওয়ার!”
জনতা হাসিতে ফেটে পড়ল। কেউ বলল, “বুদ্ধিতে কৃপণ না, বরং চালাক!” কেউ বলল, “যার অল্পতেই চলে, তার কাজেই জাদু থাকে।”
শেষমেশ কৃপণ ধনুকওয়ালাকে রাজা সেরা পুরস্কার দিলেন। কৃপণ বলল, “এবার পুরস্কারটাও তিন ভাগে রাখুন—এক ভাগ রাজ্যের জন্য, এক ভাগ বিচারকদের জন্য, আর বাকি ভাগ... আমার!”
#sifat10
লবণের বস্তা ও গাধা
একজন ব্যবসায়ী প্রতিদিন তার গাধার পিঠে লবণের বস্তা চাপিয়ে নদী পেরিয়ে শহরে যেত। লবণ বিক্রি করে সে সংসার চালাত। গাধাটি শক্তিশালী, কিন্তু গম্ভীর এবং খানিকটা অলস।
একদিন সকালে নদী পার হওয়ার সময় গাধা হঠাৎ পা হড়কে জলে পড়ে গেল। উঠেই সে বুঝল, তার পিঠে যে ভার ছিল, সেটা হালকা হয়ে গেছে। আসলে, লবণ ভিজে গিয়ে অনেকটা গলে গেছে, তাই ওজন কমে গেছে। গাধা খুশিতে হেঁসে উঠল। ভাবল, “ওহো! এ তো ভালোই হলো।”
পরদিনও সে আবার নদীর মাঝামাঝি গিয়ে নাটক করে পড়ে গেল। এবারো লবণ গলে হালকা হয়ে গেল। গাধার মুখে হাসি ফুটে উঠল। সে ভাবল, “এই তো আমার নতুন বুদ্ধি! প্রতিদিন এমন করে একটু পড়ে গেলে কাজও কম, কষ্টও কম!”
এইভাবে টানা তিনদিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। মালিক কিছুক্ষণ অবাক হয়ে ভাবল, তারপর বুঝে গেল গাধার কৌশল। সে ভাবল, “তুই যদি চালাক হইস, আমি তো আর কম যাই না।”
পরদিন সে লবণের বদলে বস্তায় তুলো ভরে দিল। গাধা যথারীতি নদীতে গিয়ে পড়ল। কিন্তু এবার তুলো তো গলে না, বরং পানি শুষে নিয়ে আরও ভারী হয়ে গেল! গাধার হাঁটুর উপর চাপ পড়ে গেল, কষ্টে কষ্টে সে কাঁপতে কাঁপতে পাড়ে পৌঁছল।
পরের দিন সে আর নিজে পড়ে গেল না। মালিক হেসে বলল, “এই তো ঠিক হয়েছে! নিজের চালাকি যদি অন্যের ক্ষতি করে, তবে একদিন ঠিকই ধরা খেতে হয়।”
সেই থেকে গাধা আর কখনো নদীতে নিজে পড়ে না। বরং চোখ-মুখ শক্ত করে সোজা নদী পেরিয়ে যায়।
#sifat10
জুতো বদলানো বুড়ো
এক বৃদ্ধ লোক ছিল গ্রামের এক মজার চরিত্র। হেঁটে হেঁটে সে প্রতিদিন বাজারে যেত—তার একমাত্র সঙ্গী, পুরোনো একজোড়া জুতো। জুতোগুলো এত পুরোনো যে ছাল উঠে গেছে, তলা ছিঁড়ে গেছে, হেঁটে হেঁটে আওয়াজ করে। গ্রামের ছেলেরা তাকে দেখলেই বলত, “বুড়ো কাকা, আপনার জুতো নাচে তো!” বুড়ো হেসে বলত, “জুতো যদি না নাচে, তবে পা চলবে কী করে?”
একদিন বাজার থেকে ফিরে সে দেখল, তার জুতো জোড়া চুরি গেছে! বাড়িতে বসে সে চিন্তা করল, “আহা, এত পুরোনো জুতো কেউ নিল কেন?” মাথায় খেলল এক বুদ্ধি। পরদিন সে বাজারে গেল খালি পায়ে, হাতে এক জোড়া নতুন চকচকে জুতো।
বাজারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সে চিৎকার করে বলল, “হে চোর ভাই, তোমার জন্য পুরস্কার এনেছি! আমার কালকের জুতো যদি কেউ ফেরত দেয়, আমি তাকে এই নতুন জোড়া উপহার দেব।”
লোকে ভিড় করল, কেউ হেসে, কেউ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “পুরোনো জুতো দিয়ে নতুন দেবে?” বুড়ো বলল, “হ্যাঁ, কারণ সেই জুতোর স্মৃতি আছে—আমার প্রথম প্রেমিকার সঙ্গে দেখা, ছেলের জন্মদিন, মেয়ের বিয়েতে হাঁটা... সব ওই জুতোর সঙ্গেই।”
এ কথা শুনে সবাই চুপ। এরমধ্যে এক লোক মাথা নিচু করে সামনে এল। হাতে পুরোনো জুতো। বলল, “আমি শুধু মজা করে নিয়েছিলাম, মাফ করে দিন।”
বুড়ো হাসল, “তুমি আমাকে নয়, তোমার লোভকেই ঠকিয়েছো।” সে নতুন জুতো তাকে দিল না, বরং বলল, “এই পুরোনো জুতো আমার, আর শিক্ষা তোমার!”
চোর চলে গেল লজ্জায় মুখ ঢেকে। আর বুড়ো হাঁটতে লাগল পুরোনো জুতো পায়ে, মাথা উঁচু করে, যেন প্রতিটি ধাপে শোনা যায়—“অহংকার নয়, স্মৃতিই আসল পাথেয়।”
#sifat10
হাঁস আর সোনার ডিম
একবার ছিল এক গরিব কৃষক। তার ছোট্ট একটা কুঁড়েঘর, পেছনে একটু জমি আর সামনে একটা খোপে বাঁধা ছিল একটা হাঁস। হাঁসটা ছিল একেবারে সাধারণ, তবে একদিন সকালে কৃষক দেখতে পেল—হাঁসটা পেড়েছে একটা চকচকে সোনালী ডিম!
প্রথমে সে ভাবল, এ তো কাঁচের ডিম। কিন্তু বাজারে নিয়ে গেলে জহুরিরা বলল, “না হে, একেবারে খাঁটি সোনা!” কৃষক তো অবাক! নিজের ভাগ্যেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। সে ডিমটা বিক্রি করে একটা ভালো দাম পেল। কিছু টাকা জমাল, কিছু দিয়ে চাল, ডাল, নুন, তেল কিনল।
এরপর থেকে হাঁসটা প্রতিদিন একটা করে সোনার ডিম দিতে লাগল। কৃষক আর তার স্ত্রী দিনে দিনে স্বচ্ছল হয়ে উঠল। মাটির ঘর হলো টিনের, পরে হয়ে গেল পাকা দোতলা। খাবার-পোশাক-আসবাব, সব কিছুতেই এল পরিবর্তন। আশপাশের মানুষ হিংসে করতে লাগল। কেউ কেউ বলল, “তোমার হাঁস তো ভাগ্য এনে দিয়েছে!”
কিন্তু মানুষ সবসময় সন্তুষ্ট থাকে না। একদিন কৃষক ভাবল, “যদি হাঁসটা প্রতিদিন একটা করে সোনার ডিম পাড়ে, তাহলে ওর পেটের ভেতরে নিশ্চয় অনেক সোনার ডিম জমে আছে। সব একসাথে বের করে ফেললেই তো আমি এক রাতেই বড়লোক হয়ে যাব!”
স্ত্রী তাকে মানা করল, “না না, এমন করো না। লোভে পড়ে সব হারিয়ে ফেলতে পারো।” কিন্তু কৃষক তখন চোখে মোহের পর্দা টেনে ফেলেছে। সে বলল, “বোকামি কোরো না। আমি ঠিক জানি কী করতে হবে।”
পরদিন ভোরে হাঁসটা ঘুমিয়ে থাকতেই কৃষক ছুরি নিয়ে তার পেট চিরে ফেলল। রক্তে ভেসে গেল মাটি, আর হাঁসটা নিথর হয়ে গেল।
কিন্তু কৃষক যেটা আশা করছিল, সেটা পেল না। হাঁসটার ভেতরে কোনো সোনার ডিম ছিল না। শুধু সাধারণ পেটের অংশ, হজমের নলি আর প্রাণহীন অঙ্গ। সোনা তো দূরের কথা, হাঁসটাও গেল।
কৃষক বসে পড়ল হাঁটু গেড়ে, মাথায় হাত দিয়ে। স্ত্রীর চোখে জল। বাড়ি, জিনিসপত্র সব থাকলেও মূল উৎস তো চলে গেল। এরপর আর একটা সোনার ডিমও তাদের ঘরে আসেনি।
গ্রামের লোকেরা বলল, “লোভে পড়লে শেষ পরিণতি এই-ই। যার প্রতিদিন এক মুঠো পায়, সে যদি একাই সব চাইতে চায়, শেষমেশ সে খালি হাতে ফিরে যায়।”
#sifat10
চোর ও বুদ্ধিমান কিশোর
এক রাতে নিঃশব্দে একটা চোর ঢুকে পড়ল এক গরিব বাড়িতে। ঘরটা ছোট, সামান্য কয়েকটা জিনিসপত্র, এক কোণে মাদুর পেতে ঘুমিয়ে রয়েছে এক কিশোর। চোর ভাবল, “এ ঘরে কিছুই নেই, তবু একটু খুঁজে দেখি।” সে আলতো করে হাঁটতে শুরু করল।
কিন্তু তার অজান্তে, সেই কিশোর ঘুমাননি। সে হালকা শব্দে জেগে উঠেছিল। চোখ খোলা না রেখেও বুঝে ফেলল যে ঘরে অপরিচিত কেউ আছে। ভয় পেয়ে উঠল না সে, বরং মাথা খাটাতে লাগল। হঠাৎ সে গলা নামিয়ে বলল, “বাবা, তুমি ঘুমাচ্ছো? আমি শুনেছি, এই ঘরে রাতে এক ভয়ঙ্কর চোর আসে, যার পা নেই। সে দেয়ালে হেঁটে চলে।”
চোর থমকে গেল, “এই ছেলে কি আমাকে দেখে ফেলেছে? দেয়ালে হেঁটে? সে কীভাবে জানল আমি আসছি?”
কিশোর আবার বলল, “মা, তুমি জানো তো? বাবা বলেছে, যদি চোর আসে, তাহলে যেন তার পায়ে তেল ঢেলে দিই, আর তার গায়ে মরিচ ছুড়ে মারি—তাহলেই সে দৌড়ে পালাবে।” এবার চোরের মাথায় সত্যিকারের গরম লাগতে শুরু করল। “ওরে বাবা, এই ছেলের বাবা যদি এসে পড়ে! মরিচ নিয়ে ছুঁড়বে!”
তারপর কিশোর আস্তে করে বলল, “আমি তো জানি, এই ঘরে চুরি করতে আসা চোররা কখনো বাঁচে না। আমাদের কুকুরটা খুব ভয়ানক...” চোর আর থাকতে পারল না। এক লাফে দরজা খুলে দৌড় দিল!
সকালে লোকজন দেখে চোরের পড়া এক জুতো আর একটা ফেলে যাওয়া কাপড়! কিশোর তখন হেসে বলল, “ভয় পেলে কেবল শক্তি নয়, বুদ্ধিও বড় অস্ত্র!”
#sifat10
চালাক পাঁঠা ও বোকা কসাই
এক কসাই একদিন এক পাঁঠা কেটে বাজারে বিক্রি করতে যাচ্ছিল। পথে পাঁঠাটি জিভ বের করে হাসছে দেখে কসাই রেগে গিয়ে বলল, “তুই হাসছিস কেন?” পাঁঠা বলল, “আমার হাসির কারণ আছে, তুমি জানো না। আমি জাদুকর পাঁঠা। তোমার টাকা দ্বিগুণ করে দিতে পারি।” কসাই অবাক হয়ে বলল, “কীভাবে?” পাঁঠা বলল, “তুমি যদি আমাকে না কেটে রাজাকে দাও, তিনি খুশি হয়ে তোমায় পুরস্কৃত করবেন।” কসাই রাজবাড়িতে গিয়ে গল্প বলল, আর পাঁঠাকে দিল। রাজা তো শুনে আরও বেশি হাসলেন। শেষে কসাইকে বললেন, “তুমি যদি এত চালাক, তাহলে পাঁঠা কেন বিশ্বাস করলে?” আর কসাইকে দুম করে রাজপ্রাসাদ থেকে বের করে দিলেন। পাঁঠা হেসেই গেল।
#sifat10
হাঁড়ির ভেতর কার কান
একবার এক গ্রামের মাতব্বর সিদ্ধান্ত নিল, গ্রামের মানুষ খুব বেশি মিথ্যা বলে—একটা বিচারসভা বসানো দরকার। সবাই জড়ো হলো। হঠাৎ এক বুড়ো বলল, “আমি হাঁড়ির ভেতর একটা কান দেখেছি!” সবাই অবাক। হাঁড়ি তো লোহার, তার ভেতর কান কীভাবে? তদন্ত শুরু হলো, হাঁড়ি এনে মাঝখানে রাখা হলো। সবাই হাঁ করে তাকিয়ে, কেউ বলল, “এই তো, আমি দেখি দেখছি।” আরেকজন বলল, “আরে সত্যিই একটা কান তো দেখা যাচ্ছে!” এরপর যা হবার তাই—যার যা আছে, সবাই বলল হাঁড়ির ভেতরে কান তারা দেখেছে। শেষমেশ বুড়ো হেসে বলল, “তোমরা সবাই মিথ্যুক, হাঁড়ির ভেতর কিছুই নেই। আমি শুধু পরীক্ষা নিচ্ছিলাম।” সেই দিন থেকে গ্রামে মিথ্যা বলার চল কমে যায়।
#sifat10
Harley-Davidson: Freedom Machine | #education
Tajrin Nesa
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?