গল্প: “ছায়া গাছটা”
গাঁয়ের এক কোণায়, একটা পুরনো বটগাছ ছিল। সবাই তাকে ডাকত “ছায়া গাছ” বলে। গরমের দিনে মাঠ থেকে ফিরে চাষিরা ওই গাছের নিচে বসে ক্লান্তি ভুলত। পাখিরা গান গাইত, শিশুরা খেলত, আর বৃদ্ধেরা গল্প করত।
রোজ দুপুরে একটা ছোট ছেলে আসত ওই গাছটার নিচে—নাম তার রাহুল। হাতে একটা ছেঁড়া খাতা আর আধা ভাঙা পেন্সিল। স্কুলে যাওয়া হয়নি কখনও, কিন্তু ওই গাছের নিচে বসেই সে অক্ষর শেখার চেষ্টা করত। দূরের স্কুল থেকে ভেসে আসা শিক্ষকের কণ্ঠ শোনার চেষ্টা করত মন দিয়ে।
একদিন স্কুলের শিক্ষক হঠাৎ করেই ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। দেখলেন, রাহুল মাটিতে অ আ ক খ লিখছে। শিক্ষক এগিয়ে গিয়ে বললেন,
“তুমি স্কুলে যাও না কেন?”
রাহুল চোখ নামিয়ে বলল, “টাকা নেই স্যার... কিন্তু শিখতে ইচ্ছে হয় খুব।”
সেইদিন থেকেই শুরু হলো বদল। শিক্ষক নিজেই রাহুলকে সময় দিতে লাগলেন। ছায়া গাছটা হয়ে উঠল রাহুলের ছোট্ট স্কুল।
বছর পেরিয়ে গেল। রাহুল বড় হলো, শহরে গিয়ে পড়াশোনা করল। অনেক কষ্টে একদিন হয়ে উঠল একজন শিক্ষক।
আর যেদিন সে নিজে ফিরে এল গ্রামে, ছায়া গাছটার নিচে বসে প্রথম ক্লাসটা নিল—তার ছাত্রদের নিয়ে, যাদের চোখেও সেই আগুন জ্বলছিল শেখার।