#
অহি ভয় পেলো না। তবে তার বিস্ময় কমছে না। নিজের বাবার প্রতি দিনে দিনে এত অভিযোগ জমেছে যে মাঝে মাঝে বাবাকে তার দুঃস্বপ্নের মতন উন্মাদ মনে হয়।
"চিৎকার করবেন না। আর বেইমান আমি নই, আপনি। এতই যখন ঐ আপনাকে ছেড়ে দেওয়া মহিলার প্রতি আপনার দরদ তাহলে অবনী মাকে বিয়ে না করলেই পারতেন। যে ছেড়ে গেলো তার প্রতি আপনার প্রেমে এক আনাও কমতি নেই। অথচ যে বছরের পর বছর আপনার সব অন্যায়, অবিচার সহ্য করে থেকে গেলো তার দিকে আপনার ফিরে তাকানোর সময়ও নেই! এতটা অকৃতজ্ঞ আপনি কীভাবে? আসলে আপনার সাথে থাকা যায় না। অবনী মা যে কেন রয়ে গিয়েছে!"
আমজাদ সওদাগর উদ্ভ্রান্তের মতন মেয়ের দিকে তেড়ে আসতে নিলেই তাকে আটকালের অবনী বেগম। হাত টেনে ধরলেন,
"কী করছেন! তেড়ে যাচ্ছেন কেন ওর দিকে?"
অবনী বেগমের এই ধরে আটকাতে চাওয়াটাই যেন কাল হলো। আমজাদ সওদাগর মেয়েকে ধরতে না পেরে চড়টা বসালেন অবনী বেগমের গলায়। হুংকার দিয়ে বললেন,
"তোর আস্পর্ধাতেই আজকে ও এতটা বেড়েছে। নিজের বাপকে বলছে কিনা, বাপের সাথে থাকা যায় না! এত বড়ো কথা?"
আনন্দের হাঁটে আমজাদ সওদাগর যেন ভাঁটা এনে দিলেন। অহি ছুটে গিয়ে অবনী বেগমকে টেনে নিলো। সাথে মুনিয়া বেগম ও রোজা সওদাগরও গেলেন। আফজাল সওদাগর ও নুরুল ইসলাম হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। চেরিটা চুপটি করে চিত্রার বুকের বা’পাশে লেপ্টে গেলো।
অহি কাঁপছে রাগে থরথর করে। আফজাল সওদাগর নিজের ভাইকে শাসিয়ে বললেন,
"আশ্চর্য আমজাদ! তুই ঘরভর্তি মানুষগুলোর সামনে ছোটো বউয়ের গায়ে হাত তুললি কেন? আক্কেল জ্ঞান সব শেষ তোর?"
"উনার আক্কেল কখনো ছিলো, বড়ো আব্বু?"
আমজাদ সওদাগর দমে এলেন। হুট করে রাগটা এত মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো কীভাবে বুঝেই উঠতে পারলেন না।
চিত্রা চেরিকে বুকের ভেতর জাপ্টে ধরেই বলল, "ছোটো মুখে একটা বড়ো কথা বলছি কিছু মনে করো না তোমরা। কিন্তু ছোটো আম্মু, আমার মনে হয় তোমার একবার পুলিশ স্টেশন যাওয়া উচিত। ছোটো আব্বুর নামে একটা মামলা দেওয়া উচিত।"
এতক্ষণ যা-ই ঘটেছিলো সবটুকু সহ্য সীমায় থাকলেও চিত্রার কথা যেন বি স্ফোর ণ ঘটালো। ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো সকলে। নুরুল ইসলাম মেয়ের এমন আক্কেলগুড়ুম কথায় ধমকে উঠলেন,
"তুমি চুপ থাকো। এত বড়ো কথা কীভাবে বলছো তুমি? দিন দিন অভদ্র হচ্ছো।"
অহি নুরুল ইসলামকে থামিয়ে বলল, "চিত্রা ভুল কিছু তো বলেনি মেজো আব্বু। মায়ের উচিত এক্ষুনি আমার সাথে পুলিশ স্টেশন যাওয়া এবং মামলা করা উনার নামে।"
কী এক বিশৃঙ্খল অবস্থা! বিয়ের আমেজটা মুহূর্তেই থিতিয়ে গেলো। আফজাল সওদাগর বুদ্ধিমান লোক। সবটা নিয়ন্ত্রণে আনতে তিনি নিজের ভাইকে ধমকালেন। অবনী বেগম তখনও চুপ করেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। একটি কথাও বললেন না। কী যেন ভেবেই গেলেন আপন মনে।
পরিস্থিতি যখন হাতের নিয়ন্ত্রণে এলো তখন অহি সাত-পাঁচ না ঘুরিয়ে বেশ অকপটে বলল,
"বড়ো আব্বু, আমি চাই আমার পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানটাতে যেন এই লোক উপস্থিত না থাকেন। উনি কোথায় যাবেন চলে যাক। অন্তত এ ক'টা দিন যেন এই বাড়িতে উনাকে না পাওয়া যায়।"
কথা শেষ করেই গটগট পায়ে জায়গাটা থেকে চলে গেলো অহি। তার পেছন পেছন চিত্রা ও চেরিও গেলো। আফজাল সওদাগর নানান ভাবে ছোটো ভাইকে ধিক্কার জানাতে লাগলেন।
*
তমুর সুন্দর ঠোঁট জোড়ায় হাসি লেপ্টে আছে। বদন জুড়ে খেলা করছে অহেতুক সুখ। যে সুখের কারণ নেই নিশ্চয়। নেই হয়তো ঘরবাড়ি। চিত্রার সাথেই বাহার ভাইদের ছাঁদে বসা। বাহার ভাই গিয়েছেন গোসল করতে। তমুকে পড়িয়ে সবে এসেছেন তার পেছন পেছন মেয়েটা চলে আসছে মিনিট দশ যেতেই। এসেই কেবল ক্ষান্ত হয়নি। সুন্দর করে চিত্রাকে তার বাড়ি থেকে গিয়ে নিয়ে এসেছে। সে কথা বলবে চিত্রার সাথে। কয়েকদিনে মেয়েটা চিত্রার বেশ ভক্ত হয়ে গিয়েছে কি-না!
বরইয়ের আচারটা মুখে পুরে নিয়ে স্বাদে চোখ মুখ বন্ধ করলো চিত্রা। বেশ প্রশংসা করে তমসাকে বলল,
"আরেহ্ বাহ্! তুমি তো দারুণ আচার বানাতে পারো!"
তমসা তখন বাহার ভাইয়ের ছাঁদের এদিক ওদিকে ঘুরছে চঞ্চল পায়ে। কৌতূহল নিয়ে এটা ওটা দেখছে নেড়েচেড়ে। চিত্রার প্রশংসায় সে চিত্রার দিকে তাকিয়ে বেশ সুন্দর করে হাসলো। গুটি গুটি পায়ে চিত্রার কাছে এগিয়ে এসে উৎফুল্ল স্বরে বলল, "সত্যি!"
"হ্যাঁ, একদম।"
"থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ আপু।" বলেই চিত্রার গলা জড়িয়ে ধরলো মেয়েটা।
চিত্রা মুচকি হেসে খানিকটা ধরল আগলে। এবার তমসা আয়েস করে চিত্রার সামনে বসলো। প্রায় কিছুটা ফিসফিসিয়ে বলল, "তুমি কত প্রশংসা করো আমার কিন্তু স্যার একটুও করে না।"
চিত্রার মুখে নাড়ানো থেমে গেলো। বুকের ভেতর জমাট বা