করে চলে এলাম তার কাছে। আদ্রিশ ভাইয়াকে দেখতেই একরাশ লজ্জারা এসে ঘিরে ধরল আমায়। কিছুক্ষণ আগের ঘটনা আবারও মনে পড়ে গেল আমার। তবুও বুঝতে না দিয়ে মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে কিছু বলার জন্যে উদ্যত হতেই আমায় থামিয়ে দিয়ে তিনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন
-' রিশতা আর অরনী এসে খাওয়ার জন্য তোকে ডেকে গেছে কতবার, খেয়াল আছে কোনো? নাকি কানে তুলো গুঁজে বসেছিলি এতোক্ষণ?
-' সরি ভাইয়া। আসলে আমার না একটুও খেতে ইচ্ছে করছে না।
আমার কথা শুনে আদ্রিশ ভাইয়া কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ ফেলে চিন্তিত সুরে বলল
-' তোর কি শরীর খারাপ লাগছে মেহু?
মাথা নাড়িয়ে বললাম
-' না ঠিক আছি আমি। এমনিই ভালো লাগছে না আরকি।
আমার হেয়ালীমার্কা কথা শুনে আদ্রিশ ভাইয়া এবার কিছুটা শাসনের সুরে বলল
-' কানের নিচে মারব এক চটকনা। এতটুকু মেয়ে আবার বলে কিনা আমার খেতে ভালো লাগছে না! বলি, খাওয়া দাওয়া না করলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বি, তখন তো আবার মহারানীকে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব আমার ঘাড়ে এসে পড়বে। ডাক্তার হয়েই বিপদে পড়েছি আমি।
আদ্রিশ ভাইয়ার কথা শুনে আমি ভ্রু কুটি করে বললাম
-' আমি অসুস্থ হলে তোমার কি তাতে?
-' আমার কি মানে, তুই অসুস্থ হয়ে পড়লে আমার কি হবে বুঝতে পারছিস না তুই?
আদ্রিশ ভাইয়ার কথা শুনে আমার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। মানুষটা আবার আমায় ভালো টালো বাসে নাকি। লোকটাকে বাজিয়ে দেখতে হবে তো একটু। আমি এবার মাথা নাড়িয়ে না বোঝার ভান করে বললাম
-' না তো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা ভাইয়া।আমাকে একটু বুঝিয়ে বলো তো ভাইয়া।
আদ্রিশ ভাইয়া এবার কিছুটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকে শান্ত কন্ঠে বলল
-' এই যে মহারানী আপনার কিছু হলে তো ছোটমা এসে আমায় ধরে বলবেন তার গুণধর মেয়ের কি চিকিৎসা করেছি আমি, যে তার এই দশা। তখন তো আমার ডাক্তারি সার্টিফিকেট নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। আর সেই সাথে উদুম কেলানিও ফ্রি। ভাবা যায় এগ্লা?
এতোটুকু বলে সুক্ষ্ম হাসল আদ্রিশ ভাইয়া। আমি তার হাসির পানে তাকিয়ে রইলাম খানিক্ষন। এই হাসিতেই তো আমি...।
আদ্রিশ ভাইয়ার কাছ থেকে এমন উত্তর এক্সপেক্ট করিনি আমি। তাই তার উত্তর শুনে আমি আশাহত হলাম কিছুটা। উনি আছেন ওনার সার্টিফিকেটের চিন্তায়। ধুর তোর নিকুচি করেছে সার্টিফিকেট। এমন নিরামিষ মার্কা কাজিন আমার চাই না! আমায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি এবার আবারও কিছুটা শাসনের সুরে বলল
-' মাথায় তো আছে শুধু দুষ্ট বুদ্ধি। ভালো বুদ্ধি থাকলে জীবনে শাইন করতে পারতিস। দিনদিন তো বেয়ারা হয়ে যাচ্ছো, মেয়ে। ভর দুপুরে মানুষকে ফোন দিয়ে ওলোট পালোট কথা বলা আমি বার করছি। আজ থেকে তোর ফোন জমা দিবি আমার কাছে। পড়াশোনা বাদ দিয়ে এইসব ফাইজলামি করা, তাইনা? দাঁড়াও চাঁদ তোমায় দেখাচ্ছি মজা!
কথাটা বলেই বাঁকা হাসল আদ্রিশ ভাইয়া। ওনার কথা শুনে আমি একেবারে চুপসে গেলাম। এই লোক এখন আবার কি ফন্দি আঁটছে কে জানে? দুপুর বেলায় আমার ওমন বেহায়া মার্কা কর্মকান্ডে আমি নিজেই লজ্জা পেয়েছি ভীষণ। শেষমেশ 'শাশুড়ি আম্মু' বলে সম্মোধন করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলাম আদ্রিশ ভাইয়ার কাছে। ইশ কি লজ্জা কি লজ্জা! মনের ভুলেও রিশতা আর অরনীর সাথে আমি আমার জীবদ্দশাতেও আর ট্রুথ ডেয়ার খেলব না বলে মনে মনে পণ করলাম। ঘরে ঢুকে তখন থম মেরে বসেছিলাম এই মানুষটার সামনে পড়বো না তাই। কিন্তু ঠিক এসে হাজির হলো আমার সামনে। আর কয়েক দফা কথা শুনিয়ে দিলো আমার মতো নিষ্পাপ মাসুম বাচ্চাটিকে।
আদ্রিশ ভাইয়া পুনরায় বলে উঠল
-' তুই কি যাবি নাকি এখানে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে থাকবি মেহু?
অগত্যা আমি আর কথা না বাড়িয়ে তাই আদ্রিশ ভাইয়ার পেছন পেছন চলে এলাম ডাইনিং রুমে।
ডাইনিং টেবিলে মা এবং মামনি খাবার পরিবেশন করছেন। রিশতা আর অরনী বসে বসে কিসব জানি ফিসফিস করছিল এমন সময় আমায় দেখতেই ফিচালো হেসে অরনী বলে উঠল
-' কি রে আমরা ডাকলাম তখন তো এলি না। যেই আদ্রিশ ভাইয়া ডাকতে গেলো ওমনি সুরসুর করে নেমে এলি?
রিশতা পাশে থেকে হেসে ঠাট্টা করে বলে উঠল
-' শাশুড়ির ছেলে বলে কথা তার ডাকে সাড়া না দিলে কি হয়...
এতোটুকু বলে রিশতা নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরল। ইশ কি বলতে কি বলে ফেলেছে সে! দাঁত দিয়ে জ্বিভ কেটে মেহরুনের দিকে তাকায় রিশতা।
রিশতার পা