#
মুহিত আমেনা বেগমের আচারণে হাসল। মুসাওয়াদও সন্তুষ্ট হল যেন, যাক মা কোনো প্রতিক্রিয়া করে নি।
সোনালী তো একটু পর পরই মুহিতের দিকে তাকাচ্ছে। সাবরিহা কিছু সময় ফোনে ব্যস্ত ছিল। এদিকে মুসাওয়াদ অনেকটা সময় সাবরিহার মুখে অপলক দৃষ্টি তাকিয়ে ছিল। সাবরিহার কি একটা মনে হতেই চোখ তুলে তাকাতেই মুসাওয়াদের চোখে চোখ পড়ে। তাতেই থতমত খেয়ে আবারো মাথা নিচু করে ফেলল। সাবরিহাকেথতমত খেতে দেখে মুসাওয়াদের ঠোঁটে হাসি ফুঁটল। তারপর উঠে গিয়ে সোজা সাবরিহার সামনে দাঁড়াল। উঁচু-লম্বা লোক, হুট করে এতো সামনে আসায় ভরকে গেছে মেয়েটা তবে কিছু বলার পূর্বেই উপর থেকে দুটো ভারী শাড়ি নামায়। একটা মিন্ট গ্রীন আরেকটা লেভেন্ডার। তারপর আমেনা বেগমকে ডেকে কি একটা বলতেই আমেনা বেগম মাথা নাড়িয়ে সোনালীকে ডাকে আর সাবরিহাকে তারপর দুইজনকে জিজ্ঞেস করতেই সাবরিহা অনেকটা সময় তাকিয়ে থাকে শাড়ির দিকে। এর মধ্যে সোনালী আগেই আমেনা বেগমের দিকে তাকায় তারপর মুহিতের দিকে তাকিয়ে লেভেন্ডার রংয়ের শাড়িটা তুলে নেয়। তারপর মিন্ট গ্রীন শাড়িটা সাবরিহার দিকে এগিয়ে দেয়। সাবরিহা বার-কয়েক না বলে। তাতে সোনালী একটু চোখ গরম দেয়। আমেনা বেগম সাবরিহার মাথায় হাত রেখে বলল,
“প্রথমবার কিছু দিচ্ছি, নিও নেও সাবরিহা।”
“কিন্তু আন্টি—”
কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারল না। আমেনা বেগম মৃদুহেসে বলল,
“আদর ফিরিয়ে দিতে নেই মেয়ে। আদর করে দিয়েছি, বিয়ের দিন এটাই পড়বে। আর কিছু শুনতে চাই না।”
সাবরিহা পড়ল বিপাকে। সোনালী ঠেলে দিয়ে নিচু-গলায় বলল,
“নে নে। আন্টি এতো করে বলছে, না নিলে বেয়াদবি দেখায়।
অগত্যা সাবরিহা ঢোক গিলল তারপর হাত বাড়িয়ে শাড়িটা তুলে নিল। তারপর হেসে বলল,
“ধন্যবাদ আন্টি। যদিও এটার দরকার ছিল না। তবুও বিয়ের দিন অবশ্যই পড়ব।”
কথাটা শুনতেই আমেনা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দিল সাবরিহার। মুসাওয়াদ সাবরিহাকে শাড়ি নিতে দেখে বিশ্বজয়ী হল যেন। তারপর ধীরে সেখন থেকে সরে এলো। সবরিহা শাড়ি তুলে আশেপাশে তাকিয়েছিল। কিন্তু মুসাওয়াদকে না দেখে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তারপর বাকি কেনাকাটা গুলো করল এবার আর মুসাওয়াদকে তেমন দেখা যায়নি তাতেই যেন একটু স্বস্তিবোধ করল সাবরিহা।
—---------------
আজকে রতে বিয়ে তাই পার্লারে এসেছে সোনালী, সাবরিহা আর ওদের কিছু কাজিন। সাবরিহা বুঝতে পারছে না, সোনালী তাকে নিয়ে এতো আদিখ্যেতা দেখাচ্ছে কেন? যদিও সোনালী সাবরিহাকে আলাদা ভাবেই আদর করে। সাবরিহা শান্ত চোখে সোনালীকে দেখলো। বিয়ের মধ্যে কে এমন লেভেন্ডার শাড়ি পড়ে? সেওমজোর করে মিন্ট গ্রীন শাড়িটা পড়েছে। শ্বাস ফেলল সাবরিহা এর মধ্যে সোনালী নিজের নাকের নলক ঠিক করে সাবরিহার উদ্দেশ্য বলল,
“এই সাবরিহা শোন না, আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে রে। তুই একটু বাহির থেকে আমার জন্য কিছু এনে দিবি?”
সাবরিহা মাথা নাড়িয়ে বলল,
“আচ্ছা বসো। আমি আসছি!”
কথাটা বলে পার্লার থেকে বেড়িয়ে আসে। এখন রাত দশ-টার কাছাকাছি। এখনি নাকি দোকান বন্ধ কি একটা অবস্থা। এসব ভেবে রাস্তার একটু সামনে আগাতেই কেউ কোনো রুমাল দিয়ে তার মুখ চেপে ধরতেই সাবরিহা ভরকায়। তবে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে কিছুতে নিজেকে মুক্ত করতে পারল না। উল্টো চোখে বন্ধ হয়ে নেতিয়ে পড়ল সাবরিহা।
—-------
সাবরিহা এতক্ষণেও না আসায় সোনালীর বুঝতে সময় লাগেনি কি হয়েছে। তবুও কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকে। এর মধ্যে বাসা থেকে ফোন দেয়াতে যখন সবাই বাসায় যাবে ভাবল। তখন এক কাজিন বলল,
“সোনালী আপু সাবরিহা আপু তো এখনো এলো না।”
সোনালী অবাক হবার ভান করে বলল,
“এই রে, আসলেই তো আমি আসলেই ভুলে গেছি। এই গিয়ে দেখতো ওর আসতে এতো দেরি হচ্ছে কেনো?”
ওদের মধ্যে দুজন বাহিরে গেল। খানিকক্ষণ পর ফেরত এলো সাথে হাঁপিয়ে যাওয়া গলায় বলল,
“সোনালী আপা, সাবরিহা আপুকে কোথাও পাচ্ছি না। আমরা দুইপাশই ভালো মতো দেখেছি!”
চমকানোর চেষ্টা করে ভীতু গলায় বলল,
“কি বলছিস? সাবরিহা… “
মুহুর্তেই সবাই যেন আরো ভয় পেল। সোনালী একটা চেয়ারে বসে পড়ে। এদিক থেকে বাসা থেকে লাগাতার কল আসতে থাকে। সোনালী এবার সত্যিই ঘাবড়ে যায়। তারপর সবার মুখ দেখে বলল,
“কল ধরার দরকার নেই।”
আরেক কাজিন রাগত্ব গলায় বলল,
“পা গল তুমি আপা? সাবরিহাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের বাসায় জানানো উচিত।”
যেতে যায় সোনালী চিৎকার করে বলল,
“তোরা বুঝতে পারছিস, ওকে না পেলে কি একটা হবে? আমি তোদের নিয়ে এসেছি। আমি ওকে বাহিরে পাঠালাম। আর এখন ওকে পাওয়া যাচ্ছে না। ও বাহিরে গেছে অনেকটা সময়! এখনো ফেরেনি।”
“তাহলে আমাদের বাসায় জানানো উচিত আপু। যদি সাবরিহার সাথে খারাপ কিছু হয়।”
মুহুর্তেই টনক নড়ল। দ্রুত ফোন বের করে আগে কল দিল মুসাওয়াদের ফোনে। নম্বরটা সুইচড-অফ বলছে৷ এবার আরো ভয় পেয়ে যায় সোনালী। ঢোক গিলে সবার দিকে তাকায় তারপর আবারো নম্বরে ডায়াল করে এবারও ফোন বন্ধ। সাবরিহার নম্বরে কল দিতেই তা বেজে উঠল সামনে ড্রেসিংটেবিলের সামনে। এতে যেন আরো আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। বাসা থেকে অনবরত কল আসছে। কাঁপা কাঁপা হাতে কল রিসিভ করতেই সোনালীর মা বলল,
“কিরে কোথায় তোরা? কখন থেকে কল দিচ্ছি?