ফিরে আসা
নদীর ধারে সেই পুরনো রেলস্টেশনটা এখনও আছে। মানুষজন এখন আর তেমন আসে না, ট্রেনও থামে না। কিন্তু রোজ বিকেলে একজন ঠিক এসে বসে পড়ে একটা কাঠের বেঞ্চে — নাম তার অনিক।
এই স্টেশনে একসময় প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় একটা ট্রেন আসত — আর সেই ট্রেনেই নামত মেঘলা।
দশ বছর আগে ওদের প্রথম দেখা হয়েছিল এখানেই। মেঘলা শহর থেকে গ্রামে এসেছিল কাজের সূত্রে, আর অনিক ছিল স্থানীয় একটা স্কুলের শিক্ষক। প্রথমে চোখাচোখি, তারপর কথা, তারপর কফি, বইয়ের আদান-প্রদান — ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ভালোবাসার সম্পর্ক।
মেঘলা বলত, “আমি একদিন বড় শহরে ফিরে যাব, অনিক। কিন্তু কথা দিচ্ছি, ফিরে আসব। তুমিই আমার ঠিকানা।”
অনিক শুধু হাসত, আর বলত, “আমি অপেক্ষা করব।”
কিন্তু মেঘলা সেই একদিন ফিরে যায়, আর আরেকদিন আর আসে না।
প্রথমে ফোন ছিল, চিঠি ছিল, পরে সেসবও বন্ধ হয়ে যায়।
অনেকে বলেছিল, মেঘলা বিয়েও করে ফেলেছে শহরে।
কিন্তু অনিক বিশ্বাস করত না। ওর মনে হত, মেঘলা কোথাও হারিয়ে গেছে, হয়তো ফিরে আসবে একদিন।
তাই প্রতিদিন বিকেলে সে আসে এই পুরনো রেলস্টেশনে, সেই পাঁচটা বেজে ওঠার আগেই বসে পড়ে বেঞ্চে। হাতে থাকে একটা ছেঁড়া বই—মেঘলার দেওয়া উপহার।
আজও সে এসেছে। দূরে ট্রেনের হুইসেল শোনা যায়।
আচমকা স্টেশনের শেষ প্রান্তে একটা চেনা মুখ। চোখে চশমা, মাথায় কিছুটা পাকা চুল, কিন্তু সেই চোখ — ঠিক আগের মতোই।
অনিক উঠে দাঁড়ায়।
মেঘলা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে। চোখে জল।
"আমি ফিরতে চেয়েছিলাম, অনিক… কিন্তু পারিনি। এখন এসেছি, যদি এখনও দেরি না হয়ে গিয়ে থাকে।"
অনিক কিছু বলে না। শুধু মেঘলার হাতটা ধরে।
আর স্টেশনের পুরনো ঘড়িটা ঠিক তখন পাঁচটা বাজায়।
শেষ।
এই গল্প যদি আপনার ভালো লাগে, আমি এর পরবর্তী অধ্যায়ও লিখতে পারি — মেঘলার ফেরার পর কী হয়, তারা কীভাবে আবার একসঙ্গে জীবন গড়ে তোলে... অথবা আরও গভীর, আবেগময় গল্প।
আরও একটি নতুন গল্প চাইলে বলুন, আমি তৈরি আছি।