---

গল্প: শেষ চিঠি

পল্লবপুর গ্রামের শেষপ্রান্তে ছোট্ট একটা কুটির। সেখানে থাকেন বৃদ্ধা অনিমা দেবী। বছর সাতেক ধরে তিনি একাই থাকেন, তার স্বামী বহু আগেই পরলোক গমন করেছেন। একমাত্র ছেলে সৌরভ শহরে থাকে, বড় চাকরি করে, কিন্তু মায়ের খোঁজখবর খুব একটা নেয় না।

অনিমা দেবী প্রতিদিন সকালে উঠেই নিজের বাগানে ফুল গাছগুলোতে জল দেন। তাঁর চোখে একটা অদ্ভুত শান্তি, কিন্তু ভেতরে কোথাও যেন গভীর এক শূন্যতা বাসা বেঁধেছে। প্রতিদিন বিকেল হলে তিনি চা খেয়ে বারান্দায় বসেন, আর দূরপাল্লার বাসগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন—হয়তো অপেক্ষা করেন, যদি কখনো ছেলে এসে পড়ে।

একদিন সকালে ডাকপিয়ন একটা চিঠি এনে দিল। হাতে পেয়ে চমকে উঠলেন তিনি। অনেক বছর পর চিঠি! হাতে কাঁপুনি নিয়ে খামটা খুললেন।

চিঠিটা সৌরভের। লিখেছে:

> “মা,
জানি, অনেক দিন হলো তোমার কোনো খোঁজ নিইনি। শহরের ব্যস্ততা, সংসারের জটিলতা সব কিছুতেই তোমাকে ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু গতকাল, আমার ছেলেকে যখন স্কুলে নামিয়ে দিতে গিয়ে দেখলাম একটা বৃদ্ধা রাস্তায় বসে কান্না করছে, তখন যেন চোখে সব খুলে গেল। বুঝলাম, মা, তুমি কী হারিয়ে ফেলেছো—আর আমি কী ভুল করেছি।

মা, আমি আসছি। এবার তোমাকে নিয়ে যাব। এই শীতের মধ্যে আর একা থাকতে হবে না।"



চিঠি পড়ে অনিমা দেবীর চোখে জল। কিন্তু এ চোখের জল কষ্টের নয়, এটি আশার, এটি সন্তুষ্টির।

দুদিন পর এক সকালে, গ্রামের বাসস্ট্যান্ডে একটি গাড়ি থামে। সেখান থেকে নেমে আসে একজন যুবক—সৌরভ। সঙ্গে তার স্ত্রী ও ছেলে। অনিমা দেবী তখন বাগানে জল দিচ্ছিলেন। গাড়ির শব্দে ফিরে তাকাতেই চোখ ছলছলিয়ে ওঠে।

“মা,” বলে ডেকে ওঠে সৌরভ।

অনিমা দেবী ছুটে যান। বছর সাতেকের প্রতীক্ষা যেন মুহূর্তেই মিলিয়ে যায়। তিনি ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন। চোখের জল ধরে রাখতে পারেন না কেউই।

সেই সন্ধ্যায়, পুরো পল্লবপুর যেন আলোকিত হয়ে ওঠে। অনিমা দেবী এবার ঘরে ফেরেন—not শুধু ছেলের বাড়িতে, বরং ভালোবাসার মাঝে, আত্মার আবাসে।


---

শেষ।

আপনার চাইলে গল্পটি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বা অন্য ধারায় (ভৌতিক, রোমান্টিক, শিশুতোষ ইত্যাদি)ও লেখা যেতে পারে।