জুয়া নামক নেশার এক নিঃশেষ কাহিনী

নাম ছিল আরমান। শহরের এক কোণায় ছোট্ট একটি চায়ের দোকান চালাত। ছোট হলেও জীবনটা মোটামুটি কেটে যাচ্ছিল—বউ শিলা, আর একমাত্র মেয়ে রিয়া। বড় স্বপ্ন ছিল মেয়েটাকে স্কুলে পাঠাবে, বড় করে মানুষ করবে।

সব ঠিকই চলছিল, যতক্ষণ না একদিন দোকানের পেছনে বসে থাকা কিছু লোকের সঙ্গে পরিচয় হলো—তারা ছিল তাসের খেলোয়াড়, জুয়ার আসর বসাত রাতে। প্রথমে আরমান শুধু দেখত, মজা পেত। পরে তারাও টানল, "একবার খেলেই দেখ, কপাল থাকলে হাজার টাকা পাঁচ মিনিটে কামাই!"

প্রথম দিনেই জিতেছিল দুই হাজার টাকা। মনে হল, এ তো চায়ের দোকানের চেয়ে অনেক সহজ! ধীরে ধীরে দোকানের প্রতি মনোযোগ কমে গেল, আর জুয়া হয়ে উঠল তার জীবনের নেশা।

শিলা অনেকবার বোঝাতে চেয়েছিল—
— "আরমান, তোমার মেয়েটার স্কুলের টাকা তুমি হারিয়ে আসো প্রতিদিন! এই টাকাগুলো তোমার নয়, আমাদের স্বপ্নের!"
আরমান শুনত না। বলত,
— "একদিন এত জিতব, সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব।"

দিনের পর দিন শুধু হার, ঋণ আর আত্মীয়দের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। দোকান বন্ধ হয়ে গেল। ঘরে খাবার ছিল না। একদিন শিলা বলল,
— "আমরা চলে যাচ্ছি। তুমি নিজেকে খুঁজে পেলে তবে ফিরে এসো।"

শিলা আর রিয়া চলে গেল তার বাপের বাড়ি। আরমান তখন ভাঙ্গা মানুষ। যে বন্ধুদের সঙ্গে জুয়া খেলত, তারাও তাকে এড়িয়ে চলতে লাগল। সে তখন রাস্তায় ঘুরে বেড়াত—অচেনা, অভুক্ত, অথৈ জলে ডুবে থাকা এক নৌকার মতো।

এক রাতে, বৃষ্টিতে ভিজে এক টিনের চালের নিচে বসে আরমান কাঁপছিল। হাতে এক তাসের প্যাকেট, আর মাথার ভেতর শুধু একটিই প্রশ্ন—"আমি কি শুধু হারতেই জন্মেছিলাম?"

আজও কেউ কেউ বলে, বাজারের পেছনের সেই পুরনো টিনশেড ঘরের নিচে মাঝে মাঝে একজন লোক বসে তাস ছুঁয়ে কাঁদে। সে আরমানই, যে জিততে গিয়ে সবকিছু হেরে বসেছিল—পরিবার, সম্মান, ভবিষ্যৎ।

শিক্ষা:
জুয়া জেতার লোভ দিয়ে শুরু হলেও শেষটা হয় শুধু নিঃস্বতা ও একাকীত্বে। ভালোবাসা আর পরিবারই জীবনের আসল জয়।