উন্নয়নের পথে সংগ্রাম
নূরের পথ মাদ্রাসা ধীরে ধীরে পরিচিত হতে লাগল। দূর-দূরান্ত থেকে দরিদ্র, এতিম, ও শিক্ষার পিপাসায় তৃষ্ণার্ত ছেলেরা এসে ভর্তি হতে লাগল। কিন্তু সমস্যাও কম ছিল না। জায়গার অভাব, বইয়ের অভাব, খাবার সংস্থান—সবকিছুই ছিল সীমিত।
একদিন একটি ছোট্ট ছেলে, কামাল, খুব দুর্বল অবস্থায় মাদ্রাসায় আসে। মুখে খোঁচাখোঁচা দাড়ি, চোখে ভয় আর মুখে ক্ষুধার ছাপ। সাজিদ তাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কী চাও, বাবা?”
কামাল কাঁপা কণ্ঠে বলল, “আমি পড়তে চাই, হুজুর। মা নেই, বাবা আমাকে ফেলে গেছে। আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।”
সাজিদ তাকে বুকে টেনে নিলেন। বললেন, “তুমি এখন আমার সন্তান। আল্লাহর ঘর কাউকে ফিরিয়ে দেয় না।”
একটি বড় পরীক্ষা: হিংসার মুখোমুখি
মাদ্রাসার প্রভাব যখন বাড়তে লাগল, তখন কিছু প্রভাবশালী মানুষ বিরোধিতা শুরু করল। তারা বলল, “সাজিদ আমাদের ছেলে-মেয়েদের মাথা ঘুরিয়ে দিচ্ছে। এত কোরআনের কথা, হাদীসের শিক্ষা, সবাই তো ব্যবসা ছেড়ে মসজিদে বসে থাকবে!”
তারা নানা বাধা সৃষ্টি করতে লাগল। জমি দখল করার চেষ্টা, মিথ্যা মামলার হুমকি, এমনকি একদিন মাদ্রাসার ছাউনিতেও আগুন ধরিয়ে দেয় কেউ।
সাজিদ সবকিছুর মুখোমুখি হন ধৈর্য নিয়ে। তিনি কেবল বলতেন:
"হে আমার রব্ব, তুমিই যথেষ্ট। 'حسبنا الله ونعم الوكيل'"
আল্লাহর সাহায্য অব্যর্থ
এর কিছুদিন পর একদিন হঠাৎ এক গাড়ি এসে থামে মাদ্রাসার সামনে। নামেন এক প্রবাসী ভাই, আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, “আমি ইউটিউবে এক ভিডিওতে আপনার মাদ্রাসার কথা শুনেছি। আমি নিজে গরিব পরিবার থেকে এসেছি। আজ আল্লাহ আমাকে সামর্থ্য দিয়েছেন। আমি চাই এই মাদ্রাসার পাশে দাঁড়াতে।”
তিনি একটি দুইতলা ভবনের খরচ দেন, প্রতিটি ছাত্রের জন্য বেড, বই, খাবার ও পোশাকের ব্যবস্থাও করে দেন। সেদিন মাদ্রাসার ছাত্ররা কান্নায় ভেঙে পড়ে। সাজিদ তাদের বলল, “দেখো, আল্লাহ কিভাবে সাহায্য পাঠান, যদি তুমি ধৈর্য ধরো।”
শত চেনা মুখে অচেনা গল্প
মাদ্রাসা এখন শুধু শিশুদের পড়ায় না। বয়স্ক মানুষরাও আসেন সন্ধ্যার ক্লাসে। গ্রামের নাপিত, রাজমিস্ত্রী, এমনকি এক সময়ের মাতাল রফিকও এখন প্রতি রাতে কুরআনের ক্লাসে আসে। সে একদিন বলল, “হুজুর, আগে রাতে আমি খারাপ পথে যেতাম, এখন রাতে কুরআনের আলো পাই।”
একবার এক ছাত্রী এসে পড়তে চাইল। গ্রামের মেয়েদের জন্য তখন কোনো ইসলামিক শিক্ষা কেন্দ্র ছিল না। সাজিদ আলাদা ব্যবস্থা করেন, একটি নারী ক্লাসের। তিনি বলেন, “আমাদের সমাজ তখনই বদলাবে, যখন মা হবেন আলোকিত।”
শেষ অধ্যায়: ইসলামের উত্তরাধিকার
বছরের পর বছর কেটে যায়। সাজিদ তখন বৃদ্ধ। তার দাঁড়িতে পূর্ণ সাদা, কিন্তু চোখে সেই আগের মতো জ্বলজ্বলে দীপ্তি। মাদ্রাসার পরিচালনা এখন কামালের হাতে, যে একদিন ক্ষুধার্ত এতিম ছিল। আজ সে বড় আলেম, শিক্ষক, ও সমাজের পথপ্রদর্শক।
একদিন সাজিদ ছাদে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন, “হে রব্ব, আমি কিছুই না। তুমি চাইলে একজন গরিব কৃষকের ছেলে দিয়েই একটি গ্রামের কপাল ফেরাতে পারো।”
সেদিন রাতে সাজিদ ইন্তেকাল করেন। তার জানাজায় ছিল হাজারো মানুষ—ছাত্র, শিক্ষক, পিতা, মাতা, এমনকি সেই সব মানুষও, যারা একদিন তার বিরুদ্ধে ছিল।
তার কবরের গায়ে লেখা ছিল একটি হাদীস:
"যে ব্যক্তি এমন একটি রাস্তা অনুসরণ করে যেখানে জ্ঞান অন্বেষণ করা হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।"
(সহীহ মুসলিম)
শেষ কথা
“সাজিদের সন্ধান” কেবল একটি গল্প নয়। এটি আমাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত, কীভাবে ঈমান, ইখলাস, ও ইলম দিয়ে একজন ব্যক্তি সমাজের চেহারা বদলে দিতে পারে।
shakhawat josim Shah
حذف التعليق
هل أنت متاكد من حذف هذا التعليق ؟