আমি সিলেটের ইতিহাস নিয়ে ১২০০ অক্ষরের মধ্যে একটি গল্প তৈরি করছি:

সুরমা নদীর কলতান আর সবুজ চা বাগানের সুগন্ধে মোড়া শ্রীহট্ট, যা আজকের সিলেট, এক প্রাচীন জনপদ। হাজার বছর ধরে কত সভ্যতা, কত রাজা-মহারাজা, কত সাধু-সন্ন্যাসী এই মাটিকে তাদের পদধূলি দিয়ে ধন্য করেছেন।

শ্রীহট্টের প্রথম কাহিনিগুলো প্রায় ৪ হাজার বছর আগের। পাথরের হাতিয়ার আর মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা প্রাচীন বসতির চিহ্ন প্রমাণ করে, নবপ্রস্তর যুগ থেকেই এখানে মানুষের আনাগোনা ছিল। পৌরাণিক কথা বলে, রাজা ভাস্কর বর্মার কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল এই অঞ্চল। মহাভারতের পাতায়ও নাকি শ্রীহট্টের নাম পাওয়া যায়, এক রহস্যময় প্রাচীন জনপদ হিসেবে।

কিন্তু সিলেটের ইতিহাসের মোড় ঘুরেছিল ত্রয়োদশ শতাব্দীতে। তখন শ্রীহট্ট শাসন করতেন নিষ্ঠুর রাজা গৌড় গোবিন্দ। তার অত্যাচারে প্রজারা অতিষ্ঠ ছিল। ঠিক সেই সময় ইয়েমেনের দূর দেশ থেকে এলেন এক মহাজ্ঞানী সুফি সাধক, **হজরত শাহজালাল (রহ.)**। ৩৬০ জন শিষ্য নিয়ে তিনি এসেছিলেন ইসলামের শান্তির বার্তা নিয়ে। কিংবদন্তি বলে, অলৌকিক ক্ষমতায় তিনি গৌড় গোবিন্দকে পরাজিত করেন এবং শ্রীহট্টে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তার আগমনে শুধু শাসন ব্যবস্থাই বদলায়নি, বদলে গিয়েছিল মানুষের জীবন। জ্ঞানের আলোয় ভরে উঠেছিল শ্রীহট্ট, তৈরি হয়েছিল নতুন সংস্কৃতি আর সহাবস্থানের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত। শাহজালালের মাজার আজও সিলেটের বুকে এক পবিত্র আশ্রয়, যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ আসে শ্রদ্ধা জানাতে।

---

এরপর এল মুঘল যুগ। সম্রাট আকবরের হাতে সিলেট মুঘল সাম্রাজ্যের অংশ হলো। মুঘলরা সিলেটের ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও সমৃদ্ধ করল। নদীপথে চলত নানা পণ্যের আদান-প্রদান। কৃষকরা ফলিয়েছিল সোনা ফসল। সিলেট তখন এক সমৃদ্ধ জনপদ।

কিন্তু ইতিহাসের চাকা ঘুরতে বেশি দেরি হলো না। ১৭৬৫ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি পেল। সিলেটও চলে গেল তাদের দখলে। ব্রিটিশরা আসার পর সিলেটের চেহারাটাই যেন পাল্টে গেল। তারা এখানে শুরু করল **চা চাষ**। সিলেটের উর্বর মাটি আর এখানকার আবহাওয়া চা চাষের জন্য ছিল দারুণ উপযুক্ত। পাহাড়ের ঢালে গড়ে উঠল সারি সারি চা বাগান। চা শিল্প সিলেটের অর্থনীতিতে নিয়ে এল এক নতুন জোয়ার। তবে ব্রিটিশ শাসন মানেই তো শুধু উন্নয়ন নয়, ছিল শোষণও। সিলেটের মানুষ কিন্তু চুপ করে বসে থাকেনি। তারা সক্রিয়ভাবে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল, চেয়েছিল নিজের দেশের স্বাধীনতা।

---

১৯৪৭ সালে এল দেশভাগের সময়। সিলেট তখন আসাম প্রদেশের অংশ। কিন্তু গণভোটের মাধ্যমে সিলেটের মানুষ সিদ্ধান্ত নিল তারা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে থাকবে। এই ছিল এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। তারপর এল ১৯৭১ সাল, বাঙালির জীবনে এক মহাকাব্যিক বছর— **মহান মুক্তিযুদ্ধ**। সিলেট পরিণত হলো এক রক্তাক্ত রণাঙ্গনে। এখানকার দামাল ছেলেরা দেশকে স্বাধীন করতে ঝাঁপিয়ে পড়ল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। অসীম সাহসিকতায় যুদ্ধ করে তারা ছিনিয়ে আনল বিজয়।

আজকের সিলেট স্বাধীন বাংলাদেশের এক গর্বিত অংশ। ২০০১ সালে এটি সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হয়েছে। সুরমা নদীর ধার ঘেঁষে এই শহরটি এখন শিক্ষা, অর্থনীতি আর পর্যটনের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখানকার চা বাগান, জাফলংয়ের স্বচ্ছ জল, বিছনাকান্দির সাদা পাথর আর রাতারগুলের জলাবন – সবকিছু মিলে সিলেট যেন এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। শুধু অতীত নয়, সিলেট তার বর্তমান আর ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনছে গৌরব। # everyone #friends yasser zahran