কুরআনের রক্ষক: হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) – তৃতীয় খলীফা ও শহীদ | ##হযরতউসমান #uthmanra #islamichistory #quranpreserver #শহীদ_খলীফা #জুন্নুরাইন #islamicleadership #sahabiblog
কুরআনের রক্ষক: হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) – তৃতীয় খলীফা ও শহীদ | ##হযরতউসমান #uthmanra #islamichistory #quranpreserver #শহীদ_খলীফা #জুন্নুরাইন #islamicleadership #sahabiblog
@𝑰𝒕'𝒔 𝒚𝒐𝒖𝒓 𝒔𝒉𝒐𝒓𝒐𝒗:বাজারে যাচ্ছিলাম হঠাৎ শুনলাম আপনি পোস্ট করেছেন। তাড়াহুড়ো করে বাড়ি এসে মোবাইল নিয়ে বসলাম। আপনার পোস্টে লাইক কমেন্ট করব বলে , কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস দেখেন গ্রামে থাকি বলে নেটওয়ার্ক ছিল না । তাই শহরের দিকে চলতে শুরু করলাম এবং প্রায় 5 কিলোমিটার যাবার পর মোবাইলে নেটওয়াক আসলো। বসে পড়ি সেখানেই কারণ হার মানতে আমি শিখিনি । পোস্ট দারুন ঝকঝকে হয়েছে ,এই পোস্ট আগামী দিনের ইতিহাস সৃষ্টি করবে । অসাধারণ ভাব ভঙ্গি দিয়ে পোস্টটি করেছেন আপনি। আমাদের এত সুন্দর পোস্ট দেখানোর জন্য ধন্যবাদ। অপেক্ষা করব আগামী দিন যেন আপনাকে এভাবেই দেখতে পারি।
অসম্ভব ভাল পোস্ট। এক কথায় অনবদ্য। বহুদিন পরে একটা ভাল পোস্ট দেখলাম। একবিংশ শতাব্দীতে এধরনের ছবি আর আগে আসে নি। অনবদ্য এবং অসাধারণ। শুধু যে প্রাসঙ্গিক ও সময় উপযোগী পোস্ট তাই নয়, একেবারে অপরূপ সৌন্দর্যের মূলে কুঠারাঘাত করেছেন। তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমরা যখন সম্রাজ্যবাদীদের চোখ রাঙ্গানো আর আমলাতান্ত্রীক জটিলতার শিকার হয়ে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছি একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে; ঠিক তখনি, ঠিক সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আপনার এই পোস্টের মাঝে আমি খুঁজে পাচ্ছি অন্ধকার ঠেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি সম্ভাবনা । আর বিদেশী বেনিয়াদের কাছে বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব গ্রহন করার বিপক্ষে একটি সূক্ষ্ম বার্তা। আপনার এই পোস্ট হতে পারে আই এস এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাড়ানোর অনুপ্রেরণা। হতে পারে ২০২৬ বিশ্বকাপ জেতার অনুপ্রেরণা। এই পোস্ট হতে পারে ২০৫০ সালের নতুন লায়লি মজনুর প্রেমের কারণ । আপনার এই পোস্ট হতে পারে বাংলাদেশের প্রথম অস্কার বিজয়ী ছবির অনুপ্রেরণা,আপনার এই ছবি সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক যেকোনো প্রক্ষাপট নিমিষে পাল্টে দিতে পারে,এই পোস্ট দেখে একজন ক্ষুদার্থ ব্যক্তি সারাদিন না খেয়ে থাকার যন্ত্রণা নিমিষে ভূলে যেতে পারে, সৌন্দর্য দেখার জন্য খুব বেশি দূরে যাওয়ার যে প্রয়োজন নেই তা আপনার পোস্ট দেখে আমি অনুধাবন করলাম, আমার ধারনা বিশ্বের বিখ্যাত সব সমালোচকদের এক সাথে করলেও এই পোস্টের কোন ভূল ধরতে পারবে না,খুব বেশি কিছু বলবনা কারন আবেগে চোখে পানি চলে আসছে। ইহা আসলেই একটি দূর্দান্ত পোস্ট ।🐸🙂🙂
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
আপনি সম্ভবত 'আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি'আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ' সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। এটি বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাসমূহের সর্বোচ্চ শিক্ষা বোর্ড। নিচে এর বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:
আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি'আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ (Al-Hayatul Ulya Lil-Jami'atil Qawmia Bangladesh)
এটি বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাসমূহের সরকার স্বীকৃত একক ও সমন্বয়কারী ইসলামি শিক্ষা বোর্ড। এর অধীনে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) এর সমমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
১. প্রতিষ্ঠা ও উদ্দেশ্য:
প্রতিষ্ঠা: ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এটি গঠিত হয়।
উদ্দেশ্য: কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা বজায় রেখে দারুল উলূম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরে কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি)-এর সমমান প্রদান করা এবং কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা।
২. কার্যক্রম ও কার্যাবলী:
দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ: এটি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সকল বোর্ডের প্রতিনিধিত্ব করে প্রতি শিক্ষাবর্ষে দেশজুড়ে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শিক্ষাস্তর সম্পন্ন হয়।
শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণ: আল-হাইআতুল উলয়া কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণ, মানসম্পন্ন প্রমিত পাঠক্রম প্রণয়ন এবং বোর্ড ও মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনে কাজ করে।
সনদ প্রদান ও যাচাইকরণ: দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ এবং উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সনদ ইস্যু ও যাচাইকরণের দায়িত্ব পালন করে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম: পরীক্ষার সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য 'হাইআতুল উলয়া এক্সাম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (HEMS)' নামে একটি সমন্বিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিবন্ধন, ফর্ম পূরণ, কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, প্রশ্ন প্রস্তুতি ও বিতরণ, প্রবেশপত্র প্রদান, স্ক্রিপ্ট বিতরণ ও সংগ্রহ, ইনভিজিলেশন, পরীক্ষার উপস্থিতি গ্রহণ, ফলাফল প্রদান ও প্রকাশ, এবং সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। এর একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপও রয়েছে।
৩. মূলনীতি ও বৈশিষ্ট্য:
দারুল উলূম দেওবন্দের মূলনীতি অনুসরণ: এই বোর্ড দারুল উলূম দেওবন্দের আদর্শ, মূলনীতি ও মত-পথের অনুসরণে পরিচালিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে: ঈমান, তাকওয়া ও তাওয়াক্কালতু আল্লাহ (আল্লাহর উপর নিরঙ্কুশ ভরসা) এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকে জীবনের পরম ব্রত হিসেবে গ্রহণ।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আত: মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর সাহাবায়ে কিরামের (রাঃ) মতাদর্শ অনুসরণে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের মতাদর্শ অনুসরণ করা হয়।
চার মাযহাবের প্রতি শ্রদ্ধা: চার মাযহাবের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে হানাফী মাযহাব অনুসরণ করা হয়।
আধ্যাত্মিক তরীকা: সুপরিচিত চার তরীকা (চিশতিয়া, সোহরাওয়ারদিয়া, নকশবন্দিয়া-মুজাদ্দিদিয়া ও কাদিরিয়া) সহ সকল হকপন্থি ধারার প্রতি সহনশীল ও উদার মনোভাব পোষণ করা হয়।
৪. প্রশাসনিক কাঠামো:
আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি'আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ বাংলাদেশের ছয়টি কওমি মাদ্রাসা বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত সকল দাওরায়ে হাদিস কওমি মাদ্রাসার প্রতিনিধিত্ব করে। এর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার উত্তর যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত।
সংক্ষেপে, আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি'আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ হলো বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাসমূহের সর্বোচ্চ অথরিটি, যা কওমি শিক্ষার মানোন্নয়ন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ এবং দাওরায়ে হাদিসের সনদকে সরকারিভাবে মাস্টার্সের সমমান মর্যাদা দেওয়ার কাজ করে।
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ছিলেন ইসলামের এক মহান সাহাবী, যিনি তাঁর জ্ঞান, ইবাদত এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি গভীর ভালোবাসার জন্য সুপরিচিত। তাঁর জীবন ছিল ইসলামের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
নাম: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ।
উপাধি/কুনিয়াত: আবু আব্দুর রহমান।
বংশ: বনু হুজাইল।
ইসলাম গ্রহণ: প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম।
বিশেষত্ব: তিনি ছিলেন কুরআনের হাফেজ এবং শ্রেষ্ঠ কারীদের মধ্যে একজন।
ইসলাম গ্রহণ ও প্রাথমিক জীবন
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) মক্কার একজন রাখাল ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির প্রথম দিকেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি খুবই শিক্ষণীয়। একদিন তিনি মক্কায় উট চরাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও আবু বকর (রা.) তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তারা ইবনে মাসউদকে দুধের জন্য একটি বকরির কথা বলেন। ইবনে মাসউদ (রা.) বললেন যে, এটি তার মালিকের সম্পত্তি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি ছোট বকরি চেয়ে নিলেন যা তখনও দুধ দিতে শেখেনি। রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর নামে সেটির ওলানে হাত বুলাতেই সেটি দুধে ভরে গেল। এই অলৌকিক ঘটনা দেখে ইবনে মাসউদ (রা.) তাৎক্ষণিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্য ও সেবা
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খুবই ঘনিষ্ঠ সাহাবী ছিলেন। তিনি রাসূল (সা.)-এর খেদমতে অধিকাংশ সময় কাটাতেন। রাসূল (সা.) যখন সফরে যেতেন, ইবনে মাসউদ (রা.) তাঁর বিছানা, মেসওয়াক, জুতা ইত্যাদি বহন করতেন। এমনকি তাঁকে 'সাহিবুল নালাইন' (জুতাবাহী) উপাধিতে ডাকা হতো। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে তাঁর পরিবারের একজন সদস্য হিসেবেই দেখতেন এবং তাঁকে নিজের ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছিলেন।
কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান
ইবনে মাসউদ (রা.) ছিলেন কুরআনের একজন শ্রেষ্ঠ ক্বারী ও জ্ঞানী। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে নিজে কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি সরাসরি রাসূল (সা.)-এর মুখ থেকে ৭০টিরও বেশি সূরা মুখস্থ করেছিলেন। রাসূল (সা.) একবার বলেছিলেন, "যে ব্যক্তি কুরআনকে তাজা অবস্থায় পড়তে চায়, সে যেন ইবনে উম্মে আবদ (ইবনে মাসউদ)-এর কিরাত অনুযায়ী পড়ে।" তিনি অসংখ্য হাদিসের বর্ণনাকারীও ছিলেন এবং ফিকাহ শাস্ত্রেও তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল।
ইবাদত ও বিনয়
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) অত্যন্ত বিনয়ী ও পরহেজগার ছিলেন। তিনি দিনের বেলায় রোজা রাখতেন এবং রাতের বেলায় নামাজে দাঁড়িয়ে কাটাতেন। তাঁর বিনয় এতটাই ছিল যে, তিনি নিজেকে একজন সাধারণ মুসলিমের চেয়ে বেশি মনে করতেন না।
জিহাদে অংশগ্রহণ
তিনি বদর, উহুদ, খন্দক সহ প্রায় সকল যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে অংশগ্রহণ করেন। বদর যুদ্ধে তিনি আবু জাহেলকে হত্যা করে ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
মৃত্যু
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ৩৩ হিজরীতে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর জানাজার নামাজ হযরত উসমান (রা.) পড়িয়েছিলেন এবং তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তাঁর জ্ঞান, ইবাদত, বিনয় এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর জীবন মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস।
#_বাসর_রাত
১. মানসিক প্রস্তুতি
বাসর রাত কেবল শারীরিক মিলন নয়, বরং দুটি নতুন মানুষের মধ্যে মানসিক বন্ধন তৈরি হওয়ার একটি সুযোগ। তাই উভয়কেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
আস্থার সম্পর্ক তৈরি: প্রথম রাতেই একে অপরের প্রতি আস্থা ও ভরসা তৈরি করা জরুরি। জীবনের নতুন অধ্যায়ে আপনারা একে অপরের সঙ্গী, এই বিশ্বাস থাকা উচিত।
খোলামেলা যোগাযোগ: কোনো ধরনের সংকোচ না রেখে নিজেদের অনুভূতি, ভালো লাগা, মন্দ লাগা বা কোনো দ্বিধা নিয়ে খোলামেলা কথা বলুন। এটি ভবিষ্যতের সম্পর্কের জন্য ভিত্তি তৈরি করবে।
ভয় ও উদ্বেগ দূর করা: অনেক সময় এই রাত নিয়ে কিছু ভয় বা উদ্বেগ থাকতে পারে। দুজনকেই বুঝতে হবে যে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং কোনো চাপ বা তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন।
অপেক্ষা ও ধৈর্য: যদি একজন সঙ্গী তাৎক্ষণিকভাবে শারীরিক সম্পর্কের জন্য প্রস্তুত না থাকেন, তাহলে অন্যজনের ধৈর্য ধারণ করা উচিত এবং জোর করা থেকে বিরত থাকা উচিত। পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়া এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
২. শারীরিক প্রস্তুতি ও স্বাস্থ্যবিধি
শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং পরিচ্ছন্নতা এই রাতের জন্য অপরিহার্য।
শারীরিক পরিচ্ছন্নতা: বাসর রাতে শারীরিক পরিচ্ছন্নতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের আগে ও রাতে গোসল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত।
শারীরিক মিলন (সহবাস):
মানসিক প্রস্তুতি: শারীরিক মিলনের আগে মানসিক প্রস্তুতি জরুরি। দুজনেই যখন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন, তখনই এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
পূর্বরাগ (ফোরামপ্লে): তাড়াহুড়ো না করে একে অপরের প্রতি আদর, সোহাগ ও রোমান্টিক কথোপকথনের মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত করুন। এটি শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করবে।
ব্যথা বা অস্বস্তি: যদি কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হয়, তবে তা নিয়ে সঙ্গীর সাথে কথা বলুন। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ: যদি এখনই সন্তান না চান, তবে জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখা উচিত। পুরুষদের এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।
স্ত্রীর ঋতুস্রাব: যদি বাসর রাতে স্ত্রীর ঋতুস্রাব (মাসিক) হয়, তবে স্বামী-স্ত্রীর মিলন থেকে বিরত থাকা উচিত। ইসলামে এ অবস্থায় সহবাস নিষিদ্ধ। তবে অন্যান্য শারীরিক ঘনিষ্ঠতা যেমন - আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি অনুমোদিত।
৩. ইসলামিক নির্দেশনা ও আমল
মুসলিম দম্পতিদের জন্য বাসর রাতে কিছু বিশেষ আমল ও নির্দেশনা রয়েছে, যা সম্পর্ককে বরকতময় করতে সাহায্য করে।
দুই রাকাত নামাজ: স্বামী-স্ত্রী মিলে দু'রাকাত নফল নামাজ আদায় করা সুন্নাত। এটি আল্লাহর কাছে নিজেদের নতুন জীবনের জন্য বরকত ও সুখ কামনা করার একটি উপায়। স্ত্রী স্বামীর পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবেন।
দোয়া পাঠ: সহবাসের আগে একটি বিশেষ দোয়া পড়া উচিত। এই দোয়াটি হলো:
بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
(বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তানা, ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা)
অর্থ: "আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ।" (বুখারী, মুসলিম)
স্ত্রীর কপালে হাত রেখে দোয়া: স্বামী সস্নেহে স্ত্রীর মাথার সম্মুখভাগে হাত রেখে বরকতের দোয়া করতে পারেন। এই দোয়াটি হলো:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ
(আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খায়রা মা জুব্বিলাত আলাইহি, ওয়া আউযু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জুব্বিলাত আলাইহি)
অর্থ: "হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তার মঙ্গল ও যে মঙ্গলের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছ তা প্রার্থনা করছি। আর তার অমঙ্গল ও যে অমঙ্গলের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছ তা থেকে আশ্রয় চাই।" (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
কথোপকথন: এমন কোনো অপ্রীতিকর বা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো যা সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে (যেমন - অতীতের সম্পর্ক)। বরং একে অপরের ভালোলাগা, স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলুন।
৪. রোমান্টিক কথোপকথন ও পরিবেশ
বাসর রাতে রোমান্টিক পরিবেশ ও আন্তরিক কথোপকথন সম্পর্ককে আরও মধুর করে তোলে।
প্রশংসা: একে অপরের প্রশংসা করুন। নতুন জীবন শুরুর আনন্দ প্রকাশ করুন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনাদের স্বপ্ন ও পরিকল্পনাগুলো ভাগ করে নিন। যেমন - সন্তান, পরিবার, ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি।
মজার স্মৃতিচারণ: বিয়ের দিনের মজার ঘটনা বা আপনাদের ভালোবাসার মুহূর্তগুলো নিয়ে কথা বলতে পারেন।
ভালোবাসার প্রকাশ: সরাসরি ভালোবাসার কথা বলুন। এটি একে অপরের প্রতি আবেগ ও অনুভূতি বাড়াতে সাহায্য করবে।
আরামদায়ক পরিবেশ: ঘরটি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখুন, হালকা আলো এবং সুগন্ধ ব্যবহার করতে পারেন।
বাসর রাত একটি নতুন এবং পবিত্র যাত্রার শুরু। এই রাতে পারস্পরিক সম্মান, বোঝাপড়া এবং ভালোবাসা দিয়ে নিজেদের নতুন জীবনকে স্বাগত জানানো উচিত।
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ছিলেন ইসলামের এক মহান সাহাবী, যিনি তাঁর জ্ঞান, ইবাদত এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি গভীর ভালোবাসার জন্য সুপরিচিত। তাঁর জীবন ছিল ইসলামের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
নাম: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ।
উপাধি/কুনিয়াত: আবু আব্দুর রহমান।
বংশ: বনু হুজাইল।
ইসলাম গ্রহণ: প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম।
বিশেষত্ব: তিনি ছিলেন কুরআনের হাফেজ এবং শ্রেষ্ঠ কারীদের মধ্যে একজন।
ইসলাম গ্রহণ ও প্রাথমিক জীবন
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) মক্কার একজন রাখাল ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির প্রথম দিকেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাটি খুবই শিক্ষণীয়। একদিন তিনি মক্কায় উট চরাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ও আবু বকর (রা.) তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তারা ইবনে মাসউদকে দুধের জন্য একটি বকরির কথা বলেন। ইবনে মাসউদ (রা.) বললেন যে, এটি তার মালিকের সম্পত্তি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি ছোট বকরি চেয়ে নিলেন যা তখনও দুধ দিতে শেখেনি। রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর নামে সেটির ওলানে হাত বুলাতেই সেটি দুধে ভরে গেল। এই অলৌকিক ঘটনা দেখে ইবনে মাসউদ (রা.) তাৎক্ষণিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্য ও সেবা
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খুবই ঘনিষ্ঠ সাহাবী ছিলেন। তিনি রাসূল (সা.)-এর খেদমতে অধিকাংশ সময় কাটাতেন। রাসূল (সা.) যখন সফরে যেতেন, ইবনে মাসউদ (রা.) তাঁর বিছানা, মেসওয়াক, জুতা ইত্যাদি বহন করতেন। এমনকি তাঁকে 'সাহিবুল নালাইন' (জুতাবাহী) উপাধিতে ডাকা হতো। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে তাঁর পরিবারের একজন সদস্য হিসেবেই দেখতেন এবং তাঁকে নিজের ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছিলেন।
কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান
ইবনে মাসউদ (রা.) ছিলেন কুরআনের একজন শ্রেষ্ঠ ক্বারী ও জ্ঞানী। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে নিজে কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি সরাসরি রাসূল (সা.)-এর মুখ থেকে ৭০টিরও বেশি সূরা মুখস্থ করেছিলেন। রাসূল (সা.) একবার বলেছিলেন, "যে ব্যক্তি কুরআনকে তাজা অবস্থায় পড়তে চায়, সে যেন ইবনে উম্মে আবদ (ইবনে মাসউদ)-এর কিরাত অনুযায়ী পড়ে।" তিনি অসংখ্য হাদিসের বর্ণনাকারীও ছিলেন এবং ফিকাহ শাস্ত্রেও তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল।
ইবাদত ও বিনয়
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) অত্যন্ত বিনয়ী ও পরহেজগার ছিলেন। তিনি দিনের বেলায় রোজা রাখতেন এবং রাতের বেলায় নামাজে দাঁড়িয়ে কাটাতেন। তাঁর বিনয় এতটাই ছিল যে, তিনি নিজেকে একজন সাধারণ মুসলিমের চেয়ে বেশি মনে করতেন না।
জিহাদে অংশগ্রহণ
তিনি বদর, উহুদ, খন্দক সহ প্রায় সকল যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে অংশগ্রহণ করেন। বদর যুদ্ধে তিনি আবু জাহেলকে হত্যা করে ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
মৃত্যু
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ৩৩ হিজরীতে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর জানাজার নামাজ হযরত উসমান (রা.) পড়িয়েছিলেন এবং তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তাঁর জ্ঞান, ইবাদত, বিনয় এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর জীবন মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস।
হযরত আলী (রাঃ) এর জীবনী সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তিনি ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চাচাতো ভাই ও জামাতা। তাঁর জীবনীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক এখানে তুলে ধরা হলো।
প্রাথমিক জীবন ও ইসলাম গ্রহণ
হযরত আলী (রাঃ) প্রায় ৫৯৯ খ্রিস্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মহানবী (সাঃ)-এর চাচা আবু তালিবের সন্তান। মহানবী (সাঃ) ছোটবেলায় তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন এবং লালন-পালন করেন। যখন মহানবী (সাঃ) নবুয়ত প্রাপ্ত হন, তখন হযরত আলী (রাঃ) বালক বয়সেই ইসলাম গ্রহণ করেন। বলা হয়ে থাকে, তিনি ছিলেন পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী।
মহানবী (সাঃ)-এর সঙ্গে সম্পর্ক
হযরত আলী (রাঃ) সবসময় মহানবী (সাঃ)-এর সঙ্গে ছিলেন। মদিনায় হিজরতের রাতে মহানবী (সাঃ)-এর বিছানায় শুয়ে থাকার ঘটনাটি তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সাহসিকতার পরিচয় বহন করে। এটি তাঁকে মহানবী (সাঃ)-এর প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের প্রমাণ দেয়। তিনি মহানবী (সাঃ)-এর কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন এবং তাঁদের ঘরে হযরত হাসান (রাঃ) ও হযরত হুসাইন (রাঃ) জন্মগ্রহণ করেন।
খিলাফত ও শাসনকাল
হযরত উসমান (রাঃ)-এর শাহাদাতের পর ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে হযরত আলী (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হন। তাঁর খিলাফতের সময়কাল ছিল প্রায় পাঁচ বছর। এই সময় মুসলিম বিশ্বে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল।
উটের যুদ্ধ: তাঁর খিলাফতের শুরুর দিকেই একটি বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যা 'উটের যুদ্ধ' নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে হযরত আয়েশা (রাঃ) এবং তাঁর অনুসারীদের সাথে হযরত আলী (রাঃ)-এর বাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
সিফফিনের যুদ্ধ: মুয়াবিয়া (রাঃ) হযরত উসমান (রাঃ)-এর হত্যার বিচার চেয়েছিলেন এবং হযরত আলী (রাঃ)-এর নেতৃত্বের বিরোধিতা করেন। এর ফলে ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিফফিনের যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে কোনো পক্ষই চূড়ান্ত জয় লাভ করতে পারেনি।
খারিজিদের উত্থান: সিফফিনের যুদ্ধের পর, যে সকল অনুসারী হযরত আলী (রাঃ)-এর সালিসের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছিলেন না, তারা আলাদা হয়ে 'খারিজি' নামে একটি নতুন দল গঠন করে।
শাহাদাত
হযরত আলী (রাঃ)-এর খিলাফতের শেষ দিকে খারিজিদের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়। ৬১ বছর বয়সে ৪০ হিজরীর ১৭ই রমজান (৬৬১ খ্রিস্টাব্দ), কুফার মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করার সময় আবদুর রহমান ইবনে মুলজাম নামের এক খারিজি তাঁকে বিষমাখা তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে। দুই দিন পর তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
হযরত আলী (রাঃ) তাঁর জ্ঞান, সাহস, ন্যায়বিচার এবং ইসলামি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার জন্য ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।
উসমান রাঃ | #lifestyle
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
হযরত উসমান (রাঃ) ইসলামের তৃতীয় খলিফা এবং একজন প্রখ্যাত সাহাবী। তিনি ইসলামের ইতিহাসে 'যুন-নুরাইন' (দুই নূরের অধিকারী) এবং 'গনী' (ধনী) উপাধি লাভ করেছিলেন। এখানে তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
প্রাথমিক জীবন ও ইসলাম গ্রহণ
হযরত উসমান (রাঃ) ৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের বনু উমাইয়া গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন কুরাইশদের অন্যতম ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। তাঁর সততা, বিশ্বস্ততা এবং শালীনতার জন্য তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বেই সমাজে অত্যন্ত সম্মানিত ছিলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর দাওয়াতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারীদের (আস-সাবিকুনাল আওয়ালুন) মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
তিনি নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর দুই কন্যা রুকাইয়া (রাঃ) এবং উম্মে কুলসুম (রাঃ)-কে বিবাহ করেছিলেন। এ কারণেই তাঁকে "যুন-নুরাইন" বা দুই নূরের অধিকারী বলা হয়।
খিলাফত ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান
হযরত উমর (রাঃ)-এর শাহাদাতের পর ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে একটি ছয় সদস্যের কমিটির মাধ্যমে হযরত উসমান (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হন। তাঁর খিলাফতকাল ছিল প্রায় ১২ বছর। এই সময়ে তিনি ইসলামের বিস্তারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
কুরআন সংকলন: এটি ছিল তাঁর খিলাফতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ। বিভিন্ন অঞ্চলে কুরআনের ভিন্ন ভিন্ন পাঠভঙ্গির কারণে মুসলিমদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিতে শুরু করলে তিনি হযরত হাফসা (রাঃ)-এর কাছে সংরক্ষিত মূল কপি থেকে একাধিক প্রামাণ্য কপি তৈরি করান এবং সেগুলো বিভিন্ন প্রদেশে প্রেরণ করেন। আজ আমরা যে কুরআনের সংস্করণ ব্যবহার করি, তা মূলত তাঁর তত্ত্বাবধানে সংকলিত হয়েছে।
নৌবাহিনী গঠন: তাঁর সময়ে মুসলিম সাম্রাজ্যের সুরক্ষার জন্য প্রথমবারের মতো একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠন করা হয়। এই নৌবাহিনী ভূমধ্যসাগরে বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে এবং সাইপ্রাস ও রোডস দ্বীপ জয় করে।
সাম্রাজ্যের বিস্তার: তাঁর সময়ে ইসলামি সাম্রাজ্য উত্তর আফ্রিকা, আর্মেনিয়া এবং পারস্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃত হয়।
শাহাদাত
হযরত উসমান (রাঃ)-এর খিলাফতের শেষ দিকে কিছু ষড়যন্ত্রকারীর কারণে মুসলিমদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। কিছু লোক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে এবং বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ একসময় চরম আকার ধারণ করে। ৩৫ হিজরীর ১৮ই জিলহজ, বিদ্রোহীদের একটি দল তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে। তিনি শান্ত থাকতে এবং রক্তপাত এড়াতে চেয়েছিলেন, তাই প্রতিরোধ করতে নিষেধ করেন। অবশেষে, রোজা অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করার সময় বিদ্রোহীরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁর শাহাদাত ছিল ইসলামের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা, যা পরবর্তীকালে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে মতভেদের সূচনা করে।
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়ারাহমাতুল্লাহি।
হযরত উমর (রা.) আনুমানিক ৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছিল খাত্তাব ইবনে নুফাইল এবং মায়ের নাম ছিল হানতামা বিনতে হিশাম। তিনি শৈশবে উট চরাতেন এবং কুরাইশদের মধ্যে একজন প্রভাবশালী ও শক্তিশালী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি তৎকালীন আরবের ঐতিহ্য অনুযায়ী লেখা, পড়া ও বংশতালিকা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।
ইসলাম গ্রহণ
ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি ছিলেন ইসলামের ঘোর বিরোধী। তিনি রাসূল (সা.) এবং মুসলমানদের উপর নানাভাবে অত্যাচার করতেন। একবার তিনি রাসূল (সা.)-কে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তরবারি নিয়ে বেরিয়েছিলেন। পথিমধ্যে এক ব্যক্তি তাকে জানায় যে তার নিজের বোন ও ভগ্নিপতি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এ কথা শুনে তিনি তাদের বাড়িতে যান এবং প্রচণ্ড রাগান্বিত হয়ে তাদের উপর চড়াও হন। সেখানে তিনি সূরা ত্ব-হা-এর কিছু আয়াত পাঠ করেন এবং এর সৌন্দর্য ও সত্যতায় মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণের ফলে মুসলমানরা প্রকাশ্যে কাবা ঘরে সালাত আদায় করার সাহস পায়। রাসূল (সা.) তাকে "আল-ফারুক" (সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী) উপাধিতে ভূষিত করেন।
খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ
হযরত আবু বকর (রা.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার খিলাফতের মেয়াদকাল ছিল ১০ বছর (৬৩৪-৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি এই সময়ে ইসলামী সাম্রাজ্যকে পারস্য, বাইজান্টাইন এবং অন্যান্য অঞ্চলে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করেন। তার শাসনামলেই ইসলাম এক বিশাল শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত হয়।
শাসন ব্যবস্থা ও অবদান
হযরত উমর (রা.)-এর শাসনামল ছিল ন্যায়, সুবিচার এবং প্রজাহিতৈষী শাসনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার কিছু উল্লেখযোগ্য অবদান নিচে উল্লেখ করা হলো:
ন্যায়পরায়ণতা: তিনি একজন কঠোর ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা—সকলের জন্য তার বিচার ছিল সমান।
প্রশাসনিক সংস্কার: তিনি একটি সুশৃঙ্খল প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বিভিন্ন প্রদেশকে বিভক্ত করে সেখানে গভর্নর, বিচারক, ও অন্যান্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেন।
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা: তিনি যাকাত এবং কর আদায়ের জন্য আলাদা বিভাগ স্থাপন করেন। সরকারি কোষাগার (বায়তুল মাল) প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেনাবাহিনীর জন্য নিয়মিত বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করেন।
নাগরিক সুবিধা: তিনি বিভিন্ন শহরে রাস্তাঘাট, সেতু, মসজিদ এবং সরাইখানা নির্মাণ করেন।
শিক্ষার প্রসার: তিনি শিক্ষার প্রসারেও গুরুত্ব দেন এবং বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসা স্থাপন করেন।
শাহাদাত
৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে (২৩ হিজরীর ২৬শে জিলহজ্জ), একজন পারসিক দাস আবু লু'লু'র হাতে ফজরের সালাত আদায় করার সময় তিনি শহীদ হন। তার মৃত্যুর পর হযরত উসমান (রা.) তৃতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। হযরত উমর (রা.)-কে মসজিদে নববীতে রাসূল (সা.) ও হযরত আবু বকর (রা.)-এর পাশেই দাফন করা হয়।
যদি আপনার তার জীবনের কোনো নির্দিষ্ট দিক সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার আগ্রহ থাকে, তাহলে আমাকে জানাতে
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
আবু বকর (রা.)-এর জীবনের বিস্তারিত তথ্য জানতে আপনি চেয়েছেন। আমি আপনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সাহাবী। তাঁর জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে তুলে ধরা হলো:
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
আবু বকর (রা.) ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশের বনু তাইম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর আসল নাম ছিল আব্দুল্লাহ, তবে তিনি 'আবু বকর' নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন।
তাঁর পিতার নাম ছিল আবু কুহাফা (উসমান) এবং মাতার নাম ছিল উম্মুল খায়ের সালমা।
ইসলাম গ্রহণের আগে থেকেই তিনি একজন সৎ, অতিথি পরায়ণ এবং বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি কখনোই মূর্তিপূজা বা মদ পান করেননি।
ইসলাম গ্রহণ:
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তিনিই প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন ইসলামের দাওয়াত দেন, তখন তিনি কোনো দ্বিধা ছাড়াই তা গ্রহণ করেন। এ কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে 'সিদ্দীক' বা 'সত্যবাদী' উপাধি প্রদান করেন।
তাঁর ইসলাম গ্রহণ অনেককে অনুপ্রাণিত করে, এবং তাঁর প্রচেষ্টায় আরও অনেক সাহাবী ইসলাম গ্রহণ করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে সম্পর্ক:
তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আজীবন বন্ধু ও সঙ্গী ছিলেন।
হিজরতের সময় তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একমাত্র সঙ্গী ছিলেন এবং সাওর গুহায় তাঁর সাথে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অসুস্থতার সময় তিনি তাঁর নির্দেশে মসজিদে নববীতে ইমামতি করেন।
খিলাফত:
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পর মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব নিয়ে যখন মতপার্থক্য দেখা দেয়, তখন তিনি প্রথম খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হন।
তাঁর খিলাফতের সময়কালে তিনি বেশ কিছু কঠিন সমস্যার মোকাবিলা করেন, যেমন— ধর্মত্যাগী (মুরতাদ) গোষ্ঠীর বিদ্রোহ দমন, যাকাত দিতে অস্বীকারকারী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মিথ্যা নবুওয়াতের দাবিদারদের মোকাবিলা।
তাঁর শাসনামলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো বিক্ষিপ্তভাবে থাকা কুরআনের আয়াতগুলোকে একত্রিত করে সংকলন করা।
মৃত্যু:
আবু বকর (রা.) দুই বছর তিন মাস দশ দিন খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন।
৬৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ আগস্ট (১৩ হিজরি, ২২ জমাদিউস সানি) তিনি ইন্তেকাল করেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কবরের পাশেই তাঁকে দাফন করা হয়।
Shakil Hossain
মন্তব্য মুছুন
আপনি কি এই মন্তব্যটি মুছে ফেলার বিষয়ে নিশ্চিত?