অভিমান তো তার সাথেই করা যায় যাকে ছাড়া এক মূহুর্তও অন্যকিছু কল্পনা করা যায় না। যাকে প্রতিটা মূহুর্তে মিস করা হয়, তার সাথেই তো অভিমান করা হয়।
আজ অনন্যার সাথে দেখা করতে হবে। টানা ১৫ দিন হয়ে গেলো, কোন দেখা নেই কথাও হয়নি। আজ ও ফোন দিয়ে অনেক বকেছে কেঁদে কেঁদে। ফোন দিয়েই বকাবকি শুরু…
এত অভিমান কিসের তোমার? এত রাগ কেন তোমার? একটা বারও ফোন দেওনি, একটা বারও আমার সাথে কথা বলার কোন প্রয়োজনবোধ মনে করো নি। তোমার ইচ্ছে না থাকতে পারে, আমার বার বার তোমার কথা মনে পড়েছে। এত অভিমান কেন তোমার? তুমি জানো, এই কদিন আমার কত কষ্ট হয়েছে? তুমি কি করে বুঝবে, তুমি তো ভালোই আছো। আর এদিকে একটা মেয়ে কেঁদে কেঁদে মরে যাচ্ছে, একটা বারও খোঁজ নিলে না। কেমন ভালোবাস আমাকে? তুমি পারলেও আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। থ্রী-কোয়াটার কেন হাফ-প্যান্ট পড়ে ঘুরে বেড়াবে। কোন সমস্যা নেই। এই মূহুর্তে তুমি আমার সাথে দেখা করবে। তোমাকে দেখব, তোমার যা ইচ্ছে তাই পড়ে আসবে। প্লিজ না করো না!!
আমি একটা কথাও বলিনি, শুধু মনযোগ দিয়ে ওর কথাগুলো শুনলাম। অনেকদিন ধরে ওর কন্ঠ শুনতে পাইনি, হঠাৎ খুব ইচ্ছে ছিল তাই শুনেই গেলাম। ওর কান্না বিজড়িত কন্ঠ শুনে আমি কি আর অভিমান করে থাকতে পারি? এমন করে বলে না ও! শেষে বললাম, -আমি আসছি। জাস্ট এতটুকুই…
আমিও অনেকদিন ধরে ওর মলিন মুখখানা দেখিনা। ইসসসসসস সেইদিন ওর গালে স্পর্শ করতেই শিউরে ওঠেছিলাম। তারপর থেকে আর ওর স্পর্শ পাইনি, মনটা একেবারে বেকুল হয়ে আছে ওর জন্য। ও নিজে থেকেই যেহেতু বলছে, ভালোবাসি তো ওকে তাই না? অভিমান তো থাকবেই, তাই বলে ভালোবাসবো না??এমনিতে প্রায়ই একটা টি-শার্ট আর থ্রী কোয়াটার পড়ে ওর সাথে দেখা করি। কিন্তু আজ একটু অন্যকিছু করতে হবে, পাগলীটাকে রাগানো যাবে না। তাই ওর গিফট দেওয়া নীল পাঞ্জাবীটা পড়লাম। নীল রং আমার একদম অপছন্দ, অনিচ্ছাসত্ত্বেওপড়লাম ওকে খুশি করানোর জন্য। দুমাস হলো এই পাঞ্জাবী দিয়েছিল আমাকে, কিন্তু একবারের জন্য এটা পড়ে ওর সামনে যাইনি কত বকেছে এর জন্য। আমি নাকি বাচ্চা, এসব থ্রী-কোয়াটার পড়ে ঘুরে বেড়াই। এ নিয়ে প্রায়ই ওর সাথে ঝগড়া হতো, অভিমানের মূল কারন এটাই।
যথাসময়েই আমি বেরিয়ে পড়লাম, আমার পছন্দের জায়গা সেই নদীর ধারেই দেখা হবে। আমাদের প্রথম দেখাটা ওখানেই হয়েছিল।ও ঠিক ওখানেই দাড়িয়ে আছে…
আমার সবথেকে পছন্দের জায়গায়, নদীর ধারে....
আমার আসতে দেরি হচ্ছে, ভীষণ রেগে যাচ্ছো ও! সবসময় এমন করলে তো ও রেগে যাবেই স্বাভাবিক। কিন্তু আজ তো আমি ইচ্ছে করে দেরি করছি না, কৃষ্ণচূড়া ফুল আনতে এসেছি। কি বিশাল বড় গাছ, বাপরে বাপ! ওখানে কি ওঠতে পারবো আমি?অনেক কষ্টে একটা ছেলেকে ম্যানেজ করেছি ওর পছন্দের ফুলগুলো নিয়ে আসার জন্য।
লম্বা বড় অনেকগুলো দেখে একটা ছড়ি নিয়েছি হাতে, ওটা ওকে দিব বলে। আমি জানি ও যতই আমার উপর রাগ করুক না কেন ওই ফুল পেলে ওর আর কিচ্ছু মনে থাকবে না।
একা একা দাড়িয়ে থাকতে ওর খুব বিরক্ত লাগছে! এই তো আমি চলে এসেছি দেখো.....
হাতে লাল টকটকে কৃষ্ণচূড়া ফুল, মুখে অনিন্দ্য হাসি।
দূর থেকেই ওকে দেখা যাচ্ছে হলুদ রঙের শাড়ি পড়েছে! ওটা তো আমার ভালো লাগার রঙ। এ রঙ তোমার সাথেই মানায়, হলুদ শাড়ি পড়লে তোমার উপর বারবার ক্রাশ খাই। ও কি পড়ে আসবে কিচ্ছু বলিনি ওকে, ও শুধু আমায় বলেছিল যা ইচ্ছে তাই পড়ে আসতে। তবুও ও পড়ে এসেছে আমার প্রিয় রঙের শাড়ি আর আমি পড়ে এসেছি ওর সবথেকে প্রিয় রঙের পাঞ্জাবী। কি অদ্ভুদ মিল!ধীরে ধীরে ওর কাছে যাচ্ছি....প্রচন্ড রাগ-অভিমান থাকা স্বত্বেও আমার হাতে ওই কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখে খানিকটা খুশির ছোঁয়া পেয়েছে। ওর মুখে এখন আনন্দের ছাপ। অভিমানটা যেন কোথায় চলে গেলো, আমি জানি তো কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখলে ও সব ভূলে যায়।আমি ঠিক ওর কাছে চলে এসেছি...স্রেফ হাটু গেরে বসে পড়লাম, আর কতবার ওর সামনে এভাবে বসতে হবে জানিনা?? তবুও ওর মুখে একটু হাসি দেখি!মুচকি হাসিতে ফুলগুলো হাতে নিল। ঢং করে বললো, -আমার মাথায় গেঁথে দিবে না?ও হ্যাঁ, মনেই তো ছিল না। ওগুলো তোমার মাথায় শোভা পায়....অল্প কয়েকটা ফুল নিয়ে ওর মাথার খোঁপায় গেঁথে দিলাম, ও ঠিক লজ্জায় মুখ ঘুরালো। - ইসসসস্ এত লজ্জা কোথা থেকে আসে তোমার?ধরবে না ধরবে না বলে আমার হাতটা ধরেই ফেললে। লজ্জায় মুখ এমন লাল হয়েছে আমার চোখের দিকে পর্যন্ত তাকাচ্ছে না। মুখখানা লুকোবার জায়গা পাচ্ছে না বলে, আমার বুকেই মাথাটা গুঁজে দিলে.....কই না তো, আমাদের তো কোন অভিমান ছিলনা!আমার হার্টবিটটা চরমে বেড়ে গেলো, ঘন ঘন নিঃশ্বাস। তোমায় ভালোবাসি আর কতবার বলতে হবে শুনি??ইসসসসসসস আজও ওর ঠোঁটের স্পর্শ পেতে ইচ্ছে করছে, ভীষণ ইচ্ছে। চুপটি করে বসে পড়লাম নদীর ধারে, ভালোবাসায় ভরে গেলো মন।তারপর একদিন..হ্যালো, শুনোও....(অনন্যা) হুমমম, বলো!! (বিপ্লব)বিকেলে আমার সাথে দেখা করবে, জরুরী কথা আছে।কি হয়েছে বলো! এমন ভাঙা ভাঙা কন্ঠ কেন তোমার??এখন কিছু বলতে পারবো না, তুমিঠিক৪টায়ওখানেথাকবেহ্যালোশুনোওও..হ্যালো..দ্যাত...এই শুনোও, জরুরী কথা আছে বিকেলে দেখা করতে হবে।মগের মুল্লুক পেয়েছে, যখন তখন ফোন করে বলবে দেখা করতে হবে। কি পেয়েছে ও? দ্যাত, ভাল্লাগে..যতই গুন গুন করছি না কেন, হাটতে হাটতে ওর কাছেই চলে আসলাম...কি হয়েছে বলো? এমনভাবে ডাকার কি প্রয়োজন? আমার একটা ইমপোর্ট্যান্ট কাজ ছিল, চলে আসতে হলো তোমার জন্য। (বিপ্লব)আমার কথাটাও অনেক ইমপোর্ট্যান্ট।(অনন্যা) আচ্ছা ঠিক আছে বলো! ঢং করতে হবে না।আমার কথাগুলো তোমার কাছে ঢং মনে হয়?আচ্ছা ঠিক আছে তুমি বলো!বাবা আমার বিয়ের জন্য পাত্র দেখেছে, শুনেছি নাকি ওই ছেলের সাথে কথাবার্তাও দেওয়া। এখন তোমার কি করার তুমি করো!ভালো কথা, সবার বাবা-মা ই তো তার মেয়ের জন্য পাত্র দেখে তাই না? মেয়ের জন্য তো আর পাত্রী দেখবে না।
ঠাস ঠাস করে আমার বুকে দুইটা চড় মারলো, ক্রোধে একটা জোরে ধাক্কাও দিলো। আমি ভীষণ স্তম্ভিত হলাম। ও রাগে একেবারে সাপের মত ফোস ফোস করছে, চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো। বাপরে বাপ, সেদিনের লজ্জাবতী আজ ভয়ংকর রূপ ধারন করেছে। একি সত্যিই অনন্যা?
—আমি সিরিয়াস একটা কথ # #