5 hrs ·Translate

একটা প্রেম চাই

১. গহীন অরণ্যের ভেতর থেকে ডাক

রাত গভীর। জানালার ফাঁক দিয়ে হাওয়া আসছে। শহরের কোলাহল থেমে গেছে অনেক আগেই, কিন্তু রায়হানের বুকের ভেতর একটা অদ্ভুত অস্থিরতা। মনে হচ্ছে, তার ভেতরে একটা গহীন অরণ্য আছে—অন্ধকার, নিঃসঙ্গ, অজস্র গোপন ব্যথা লুকানো। সে অরণ্যে পথ খুঁজে পাওয়া যায় না, শুধু শূন্যতা আর নীরবতা।

রায়হান তার ডায়েরিতে লিখল—
"মানুষ সবকিছু পায়, সাফল্য, অর্থ, পরিচিতি… কিন্তু আমি আজও খুঁজছি একটা প্রেম। একটা প্রেম চাই, যা সত্যিকারের হবে, যা আমার নিঃসঙ্গতার অরণ্য আলোকিত করবে।"

২. অতীতের ছায়া

রায়হান একসময় খুব হাসিখুশি ছেলে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই তাকে প্রাণবন্ত মনে করত। আড্ডায়, খেলাধুলায়, গানে—সব জায়গায় সে উপস্থিত থাকত।

সেই সময় তার জীবনে এসেছিল নীলাঞ্জনা। মেয়েটি শান্ত, মিষ্টি হাসি আর নির্ভরতার প্রতীক। একসাথে ক্লাস, লাইব্রেরি, ক্যাম্পাসের দীর্ঘ হাঁটা—সবই যেন এক অদ্ভুত সুখের ভেতর ডুবিয়ে রাখত রায়হানকে।

কিন্তু একদিন নীলাঞ্জনা বলল—
—"রায়হান, আমি দেশ ছেড়ে যাচ্ছি। পরিবার চায় আমি বিদেশে পড়াশোনা করি। হয়তো ফিরে আসব না।"

শাহসী রায়হান কিছু বলতে পারল না। শুধু চুপ করে তাকিয়ে থাকল। আর সেই দিনই তার হৃদয়ের অরণ্যে এক অদ্ভুত অন্ধকার নেমে এলো।

৩. হারানোর পর

নীলাঞ্জনার চলে যাওয়ার পর রায়হান আর আগের মতো নেই। চাকরি পেয়েছে, শহরে পরিচিতি তৈরি করেছে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে ভীষণ একা।

বন্ধুরা বলে—
—"তুই তো সফল মানুষ। এত কিছু পেয়েছিস।"

কিন্তু রায়হানের ভেতরে একটা প্রশ্ন জ্বলে—"যদি পাশে কেউ না থাকে, তবে সাফল্যের মানে কী?"

তার বুকের ভেতরের অরণ্যে প্রতিদিন প্রতিধ্বনি ওঠে—"একটা প্রেম চাই। শুধু একটা প্রেম চাই।"

৪. অরণ্যের ভেতরে এক আলো

একদিন অফিস শেষে বৃষ্টির রাতে এক ক্যাফেতে ঢুকে পড়ল রায়হান। জানালার বাইরে ঝরে পড়ছে বৃষ্টি। হঠাৎ দেখল এক মেয়ে ভিজে কাপড়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। সে ভেতরে ঢুকতেই চারপাশ যেন হঠাৎ নরম আলোয় ভরে গেল।

মেয়েটির নাম অনন্যা। ক্যাফের এক কোনায় বসে গরম কফি খেতে খেতে হেসে বলল—
—"বৃষ্টি আমাকে সবসময় ডাকে। মনে হয়, ভেতরের সব দুঃখ ধুয়ে ফেলতে পারে।"

রায়হান তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল—"হয়তো এই মেয়েটিই আমার অরণ্যের আলো।"

৫. ধীরে ধীরে

কিছুদিন পর থেকেই অনন্যার সাথে যোগাযোগ বাড়ল। অফিস শেষে কফি, বইয়ের দোকানে ঘোরাঘুরি, পার্কে বসে গল্প। অনন্যা যেন সহজ-সরল অথচ গভীর মানুষ।

রায়হান ধীরে ধীরে বুঝতে পারল—সে আবার নতুন করে বাঁচতে চাইছে। অনন্যার হাসি তার বুকের ভেতর অরণ্যের অন্ধকার ভেদ করছে।

কিন্তু ভেতরের ভয়ও থেকে গেল। নীলাঞ্জনার চলে যাওয়া তাকে ভেতরে ভেতরে দুর্বল করে দিয়েছে। সে ভাবল—
"যদি আবার হারিয়ে যায়? যদি আবার আমি একা হয়ে যাই?"

৬. সত্যের মুহূর্ত

এক সন্ধ্যায় নদীর ধারে বসে অনন্যা হঠাৎ বলল—
—"তুমি কি কখনো কাউকে খুব কাছে পেয়েছ? এমন কেউ, যার জন্য ভেতরের সব অন্ধকার দূর হয়ে গেছে?"

রায়হান চুপ করে ছিল। চোখে পানি জমল। তারপর ধীরে বলল—
—"পেয়েছিলাম। কিন্তু হারিয়েছি। আজও খুঁজছি একটা প্রেম, যেটা সত্যি হবে, যেটা আমাকে ছেড়ে যাবে না।"

অনন্যা তার হাতটা ধরে নরম স্বরে বলল—
—"তাহলে খোঁজ বন্ধ করো। কারণ হয়তো তোমার সেই খোঁজ এখানেই শেষ হয়েছে।"

৭. অরণ্য আলোকিত

সেদিনের পর রায়হানের বুকের ভেতরের অরণ্যে অদ্ভুত আলো নেমে এল। তার নিঃসঙ্গতা ভেঙে গেল। প্রতিদিন অনন্যা তার সাথে নতুন স্বপ্ন বুনল, নতুন আশার কথা বলল।

রায়হান ডায়েরিতে লিখল—
"আজ আর শুধু তোমাকে খুঁজছি না, আজ তোমাকে পেয়েছি। আমার গহীন অরণ্য আজ আলোয় ভরে গেছে। কারণ আমি পেয়েছি একটা প্রেম।"

৮. সমাপ্তি নাকি শুরু?

প্রেম হয়তো সবকিছুর সমাধান নয়। তবুও প্রেমই মানুষকে বাঁচার শক্তি দেয়। রায়হানের ভেতরের অরণ্য আর অন্ধকারে ডুবে নেই। সেখানে এখন গান বাজে, আলো ঝরে।

সে এখন বুঝতে পারে—
"একটা প্রেম চাই" মানে শুধু কাউকে পাওয়া নয়, বরং কাউকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা। আর সেই প্রেম যখন সত্যি হয়, তখন অরণ্যের ভেতরের সব পথ একসাথে আলোয় ভরে ওঠে।

30 m ·Translate

❤️ “সবাই ছবির পেছনের গল্পটা বোঝে না… কিন্তু হাসিটা দেখে ভাবে সব ঠিক আছে।”

আজকাল আমরা সবাই ছবির ভিতর আটকে গেছি—একটা হাসি, একটা ফিল্টার, আর সুন্দর একটা ক্যাপশন। অথচ সেই ছবির পেছনে লুকানো থাকে একেকটা না বলা গল্প, একেকটা না-ফেরার অনুভব। এই যে মেয়েটা সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসিমুখে সেলফি দিয়েছে, হয়তো তার চোখের নিচে ঘুমহীন রাতের ছাপ; হয়তো সে কারো অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়ে গেছে।

মানুষ দেখে শুধু বাইরেরটা—চোখে পড়ে সুন্দর সাজ, হাসি, আলো। কিন্তু অনুভব করে না সেই সাজের পেছনের ক্লান্তি, সেই হাসির আড়ালের কান্না। আমরা সবাই আজ মুখোশ পরে বাঁচি, যেন দুর্বলতা দেখানো মানে হেরে যাওয়া।

কেউ জানে না হয়তো ছবির আগে কতক্ষণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বোঝানো হয়েছে “তুই ঠিক আছিস।” কেউ জানে না হয়তো সেই হাসির পেছনে কতটা শূন্যতা।

এই সমাজে দুর্বলতা স্বীকার করাটাই সবচেয়ে বড় সাহস। কিন্তু তার চেয়ে সহজ কাজ হচ্ছে, হাসি দিয়ে সব ঢেকে ফেলা। তাই যখন আমরা কারো ছবি দেখি, তখন ভাবি সব ঠিক আছে… কিন্তু ছবির পেছনে যে গল্পটা লুকিয়ে থাকে, সেটা বুঝতে না পারলে, আমরা শুধু একপাশটা দেখছি।

হয়তো সময় এসেছে ছবির বাইরের মানুষটাকেও বোঝার চেষ্টা করার।

1 h ·Translate

কোরআন সুন্নাহ ও বিজ্ঞানের আলোকে পড়া আগে নাকি লেখা আগে? আসুন আমরা এই বিষয়টিকে ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করি।

কোরআনের আলোকে
কোরআনের প্রথম যে আয়াতটি নাজিল হয়েছে, সেটি হলো সূরা আলাকের প্রথম কয়েকটি আয়াত। এর মধ্যে প্রথম শব্দটিই হলো 'ইকরা' (اِقْرَأْ), যার অর্থ 'পড়ো'। এই আয়াতটি হলো:
> 'পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।' (সূরা আলাক, আয়াত ১)
>
এখানে আল্লাহ প্রথমে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরের আয়াতে আল্লাহ বলেন:
> 'যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।' (সূরা আলাক, আয়াত ৪)

সুতরাং
এই( اقرا ) তথা পড় শব্দটি কোরআনে ৩ বার এসেছে। সূরা আলাকের প্রথম দুটি আয়াতে এবং আরেকটি আয়াতে।
* সূরা আলাক (৯৬), আয়াত ১:
* اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ
* সূরা আলাক (৯৬), আয়াত ৩:
* اِقْرَاْ وَرَبُّكَ الْاَكْرَمُ
* সূরা বনী ইসরাঈল (১৭), আয়াত ১৪:
* اِقْرَاْ كِتٰبَكَ

এবং اعلم তথা জেনে রেখো বা জ্ঞান অর্জন কর এই শব্দটি কোরআনে প্রায় ৫৪ বার এসেছে।

এখানে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:

১-* সূরা মুহাম্মাদ (৪৭), আয়াত ১৯:

* فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ

২-* সূরা হুজুরাত (৪৯), আয়াত ৭:
* وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ

সূরা আল-বাকারাহ (২)
৩-* ২৩৩: وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

৪-* ২৪৪: وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

৫-* ২৬৭: وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ

সূরা আলে ইমরান (৩)
৬- * ১৬৬: وَلِيَعْلَمَ الْمُؤْمِنِينَ

সূরা আল-মায়িদাহ (৫)
* ৭: وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

* ৯৮: وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

সূরা আল-আনফাল (৮)
* ৪১: وَاعْلَمُوا أَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمُسَهُ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ إِنْ كُنْتُمْ آمَنْتُمْ بِاللَّهِ وَمَا أَنْزَلْنَا عَلَى عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

সূরা আত-তাওবাহ (৯)
* ৩৬: إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْراً فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمتقين*

সূরা আল-হুজুরাত (৪৯)
* ৭: وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِنَ الأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُولَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ*:


এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ প্রথমে পড়া বা জ্ঞান অর্জনের কথা বলেছেন এবং এরপর কলম ও লেখার কথা বলেছেন।
এর মানে হলো, কোরআনের দৃষ্টিতে পড়া (জ্ঞান অর্জন) হলো প্রথম এবং প্রধান বিষয়।
তারপর সেই জ্ঞানকে সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য লেখার কথা এসেছে।
সুন্নাহর আলোকে

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনেও আমরা এর প্রমাণ পাই। (তিনি নিজেই কোন মানুষ থেকে আক্ষরিক জ্ঞান শিখেনি যদি শিখত তাহলে লোকেরা বলত যে তিনি অমুক শিক্ষক থেকে শিখে আমাদের কাছে প্রচার প্রসার করে যাচ্ছে সুতরাং এই টা আল্লাহর কালাম নয়,এই অভিযোগ খন্ডন হওয়ার জন্য তার উপাধি ছিল উম্মি যার অর্থ -অক্ষরজ্ঞানহীন ব্যক্তি )
এতদাসত্তেও
তিনি জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দিতেন। বদর যুদ্ধের বন্দিদের বিনিময়ে তিনি শর্ত দিয়েছিলেন যে, তারা যদি মুসলিম শিশুদের লিখতে শেখায়, তাহলে তাদের মুক্তি দেওয়া হবে। এটি স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, তিনি জ্ঞান অর্জন এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য লেখাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে বলেছেন।
সুতরাং, সুন্নাহর দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, যদিও পড়া প্রথমে আসে, কিন্তু লেখাকে একটি অপরিহার্য মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে জ্ঞানকে স্থায়ীকরণ ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞানের আলোকে
আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেও এই বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ।
১. মৌখিক জ্ঞান আগে আসে: মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথমে মৌখিক জ্ঞান চর্চা শুরু হয়েছে। মানুষ কানে শুনে বা মুখে বলে জ্ঞান এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে পৌঁছে দিতো। এটি পড়ার একটি আদিম রূপ। লেখার আবিষ্কার এর অনেক পরে হয়েছে।

২. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা:
মানুষের মস্তিষ্ক প্রথমে শোনার এবং বোঝার ক্ষমতা অর্জন করে। একটি শিশু প্রথমে কথা বলতে ও শুনতে শেখে, এরপর সে অক্ষর জ্ঞান ও লেখার দক্ষতা অর্জন করে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
৩. জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান সংরক্ষণ:
জ্ঞানার্জন বা পড়া হলো মস্তিষ্কে তথ্য গ্রহণ করার প্রক্রিয়া। আর লেখা হলো সেই তথ্যকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার একটি মাধ্যম। জ্ঞানার্জন (পড়া) প্রথমে না হলে জ্ঞান সংরক্ষণ (লেখা) সম্ভব নয়।
উপসংহার
কোরআন, সুন্নাহ এবং বিজ্ঞানের সম্মিলিত দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, 'পড়া' (জ্ঞান অর্জন) হলো প্রথম এবং প্রধান বিষয়। 'লেখা' হলো সেই জ্ঞানকে সংরক্ষণ, স্থায়ীকরণ এবং অন্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। তাই কোরআন প্রথমে পড়ার কথা বলেছে। আমরা হয়তো দৈনন্দিন জীবনে 'লেখা-পড়া' বলে থাকি, কিন্তু এর মূল ভিত্তি হলো পড়া। জ্ঞানার্জনই হলো মূল উদ্দেশ্য, এবং লেখার মাধ্যমে আমরা সেই উদ্দেশ্যকে আরও সফল করি।

2 hrs ·Translate

নীরবতার গল্প

চারপাশে কোলাহল, মানুষজনের ব্যস্ততা, শহরের ভিড়ের শব্দ—সবকিছুই যেন রিমার কাছে হঠাৎ করে অর্থহীন হয়ে গিয়েছিল। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে যে শব্দগুলো একসময় তাকে আনন্দ দিত, আজ সেই শব্দই তার কাছে হয়ে উঠেছে অচেনা, বিরক্তিকর আর শূন্যতার প্রতীক। রিমা আজকাল নীরবতার মধ্যে বেঁচে থাকে।

রিমা একসময় খুব হাসিখুশি মেয়ে ছিল। পরিবার, বন্ধু, কলেজ—সবকিছু মিলিয়ে তার জীবন ছিল অনেক রঙিন। প্রতিটি আড্ডায় সে ছিল প্রাণকেন্দ্র। সবাই বলতো—
“রিমা না থাকলে আড্ডা জমে না।”

কিন্তু জীবন তো সবসময় সমান থাকে না। একদিন হঠাৎ করে তার জীবনে নেমে এলো ঝড়। বাবা এক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। সংসারের ভার এসে পড়লো তার উপর। মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেন, ছোট ভাই তখনও স্কুলে পড়ে। হঠাৎ করে দায়িত্বের বোঝা রিমার কাঁধে এসে জমলো। সেই দিন থেকে তার হাসি যেন হারিয়ে গেল।

প্রথমদিকে বন্ধুরা পাশে ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে সবাই দূরে সরে গেল। কেউ বলতো—
“রিমা আগের মতো নেই।”
আসলে তারা বুঝতে পারেনি, রিমা আর আগের মতো হতে পারবে না। একসময় যে মেয়েটি হাসতে হাসতে আড্ডা জমাতো, সে এখন শুধু চুপচাপ বসে থাকতো। তার চারপাশে ভিড় থাকলেও মনে হতো সে এক অজানা নীরবতার দেয়ালের ভেতরে আটকে আছে।

রাতের পর রাত ঘুম আসতো না। বিছানায় শুয়ে থেকে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকতো। চারদিকে যখন সব থেমে যেত, তখনই নীরবতা তাকে ঘিরে ধরতো। সেই নীরবতা কানে বাজতো ভয়ঙ্কর শব্দের মতো। মনে হতো—
“আমার জীবনে আর কেউ নেই, আমি একা।”

কখনো আবার মনে হতো নীরবতা তার সেরা সঙ্গী। মানুষের কথাবার্তা, দোষারোপ, ভান করা সহানুভূতি—সবকিছু থেকে মুক্তি পেতে সে নীরবতাকে আঁকড়ে ধরতো। দিনের পর দিন কারো সঙ্গে কথা না বলে থাকলেও তার কষ্ট কেউ বুঝতো না।

একদিন গ্রামের বাড়ি থেকে খালা এসে রিমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন—
“মা, তুই সবসময় চুপচাপ থাকিস কেন? একটু কথা বল, বুকের কষ্টটা বাইরে আন।”
রিমা তখন শুধু হাসলো। আসলে তার ভিতরের কথাগুলো এত ভারী হয়ে গেছে যে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাই সে নীরবতাকেই বেছে নিল।

ছোট ভাই পড়াশোনা শেষ করে একদিন চাকরি পেল। সংসারের চাপ ধীরে ধীরে কমলো। কিন্তু রিমার ভিতরের নীরবতা আর ভাঙলো না। সবাই ভেবেছিল, সংসার একটু স্বাভাবিক হলেই রিমা আবার আগের মতো হবে। কিন্তু তারা বুঝলো না—কিছু নীরবতা আজীবন মানুষের সঙ্গে থেকে যায়।

সময়ের সাথে সাথে নীরবতা রিমার জীবনদর্শন হয়ে উঠলো। সে এখন আর অযথা তর্কে জড়ায় না, কারো প্রতি রাগ দেখায় না। সে শুধু চুপ করে থাকে। তার চোখের গভীরতায় লুকিয়ে থাকে হাজারো অপ্রকাশিত গল্প, অগণিত কান্না, আর অব্যক্ত ব্যথা।

একদিন ছোট ভাই তাকে জিজ্ঞেস করলো—
“আপু, তুমি এত চুপচাপ কেন থাকো?”
রিমা মৃদু হেসে উত্তর দিল—
“কিছু কথা আছে যেগুলো বলার জন্য পৃথিবীতে কোনো ভাষা নেই। সেগুলো শুধু নীরবতাই বুঝতে পারে।”

রিমার এই নীরবতা অনেককে ভাবিয়েছে। কেউ কেউ মনে করেছে সে অহংকারী, কেউ আবার বলেছে সে নির্লিপ্ত। কিন্তু আসলে নীরবতা তার বেঁচে থাকার উপায়। সে জানে, মানুষ সবকিছু বুঝতে পারে না। কিন্তু নীরবতা মানুষকে শক্ত হতে শেখায়, গভীর হতে শেখায়।

বছরের পর বছর কেটে গেল। রিমা আজ বৃদ্ধা। ছাদে বসে যখন সূর্যাস্ত দেখে, তখনও তার চারপাশে নীরবতা ঘিরে থাকে। কিন্তু সেই নীরবতা আর ভয়ঙ্কর নয়। এখন সেটা শান্তির মতো, সঙ্গীর মতো।

সে বুঝতে পেরেছে—
“নীরবতাই মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু। যখন সব মানুষ, সব শব্দ, সব সম্পর্ক হারিয়ে যায়—তখন নীরবতা পাশে থাকে।”


---

গল্পের শিক্ষা

নীরবতা কখনো কষ্টের প্রতীক, কখনো শক্তির প্রতীক।

জীবনের কিছু যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, সেগুলো শুধু নীরবতাই বহন করতে পারে।

নীরবতা মানুষকে ধৈর্যশীল করে, গভীর করে এবং জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াতে শেখায়।

image
3 hrs ·Translate

যখন একজন ব্যক্তি তার সমস্ত সত্তা দিয়ে, মন ও প্রাণ উজাড় করে কাউকে ভালোবাসে, তখন তার সেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে প্রায়শই সে অবহেলা এবং মানসিক যন্ত্রণাই পায়।

image
3 hrs ·Translate

গতবছর যে জুনিয়রকে সবচেয়ে বেশি টাকা সালামি দিয়েছিলাম, সে পরবর্তীতে সেমিস্টার ড্রপ খেয়েছে।
আরেকজনকে সামান্য কিছু টাকা দিয়েছিলাম, কিছুদিন পর শুনলাম ওর ব্রেকাপ হয়ে গেছে। ছেলে এখন পাগলের মত আচরণ করে।
অথচ, এক জুনিয়র মেসেজ দিয়ে বলেছিলো, "ভাইয়া শুধু দোয়া করবেন আমার জন্য। সালামি লাগবে না।" ওর এখন বিরাট অবস্থা। সিজি ৩.৯২। মাসিক ইনকাম হাজার চল্লিশেক। গার্ল্ফেন্ড একটা আছে, তাও মেয়েরা পিছে ঘুরঘুর করে।
এখন... তোমার জীবন, তোমার সিদ্ধান্ত। তুমি ভেবে দেখো কি চাও। সালামি নাকি সমৃদ্ধি...!!!
©️ #copied
#news