আগস্ট, মঙ্গলবার
নানা রকম কথা হচ্ছে। এমন কথাও হচ্ছে যে আমি দেশে নেই। বাংলাবাজারের বড় খবর, তসলিমা দেশে নেই। তসলিমা দেশ থেকে কিভাবে কোথায় পালিয়ে গেছেন তা বিস্তারিত লিখেছেন স্বয়ং মতিউর রহমান চৌধুরী। দেশের নামকরা সাংবাদিক এই মতিউর রহমান চৌধুরী ওরফে মতি চৌধুরী ওরফে মইত্যা। লিখেছেন, বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন দেশ ছেড়েছেন। ফার ইস্টার্ন ইকনমিক রিভিউ খবরটি দিয়েছে। এ খবরটিই অনুবাদ করে তিনি তাঁর বাংলা কাগজে গরম গরম পরিবেশন করছেন। আমি নাকি একটি পশ্চিমা দূতাবাসে ছিলাম, সেখান থেকে অন্য একটি পশ্চিমা দূতাবাসের পতাকাবাহী গাড়ি দিয়ে আমাকে কলকাতা পৌঁছোনো হয়েছে। সেখান থেকে বিমানে করে ইউরোপের একটি দেশে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মতি চৌধুরী জানাচ্ছেন যে রিভিউএর এ সংবাদটি গতকাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কলকাতার পত্রপত্রিকাতেও তা ফলাও করে প্রকাশ হয়। গল্প লিখতে হয় তাই লেখা। এখানকারই কোনও অসৎ সাংবাদিক গল্পটি বানিয়েছে, তার কাছ থেকেই বিদেশের পত্রিকা লুফে নিয়েছে। সাংবাদিকদের গল্পের শিকার আমি তো আর আজ থেকে নই! ফার ইস্টার্ন ইকনমিক রিভিউএর সংবাদদাতা সৈয়দ কামাল উদ্দিন নাকি বলেছেন, তিনি এই খবরটি বিশ্বস্তসূষেন পেয়েছেন, খবরটি সত্য কি না তা তিনি জানেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আমার কথা জিজ্ঞেস করে মতি চৌধুরী দেখেছেন যে আমার ব্যাপারে কেউ ওখানে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মন্ত্রিসভার গতকালের বৈঠক ছিল আমাকে নিয়ে, তাঁর বিশ্বাস, কোনও গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিশ্চয়ই ঘটে গেছে। একাধিক নীতিনির্ধারক কেন আমার প্রসঙ্গে হঠাৎ মুখে কুলুপ এঁটে ফেললেন, তা নিয়ে মতি চৌধুরী এখন ভাবনায় পড়েছেন। লণ্ডনের টাইমস পত্রিকার কথা বলেছেন তিনি। পত্রিকাটি নাকি খবর দিয়েছে যে আমি বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পেলে বাংলাদেশ সরকার খুশিই হবে। ওখানে নাকি লেখা হয়েছে যে বাংলাদেশ সরকার চুপিসারে পশ্চিমা কূটনীতিকদের বলেছেন এ কথা। এই লেখার সঙ্গে একটি সিগারেট ধরাচ্ছি আমি এমন একটি ছবি গেছে। বাঁ হাতে সিগারেট, ডান হাতে জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি, মুখে ধোঁয়া। এরকম ছবিই সাধারণত চৌধুরী আমাকে নিয়ে কথা বলতে গেলেই ছাপেন। এখন এই সময় মতি চৌধুরী ঠিক না পারছেন বিশ্বাস করতে ফার ইস্টার্নের তসলিমা দেশে নেই সংবাদ। না পারছেন দিতে এমন কোনও খবর, যা তিনি বিশ্বাস করেন যে সত্য। অবশেষে জল্পনা কল্পনা করে কী ঘটছে আর ঘটতে যাচ্ছে তলে তলে, তার একটি চিত্র দাঁড় করিয়েছেন।
তাঁর চিত্রটি এরকম, আমি কোনও এক কম পরিচিত দেশের কোনও কূটনীতিকের বাড়িতে আত্মগোপন করে আছি। ঢাকা কর্তৃপক্ষ আমি কোথায় আছি না আছি সে ব্যাপারে নিশ্চিত। তবে আমাকে গ্রেফতার করে আন্তর্জাতিক মতামতকে জাগিয়ে তুলতে চান না। আমাকে ঘিরে যা হবে তা নিতান্তই দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারই হওয়ার কথা। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেষেন এ বিষয়টি একটি সাংঘাতিক মূল্যবান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি একটি সরকারি চাকুরে, সাধারণ চিকিৎসক। আমাকে অনেকেই হালকা মেজাজের পর্নোগ্রাফি লেখিকা বলেই নাকি মনে করতেন, অন্তত এই রক্ষণশীল সমাজের প্রেক্ষাপটে। কিন্তু পুরো ব্যাপারটিই বাড়াবাড়ি রকম অন্য দিকে মোড় নিল। পশ্চিমা কূটনীতিকদের হিসেবে একটা ভুল রয়ে গেছে, এটাই এখন সরকারের উμচ পর্যায়ে উদ্বেগের বিষয়। এই সমস্যা দূর করতে একটা সহজ ফর্মুলা উপস্থাপন করা হয়েছে, আমি নাকি আদালতে একজন আইনজীবী পাঠাবো,তিনি আদালতকে বলবেন যে আমি ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজির হতে পারবো না কারণ আমার সামনে হত্যার হুমকি ঝুলছে। তখন আদালত আমার অনুপস্থিতিতেই জামিন মঞ্জুর করবে। আমার কাছে রয়েছে পাসপোর্ট,