মনজু কাকা বলেছেন বাবা ফোন করেছেন তার অফিসে। আসবেন। আমার প্রসঙ্গে কোনও কথা হয়নি। আমি কিন্তু অনুমান করি বাবা সব জেনেই আসছেন। আমি এর মধ্যে আরও একটি জিনিস ভেবে নিই, তা হল, কাজি অফিসে গিয়ে আলতাফের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলব। ঝুলে থাকা ব্যাপারটি আমাকে হঠাৎ হঠাৎ জ্বালায়। একদিন ছুটি নেব অফিস থেকে। সারাদিনে তালাকনামার কাগজপত্র পুরণ করব আর সেলেব্রেট করব দিনটি। তালাক নামা পেয়ে আলতাফের কী রকম রাগ ধরবে ভেবে আমার বেশ আনন্দ হয়। নিশ্চয় সে রাগে ফুলে উঠবে। ফুঁসে উঠবে। হাত কামড়াবে। সারা বাড়ি দাপাবে। ওর মা বলবে মেয়ের সাহস কত, আগেই বলেছিলাম মেয়ে খারাপ, আলতাফের মা বিশ্বাস করবেন ছেলে তার সৎ সাহসী সমর্থ পুরুষ আর চরিত্রহীন হলাম আমি; তাতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না। কারণ আলতাফই একমাত্র জানে তার দোষ দুর্বলতা। সে-ই জানে তাকে ছেড়ে যাবার কী কারণ আমার। যেদিন তালাকের কাজ করব, আমি সিদ্ধান্ত নিই, দিনটি আমি উদযাপন করব। অনেকদিন পর শাড়ি পরব, সাজব। সঙ্গে সেদিন কায়সার থাকলে ওকে নিয়ে পুরো শহর ঘুরে বেড়াব। দুপুরে কোথাও খাব।
এরকম যেদিন ভাবলাম, তার পরদিন অফিস থেকে ফিরেই দেখি কায়সার আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। সে টিউশনি ঠিক করে এসেছে আমার জন্য। তিনটে টিউশনিতে টাকা পাব আড়াই হাজার! চাকরিটি ছেড়ে দেওয়া যে ভাল আমাকে বোঝাতে এসেছে সে। চাকরিটি সময় বেশি খায় বলেই ওর আপত্তি। কায়সারের সঙ্গে সেদিন হাঁটতে হাঁটতে কাটাবনের মোড় অবধি যাই, সে আমাক দু’হাত ভরে রজনীগন্ধা কিনে দেয়, এত ফুল, ফুলের এত সুবাস আমি রাখব কোথায়! মনে পড়ে কতবার আলতাফকে বলেছিলাম অফিস থেকে ফেরার পথে রজনীগন্ধা এনো। আলতাফ বলেছিল দুর ওসবে পোকা হয়। পোকা হোক, তবু তো সুগন্ধ দিচ্ছে, মৃত্যু আছে বলে আমরা কি জীবনকে গ্রহণ করি না! গ্রহণের আনন্দ আলতাফ একেবারেই বোঝে না। আলতাফ আমাকে জয় করতে চেয়েছিল ওর অগাধ বিত্ত দিয়ে, ওর সৌন্দর্য দিয়ে; পারেনি। আর কায়সার তার আহামরি রূপ ছাড়াই, বিত্ত ছাড়াই আমাকে জয় করে ফেলেছে। আমি অভিভূত হচ্ছি দিন দিন। একদিকে কায়সার, আরেক দিকে পুরো জগৎ। আমার সামনে আর সব ধুসর হয়ে যায়। আমি অনেকদিন ভাল করে চুল আঁচড়াই না, ভাল কাপড় পরি না, মনে হত কী প্রয়োজন এইসবে! জীবন তো শেষ হয়ে গেল, গ্লানিময় জীবন। অথচ আশ্চর্য–চুল এখন শ্যাম্পু করে উড়িয়ে দিই, আড়ং থেকে জামা কিনে আনি, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে যখন দেখি, কায়সারের চোখ দিয়ে দেখি। কায়সার একদিন বলে–তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। শুনে আমার লজ্জাও লাগে আবার ভালও লাগে। আমার ভাল লাগার কোনও সীমা থাকে না। দিন রাত আমি ডুবে থাকি অতল ভালবাসায়। আমি বুঝি আমি সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছি। আমি ভুলে যাচ্ছি আমি একটি রক্ষণশীল ঘরের