বাইরে বের হওয়া নিয়ে

আমার বাইরে বের হওয়া নিয়ে আলতাফ কখনও আপত্তি করেনি

আমার বাইরে বের হওয়া নিয়ে আলতাফ কখনও আপত্তি করেনি। কিন্তু আজ যখন বলি–আমি গুলশান মার্কেটে যাব। আলতাফ বলে–আমি বিকেলে এসে নিয়ে যাব।

 

–কেন, আমি কি একা যেতে পারি না?

 

–তা পারবে না কেন? তুমি অনেক কিছুই পার।

 

–তবে একা যেতে না করছ কেন?

 

–আমার ইচ্ছে।

 

–তোমার ইচ্ছে হলেই হবে? আমার কি একটুও ইচ্ছে থাকতে নেই?

 

–তোমার ইচ্ছের কমতি হচ্ছে কোথায় শুনি! শাড়ি গয়না সব দিয়ে ভ তোমাকে?

 

–শাড়ি গয়না দাও কেন? আমি তো বলছি না আমার জন্য এইসব নিয়ে এস। এগুলো না হলে আমি মরে যাব।

 

–মুখে না বললেও মনে মনে ইচ্ছে আছে জানি।

 

–ভুল জানো। ও তোমার ভুল একটা ধারণা। ভাবো মেয়ে মাত্রই শাড়ি গয়নার পাগল। দাও বলেই মেতে থাকি এসব নিয়ে। তি;

 

–মেতে থাকার জন্য আর কী আছে মেয়েদের? বাড়ি ঘর সামলাবে। বাচ্চা বাচ্চা মানুষ করবে আর সাজগোজ তো করতেই হবে।

 

–কেন করতে হবে? না সাজলে আমি যে হীরা সেই হীরা কি আর থাকব না?

 

–তা হয়ত থাকবে। তবে রূপেরও তো দাম আছে। রূপের জন্যই তো…..

 

–রূপ মানে?

 

–রূপ ঠিক রাখতে হবে না। মেয়ে হয়েছ, বোঝ না?

 

–রূপ ঠিক না রাখলে কী হবে?

 

–বিয়ে হবে না। লোকে পছন্দ করবে না।

 

–লোকের পছন্দের জন্যই বুঝি মেয়েরা?

 

–আমি পছন্দ না করলে কী গতি হত তোমার?

 

–কিছু একটা হত নিশ্চয়ই।

 

–হত। ওরকমই হত। এত আরাম আয়েশ হত না। সারাদিন চুলোর পাড়ে থাকতে হত। স্বামী শাশুড়ির মার খেতে হত।

 

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি–হ্যাঁ, এখন তো স্বামী শাশুড়ির আদর পেয়ে একেবারে মরে যাচ্ছি। তোমরা খুব সুখ দিচ্ছো আমাকে। এত সুখী আমি, তারপরও আমার দুঃখ করা মানায় না। আমি খুব বাজে মেয়ে। খুব লোভী মেয়ে। তাই না?

 

এ কথায় আলতাফ চুপ হয়ে যায়।

 

আমি আবার কথা পাড়ি–তুমি কি চাও না আমি একা কোথাও যাই!

 

–না।

 

–ঠিক আছে আমাকে বাবার বাড়ি রেখে এস।

 

–কেন, ও বাড়িতে যাবে কেন শুনি!

 

–ওখানে আমি থাকব কদিন।

 

–সারাজীবন তো থাকলেই ওখানে। আবার ওখানে থাকার কী আছে!

 

–সেটা আমি জানি কী আছে। তুমি তো আর নিজের বাড়ির বাইরে থাকছ না, তুমি কী বুঝবে।

 

–কদিন থাকতে চাও?

 

–আমার যতদিন ইচ্ছে। আমি একটু রাগ দেখিয়েই বলি।

 

–তোমার যা ইচ্ছে, তাই করতে চাও?

 

–যা ইচ্ছে তাই করা কি খুব খারাপ জিনিস? আমার ইচ্ছে গুলো তো এত খারাপ নয়।

 

–ভাল আর দেখি কোথায়?

 

আলতাফ বলে আর এদিক ওদিক ঘটে। শাশুড়ির ঘরে যায়। ওখানে তাদের গোপন শলাপরামর্শ হয়। একসময় কখন অফিসে চলে যায়। আমাকে বলেও যায় না। বিকেলে ফিরলে বলি–আজ রুবিনা ভাবীর বাসায় যাব।

 

-কেন?

 

–ইচ্ছে হচ্ছে।

 

–বাজে ইচ্ছে যেন আর না হয়। ওই ম হলা তোমাকে খারাপ বানাচ্ছে।

 

–ওর কোনও দোষ নেই।

 

–দুই শয়তান মিলে নোংরা কথার আড্ডা বসিয়েছিলে। আবার বলছ দোষ নেই।

 

আমার আর কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কী কথা বলব? আলতাফকে দূরের, খুব দূরের কেউ মনে হয়। সে যে আমার কাছের মানুষ, আপন মানুষ, মনেই হয় না। আলতাফের আচার আচরণ ভাষা সব বদলে গেছে। ও যে রেগে গেলে কী কুৎসিৎ হতে পারে, কী অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে পারে তা ওকে না রাগালে আমার জানা হত না। একা একটি বাড়িতে আমার দম বন্ধ লাগে। শ্বশুর শাশুড়িও আমাকে তেমন কাছে ডাকেন না। তারা ধরেই নিয়েছেন বউ সংসারি না, দেমাগি, উদাসিন, নাচ উঁচু। শাশুড়ির ঘরে গেলে আমাকে বলেন–নামাজ টামাজ তো মনে হয় পড়ই না। জানো পড়তে নাকি মা বাপ কিছু শেখায়নি। আমি বলি–শিখিয়েছে, কিন্তু পড়ি না। ইচ্ছে হয় না। তিনি মেজাজ খারাপ করে বলেন–এত উচ্ছংখল হলে কী করে চলবে! আমি চুপচাপ চলে আসি। নামাজ রোজা না করা মানে যে উচ্ছংখল হওয়া তা আমি মানতে পারি না। শাশুড়ির ভাবনা চিন্তার সঙ্গে আমার ভাবনা মেলে না, মেলাতে পারি না। দুরত্ব অনুভব করি অনেক।

 

বাড়িতে ফোনই একমাত্র সঙ্গী


Rx Munna

446 Blogg inlägg

Kommentarer