কট্টরপন্থীদের কোনও দোষ নেই

সেদিন পাকিস্তানের এক নারীমন্ত্রীকে আলিঙ্গনারত অবস্থায় দেখে মুসলমান মৌলবাদীরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে, প

সেদিন পাকিস্তানের এক নারীমন্ত্রীকে আলিঙ্গনারত অবস্থায় দেখে মুসলমান মৌলবাদীরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে, পরপুরুষকে আলিঙ্গন করা ইসলাম বিরুদ্ধ, সুতরাং নারীমন্ত্রী নিলুফার বখতিয়ারকে যেন মন্ত্রীত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়। খবরটি সারাবিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। নিলুফার বখতিয়ার বলেছেন, এসব ফতোয়া তিনি মানেন না।

 

কিছুদিন পরই একইরকম ঘটনা ঘটলো ভারতে। বলিউডের নায়িকা শিল্পা শেঠিকে আলিঙ্গন করে হলিউডের নায়ক রিচার্ড গিয়ার গালে চুমু খেয়েছেন। হিন্দু কট্টরপন্থীরা এখন চেঁচাচ্ছে, এটি ভারতীয় সংস্কৃতি বিরুদ্ধ, সুতরাং জ্বালাও পোড়াও। মুসলমান এবং হিন্দু, কেউ কারও চেয়ে কম যায় না। উভয়ের মধ্যেই ধর্মধ্বজী, সংস্কৃতি রক্ষক, নারীবিরোধী লোকের অভাব কিছু কম নেই।

 

একবার আমি ভাবতে চেষ্টা করেছিলাম, নিলুফার বখতিয়ার এবং শিল্পা শেঠি দুজন যদি মেয়ে না হয়ে পুরুষ হতেন, কোনও কি অসুবিধে হত, তাঁরা যা করেছেন, তা করলে? লোকে কি ধর্ম গেল, সংস্কৃতি গেল রব তুলতো? মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করার হুমকি দিত? আদালতে যেত? না। পুরুষ হলে অপরাধ হত না। দেশি বিদেশি যে কোনও মেয়েকে আলিঙ্গন করা চুমু খাওয়া পুরুষের জন্য বীরত্ব ব্যতীত কিছু নয়। আমাদের বুঝতে হবে, নিষেধাত্তা কেবল নারীর বেলায় ঘটে, নারী যে ধর্মেরই হোক না কেন, যে বর্ণ বা শ্রেণী বা গোষ্ঠীরই হোক না কেন!

 

এই ধার্মিক পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মনে করে যে নারী এই সমাজের সম্পত্তি। নারী কার সঙ্গে মিশবে, কাকে চুমু খাবে, কাকে আলিঙ্গন করবে, কী খাবে, কী পরবে, কীভাবে পরবে, কার সঙ্গে শোবে, কটি সন্তান জন্ম দেবে, পুত্র কটি কন্যা কটি, কার অধীনে থাকবে, কার আদেশ মানবে, কখন বাইরে বেরোবে, কখন না, কী কাজ করবে, কী করবে না — সব কিছুরই সিদ্ধান্ত সমাজ নেয়। একটু এদিক ওদিক হলেই তাই সর্বনাশ হয়। সর্বনাশ প্রতিনিয়ত হচ্ছে মেয়েদের।

 

যে মেয়েরা নাম করেছে, মন্ত্রী হয়েছে বা অভিনেত্রী হয়েছে, কট্টরপন্থীদের নাগালের বাইরে যারা, তাদের তো আর পিষে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়, তাই তাদের বিরুদ্ধে নিন্দার ঢেউ ওঠে, রাস্তায় কুশপুতুল পোড়ে, মিছিল বেরোয়। আর, আমরা এসব খবর যত শুনি, তত শিউরে উঠি। ভুলে যাই যে নাম না করা মেয়েরা নির্বিচারে নিষ্পেষিত হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে, নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। তাদের ওপর ধর্মের, সংস্কৃতির, পুরুষতন্ত্রের রীতিনীতির বুলডোজার চলছে, সে কি আজ থেকে! নীরবে নিভৃতে মেয়েরা অনেক কেঁদেছে। এখন অনেকে কাঁদতেও ভুলে গেছে। মুখ বুজে সইছে, এই সওয়াটাকেও মেনে নিয়েছে নিয়ম বলে। মরছে, মরাটাকেও মেনে নেয় নিয়ম বলে। নিলুফার আর শিল্পা তাদের অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করতেই পারেন, আপাতত তাঁদের ওপর মিডিয়ার নিরাপত্তা আছে। কিন্তু মন্ত্রীত্ব এবং অভিনেত্রীত্ব চলে গেলেই তাঁরা যে কোনও মেয়ে, তাঁরা ক খ গ ঘ ঙ। তাঁরা নিরাপত্তাহীন। তাঁরা এখন কট্টরপন্থীদের অবজ্ঞা করার নিরাপত্তা পাচ্ছেন, যেহেতু মন্ত্রী বা জনপ্রিয় অভিনেত্রী হবার উচ্চতায় তাঁরা উঠেছেন। উচ্চতা সবসময়ই, এ সমাজের চোখে, পৌরুষের সমার্থক। যা কিছু ভালো গুণ জগতে আছে, সবকিছুকেই বলা হয় পুরুষালি। আর যা কিছু মন্দ, মেয়েলি। নিলুফার বা শিল্পা যে মানুষের সমর্থন পাচ্ছেন, তা তাদের পৌরুষিক উচ্চতার কারণে। মেয়ে হওয়ার কারণে নয়। যতটুকু নিগৃহীত তাঁরা হয়েছেন, হয়েছেন মেয়ে হওয়ার কারণে। ওই উচ্চতাটুকু না থাকলে তাঁরা আরও নিগৃহীত হতেন। যে মানুষেরা নিলুফার বা শিল্পাকে সমর্থন করেছেন, তাঁরা ক’জন সমর্থন করতে যান সেই সাধারণ মেয়েদের, যাদের কিছুরই নিরাপত্তা নেই?

 

সাধারণ মেয়েরা তাদের পিতা পুত্র, এবং তাদের স্বামীকেও নিরাপত্তা বলে ভাবতে শিখেছে। এরাই নিরাপত্তার নামে নারীর অধিকার হরণ সবচেয়ে বেশি করে। নিরাপত্তার নামে এরাই নিগ্রহ করে নারীকে সবচেয়ে বেশি। এরাই


Rx Munna

446 وبلاگ نوشته ها

نظرات

📲 Download our app for a better experience!